আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্যুর প্যাঁচালী



ট্যুরের শিডিউল দেওয়ার সময় যদিও আমরা খুব বড় গলায় বলেছিলাম শার্প রাত ১১ টায় আমাদের বিমান(!) রাজারবাগ থেকে ছেড়ে যাবে, কিন্তু গ্রীনলাইন এয়ারলাইন্‌স এর আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সুপার সনিক বিমান টা ল্যান্ড করার প্লেস না পাওয়ায় আমাদেরও শার্প এক ঘন্টা দেরি করে যাত্রা শুরু করতে হয়। যাই হোক ওই শুরুর এক ঘন্টাই লেট। এরপর আবার কক্সবাজারে ল্যান্ড করার প্লেস না পাওয়ার আগ পর্যন্ত আর লেট করতে হয় নি!!! আর সুপার সনিক এয়ারবাসের ড্রাইভার ছিলো আরও সুপার সনিক!!! আধ কিলোমিটার আগেও যদি কোনো সিএনজি বা প্রাইভেট কার দেখে সে স্পিড স্লো করে ফেলে। আর হাইওয়েতে সিএনজিকে সাইড দেয়াটা দেখার অভিগ্গতাও প্রথমবারের মতো হলো। কুমিল্লা নেমে ড্রাইভারকে ঐ কথা বলতেই খেলাম ঝাড়ি !!! "তাইলে আমনেই চালান আমি পিছন গিয়া বসি!!!!" আমি কোনোরকমে চলে আসলাম আর কিছু বলি নাই।

সকাল ৭ টার দিকে আমরা কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের দিকে রওয়ানা দিলাম, মহিউল ভাই অবশ্য বল্লো আমরা আসলে কক্সবাজার ছেড়ে বার্মার দিকে যাচ্ছি!!! বাসে আমার সামনের সিটেই বসলো মেহেদি ভাই আর শোয়েব ভাই। ঠিক চাকার উপরে কম করে হলেও ২০০ কেজি ওজন!!! আমি বল্লাম এই CPS এর লোকজন খালি খায়, সাথে সাথে দুইজন একসাথে প্রতিবাদ করে উঠলো,"আমরা খালি খাই না, কাজ ও করি, দেখো না এখন CPS এর সব AUTOMATED ?" আমি বল্লাম, ভাই সব যদি AUTOMATED হয় তাইলে এখন আপনারা কি করেন ? দুইজন কিছুক্ষণ দুইজনের দিকে তাকালো, এরপর একসাথে শুরু করলো,"এই তোমার এতো কথার দরকার কি?ছেলে পেকে গেছে,বেয়াদপ........!!!!"বাসে উঠেই মুজতবা ভাই ফুটবলটা হাতে নিয়ে দিলো ঘুম, কে যেনো বল্লো "HE IS NO MORE WITH US!!".খালেদ ভাই বল্লেন দেবরিনা যদি এ কথা জানতে পারে তাহলে এখনই মেইল করবে "AS YOU ARE NO MORE WITH US, PLEASE CLOSE THE PN!!!"। আর গনি ভাই উঠেই ঘোষণা দিলেন, উনি হিন্দী ভিডিও সং(বিপাশা বসুর!!) দেখবেন!!!যাই হোক তাঁর কথা রাখা হয়েছিলো। মহিউল ভাই আর আশিক ভাই ছিলো পাশাপাশি সিটে, যদিও মহিউল ভাই আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছিলো যে তার গরম লাগছে কিন্তু কি কারণে উনারা ভোররাতে কাঁথার নিচে ঢুকেছিলেন সে কথা জানা যায় নি!!!খালেদ ভাই বল্লেন, নতুন হিন্দী মুভি "আই হেট লাভ স্টোরি" টা ছাড়তে। আমি বল্লাম, ভাই এরপর সবাই যদি পঁচায় আপনিও পঁচাবেন না তো ? উনি নির্বিকার ভাবে বল্লেন,"এইটুকু রিস্ক তো আপনাকে নিতেই হবে!!!!!"বাংলাদেশী "পল দ্য অভিষেক" যথারীতি বাসে উঠে ঘোষণা দিয়েছিলো যাত্রা হবে SMOOTH!!, এবং একথা বলার অপেক্ষা রাখে না বরাবরের মতো এবারও তার প্রেডিকশান ভুল হয়েছিলো............নতুন পলের খোঁজ নেয়ার সময় হলো মনে হয়।

হিন্দী মুভী সং দেখতে দেখতে মেহেদী ভাই দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বল্লো, বুঝলেন শোয়েব ওদের বিয়ে না করলেও হয় কিন্তু আমাদের করা লাগে !!!! একথা কেনো বল্লেন তা অবশ্য জিগ্গেস করার সাহস হয় নি!!!পাভেল ভাই ব্যস্ত ছিলো রেস্টুরেন্ট এর গরুর মাংস কতটুকু শক্ত ছিলো আর বাস ড্রাইভার কয়টা রিক্‌সাকে সফলতার সাথে ওভারটেক করতে পারলো, এই নিয়ে গবেষণায়!!!শাহীন ভাই সামনের সিটে বসে রুদ্ধশ্বাসে দেখছিলেন গাড়ী চালুরত অবস্হায় ড্রাইভারের লং ডিউরেশান কল এবং সেই সাথে ওভারটেক করার চেষ্টা!!!যাই হোক যেহেতু আমাদের ড্রাইভার শুধু রিকসাকেই ওভারটেক করার চেষ্টা করেছিলো খুব বেশী প্রবলেম সে যাত্রায় হয়নি। যাই হোক অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার সমাপ্তি ঘটিয়ে আমরা পৌছলাম হোটেল সি-গাল এ। গিয়েই সবাই লাফ দিলো সুইমিং পুলে। তারপর বিকাল ৫ টায় হোটেল তরঙ্গ তে গিয়ে LUNCH সারলাম!!এরপর সবাই মিলে গেলাম সী-বিচে। আমি, মুহিব ভাই, জাকারিয়া ভাই আর অভিষেক ভাই উঠলাম ঘোড়ার পিঠে।

ঘোড়ার যে অবস্হা অভিষেক ভাই উঠার পর পারলে তার পা ডেবে যায় বালুতে!! এরপর হলো চরম উত্তেজনাপূর্ণ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যকার বীচ ফুটবল। শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার মূহুর্মূ আক্রমণে ব্রাজিল খেই হারিয়ে ফে। প্রথম অর্ধেই হুয়ান মুহিবের পাসে লিওলেন শোয়েবের মাপা কিক দিদা কোনোরকমে ঠেকিয়ে দিলে সুযোগসন্ধানী গন্জালো রুবেলের গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায়। এরপরই ব্রাজিলের গা-জোয়ারী ঠোগো বনিতার (ঠেলা মারা ফুটবল!!) কাছে পরাস্হ হয়ে আর্জেন্টিনার খেলোয়ারেরা এক এর পর এক ইজুরির শিকার হতে থাকে!!!যাই হোক পরে তারা একটা অবৈধ থ্রোয়িং এর মধ্যমে গোলটা পরিশোধ করে। পরে জানা যায় খেলার শুরুতে পল দ্য অভিষেক দুই দলের পতাকা মোড়ানো বিরিয়ানীর প্যাকেটই সাবাড় করেছিলো!!!তাকে কারণ জিগ্গেস করলে জানিয়েছিলো, "ভাইরে ক্ষুধা লাগছিলো!!!"।

যার কারণে খেলার এই পরিণতি...। সন্ধায় হোটেল সি-গালের রংধনু রেষ্টুরেন্টে শুরু হলো ওয়ার্কশপ। ওয়ার্কশপের পর বিখ্যাত "হাউজি গণি ভাই"র পরিচালনায় শুরু হলো হাউজী। সবার চোখের সামনে দিয়ে একটা বাদে সব পুরষ্কার নিয়ে গেলো বিলিং সিসটেম। এই নিয়ে মেডিয়েশন টিমের ক্ষোভ দেখলাম সবচেয়ে বেশী!!(যদিও গনি ভাই তাদের টিমের ই)।

পাভেল ভাই বলছিলো "চিন্তা করেন রুবেলের কি কনফিডেন্স!!সে নিজের টাকা দিয়ে তার টিমের লোকজনদের হাউজির টিকেট কিনে দিছে!!!"ওনার কথা শুনে আমার মনে হয়েছিলো হুদাই জিপিতে চাকরী করতেছি, সব ছেড়ে ছুড়ে লাস ভেগাসে গিয়ে হাউজি খেলতে বসা উচিত!!! তবে বিলিং সিস্টেমের লোকজন এরপর ও খুশি না, কিছু টাকা যে জাকারিয়া ভাই নিয়ে গেলো!!!!রাতে ডিনার করে যে যার মতো বিচে ঘুরাঘুরি করে ঘুম... ও আচ্ছা মুহিব ভাই এর কথা বাদ পরে গেলো। সি-গালের আনারসের কাস্টার্ড খেয়ে বেচারার পেটের ১৪ টা বেজে গেছে...এরপরের কাহিনী নাই বা বল্লাম। পরদিন সকালে হোটেল সি-গালের চমৎকার ব্রেকফার্স্ট সেরে আমরা আবারও শার্প দুঘন্টা লেট করে রওয়ানা দিলাম ঢাকার দিকে। আসার পথে গাড়ীতে হয় আরেকদফা হাউজী। ট্যুরের একমাত্র প্রোগ্রাম(ওয়ার্কশপের পরে) যেখানে সবাই অংশগ্রহন করেছিলো!!!পক্ষে ১০ জন ও বিপক্ষে ১৯ জন!!!বস্তা পচা হিন্দী গান আর "পানে" ভরপুর বাংলা নাটক দেখতে দেখতে আমরা পৌছলাম চট্টগ্রামে।

মেরিডিয়ানে চমৎকার লান্চ(আবারও বিকেল ৫ টায়!!) সেরে রওয়ানা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।