আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে প্রয়োজন মালিক-শ্রমিক পারষ্পরিক বিশ্বাস ও আন্তরিকতা


আমাদের দেশে গার্মেন্টেস সেক্টরে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের শোষণের পুঞ্জীভুত প্রতিবাদ। পোশাকশিল্পে শ্রমিক-পুলিশ ও শ্রমিক-মালিক পক্ষ মারামারি, কারখানা ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও বছরের পর বছর নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। আসুন প্রথমে এক নজর দেখি জোট সরকার, তত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান সরকারের আমলে পোশাক শ্রমিকদের কিছু সংবাদচিত্র। জোট সরকার (২০০১-২০০৬) ক্ষোভে ফেটে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সাভারে ঢাকা ইপিজেড ও আশুলিয়ার জামগড়া শিল্প এলাকা, উত্তরা থেকে শুরু হয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁ শিল্প এলাকা এবং ওয়ারী, রূপগঞ্জ ও কালিয়াকৈরসহ গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত এলাকাসমূহে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় কমপক্ষে ৯টি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ভাংচুর হয়েছে শত শত কারখানা ও যানবাহন। জনদুর্ভোগও হয়ে উঠেছিল অসহনীয়। পুলিশ, র‌্যাব এবং বিডিআর নামিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়নি। শ্রমিকরা টঙ্গি-আশুলিয়া, টঙ্গি-গাজীপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। রাজধানীতে মিরপুরের রোকেয়া সরণি এবং তেজগাঁ শিল্প এলাকার সড়কও বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র: ইত্তেফাক 2006/05/24 শ্রমিক অসন্তোষে ১৬ গার্মেন্টস বন্ধ গতকাল বৃহস্পতিবার সাভার ডিইপিজেডসহ আশপাশের ১৬টি এবং গাজীপুরের ৩টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর এবং কর্মকর্তা-শ্রমিকসহ ৪০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের আশংকায় কর্তৃপক্ষ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করে। ইত্তেফাক সাভার সংবাদদাতা তুহিন খান জানান, গতকাল ডিইপিজেড ও আশপাশের ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে ডিইপিজেড পুরাতন জোনে অবস্থিত লেনী ফ্যাশন লিঃ, ইপিজেডের বাইরে অবস্থিত ফাহামী ফ্যাশন লিঃ ও অনুপম ফ্যাশনে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ব্যাপক ভাংচুর, কর্মকর্তাদের কক্ষ তছনছ ও মারপিটের ঘটনা ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।

এতে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ডিইপিজেডের নতুন ও পুরাতন জোনের ১০টি ফ্যাক্টরিসহ ১৬টি ফ্যাক্টরিতে কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। ইপিজেড ও আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত র‌্যাব, বিডিআর ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইপিজেড এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সূত্র: ইত্তেফাক 2006/06/02 গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের প্রতিক্রিয়ায়: গার্মেন্টস শিল্পের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিদেশী ষড়যন্ত্র -প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া http://ittefaq.com.bd/content/2006/06/26/ তৈরী পোশাক শিল্প রক্ষায় প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামানোর আহ্বান -গার্মেন্টস মালিক সমিতি http://ittefaq.com.bd/content/2006/10/11/ গার্মেন্টস ধর্মঘটে ভাংচুরের ঘটনায় ৭ মামলা ।

। আসামি ৯ হাজার http://ittefaq.com.bd/content/2006/10/12/ ইয়াজউদ্দীন-ফকরুদ্দীন আমল (২০০৭-২০০৮) ফতুল্লায় গার্মেন্টস শ্রমিক পুলিশ তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ ৩০ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক ফতুল্লায় দফায় দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে ফতুল্লা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ৩০ পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। পুলিশসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৪ জন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের শিবু মার্কেট এলাকায় তিন ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। তারা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পুলিশের টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও শ্রমিকদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে ঐ এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামে। গাজীপুরে উচ্ছৃংখল গার্মেন্টস শ্রমিকদের হামলা অগ্নিসংযোগ সড়ক অবরোধ পুলিশসহ আহত ৫০গাজীপুর সদর উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকার কুলিয়ারচর সোয়েটার ফ্যাক্টরির উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা সোমবার একই গ্রুপের তিনটি ফ্যাক্টরিতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে।

শ্রমিকরা কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করেছে। এসময় তারা একটি ফ্যাক্টরিতে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে। এদিকে একই দিন ডিইপিজেডের নতুন জোনে অবস্থিত জিন্স প্যান্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘আমরা এ্যাপারেলস লিঃ ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা একটি গুজবকে কেন্দ্র করে ফ্যাক্টরিতে হামলা, ভাংচুরসহ তাণ্ডব চালায়। এসময় এখানে আশুলিয়া থানার ওসিসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক ও পুলিশ আহত হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামে একইদিন শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের দুইপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছে।

গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের প্রতিক্রিয়ায়: পোশাক শিল্পে অস্থিরতার চেষ্টা শ্রমিক নামধারী এরা কারা? পোশাক শিল্পে (গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার) কথিত শ্রমিক অসন্তোষের অধিকাংশ ঘটনাতেই শ্রমিকদের অংশগ্রহণ থাকে না বললেই চলে। মূলত শ্রমিক নামধারী একশ্রেণীর বহিরাগত মতলববাজরাই নেতৃত্ব দেয় এসব ঘটনায়। পোশাক শিল্প বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে পরিকল্পিতভাবেই পোশাক শিল্পে অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়। বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র করা হয় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার নষ্ট করার উদ্দেশ্যে। আর স্থানীয়ভাবে ষড়যন্ত্র করা হয় রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে।

প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মিলিতভাবে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে ভূমিকা রাখে। আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার (২০০৯-২০১০) আশুলিয়া ফের রণক্ষেত্র সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শনিবার জামগড়ায় এস সুহী নামক সোয়েটার কারখানায় শ্রমিকদের সাথে আনসার ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও আনসার সদস্যের গুলিতে আল-আমিন (২৫) নামক এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা এ এলাকায় ভাংচুর শুরু করে। মাস্তান বাহিনী ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে অর্ধশত রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ও মার্কেট ভাংচুর করে।

সূত্র; ইত্তেফাক, ২৯-০৬-২০০৯ টঙ্গি রণক্ষেত্র গার্মেন্টস শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ২, আহত শতাধিক ৫ ঘন্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিকাণ্ড, গুলি, কাঁদানে গ্যাস বিস্তারিত: ইত্তেফাক, ০১-১১-২০০৯ পঞ্চান্ন ভাগ গার্মেন্টস নিয়মিত বেতন দেয় না সাভারের আশুলিয়ায় নরসিংহপুরে অবস্থিত নাসা গ্রুপের নাসা বেসিক গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিক ও পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়েছে। ইত্তেফাক, ২৩-০৭-২০১০ গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের প্রতিক্রিয়ায়: পোশাকশ্রমিকদের বেতন শুধু অপ্রতুলই নয়, অমানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাকশ্রমিকদের যে বেতন দেওয়া হয়, তা শুধু অপ্রতুলই নয়, অমানবিক। গ্রাম থেকে এসে তারা যে ধরনের পরিশ্রম করে যে টাকা বেতন পায়, তা দিয়ে ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়া যায় না। এ অমানবিক অবস্থা নিরসনে সরকার পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনকাঠামো নির্ধারণে মজুরি কমিশন রোয়েদাদ চূড়ান্ত করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা মালিকেরা দিতে চান না। সে জন্য সরকার মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম বেতন কাঠামো করার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। প্রথম আলো পোশাক শ্রমিকদের মানবেতর জীবন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে না’গঞ্জে জীবন্ত দগ্ধ ২৮ সিদ্ধিরগঞ্জের জেলেপাড়া ব্রীজের নিকট একটি নিট গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্ততঃ ২৮ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ২২টি দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে আহতের সংখ্যা শতাধিক।

অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যাক গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ প্রতিটি তলা তলাবদ্ধ ছিল। গাজীপুরের গরীব গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার সবগুলো জরুরি বহির্গমন দরজা বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও অকার্যকর ছিল বলে দাবি করেছেন শ্রমিকরা। জরুরি দরজা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা আটকে পড়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৮ সালে পোশাক কারখানায় কাজ করে একজন শ্রমিক মাসে বেতন পেতেন ৪০ টাকা।

তখন ন্যূনতম মজুরি বলতে কিছু ছিল না। আস্তে আস্তে এ শিল্পের প্রসার বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে শ্রমিকের সংখ্যা, বেতনের হারও। ১৯৯৪ সালে পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৯৩০ টাকা। এর বার বছর পর ২০০৬ সালে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে করা হয় ১৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে ২০০৬ সালের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রমজীবী মানুষের উপর। বর্তমানে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এক হাজার ৬৬২ টাকা। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়। মূল্যস্ফীতি ও বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানিয়ে আসছে। বিজিএমইএ’র দাবি, পোশাক শিল্পখাতে মোট শ্রমিকের মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ সপ্তম গ্রেডের অর্থাৎ শিক্ষানবীশ শ্রমিক।

তারা সপ্তম গ্রেডে ৩ মাস কাজ করার পরই পদোন্নতি নিয়ে অন্য গ্রেডে চলে যান। সপ্তম গ্রেডে ১৬৬২ টাকা মজুরির সাথে সাথে হাজিরা বোনাসসহ বিভিন্ন ভাতা এবং ইন্সুরেন্স বাবদ শিক্ষানবীশ শ্রমিকরা মাসে মোট ২৭০০ টাকা আয় করে থাকেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, গার্মেন্টস মালিকরা বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে উচ্চমূল্য আদায় করার বদলে শ্রমিকদের আরও কম মজুরি দিয়ে মুনাফা বাড়াতে চান। তিনি বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে তুরস্কের একজন শ্রমিক প্রতি ঘণ্টায় মজুরি পান ২.৪৪ ডলার, মেক্সিকোতে ২.১৭ ডলার, চীনে ১.৮৮ ডলার, পাকিস্তানে ০.৫৬ ডলার, ভারতে ০.৫১ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ০.৪৪ ডলার, ভিয়েতনামে ০.৪৪ ডলার। আর বাংলাদেশের শ্রমিকরা পান দশমিক ৩১ ডলার।

বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার গার্মেন্টসে ৩০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। গত বছর এ খাতে আয় হয়েছে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক, 2010/07/21 শেষকথা অজ পাড়াগাঁ থেকে বাঁচার তাগীদে শহরে এসে পোশাক শিল্পে অমানবিক বেতনে অমানুষিক পরিশ্রম করে যেসব নিঃস্ব দরিদ্র শিশু ও নারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের ঘাম, দুঃখ, অসহায়ত্বকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও গার্মেন্টস মালিকদের অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের জন্য শ্রমিক অসন্তোষকে বছরের পর বছর "বিশেষ মহলের উস্কানী", "বিদেশের ষড়যন্ত্র" ইত্যাদি আখ্যায়িত করা হয়েছে। মূল সমস্যাকে বারবার পাশ কাটিয়ে দমন-পীড়ন নীতিতে শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ করার চেষ্টা কর হয়েছে। তাই সরকার পরিবর্তন হলেও শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ হয়নি।

আশার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও উপলদ্ধি করেছেন, পোশাক শ্রমিকের বর্তমান ন্যূনতম মজুরি অপ্রতুল ও অমানবিক। তাই সরকার মালিক পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অবশ্য ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি উঠেছে। কারণ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে কম মজুরিতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় টিকে থাকতে পারছেন না শ্রমিকরা। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হোক, যাতে তারা মোটামুটি খেয়েপরে কাজে যোগ দিতে পারে।

তাদেরকে সুস্থ রাখতে পারলে উৎপাদনশীলতাও বাড়বে, যা এই শিল্পের উন্নতির জন্য হবে সহায়ক। অবশেষে আজ (জুলাই ২৯, ২০১০) পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের তিন হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে। শিক্ষনবীশ শ্রমিকরা পাবেন আড়াই হাজার টাকা। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য তিন হাজার টাকা যথেষ্ট নয়, তারপরেও "better than nothing"।

শুধু বেতন বাড়ালেই পোশাক শিল্পে নৈরাজ্য ভাংচুর বন্ধ হবে না যদি শ্রমিকেরা আরো সংযমী ও ধৈর্য্যশীল না হয় এবং মালিকপক্ষ যদি শ্রমিকদের দুঃসময়ে কাছে এসে না দাঁড়ায়। তুচ্ছ কারণে বা কথায় কথায় জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে কারখানা ভাংচুর, সম্পদ নষ্ট করে কখনও মালিকের আন্তরিকতা লাভ করা যায় না। কিছু অতি-উৎসাহী উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকের আক্রমণাত্মক কার্যকলাপে মালিক-শ্রমিক দুইপক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়, লাভ হয় তৃতীয় পক্ষের। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের মালিকদেরও আরো আন্তরিক হতে হবে। শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্প গার্মেন্টস সেক্টরে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক - কামনা করি।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.