আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম-১৩৫ (বজ্র)



বজ্র মানে তুফান, অশনি, বাজ। তবে বৈদিক যুগে বজ্র শব্দটি দিয়ে এক প্রকার অস্ত্র বোঝাতো। মধ্যযুগের বাংলায় পদ্যে ও প্রাকৃত ভাষায় 'বজ্জ' বা 'বজর' শব্দটি পাওয়া যায় (পিয়াস লাগিয়া জলদ সেবিনু বজর পড়িয়া গেল - চণ্ডীদাস)। বৈষ্ণব সাহিত্যে বা প্রাচীন বাংলায় বজ্রের সমতুল শব্দ হচ্ছে 'বজ্জর' বা 'বজ্জ'। শব্দটি মধ্যযুগের বাংলায়ও ব্যবহৃত হয়েছে (বজ্জর পড়ূক চতুর্মুখের মাথায় - ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর)।

অভিধানে বজ্র শব্দের অন্যান্য অর্থে বলা হয়েছে হীরক, শূন্যতা, প্রচণ্ড, নিদারুণ, অসহ্য (বুকে পৃষ্ঠে মারে দেবী প্রচণ্ড চাপড় - বিজয় গুপ্ত; করিয়া কৌতুকে ফুড়ে বজ্জ নখে - শূন্যপুরাণ, রামাই পণ্ডিত)। দারুণ আঘাত, অবর্ণনীয় মর্মপীড়া ও হৃদয়ভেদী শোক বোঝাতেও বাংলায় বজ্র শব্দটি ব্যবহৃত হয় (তবু বৎস, যে হৃদয় মুগ্ধ মোহমদে, কোমল সে ফুলসম, এ বজ্র আঘাতে কত যে কাতর সে, তা জানেন সে জন, অন্তর্যামী যিনি, আমি কহিতে অক্ষম - মেঘনাদবধ কাব্য)। বজ্র শব্দের মূলে রয়েছে সংস্কৃত 'বজ্' ধাতু। শব্দটির গঠন হচ্ছে (বজ্ +র্ (রন্)। বৈদিক যুগে খড়গাকার অস্ত্রের নাম ছিল বজ্র।

হিন্দু পুরাণে রয়েছে ইন্দ্র নানা প্রকার বজ্র দিয়ে বৃত্রকে ও অসুরদিগকে হত্যা করেছিলেন। আর ইন্দ্রের প্রধান অস্ত্রের নাম বজ্রাস্ত্র। সংস্কৃত অভিধান অমরকোষে বজ্রের প্রতিশব্দ হিসেবে পাওয়া যায় কুলিশ, ভিদুর, পবি, শতকোট, স্বরু, হ্রাদিনী, শম্ব, দম্ভোলি ও অশনি। অন্যদিকে যজুর্বেদে বজ্রের নাম হচ্ছে বজ্র, স্বধিতি, শতঘ্নী, কুলিশ, অশনি, পবি, শর্ম্মা। বেদে বলা হয়েছে, ইন্দ্রের বজ্র লোহার তৈরি।

ধারণা করা হয়, ইন্দ্রের বজ্র আধুনিক যুগের কামান বা তোপের মতই কার্যকর মারণাস্ত্র ছিল। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস মতে, বেদের কর্ণকাবতী, ধনুর্বেদের শতঘ্নী, শনুর কর্ণী, লাতিন canna, ফ্রেঞ্চ canon আর ইংরেজি cannon হচ্ছে বজ্রের তুলনীয় অস্ত্র। বজ্র বলতে আট প্রকার পৌরাণিক অস্ত্রও বোঝায়। এ আট প্রকার অস্ত্র হচ্ছে বিষ্ণুর চক্র, শিবের ত্রিশূল, বরুণের পাশ, ব্রহ্মার অক্ষ, যমের দণ্ড, ইন্দ্রের কুলিশ, কার্তিকের শক্তি ও কালীর খড়গ। আবার বজ্রাঘাত শব্দের মূলানুগ অর্থ 'মেঘ থেকে বিদ্যুৎছটার ভূতলে নামা বা অবতরণ'।

তবে শব্দটি এখন লক্ষ্যার্থেই বেশি প্রচলিত। আর লক্ষ্যার্থে বজ্রাঘাত মানে 'আকস্মিক সাংঘাতিক বিপদের উৎপাত' (তার মৃত্যুর সংবাদ বন্ধুমহলে বজ্রাঘাত হিসেবে দেখা দিল)। অন্যদিকে সংস্কৃতে বজ্রাহত মানে 'বজ্রের আঘাতে আহত'। আলঙ্কারিক প্রয়োগে বজ্রাহত মানে অপ্রত্যাশিত প্রচণ্ড শোক বা আঘাতে বিমূঢ় বা ব্যাকুল (কথাটা শুনে তিনি বজ্রাহতের মত দাঁড়িয়ে রইলেন)।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।