আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিরোধীদলীয় নেত্রী কাঁদবেন না। আর হরতাল-ফরতাল না করে, আমাদের বাড়ি এসে থাকেন, প্লিজ...



মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী সালাম ও সহানুভূতি নিবেন। আমরা জানি কদিন আগে আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে (আপনার ভাষায়)। আপনি এখন বাস্তহারা। কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানিনা। মাঝে মাঝে আপনার নেতাকর্মীদের মাধ্যমে কিছু খবরা খবর পাই বটে।

কিন্তু সেগুলোর বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে আমরা সন্দিহান। হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়, এই বুঝি রাস্তাঘাটে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। বাস্তুহারা অনেকের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে যায়। তাই এই আশা করা তো অন্যায় না। এ জীবনে একটা স্বাধ ছিলো, আপনার সঙ্গে বসে বগুড়ার দই খাবো।

বগুড়া তো দইয়ের জন্য বিখ্যাত। আপনার প্রয়াত স্বামীর বাড়ি বগুড়া। আর আমার বাড়িও ওই জেলাতেই। তাই আশা করাটা কি অমূলক? বলেন। জানি এই লেখা কোনভাবেই আপনার হাতে পৌছবে না।

খুব ইচ্ছে ছিল লেখাটা আপনার হাতে দেয়ার। এখন আপনার কাছে পৌছাতে কতগুলো দরজা ডিঙাতে হবে তার কি ঠিক আছে। আজকাল বাস্তুহারাদেরও যে চারদিকে রক্ষী থাকে। অবশ্য পত্রিকাতেও দিতে পারতাম। কিন্তু সে আরেক ঝামেলা।

সেখানেও কয়েকটা টেবিল ঘুরবে। তাও যদি মনোনিত হয় লেখাটা তাহলেই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে। আর আপনি কোন পত্রিকা পড়েন কিংবা আদৌ পড়েন কিনা এ ব্যাপারটাও নিশ্চিত না। তাই ব্লগই ভরসা। আপনার খুব কাছের কেউ না কেউ তো ব্লগ পড়ে।

না হলে আপনার বড় ছেলে পড়ে। তার তো এখন তেমন কোন কাজ নেই বলেই শুনেছি। বসে বসে পত্রিকা পড়া, ফেসবুক গুতাগুতি এবং ব্লগ পড়া ছাড়া। আপনাদের ভাষায় দেশে কোন উন্নতি না হলেও ডিজিটাল সরকার কিন্তু ভাল উন্নতি করেছে। মানুষকে অন্তত্ব ডিজিটাল শব্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

আপনারা দেশে বিদ্যুতের কোন উন্নতি করেন নাই। তাই ডিজিটাল সরকারও গত আড়াই বছরে কোন উন্নতি করে নাই। আমরা জানি `‘বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় জোর প্রস্তুতি চলছে'’ এবং `‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তত স্থাপন করলেন শেখ হাসিনা'’ এই জাতীয় সংবাদে কেটে যাবে আরও তিন বছর। আপনারা যেভাবে কাটিয়েছেন আর কি। ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়া শুরু করলাম।

আপনাকে যে কথা বলার জন্য এই লেখা তাই বলি। এখন বলি, আপনার ক্যান্টনমেন্টের সেই রাজপ্রাসাদ থেকে বের হবার পরপরই বিষয়টা আপনাকে বলবো বলে মনস্থির করেছিলাম। ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার কারনে বলা হয়ে ওঠেনি। এরইমধ্যে আপনি বাস্তুহারা বলে নিজেকে দাবি করেছেন। আপনার জন্য সরকারি বাড়ি ও নিজের বাড়ি ত্যাগ করে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে রয়েছেন বলে লোকমারফত শুনেছি।

যাই হোক, এরইমধ্যে আপনার বাড়ি ত্যাগ করার কারণে দেশে ১ পশলা হরতাল হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর আরও একটা। জানিনা সামনে আরও কতগুলো আছে। মাননীয় নেত্রী, হরতাল করলে কি পরিমান ক্ষতি হয়, কি পরিমান মানুষ বিপদে পড়ে, কি পরিমান ভোগান্তির স্বীকার হয়, এটা আমাদের চেয়ে আপনি ভাল বোঝেন এবং জানেন। আপনার ১ টা বাড়ির কারণে গত ১৪ নভেম্বর কতজন বাড়ি ফিরতে পারেনি এবং প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ পালন করতে পারেনি এটাও নিশ্চয় আপনার ভাবনায় আছে।

আপনি তো সারাদেশের মানুষের কথা ভাবেন। তাইনা? তাই আপনার কাছে একটা বিনীত প্রস্তাব নিয়ে এই লেখা। আপনি যেহুতু বাস্তহারা, আপনার যেহুতু থাকার জায়গা নেই তাই আমি বলছিলাম কি, আপনি আমাদের গ্রামের বাড়িতে এসে থাকেন। বগুড়া জেলার ধুনট থানার নয়া-উল্লাপাড়া নামের এক অজঁপাড়া গায়ের এক বাড়িতে আপনাকে থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। তবুও দয়া করে ১৫ কোটি মানুষকে হরতালের মতো বিপদে ফেলবেন না।

জানি আপনি থাকবেন না। তবুও আমাদের বাড়ির ছোট্ট একটা বর্ণনা দেই আপনাকে। আমরা চার ভাই, এক বোন। সবার জন্য আলাদা আলাদা ঘর আছে। মার জন্য আলাদা ঘর আছে।

সঙ্গে অতিথিদের থাকার জন্যসহ আরও বাড়তি কিছু ঘর আছে। আগে টিনের তৈরি ঘর ছিল। এখনও তাই। শুধু পার্থক্য হলো, আগে টিনের বেড়া ছিল। এখন ইট-সিমেন্টের বেড়া হয়েছে।

বাড়ির সামনে একটা ছোট পুকুর আছে। পুকুরে মাছ আছে। বাড়িতে শুধু লিচু ছাড়া সব ধরনের ফলের গাছ আছে। এখন গেলে আপনি পাকা জলপাই খেতে পারবেন। আমার মেঝ ভাবি জলপাইয়ের অসাধারণ একটা ভর্তা বানাতে পারে।

আপনার ভাল লাগবে নিশ্চিত। আমরা তিন ভাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকি। আমাদের বাড়ির পুরোটাই প্রায় ফাঁকা থাকে সারা বছর। শুধু মেঝ ভাই-ভাবী ও তার দুই সন্তান বাড়িতে থাকে। আমার গ্রামে থাকা ছোট দুই ভাতিজা-ভাতিজী অসম্ভব ভাল।

আপনি তাদের সঙ্গে বিকালে বসে গল্প করতে পারেন। আমার মা বাড়িতেই থাকেন বেশিরভাগ সময়। আপনারা দুজন একসঙ্গেও ঘুমাতে পারেন আবার আপনি আলাদাও ঘুমাতে পারেন। আমার মার পান খাওয়ার অভ্যাস আছে। আপনি যদি খেতে চান তাহলে সে খুশিই হবে।

দুই/তিনজন মিলে পান খাওয়ার মজাই নাকি আলাদা। আমার ছোট ভাতিজিটা খুব সুন্দর করে মাথায় বিলি কেটে দিতে পারে। পাকা চুল তুলে দিতে পারে। চাইলে আপনার মাথার পাকা চুলও তুলে দেবে। মাননীয় নেত্রী, আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই।

এর আগে যখন আপনি ক্ষমতায় এসেছিলেন তার আগে আগে স্থানীয় সাংসদ ভোট চাওয়ার জন্য আমাদের গ্রামে গিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন সাংসদ হতে পারলে তিনি এই গ্রামে সবার আগে বিদ্যুৎ দেবেন। উল্লেখ্য তিনি এর আগেও সাংসদ ছিলেন। সেবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর আর কখনই তিনি ঐ গ্রামের নাম মনে আনেননি।

এখন তো তিনি মোটামুটি বিএনপি থেকেই বিতাড়িত এবং সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত। আরও একটা খবর দেই, স্থানীয় এক বিএনপি নেতা আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ দেয়ার নাম করে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে ৭ বছর আগে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি, টাকাও ফেরত পায়নি। তবে মাননীয় নেত্রী, আপনার জন্য একটা সুখবর আছে। আমাদের বাড়িতে ও গ্রামে সন্ধ্যা হলেই এখন আলো জ্বলে।

বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের লাইন নিয়েছি আমরা। আর জোনাক পোকা তো রয়েছেই। কতদিন আপন জোনাক পোকা দেখেন না। আপনার মনে আছে? এখন তো শীতকাল। ফ্যানের দরকার নেই।

আপাদত আলো হলেই তো চলে। তাইনা? তবে এই বাল্ব কিন্তু রাত ১১ টা বাজলেই বন্ধ করে দেয়। আমরা অভ্যাস্ত হয়ে গেছি। আপনার প্রথম প্রথম হয়তো একটু সমস্যা হতে পারে। তবে আমার মার ঘরে হ্যারিকেন এবং কুঁপি বাতি দুটোই আছে।

এখন আমাদের গ্রাম নিয়ে একটু বলি। আমাদের গ্রামে লোক সংখ্যা খুবই কম। ২৫০ থেকে ৩০০ জন হবে হয়তো। গ্রামের মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। এটা অবশ্য সব গ্রামেরই মানুষই।

কি বলেন? আমাদের গ্রামে রাস্তাটা সরু। তবে গাড়ি যায়। গ্রামের জমিতে এমন কোন সবজি নেই যে চাষ হয়না। এ সময় গেলে আপনি মুলার শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, টমেটো, বেগুনসহ প্রায় সব ধরণের সবজি পাবেন। আমার ধারনা এগুলো হাতে নিয়েই আমাদের গ্রামের মানুষ আপনাকে প্রতিদিন দেখতে আসবে।

এ সময় গ্রামে একটু শীত বেশি। সমস্যা নেই, আমার মায়ের বাক্সে তোলা বাড়তি কয়েকটা লেপ আছে। আপনি আরামসে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে পারবেন। সকালে আপনার ঘুম ভাঙাবে আমাদের বড় মোরগটা অথবা আমার ছোট ভাতিজার কিচিরমিচির এ। মা বাড়িতে প্রায়ই পিঠা বানায়।

আপনি গেলে সে আরও আগ্রহ নিয়ে বানাবে। মার এই পিঠা বানানোর অভ্যাসটা হয়েছে আমার বাবা বেঁচে থাকতে। আমার বাবা বেঁচে নেই। কিন্তু মার অভ্যাসটা রয়েছে। (একটা গোপন কথা বলি, আমার স্কুল শিক্ষক বাবা জিয়াউর রহমানকে খুব পছন্দ করতেন।

) সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি নামাজ পড়তে পারবেন আমার মায়ের সঙ্গে। ওজু করতে আপনার ঠান্ডা পানিতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানেন, টিউবওয়েল কিছুক্ষন চাপার পর শীতকালে গরম পানি এবং গরমকালে ঠান্ডা পানি বের হয়। তাই আপাদত এই সমস্যা থেকে আপনি মুক্ত। এখন সমস্যা আপনার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে।

আমাদের বাড়ি থেকে বাজার প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে। সমস্যা নেই যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভাল। এটা অবশ্য আপনার শ্বশুর বাড়ির এলাকা বলেই হয়তো হয়েছে। আর আপনার বড় ছেলে গত পাঁচ বছরে বগুড়ার অনেক উন্নতি করেছে। এটা স্বীকার করতেই হয়।

মাননীয় নেত্রী, আমাদের বাড়ির বাথরুমটা পাকা। তাই বাথরুম নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার গোসল করতে হবে টিউবওয়েলের পানিতে। টিউবওয়েলের পানি চাপার জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়মিত যে মহিলা কাজ করে তাকে বলে দেইখেন। ঐ ষার্টোদ্ধ মহিলা খুবই ভাল।

সে অত্যান্ত আগ্রহে আপনার গোসলের পানি উঠিয়ে দেবে বলেই আমার বিশ্বাস। আপনাকে খাওয়ার ব্যাপারে আর একটা কথা বলি। আমাদের বাড়িতে আপনি দুই বেলা গরুর খাঁটি দুধ খেতে পারবেন। দুই দিন আগে আমাদের আরও একটা গাভির বাচ্চা হয়েছে। আর প্রদীপ ঘোষ নামে এক লোক নিয়মিত আমাদের দই দিয়ে যায়।

অসম্ভব স্বাধের সেই দই। আমার ধারণা এত স্বাধের দই আপনি এর আগে কখনই খাননি। আর একটা ব্যাপার, আমরা যে তিন ভাই বাড়ির বাইরে থাকি তারা প্রায়ই বাড়িতে যাই। তখন আপনার সঙ্গে বারান্দায় বসে গল্প করতে পারবো জেনারেটরের আলো থাকা পর্যন্ত। যেমন আমার মায়ের সঙ্গে সব ভাই বোন মিলে করি।

আর একটা সুবিধা আপনাকে দিতে পারি আমি। আপনার দলীয় কার্যক্রম গুলো আপনি আমাদের গ্রামে বসেই চালাতে পারেন। গ্রামে ঢোকার মুখে আমাদের একটা পুকুর আছে। পুকুর পাড়ে একটা ঘরও আছে। সেখানে আমার মেঝ ভাইয়ের একটা মুদি দোকান আছে।

আপনি চাইলে তার পাশেই আপনার দলীয় কার্যক্রম চালানোর জন্য একটা ঘর উঠিয়ে দিব। সেখানে জেনারেটরের লাইনও দিতে পারবো ইনশল্লাহ। আপনি চাইলে সেখানে ইলেকট্রিক লাইনও নিতে পারেন। ততদূর পর্যন্ত কিন্তু ইলেকট্রিক লাইন আছে। কারণ হলো, সেখানেই ঐ নেতার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ধানের চাতাল ও মিল রয়েছে।

আশা করি তাবে বললে, সে আপনাকে বিদ্যুতের লাইন দিয়ে দিবে। সে তো আপনার দলেরই নেতা। তাই মাননীয় নেত্রী, আপাদত আমাদের বাড়িতে থাকার ব্যাপারে তেমন কোন সমস্যা দেখছি না। যদি বড় ধরনের অথবা ছোট ধরনের কোন সমস্যা আপনি দেখেন তাহলে নিসংকোচে আমার মেঝ ভাইকে বলবেন। সে আবার সকল সমস্যার সমাধার করতে পারবে বলে আমার মনে হয়।

তবুও দয়া করে হরতালের মতো কর্মসূচি বন্ধ করুন। অনুরোধ থাকলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.