আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলিভ ইট অর নটঃযারা ফার্স্ট হয় তারাও মানুষ!!!!

আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন আমি কখনই তূখোড় স্টুডেন্ট ছিলাম না। ফার্স্ট শব্দটার সাথে আমার পরিচয় নাই বললেই চলে। খুব কমই ভাল রেজাল্ট করেছি। বড় বড় পরীক্ষাগুলো শুরু হওয়ার কয়েকমাস আগে পড়া লেখা শুরু করতাম বলে কিছু ভাল ফলাফল ঝুলিতে ছিল। তবে ফার্স্ট গার্ল তো কখনই হতে পারিনি।

এ নিয়ে আমার কোনো আফসোস নাই। কিন্ডারগার্ডেনে যখন পড়তাম,তখন প্রথম দিকের ছাত্র ছাত্রী ছিল তূর্না,শান্ত,গালিব আর মিহিকা। এরাই ঘুরে ফিরে প্রথম দ্বিতীয় হত। আর বাকি স্থানগুলো দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিত। বিশেষ ব্যাপার হল,এদের প্রত্যেকেই ছিল নাদুশ-নুদুশ ফুটফুট কিসিমের বাচ্চা।

আর আমি ছিলাম ক্যাংঠা মারা শুটকী। তাই আমার যেটা ধারনা ছিল তা হল-যারা দেখতে সুন্দর আর মোটা সোটা টিচাররা মনে হয় তাদেরই প্রথম বানায়। আমার মাথায় তখনও এই ব্যাপারটা ক্যাচ করেনি যে প্রথম হতে হলে পড়া লেখা করতে হয়। ঐ নাদুশ-নুদুস ফুটফুটে-গুলো চেহারা দেখিয়ে প্রথম হওয়া যায় না। প্রথম হতে হয় মগজের ভেল্কি দেখিয়ে।

যাই হোক,সদর গার্লসে দেখা পেলাম হৃদিতা নামের আরেক ফার্স্ট গার্লের। তার আবার ভাবসাবই আলাদা। দেমাগে মাটিতে পা পরেনা। হৃদিতার আবার কিছু তোষামোদকারীও জুটে গেল। তাদেরও আবার ম্যালা ভাব।

ফার্স্ট গার্লের চ্যালা চামিন্দা বলে কথা। তাদের ভাব না থাকলে কি ভাব থাকবে শুটকী মাছের? আব্বুর ট্রান্সফার হল। আসলাম ঢাকায়। সেখানে এসে শুনলাম,ফার্স্ট গার্লের নাম মৌ। মেয়েটার কোনো আলগা পার্ট নাই।

প্রথম দিন স্কুলে যেতেই সে নিজে সেধে আমার নাম জানতে চাইল। আমি সাথে সাথে তার ফ্যান হয়ে গেলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মৌয়ের কষ্ট শুরু হয়ে গেল। আমাদের ক্লাসে এক মন্ত্রীর মেয়ে ভর্তি হল। ক্লাসটিচার সাথে সাথে মৌকে বাদ দিয়ে সেই মন্ত্রীকন্যাকে ক্লাসক্যাপ্টেন বানিয়ে দিলেন।

সেদিন মৌ বেচারী খুব কেদেছিল। স্বান্তনা দেইনি। কারণ মৌ আমার বন্ধু ছিল না। এরপর তিন বছর ঐ স্কুলে ছিলাম। প্রতিবার মৌ ফার্স্ট হত,কিন্তু ক্যাপ্টেন হত মন্ত্রিকন্যা! বাসা বদলের কারনে আবার স্কুল চেঞ্জ করলাম।

এই খানে ফার্স্টগার্লের নাম পিয়া। চুপচাপ মানুষ। কারো সাথে সাতে পাচে যায় না। তবে অনেকেই এটাকে নেতিবাচক ভাবে নিত। সবার ধারনা ছিল,পিয়া ভাব নিয়ে চলে,মুডি ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্কুলের একদম শেষের দিকে পিয়ার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। প্রথম দিকেই জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা পিয়া,সবাই তোমাকে মুডি বলে কেন?” পিয়া খুব বোকার মত জবাব দিল, “কি জানি,ক্যান যে বলে সেইটাই বুঝিনা। ” এরপর থেকে পিয়ার সাথে আমার বন্ধুত্ব। এখনও সব টপ সিক্রেট তারে না বললে আমার ভাত হজম হয় না। সিটি কলেজে পড়ার সময় যে আমাদের ফার্স্টগার্ল ছিল তার মত বদ ফার্স্টগার্ল আমি জিন্দেগীতে দেখিনাই।

আর কখনও হয়তো দেখবও না। দুঃখজনকভাবে আমি এই মুহূর্তে তার নামটা ভুলে গিয়েছি। ধরে নিলাম তার নাম বদনী!আমাদের ক্লাসের সবাই বদনীর ফ্যান ছিল। পরীক্ষার হলে খাতা খুলে ফেলে রাখত। কেউ কখনও ওর কাছে পরীক্ষার হলে কিছু জিজ্ঞাসা করে বিফল হয়নি।

ক্লাসে এক রোল থেকে পঞ্চাশ রোল পর্যন্ত খাতায় একই মার্কস আনার পুরো কৃতিত্বই ছিল সেই বদনীর। আমাদের ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে যে ফার্স্ট হয় তার নাম মুন্নি। ক্লাসের সব থেকে বিনয়ী মানুষের ট্যাগটা আমি তাকে দিতে চাই। বেচারীর চেহারা দেখলে মনে হয় একটু পরেই পুলসিরত পার হতে যাবে বলে ভীষন চিন্তিত। কোনো পড়া না বুঝলে এমন ভাবে পড়াটা অন্য কারো কাছে বুঝতে চায় যেন সেই ক্লাসের সব থেকে খারাপ স্টুডেন্ট।

আমি এই ফার্স্টগার্লটাকেও মেলা পছন্দ করি। মাঝে মাঝে যারা ফার্স্ট হয় তাদের প্রতি খুব মায়া হয়। কত পরিশ্রমই না বেচারারা করে!ওরাও তো মানুষ। ওদের কি আমাদের মত ধইনচাগিরি করতে মুঞ্চায় না? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.