আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতাল সব সময়ই দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে



হরতাল সব সময়ই দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে ফকির ইলিয়াস ======================================= সেনানিবাসের বাড়ি ইস্যুতে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গেছে। টিভিতে দেখলাম, এ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। তারা 'ডাইরেক্ট একশনের' হুমকিও দিয়েছেন। বিএনপি হয়তো জানতো, তারা এ মামলায় হেরে যেতে পারে। তাই ৩০ নভেম্বর হরতাল আগেভাগেই দিয়ে রেখেছিল।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, 'এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে'। দিন যে বাংলাদেশে আগে ছিল না, তেমন তো নয়। এ দেশে তারেক-মামুনদের চরম ত্রাসের দিনও যাপন করেছে বাংলার মানুষ। এ দিনের রেশ ধরেই তো এসেছিল ওয়ান-ইলেভেন।

সেনানিবাসের বাড়ি ইস্যুতে একটি স্পষ্ট কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকারের প্রজ্ঞাপন যদি বাতিল করা যায়, তবে সাত্তার সরকারের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা যাবে না কেন? শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালে জেতা সরকার শেখ রেহানাকে একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিল। জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় এসে সে বরাদ্দ বাতিল করে। বিএনপির হরতালের প্রতি শেষ পর্যন্ত জামায়াত সমর্থন দিয়েছে। না দিয়ে তাদের যে কোন উপায় নেই।

আবার অন্যভাবে একই কথাটি বলা যায়, জামায়াতের সমর্থন প্রদান ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ জামায়াতের শীর্ষ কিছু নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের ভেবে-চিন্তেই এগুতে হচ্ছে। এ ভাবনা-চিন্তার নেপথ্যে তারা যে কোন মূল্যে প্রতিশোধপরায়ণ হওয়ার চেষ্টা যে করছে না, তা কিন্তু নয়। একটি কথা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে লাগাতার হরতাল দিয়েও কোন সরকারের পতন যে ঘটানো যায় না, তা কারোরই অজানা নয়। তারপরও হরতাল কেন? হরতাল করার অর্থই হচ্ছে_ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো, জনগণকে অতিষ্ঠ করে তোলা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগ, বিদেশি পর্যটকদের আগমনকে বিপর্যস্ত করে তোলা।

তারপরও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে_ আইন করে হরতাল বন্ধে বিএনপি, আওয়ামী লীগ কখনোই আন্তরিক ছিল না, এখনো নয়। 'বিশেষ ক্ষমতা আইন', 'ছাত্র রাজনীতি', 'হরতাল'_ এসব হাতিয়ারকে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি শাসকগোষ্ঠী মহৌষধি হিসেবে লালন করেছে এবং করছে। বর্তমান মহাজোট সরকার দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটির ক্ষমতাবান হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় সংবিধান সংশোধন করে হরতাল বন্ধ করবে না_ তা আমি খুব নিশ্চিত করেই বলতে পারি। কারণ তাদের ভয়, তারা যদি ক্ষমতাচ্যুত হয় তবে তাদেরও ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দিতে হতে পারে! দুই. উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণের কথা বাংলাদেশের অনেক নেতাই মুখে বলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিনবদলের যে প্রত্যয় তা অনেকেই অনুসরণ করেন না।

পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে হরতাল কিংবা কর্ম-ধর্মঘট করার কোন বিধান নেই। গত কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মেট্রোপলিটন ট্রানজিট অথরিটির (এমটিএ) কর্মজীবীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। যার ফলে নিউইয়র্কে দুই দিন পাতাল রেল, পাবলিক বাসগুলো চলেনি। শ্রমিক ইউনিয়নের প্ররোচনায় কর্মজীবীরা হরতালের ডাক দেয়। সরকার বাদী হয়ে ফেডারেল কোর্টে মামলা করে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের জয় হয়। যারা ধর্মঘটের নেপথ্যে ছিল সব নেতারই বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা-সাজা হয়। এটি সবাই জানে কর্মযজ্ঞ থেমে গেলে রাষ্ট্র চলতে পারে না। কর্মহীন কোন সমাজ এগুতে পারে না। বেকার কোন প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়।

বাংলাদেশে বারবার বিভিন্ন সরকারের সময় হরতালের ডাক দিয়ে প্রধানতই রাষ্ট্রের ক্ষতি করা হচ্ছে। হরতাল দিয়ে জনগণের দাবি আদায় করা হচ্ছে এমন প্রচারণাটি মূলত মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। কারণ হরতালের নামে ভাঙচুর করে প্রকৃতপক্ষে জনমনে ভীতির সঞ্চার করা হয়। জনগণের জীবন, ধন-সম্পদের নিরাপত্তা বিঘ্ন করা হয়। আর তা করা হয় মূলত দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য।

দলীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য। এটি খুবই সাধারণ বিষয়, হরতাল যারা ডাকে তাদের দমাতে সরকার পক্ষ ব্যাপক ধরপাকড় করে। ফলে দুটি পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ এসে সামনে দাঁড়ায়। রক্তপাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ আবারও সে পথে অগ্রসর হচ্ছে।

বর্তমান বিরোধীদল বিএনপি চাইছে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলে যদি এ সুযোগে তৃতীয় কোন শক্তি রাষ্ট্ররক্ষার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে নেয়, তবে তাতেই তারা খুশি। কিন্তু দলীয় স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন মানসিকতা পোষণ অত্যন্ত হীন। যারা গণমানুষের কল্যাণের কথা ভাববে তাদের এমন মানসিকতা থাকা উচিত নয়। তাহলে হরতালের নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তার প্রতিকারের উপায় কী? তা প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ দাবি আদায়ের বিভিন্ন পথ খোলা থাকে সব সময়ই।

ভোটে হেরে গিয়ে মাত্র কয়েকটি আসন পাওয়ার জন্য তো বাংলাদেশের মানুষ দায়ী নয়। দায়ী তারাই যারা বাংলাদেশকে তালেবানি মৌলবাদী রাষ্ট্র বানানোর জন্য রাজাকারদের নিজে দলে জায়গা করে দিয়েছিল। তাদের সংখ্যা অত্যন্ত গৌণ হওয়ার কারণেই তারা জাতীয় সংসদে গিয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে। 'গণতান্ত্রিক অধিকারে'র জিগির তুলে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলই হরতাল প্রথা জিইয়ে রাখবে। তাই রাষ্ট্রের আপামর মানুষকেই হরতাল বর্জনের সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত জোট আগামীতে প্রতি মাসে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী হরতাল দিতেই থাকবে। এ চরম অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী, তা জনগণকেই খুঁজে বের করতে হবে। রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষকে জিম্মি করার জন্য রাজনীতি নয়। অথচ বাংলাদেশে তেমনটিই হচ্ছে।

বাংলাদেশে যারা হরতালের আহ্বানকারী তাদের অধিকাংশের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে বিদেশে। তাহলে দেশের কৃষক-মজুর-মেহনতি জনতার ছেলেমেয়েরা হরতালের শিকার হবে কেন? বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। ১ ডিসেম্বর ২০১০ নিউইয়র্ক ----------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ / ঢাকা/ ৩ ডিসেম্বর ২০১০ শুক্রবার ছবি- ফ্রানসিস আলেকজান্ডার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.