আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোপা!

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

কিস্তি : ৭৩: ট্যুরিস্ট সোসাইটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম কর্মী শূণ্য। কমিটির সব সদস্যকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ রকম অবস্থাকে সংগঠনকে দাঁড় করানোর জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।

তার অংশ হিসাবে ঠিক করলাম-যত দিন দায়িত্ব পালন করবো, ততদিন মাসে একটি করে ট্যুর হবে। আরো কিছু নতুন বিষয় যোগ করেছিলাম। তার মধ্যে পিঠা উৎসব, পয়লা ফাগুন ও পয়লা বৈশাখ উদযাপন এবং বন্ধু দিবস ও ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন। সব আয়োজনে সবার সহযোগিতা পেয়েছি। সম্ভবত ট্যুরিস্ট সোসাইটির ইতিহাসে আমার সময়ই মাত্র ২৫ টাকায় দিতনভর বুড়িগঙ্গায় নৌবিহারের আয়োজন হয়েছে।

একেবারে বিনামূল্যেও নৌবিহার করিয়ে ছিলাম বলেও মনে পড়ে। এ সব দিনের ট্যুরে খাবার দাবারে ভরপুর থাকতো। বিশেষ করে পুরনো ঢাকার খাবার। কেনা হতো চক বাজার ও সোয়ারী ঘাট থেকে। খাবার আমি ও বাবু মিলে কিনতাম।

কারণ আমরা দুজনেই একটু বেশি খেতে পছন্দ করতাম। এখন অবশ্য পারি না। বয়স হচ্ছেতো তাই সব শরীরে জমে যাচ্ছে! পুরোপুরি দায়িত্ব নেবার পর সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করলাম। সদস্যদের মধ্যে আমার হাত দিয়ে অনেকে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে কিশওয়ার জাহান মৌ, গ্লোরিয়া গমেজ, সাবরিনা ইয়াসমীন রিমিসহ অনেকে ছিলো।

প্রায় দেড়শ সদস্য নিয়ে আমরাা শুরু করলাম। এ তিনজনের নাম উল্লেখ করলাম এ জন্য যে তাদের মধ্যে দুজন আমাকে এখন খুবই অপছন্দ। কেন করেন, সে গল্প আরেকদিন বলবো। সদস্য নেয়ার পর প্রথম ট্যুরটা হয় দুই রাত একদিন। রেওয়াজমত স্পট থাকে সীতাকুণ্ড।

সে রেওয়াজ আমরা ভাঙতে চাইলাম না। শুরু ট্যুরের টাকা পয়সা তোলা থেকে রাখা তার সব দায়িত্বই পালন করেছিল বাবু। আমি আগেই জানিয়েছিলাম যে, বাবুই সব দেখুক আমি সেটা চেয়েছিলাম। কিন্তু শ্রীমঙ্গল ট্যুর নিয়ে স্নায়ু সঙ্কটের কারণে সে দায়িত্ব আমি প্রতিবার ট্যুর কমিটির করে ওই কমিটির আহবায়কের কাছে হস্তান্তর করি। এর দুটো উদ্দেশ্য ছিল একটি হলো নতুন নেতৃত্ব তৈরী করা।

আরেকটি হলো বন্ধুদের ফাটল মেরামত করা। যদিও শেষেরটা করতে আমি সফল হইনি। সীতাকুণ্ড যাওয়ার জন্য বাবুল মামার বাস ঠিক করলো, বাবু। যথারীতি রাতেই যাত্রা। সীতাকুণ্ডে ফ্রেশ হওয়ার জন্য তেমন কোনো হোটেল পাওয়া গেলো না।

তাই আমরা দ্বারস্থ হলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের। বর্তমানে নতুন বার্তা ডট কমের সম্পাদক ফরিদ ভাইয়ের রেফারেন্সে তাদের সহায়তা মিলল। সকালে সীতাকুণ্ড বাজারে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে সোজা পাহাড়ে রওয়ানা করলাম। ওঠাও হলো ঠিকমত। তবে নামার সময় বিপত্তি ঘটলো।

এই প্রথম ও এখন পর্যন্ত শেষ বারের মত আমরা বিপদে পড়লাম। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মন্দির থেকে নামার পথে কমলা দেখে আমরা সেটি কিনতে গেলাম। বাবু টাকা রেখেছিল খলতের ভেতর। সোনার অলঙ্কার রাখার রাজকীয় ভাবের খলতে। সেখান থেকে টাকা বের করার সময় কয়েকজন পাহাড়ি দেখে ফেলল।

অনেক টাকা। সবার লোভ হতেই পারে। তারা আমাদের পিছু নেয়। সাধারণত এখানে আমরা অনেক দিন ধরে আসি এবং কোনো সমস্যায় পড়িনি বলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল না। তবে সেবার আমরা প্রথম ইকোপার্কের দিকের পথে নামছিলাম।

এক গ্রুপ একটু সামনে চলে গেছে। আমরা কয়েকজন পেছনে। কমলা কিনে সামনে এগুতে একটা ঝোপের আড়াল থেকে পাহাড়ির লম্বা দাওনা নিয়ে এগিয়ে হলো তিন চার জন। শুরুতেই কোপ। ঘটনার আকস্মিকতা আমরা ভীত এবং বিচলিত।

সাথে কয়েকজন নারী সদস্য রয়েছেন। আমার স্ত্রীও ছিলেন সাথে। সব মিলিয়ে বড় সমস্যা। গুণ্ডারা কোপাচ্ছে। আমি ঠেকাতে গিয়ে হাতে কোপ লাগলো।

নিজেদের সামলে প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলাম। চিৎকার করেও লাভ হচ্ছিল না। আমাদের সে চিৎকার পাহাড়ের জঙ্গলে সবুজের শ্যামলিমায় মিশে যাচ্ছিল। বাবু কয়েকটা কোপ খেলো। কালণ ওর কাছে টাকা।

ওকেই ওদের টার্গেট। ওর প্যান্ট খুলে পর্যন্ত ওরা চেক করে সব নিয়ে নিলো। ভাগ্য ভালো মোবাইল রেখে গেছিলাম। বাধ্য হয়ে সব দিয়ে দিতে হলো। ঘড়ি, টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালঙ্কার- সবই দিয়ে তাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নামলাম।

পুলিশ ডাকা হলো। তবে কোনো কিনারা হলো না। তার বদলে পুলিশ জানালো অমুক এসে বিপদে পড়েছে। তমুকের সব নিয়ে গেছে। কোনো লাভ নেই।

র‌্যাব বললো তারা অভিযান চালাবে। শেষ পর্যন্ত জানা গেলো কিছুই হলো না। হবে না সেটা আমরা সিনশ্চিত জানি। তাই খবর নিইনি। রাতে চট্টগ্রামে খাবারের সময় সীতাকুণ্ড থানার একজন অফিসার অশ্বডিম্বের খবর জানান।

অথচ আমরা সীতাকুণ্ড পাহাড়ে যাচ্ছি সেটি থানায় আগেই জানানো হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা এটি জানিয়ে রেখেছিলেন। আমরা নিজেরাই জানিয়েছি। সেই ট্যুরে জোকে ধরেছে অনেককে। পাহাড়ি জোঁকে ধরলে সহজে রক্ত বন্ধ হয় না।

অনেককে জোঁকে খাচোছ। তাই পাহাড় থেকে নেমে নিজেদের বদলে সদস্যদের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার ও নার্স ডাকা হলো। ছেলে মেয়েদের জোঁক মুক্ত করা হলো। ডাক্তার খুব মজা নিচ্ছেন।

কোথায় কোথায় তার পোস্টিং ছিল, কোন নারীর কোন অঙ্গ থেকে জোঁক উদ্ধার করেছেন সে সব বীরত্ব গাঁথা শোনাচ্ছিলেন। আসলে ডাক্তারের এত্তগুলা মেয়ে দেখে মাথা খারাপ! এ দিকে আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই। জোঁক মুক্ত হবার পর বাসে সবাইকে ঘটনা বল্লাম। নিয়মত মত সীতাকুণ্ডে দুপুরের খাবারের পর আমরা যাবো পতেঙ্গা বিচে। কিন্তু এখন টাকা পয়সা নেই।

তাই নানা জনের নানা মত। দেখলাম অনেকেই মন খারাপ করছে। অনেকের প্রথম ট্যুর। তাই রিস্ক নিলাম। বল্লাম সবাই পতেঙ্গা যাবো।

টাকা পয়সা আমরা ম্যানেজ করবো। সবার ভেতর জমে থাকা অস্বস্তি কেটে গেলো। কিছু টাকা সদস্যদের থেকে নিয়ে আমরা দুপুরের খাবার সারলাম। কিছু টাকা চট্টগ্রামে আমার এক বন্ধু থাকতো তার কাছ থেকে নিলাম। পতেঙ্গা ঘুরে রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঢাকা রওয়ানা হলাম।

বাসঅলাকে বললাম-আগামী মাসে আমি বেতন পেলে তার টাকা শোধ করা হবে। যেহেতু তিনি আমাদের পরিচিত ড্রাইভার তাই অমত করলেন না। কয়েকদিন পরে বাবুল মামা আমার কর্মস্থলে এলেন। তাকে টাকাটা বুঝিয়ে দিলাম। সেটা আমার জীবনে একটি অন্য রকম অভিজ্ঞতার ট্যুর।

এ রকম ট্যূর যেনো আর কারো না হয় সে জন্য আমরা পরে অনেক সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়েছিলাম। তাই বলে সীতাকুণ্ড যাওয়া বন্ধ হয়নি। বছরে একবার আমরা সেখানে গিয়েছি। তবে সতর্কতা ছিল সব সময়! অন্যরাও যেনো সতর্ক থাকেন সে বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.