আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কী হবে?গার্মেন্টস শ্রমিক যৌন নিপীড়নের হাত থেক রক্ষা পাবে কি!

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কী হবে? কারণ গার্মেন্টস মালিকদের কোনো অসুবিধা না হলেও শ্রমিকদের পক্ষে কোনো ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও তৎপরতা, দরকষাকষি বা সমস্যা সমাধানের কথা জানানোর সুযোগ এখন আরো সংকুচিত। দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকায় ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতা নিষিদ্ধ। কিন্তু যেখানে শ্রমিকদের মৌলিক মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারসহ জীবন-যাপনের প্রশ্ন জড়িত সেখানে কিছু বিষয় না জানালেই নয়। এই সরকারের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কিছু বিষয় উপস্থিত করাও প্রয়োজন বলে মনে করছি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় কয়েক দফায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের অভূতপূর্ব ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন হয়েছিল; কিন্তু অনেকগুলো দাবী এখনো ঝুলে আছে।

আমাদের দেশের বহু পুরনো প্রচলিত শ্রম আইনেও শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা, কাজের পরিবেশ, সাপ্তাহিক ছুটি, ওভারটাইম, নিয়োগপত্র, নারী শ্রমিকদের বিশেষ কাজের শর্ত ইত্যাদি যা কিছু অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলো গার্মেন্টস খাতে প্রায় দেখাই যায় না। আন্তôর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিধান অনুযায়ী এবং অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ীও এসব অনিয়ম, অন্যায় বা অবিচারের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের একমাত্র অবলম্বন হলো ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। গার্মেন্টস মালিকদের শক্তিশালী সংগঠন আছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সে রকম কোনো ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন নেই। ক্ষমতায়, যোগাযোগে, প্রভাব-প্রতিপত্তি-সামর্থø, টাকা-পয়সায় মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্লা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তাহলে এই ২২ লাখ নারী-পুরুষ শ্রমিক কীভাবে তাদের মৌলিক মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারসহ মর্যাদাপূর্ণ জীবন-যাপনের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করার কথা জানাবেন? কীভাবে তারা নিশ্চয়তা পাবেন, অন্যায় শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রতিবাদ জানানোর কারণে তাদের কাজ যাবে না? তাদের ওপর জেল-জুলুম হবে না? এর কোনো নিশ্চয়তা আছে কি? কারণ তারা যে কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে সেখানে নিযুক্ত হয়ে নিয়মিত কাজ করেন, তার প্রমাণই বা কোথায়? তাদেরকে তো নিয়োগপত্রই দেওয়া হয় না।

দেশে যখন জরুরি অবস্থা থাকে না তখনও তো গার্মেন্টস শ্রমিকরা সে রকম অন্যায় শোষণ-বঞ্চনার শিকার। এভাবেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা দিন-মাস-বছর কাটাতে বাধ্য হয়। নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নেই, কর্মঘণ্টার ঠিক নেই, মজুরি তো খুবই কম তারপর কয়জনে নিয়মিত পায়? ওভারটাইম করানো হয় কিন্তু তার কর্মঘন্টা অনুযায়ী মজুরির হিসাবও পাওয়া যায় না। নানা গালিগালাজ আর কুৎসিত ব্যবহার তো আছেই। অসংখ্য নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।

ড· দীনা সিদ্দিকীর এক গবেষণায় জানা যায় যে, একটি মেয়ে সারারাত বাধ্যতামূলক ওভারটাইমের কাজ করার সময় রাত ৩টায় মালিক কতৃক ধর্ষিত হয়, তার পরা কাপড় সব ছিঁড়ে ফেলে মালিক বাহাদুর। ধর্ষণ করে মালিক গভীর ঘুম দিতে চলে গেল। আর আশপাশের নারী শ্রমিকদের স্তব্ধ অবস্থার মধ্যে মেয়েটি ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে কাঁদতে থাকল। ভোর হলো। মেয়েটি বাড়ি যাবে কীভাবে? ওর গায়ের কাপড় পরে রাস্তায় বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।

সঙ্গী মেয়েরা ফিসফিস করে গার্ডের সঙ্গে আলাপ করে। না, গার্মেন্টসের ভেতরের কোনো কাপড় নেওয়া যাবে না। তাহলে মেয়েটা যাবে কীভাবে? এভাবে থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যে আরো বহু শ্রমিক এসে হাজির হবে। অবশেষে একটা বিবর্ণ কাপড় ধার হিসেবে পাওয়া গেল। অন্য মেয়েরা একটু নড়াচড়া করতে চাইল, থেমে গেল মাস্তানদের ঝাড়িতে।

ধর্ষিতা মেয়েটি দুদিন আসতে পারল না কাজে। সব অপমান আর কষ্ট চেপে তৃতীয় দিন কাজে এলো, এসে জানলো তার কাজ নেই, কারণ সে দুদিন আসেনি! সবাই না হলেও অনেক মালিক মাস্তান পোষে, ঝুট ব্যবসার বিরাট গ্যাং থাকে। শুধু কারখানার ভেতর মালিক বা অন্য কর্মকর্তা নয়, পথে-ঘাটে এই মাস্তানদের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয় নারী শ্রমিকরা। প্রায় প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় দেখা যায়ঃ গার্মেন্টস শ্রমিক ধর্ষিত, কিংবা ধর্ষণের পর নিহত। যথাযথ ব্যবস্থা না রাখায় বিভিন্ন কারখানায় আগুন লেগে, ধসে পড়ে এ পর্যন্তô নিহত হয়েছেন কয়েক শ’ শ্রমিক।

এ ধরণের দুর্ঘটনার জন্য কোনো মালিক বা সংশিষ্ট কর্মকর্তারই এ পর্যন্তô বিচার বা শাস্তিô হয়নি। যদি শ্রমিকের ওপর এসব শোষণ-নিপীড়ন-অবিচার আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনী প্রতিকার বা সুরাহার ব্যাপারে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে দেশে সুশাসন কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? আর কতদিন এভাবে চলবে? এরিস্টটল দাসদের নাম দিয়েছিলেন সবাক জীবেরা, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সেভাবেই রেখেছে। কিন্তু এইসব সবাক জীবেরা যেহেতু মানুষ সেহেতু বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় এসব হজম করার একটা সীমা আছে। সে কারণেই গত ২১/২২ মে ২০০৬ ঢাকা শহর ও আশপাশে শ্রমিকদের এক অভ্যুত্থান হলো। তারপরই তো মালিকরা আলোচনায় বসলেন।

গত ১২ জুন ২০০৬ ত্রিপীয় চুক্তি স্বারিত হলো। কিন্তু যৌন নিপীড়নের বিষয়টি আলোচনাতে আসেইনি। অথচ যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তôবায়নও একটি জরুরি দাবি বটে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে নূন্যতম মজুরি ছাড়াও আরো কিছু দাবী ছিল। বলা হয়েছিল পরবর্তী এক মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র প্রদান, ৮ ঘণ্টা শ্রমদিবস, সাপ্তাহিক ছুটি, কাজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, সব বকেয়া পরিশোধ, সংগঠনের অধিকার, ওভারটাইম মজুরি নির্ধারণ নিশ্চিত করা হবে।

যা এক মাসের মধ্যে করার কথা তা বছর পার হলেও সব কারখানায় তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। বিগত বিএনপি-জামায়াত-জোট সরকার এ ব্যাপারে যথারীতি নির্লিপ্ত ছিল। যদি ঘটনা এ রকমই হয়ে থাকে যে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ চুক্তি করেছে কেবল শ্রমিকদের ক্ষোভের আন্দোলন থামানোর জন্য এবং মালিকপক্ষের উদ্দেশ্যই ছিল এগুলো বাস্তবায়ন না করা- তাহলে এর ফলাফল কী দাঁড়ালো? কী ভরসায় শ্রমিকরা ভবিষ্যতে তাঁদের সঙ্গে বসবেন বা কথা বলবেন? এ রকম চলতে থাকলে ক্ষোভ বিক্ষোভ আন্দোলনের ধরন কেমন দাঁড়াবে? শ্রমিকদের যেসব দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়, সেসব দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ৩,০০০ টাকা মজুরি। কিন্তু সরকার ও মালিকপরে সম্মতিতে নূøনতম যে মজুরি ঘোষণা করা হয় তা হলো ১৬৬০ টাকা। গার্মেন্টস মালিক ছাড়া এ পর্যন্তô আর কোনো ব্যক্তির মুখে এ রকম নিম্ন মজুরিকে যৌক্তিক বলতে শুনিনি।

বুর্জোয়া অর্থশাস্ত্রের কোনো মডেল দিয়েও এটাকে যুক্তিযুক্ত বলে প্রমাণ করা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতির হিসাব অনুযায়ী ৩,০০০ টাকা নির্ধারণের দাবিও ঠিক মজুরি বৃদ্ধির দাবি নয়। ১৯৯৪ সালে যে খুবই কম নূøনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল, যদি তার সমান মজুরিও দিতে হয় তাহলেও ডলারের দাম ও বাজারের সামগ্রিক পণ্যদ্রব্যের দাম বিবেচনায় নূøনতম মজুরি হতে হয় ২২০০ টাকা। মাথাপিছু গড় আয় অনুযায়ী মজুরি দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার টাকা। ১৯৬৯-‘৭০ সালে ঘোষিত নূøনতম মজুরির সমান মজুরি দিতে হয় তাহলে দিতে হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা।

যদি দারিদ্রøসীমার আয় ধরি, তাহলেও চারজনের একটি পরিবারের জন্য কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। বর্তমান বাজার দরে অদ দিনমজুরের দৈনিক মজুরি ১০০-১৫০ টাকা হিসাব করলেও মাসিক পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা। বিশ্বের সর্বনিম্ন মজুরির সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনধারণ মেলানো যায় না। অথচ মালিকদের বক্তব্য এই যে, মজুরি বৃদ্ধি করলে তারা নাকি টিকতে পারবেন না। কথাটা সত্যি নয়।

বিলাসী জীবন যাপনসহ বিশাল অংকের মুনাফা-শোষণ-লুণ্ঠন নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র শ্রমিককেই দাসের জীবনযাপন করতে হবে কেন? বাঁচার মতো মর্যাদাপূর্ণ নূøনতম মজুরি জাতীয়ভাবে নিশ্চিত করা পুঁজিবাদী বিশ্বেও এখন সাধারণ প্রবণতা। সেই নূøনতম মজুরি দিয়ে যদি কোনো কারখানা বা ব্যবসা চলতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে সেই কারখানার নিজস্ব চলৎশক্তি ও তার ভবিষ্যৎ নেই। পরিণত বুর্জোয়ারাও জানে তার স্বার্থেই মজুরি বাঁচার মতো মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় চাহিদার একটি সীমার নিচে নামানো চলে না। বাংলাদেশের মালিকপক্ষ শিল্পপতিরা পুঁজিবাদী অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম মানতেও রাজি নন, তারা দাসপ্রথা বা সামন্তô নিয়মে চলতে আগ্রহী। কিন্তু পৃথিবীতে তো এখন আর দাস যুগ বা সামন্তô যুগ বলে কিছু নেই।

এমনিতে বাংলাদেশের মানুষ গার্মেন্টস মালিকদের অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। শুল্কড়্গমুক্ত আমদানি-রফতানিও একধরনের ভর্তুকি, এছাড়া ঋণ সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা-সমর্থন তো আছেই। সর্বোপরি জাতীয় বাজেটে প্রতি বছরে জনগণের টাকা থেকে থোক বরাদ্দ। আর যে কোনো ঝড়, বাদল, বন্যা ইত্যাদিতে ক্ষতিপূরণও আছে। তাদের সমর্থনে সরকার আগে টাকা অবমূল্যায়ন করত; এখন টাকার মান নেমে যেতে দেয়, উঠতে থাকলে ঠেকায়।

এতসবে মালিকের আপেক্ষিক আয় অনেক বাড়ে। ওই আয়ের কোনো ভাগ শ্রমিকরা পায় না। বিদ্যুৎ, বন্দর, অবকাঠামো নিয়ে সমস্যার কারণে যদি উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, তাহলে তা নিয়ে দেনদরবার করার শক্তি মালিকপরে আছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি ভাগীদারদের সুপার প্রফিটের কারণে শোষণ-বঞ্চনার বোঝা শ্রমিকরা অনন্তôকাল বহন করতে রাজি নয়। শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য অসম্ভব মাত্রার নিম্ন মজুরি দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে মালিকপরে।

গার্মেন্টস মালিকদের এই ঠকানোর অভ্যাস পরিবর্তন করা রাষ্ট্র-সরকার-প্রশাসনের পক্ষে কঠিন বটে, কিন্তু অসম্ভব নয়। অনেক সময় কোনো কোনো শ্রমিক নেতারা মানবিক কারণে মজুরি বাড়াতে বলেন। অথচ এটা মালিকদের দয়া দক্ষিনার বিষয় নয়, দাবিটি ন্যায়সঙ্গত যুক্তি, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও তথ্যের। এখন ১৬৬০ টাকার যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা যুক্তি বা তথ্য দিয়ে নয়, করা হয়েছে গায়ের জোরে। এ রকম পরিপ্রেক্ষিতই গত ১০ ও ১৫ অক্টোবর গার্মেন্ট শ্রমিকদের ধর্মঘট হয়েছিল।

এছাড়া তাদের তাহলে কী করার থাকে? আমি যদি শ্রমিকদের ‘গঠনমূলক’ পরামর্শ দিতে চাই কী পরামর্শ দিতে পারি? মালিক-সরকার চুক্তি করে বাস্তôবায়ন করবে না, বহু বছরের অমানবিক জীবন অব্যাহতই থাকবে, আবার কোনো সংগঠন বা প্রক্রিয়াও থাকবে না, যা দিয়ে বিষয়গুলো সুরাহা করার রাস্তাবের করা যায়; তাহলে কী পথ থাকে শ্রমিকদের সামনে? মালিকপ তাদের কী বলবে? তারা তো শ্রমিকদের দাবি মানছে না, চুক্তি যা করেছে তাও বাস্তôবায়ন করছে না, তারপরও শ্রমিকদের চুপচাপ থাকতে হবে? কথা না শুনলে পুলিশ, র‌্যাব, সামরিক বাহিনীর ভয় তারা দেখাতেই পারেন। তাদের সেই জোর আছে। ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখাতে পারেন তারা। দেখিয়েছেনও সবই। শুনেছি মালিকরা র‌্যাবকে তিনটি গাড়ি উপহার দিয়েছেন।

তার অর্থ কী? ধর্মঘটের ডাক যারা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি তাদের লিফলেট থেকে ধরে ধরে নাম উল্লেখ করে দুস্ড়্গৃততকারী বলেছিলেন। যারা অবিচার-অনিয়মের বিরোধিতা করছেন তারা যদি দুস্ড়্গৃততকারী হন, তবে যারা এসব অনিয়ম-অবিচার করেন, শ্রমিকের হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া রাখেন, নির্যাতন আর দাসশ্রমের ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন বরং তাদেরকে দুস্ড়্গৃততকারী নামে অভিহিত করা উচিত বলে মনে করি। মালিকরা ভাংচুরের অভিযোগ তুলেছেন। কারা এসব ভাংচুর করে? কারখানা ভাঙলে মালিকপ বীমা ও তিপূরণের টাকা পেতে পারেন। কারখানা ভাংচুর করলে তাতে শ্রমিকের কী লাভ? শ্রমিকের তো এই কারখানাই জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

কারখানা না থাকলেও অনেক মালিকের আয়ের বহু উৎস আছে, কিন্তু শ্রমিকের তো আর কোনো উপায় নেই। শ্রমিকরা চায় তাদের দরকারে কারখানা চলুক। আর তাতে তাদের বেঁচে থাকার মতো একটা সংস্থান হয়। ২০টি মাইক্রোবাসে কাদের মাস্তানরা সেদিন বিভিন্ন কারখানায় আর শপিং মলে হামলা চালিয়েছিল সেটা তদন্তô করলে মালিকপরে খুব সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। যারা আদর্শিক রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বোধ থেকে চরম অন্যায় অবিচার থেকে শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য না খেয়ে-দেয়ে সংগ্রাম-সংগঠন-আন্দোলন ও কাজ করেন তাঁদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে অনেক।

তাঁদের ছাড়াও ১০ হাজার শ্রমিককে আসামি বানানো হয়েছে! তখন দুই শতাধিক শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল দ্রুত বিচার আইনে। প্রকাশ করায় বিধিনিষেধ থাকলেও শ্রমিকদের মধ্যে এই প্রশ্ন এখনো জোরদার বছরের পর বছর শ্রমিক হত্যা, শোষণ-নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, প্রতারণা আর পাওনা আত্মসাতের দায়ে যারা অভিযুক্ত তাদের বিচার কি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতে পারবেন না? বছরের পর বছর শ্রমিক হত্যা, শোষণ-নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, প্রতারণা আর পাওনা আত্মসাতের ঘটনাও তো এক ধরণের দুর্নীতি ও বড় ধরণের মার অযোগ্য অপরাধ। সবল সন্ত্রাসী-খুনিদের জামিন হয়, অপুষ্ট-দুর্বল শ্রমিকদের হয় না। হুমকি-ধমকি চলছে, আছে। মাস্তানরা তখন নানা জায়গায় হামলা করেছে, হামলা করেছে পুলিশ।

ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে সর্বত্র। অনেকের গায়ে এখনো দাগ আছে, অনেকেই পালিয়ে আছে। ত্রি-পীয় চুক্তি আর এতকিছুর পরও ১৬৬০ টাকাও বাস্তôবায়ন হয়নি অনেক জায়গায়। নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটি, বকেয়া, ওভারটাইম এগুলোও এখনো আগের মতোই। এভাবেই সবকিছু এখনো আটকে আছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এগুলো নিয়ে কী করবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.