একজন ভালো মানুষ হতে চাই।
এক.
আজ মফিজের বাসর রাত। রাত তো জীবনে অনেক পার করিয়াছে সে, কিন্তু এই রাতের কথা ভাবিয়া ভাবিয়া কতো রাত যে নির্ঘুম কাটিয়া গিয়াছে তাহার কোনো ইয়ত্তা নাই। মফিজ তাহার জীবনে নারী সঙ্গ খুব বেশি একটা পায় নাই। ইসকুলে পড়িবার সময় তাহারই প্রতিবেশি খোদেজা, তাহার দিকে চাহিয়া চাহিয়া মুচকি হাসিতো।
সেই হাসির অর্থ ধরিবার নিমিত্তে মফিজ চেষ্টা করিতো আর ভাবিয়া ভাবিয়া গলদগর্ম হইয়া যাইতো।
তাহার পর যখন সে সদরে হাফিজ ভাইয়ের মুদি দোকানে চাকুরি করিতে গেলো, সেইখানে এক বাসার কাজের মেয়ে, নাম চুমকি। উফ্...., দেখো তাহার কথা মনে হইতেই রোমকুপ সব খাড়াইয়া যাইতেছে! লাজ-শরমের বালাই নাই মেয়েটার। একদিন দোকানের পিছনে আড়ালে.....,
ওই সব কথা ভাবিতে চায়না মফিজ। চুমকির বিবাহ হইয়া গিয়াছে।
তাহার কথা মনে করাও পাপ। আর এখন তাহারও বিবাহ হইয়া গিয়াছে। পাশের গ্রামের মাইয়া, নাম বিলকিস। মফিজ দেখিয়াছে, বড়োই সোন্দর।
বিকেলবেলা বন্ধুদের সাথে কোনরকমে পার করিয়া, সন্ধাকালেই বাসায় ফিরিল মফিজ।
বন্ধুরা সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টায় মাতিয়াছিলো। রাত্রিকালে বউয়ের সাথে সে কেমন করিবে, আলাপের বিষয়বস্তু ছিলো এই। মফিজ লজ্জায় লাল হইয়া যায়! উহারা পারেও!
একটা কথা বারেবার ঘুরপাক খায় মফিজের মনে, আজ তাহার বাসর রাত। আর আজই মারিতে হইবে বিড়াল....। উত্তেজনায় টগবগ করিয়া ফুটিতে থাকে মফিজ! প্রথম রাতেই মারিতে হইবে বিড়াল।
নহিলে....! সে কথা ভাবিতে চাহেনা মফিজ, বন্ধুরা বলে মারিতে না পারিলে নাকি বউ ভাগিয়া যাইবে! না, তাকে পারিতেই হইবে!
দুই.
মফিজের বউ বাপের বাড়ি চলিয়া গিয়াছে। লোকমুখে কথাটা পুরো গ্রাম চাউর হইতে সময় লাগিলো না। বিয়ের পরের দিনই বউয়ের চলিয়া যাওয়া নিয়া, লোকজন হাস্য-রসাত্মক আলোচনায় মাতিয়াছে। ওদিকে মফিজ পাগলপ্রায় হইয়া, গ্রামের চেয়ারম্যান হইতে শুরু করিয়া যতো মান্যগন্য লোকজন আছে সবাইকে জড়ো করিল। সবাই একমত হইলেন, হাজার হোক মফিজ তাহাদের গ্রামেরই সন্তান।
বিয়ের পরেরদিনই বউ চলিয়া যাওয়া, গ্রামেরই অপমান। তাই সবাই একমত হইলেন, কি সমাচার দেখিতে হইবে। ভিন গাঁয়ের কাছে তো আর মান-ইজ্জত বিসর্জন দেওয়া যাইতে পারেনা!
মফিজের গ্রামের লোকজন যখন বিলকিসের বাড়িতে পৌঁছাইয়া গেলো, সে পক্ষের লোকজনও কিছুক্ষনের মধ্যে একজোট হইলো। তখন সেইখানে সালিশের অবতারণা হইলো। দুইপক্ষের মধ্যে প্রচুর বাক-বিতন্ডা হইলো, যুক্তিতর্ক হইলো।
কিন্তু ব্যাপারটার কোনো সুরাহা হইলোনা। শেষমেষ সবাই একমত হইলেন, এ ব্যাপারে বউ অর্থাৎ, বিলকিস বেগমের মুখ হইতে শোনা দরকার; কেন সে শুশুরবাড়ি হইতে চলিয়া আসিলো।
আড়াই হাত ঘোমটা মুখের উপর টানিয়া বিলকিস সালিশে উপস্থিত হইয়া যাহা বলিলো তাহা এ রুপঃ মফিজ রাত্রি আট ঘটিকায় বাসর ঘরে প্রবেশ করে। বিলকিস তাহার অপেক্ষায় ব্যাকুল হইয়া বসিয়া আছিলো। কিন্তু তাহাকে নিরাশ করিয়া মফিজ বলে,‘বউ, আমি একটু বাইরে যামু।
’
নতুন বউয়ের কথা বলিতে নাই, তথাপি এমনতরো কথা শুনিয়া বিলকিস চুপ থাকিতে পারিলেনা, ‘ক্যান?’ জিজ্ঞেস করিলো সে।
‘এই যামু আর আমু। ’ নিরুপায় হইয়া বিলকিস বলিলো, ‘যান, কিন্তু বেশি দেরি করিয়েন না। ’ মফিজ বের হইয়া গেলো। তাহার অপেক্ষায় বিলকিস পাঁচ ঘন্টা পার করিয়া দিলো।
কিন্তু মফিজের ফিরিবার নাম নাই। ভোর রাতের দিকে মফিজ ফিরিয়া আসিলো। তাহাকে দেখিয়া বিলকিস বেগমের চক্ষু চড়কগাছ! চুল উসখো-খুশকো, বেশভূষায় ময়লা, আর হাতে...., একটা থলে। অবাক বিলকিস জিজ্ঞেস করিলো,‘কই গেছিলেন, আপনার হাতের মইধ্যে কি?’
মফিজ থলেটা খুলতে খুলতে উত্তর দিলো, ‘তেমন কিছু না বউ, একটা বিলাই(!!!)। বিলাইটা আমি ঘরের কাছেই বাইন্ধা রাখছিলাম।
কিন্তু কোন ফাঁকে যে ওইটা পলাইয়া গেলো! হেইডারে খুঁজতে খুজতেই তো সারাটা রাত পার করিয়া দিলাম। ’
‘বিলাই দিয়া হইবো কি!!!!’ বিস্ময়ে বিলকিসের কন্ঠস্বর কয়েক পর্দা চড়িয়া গেলো।
‘কি যে কউ না বউ, তুমি কি জানো না, বাসর রাতেই বিলাই মারতে হয়। ’ কথা শেষ করিয়া মফিজ খাটের নিচ হইতে রামদা বাহির করিলো, তারপর বিলকিস কে বলিলো, ‘বউ, তোমার চোখ দুইখান বন্ধ করো, বিলাইটারে জবাই দিমু। ’
মফিজ বিড়ালটাকে রামদা দিয়া জবাই করিলো, সেই দৃশ্য দেখিয়া বিলকিস বেগম জ্ঞান হারাইয়া ফেলিলো।
মফিজ পানি-টানি দিয়া বউয়ের হুঁশ ফিরাইলো ঠিকই, কিন্তু বিলকিস তাহাকে কাছে আসিতে দিলোনা। পরদিন সকালেই সে তার ভাইকে ডাকিয়া পাঠাইলো, এবং তাহার সাথে ফেরত আসিলো।
সালিশিগন বিবরণ শুনিয়া থ’ মারিয়া গেলেন। তাহারা সকলে একমত হইলেন, মফিজের মাথা খারাপ, সুতরাং বিলকিস যাহা করিয়াছে ঠিকই করিয়াছে। তাহারা অপমানের বোঝা মাথাই লইয়া ফিরতি পথ ধরিলেন।
মফিজ ভাবিতে লাগিলো, সকলের বেলায় বাসর রাতে বিড়াল মারা জায়েজ, কিন্তু তাহার বেলায় কেন এই অবিচার? মফিজ বুঝিতে পারে না....।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।