আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বেড়াল দশা



ছোটবেলা থেকেই মাথায় চুল বড় রাখার ব্যাপারে আমার খুবই অনিহা । প্রতিমাসে নরসুন্দর বাড়িতে এসে সক্কলের চুল ছেটে দিয়ে যেত । সেদিন থাকত উৎসব উৎসব একটা ভাব । সকাল থেকে ক্রমানুসারে চুল ছাটা চলত । আমার চুলে যে ছাটনিটা দেওয়া হত ওটার নাম হচ্ছে বব ছাটনি ।

কি বাহারি নাম । … একটু বড় হওয়ার পর নরসুন্দরের কাছে চুল ছাটা নিশেধ । মেয়ে বলে কথা । এখন বাড়ন্ত বয়স । নরসুন্দরের কাছে মেয়েদের যাওয়াতো আর চলবে না ।

তাহলে নরসুন্দরীর কাছে নিয়ে চল । কিন্তু আম্মুর পার্লারে যাওয়া কিছুতেই পছন্দ না । সে নিজেই কাচি দিয়ে চুল ছেটে দিত । ধুর সবসময় একই রকম hair cut মোটেও ভাল লাগে না । তখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হইনি ।

তাই স্বাধীনতাটা খুব কমই ছিল । একবার বিদ্যালয়ের দুষ্টু গোছের কিছু মেয়ে মাথায় উকুন ছেড়ে দিয়েছিল । তখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ি । আম্মুতো রীতিমত উকুন মারা অভিযানে নেমে পড়লেন । কিন্তু উকুন কি আর শেষ হয় ।

প্রতিদন উকুনের যন্ত্রণায় আমার ঘুম হারাম । অবশেষে আম্মু আমাকে ন্যাড়া করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । হায়! তাই বলে ন্যাড়া ! আমি বিদ্যালয়ে মুখ দেখাব কিভাবে !! ন্যাড়া করার পর বেশ কিছুদিন বিদ্যালয়ে যাইনি । ভাড়াক্রান্ত মন নিয়ে স্কার্ফ পড়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা চালিয়ে যেতে হল । তবে চুল ছোট রাখার শাস্তি বেশ ভালমতই টের পেলাম ন্যাড়া করার মধ্য দিয়ে ।

তারপর অনেক অ-নে-ক দিন কেটে গেল । বড় হয়ে চুলের কতই না ফ্যাশন । কিন্তু ফ্যাশন যাই হাক চুল মোটেও বড় রাখা চলবে না । প্রতি মাসে পার্লারে গিয়ে চুল ছাটানো নেশার মত হয়ে গেল । ‘তুমি আবার চুল ছোট করিয়েছ ! তোমাকে না বলেছি চুলটা আর একটু বড় রাখো ।

কথা শোন না কেন ???’… না আম্মু চুল কাটাইনিতো । সেই ক-বে কাটিয়ছিলাম । … চুল ছোট বড় রাখা নিয়ে আ্বুব্বুর কোন মাথাব্যথা ছিল না । আম্মুকে কখনোই সমর্থন করত না । ‘শোন আম্মু, চুল বড় রাখলে কত problem. লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয় ।

চুলের পেছনে বাড়তি সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না । তাছাড়া তুমি economical দিক থেকে যদি চিন্তা কর তাহলে দেখবে –চুল যত বেশি লম্বা হবে ততো বেশি খরচ । আমি চুল ছোট রেখে শ্যাম্পু-তেলের খরচ কত কমিয়েছি একবার চিন্তা করে দেখ । …’ ‘থাক্ তোমাকে এই খরচের কথা চিন্তা করতে হবে না । তুমি চুল বড় রাখবে এ আমার শেষ কথা ।

‘ আম্মু যে কি বলে , আমি রাখব চুল বড়… তাহলেই হয়েছে । ইশঃ চুলটা যদি boy cut করতে পারতাম তাহলে খুব ভাল হত । কিন্তু boy cut করলে আম্মু বাসা থেকেই তাড়িয়ে দেবে । আরো অ-নে-ক দিন পরের কথা । বিবিএ শেষ করে আমি এখন ঢাকায় এমবিএ করছি ।

আব্বু মারা গেছেন ছয় বছর হল । দিনগুলো এখন একবারেই ভিন্ন । উহঃ ঢাকায় এসে সবচেয়ে বড় problem face করলাম জল নিয়ে । জন্ডিস color এর হলদেটে জল । হাত দিতেই বমি চলে আসে ।

কিন্তু কিছুই করার নেই । চুল পড়া শুরু হল । সেই সাথে মাথার চর্মে চুলকানি । যাক এত দিনে boy cut করার একটা মোক্ষম chance পেলাম । এবার আম্মু আর কিছু বলতে পারবে না ।

আর মাসে একদিন একটু সময়ের জন্য এসে কতটুকুই বা বলবে । যেই ভাবা সেই কাজ । দিলাম ছুট পার্লারে । … প্রথমবার আম্মু অবাক এবং গম্ভীর হয়ে শুধু জিজ্ঞেস করেছিল- ‘চুল এত ছোট করেছ কেন !?’ যথার্ত যুক্তি দখানোর পর আম্মু grant করল । বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো ।

ইদানিং জলের রংয়ে বেশ উন্নতি হয়েছে । চুল পড়াও অনেকটা কমে গেছে । ভাবছি আর boy cut করব না । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি বিগত তিন মাস যাবৎ আমার চুলের size এ কোন পরিবর্তন নেই । আমি কিছুতেই কাউকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে আমি চুল ছাটাইনি ।

সমস্যা শুধু এটাই নয় । প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে দেখি বালিশ আর বিছানায় একগাদা চুল পড়ে আছে !! যেমনটি বেড়াল কোন স্থান থেকে উঠলে গায়ের লোম পড়ে থাকে…! তাছাড়া সারাদিনে যতবার মাথায় হাত দেই ততোবার অজস্র চুল বর্ষন হয় মাথা থেকে । হায়! এ আমার কেমন বেড়াল দশা হল ! চুল থাকতে চুলের মর্ম বুঝিনি…

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।