তারা বলে সম্ভব না, আমি বলি সম্ভাবনা
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসকদের যৌন হয়রানির মানসিকতা, অপেশাদারিত্ব, দালালদের দৌরাত্ব, মাদকাসক্তদের কুরুচিপূর্ণ আচরণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
গত কয়েকদিন সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রশাসনের যোগসাজসে এক সংঘবদ্ধ চক্র এইসব অপতৎপরতায় জড়িত। সুর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থাকছে বহিরাগত সন্ত্রাসী চক্রের দখলে। এসময় হাসপাতাল এলাকায় নিবিঘ্নে চলে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দেহব্যবসার মতো নানা অসামাজিক কর্মকান্ড।
অভিযোগ রয়েছে, দালাল সর্দার মনিরের নেতৃত্বে মিলন, সিদ্দিক, রায়হান, জাহাঙ্গীর, রাকিব, আনিসসহ ১০-১৫ জন) দীর্ঘদিন ধরে এসব অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসকল অপকর্মের পেছনে ‘নাটেরগুরুর’ ভূমিকায় রয়েছেন ওই হাসপাতালেরই জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা· সাইফুল করিম।
রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক প্যাথলজিক্যাল সেন্টার। এরমধ্যে ঢাকা ল্যাব, স্মাইল ডায়াগনষ্টিক, ইউনি ল্যাব এবং নিউ ক্যাপিটাল ক্লিনিকের সঙ্গে ঘনিষ্ট সর্ঙ্ক রয়েছে ডা· সাইফুল করিমের । এসব প্যাথলজি সেন্টার থেকে বাৎসরিক ৪-৫ লাখ লাখ টাকা দাদন (্এ্যাভান্সড কমিশন) নিয়ে জরুরী বিভাগের রোগীদেরকে ওই সব সেন্টারে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রেফার (বাধ্য) করে থাকেন।
জানা যায়, দালালদের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনা এবং মানসম্পন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট না করার অভিযোগে গত এক বছরে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) অভিযান চালিয়ে কলেজগেট এলাকার ফেমাস ডায়গনষ্টিক সেন্টার, মেডিল্যাব, মহানগর মেডিকেল সার্ভিসেস এবং টেকনো ডায়াগনসিস সেন্টারসহ অন্তত ১০টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। কোন ধরণের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অর্থলোভে ডা· সাইফুল করিমসহ কয়েকজন চিকিৎসক দালালদের মাধ্যমে রোগী পাচার করতেন। গত ৩০ এপ্রিল এমনই একজন রোগীকে ডা· সাইফুল করিম তার অনুগত দালালের মাধ্যমে লালমাটিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে পাচারের সময় রোগীর আত্নীয়রা আনিস নামের এক দালালকে গণধোলাই দেয়। এছাড়াও গত এক বছরে পুলিশ এই এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ি, মাদকসেবী, ছিচকে চোরসহ শতাধিক ব্যাক্তিকে আটক করেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এই চক্রটির রয়েছে ওষুধ চুরির শক্তিশালী সিন্ডিকেটও।
জরুরী বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত ওষুধের একটি বড় অংশই পাচার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ফার্ম্মেসীগুলোতে। অসহায় রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের ওষুধ আবার উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রের দাবি, নানা কারণে গত ২ বছরে ১৫ শতাংশেরও বেশিহারে হ্রাস পেয়েছে রোগীর সংখ্যা।
বিস্ময়কর হলো, ডা· সাইফুলের অন্যসব অপরাধ ঢাকা পড়ে গেছে অসহায় মহিলা রোগীদের অভিনব উপায়ে যৌন হয়রানির কাছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের মহাপরিচালক ও হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে আদাবর এলাকার গৃহবধু সাহিদা জামান বলেন, ‘পায়ে ব্যাথা নিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসি।
ওই সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ছিলেন ডা· সাইফুল করিম। তিনি ব্যাথা দেখার নামে শরীরের বিভিন্নস্থানে হাত দেন এবং তার বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দেন। বাসায় যেতে না চাইলে অতি উচ্চমাত্রার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে তার েঙ্শাল কক্ষে নিতে যেতে চান। ডাক্তারের কৌশল বুঝতে পেরে কথা বলার এক ফাঁকে দৌঁড়ে পালিয়ে সম্্ভ্রম রক্ষা করি’। প্রায় একই ধরণের অভিযোগ করেন আগারগাঁও এলাকার ফারিয়া ইসলাম নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী।
তিনি বলেন, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় তীব্র শ্বাস কষ্ট নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তিনি। ডাক্তার সাইফুল করিমের কাছে পৌঁছালে সঙ্গে থাকা ছোট ভাইকে বাইরে অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে চিকিৎসার নামে ওই ডাক্তার তার শরীরের র্ঙ্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকেন। উত্তেজিত ডাক্তার সাইফুল তাকে কয়েকদফা জড়িয়েও ধরেন। এমনকি ভাইকে রেখে নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ারও চেষ্ঠা করেন এবং ধীরে-সুস্থে ভালভাবে চিকিৎসা করার লোভ দেখান।
‘পরিস্থিতি বুঝতে পেরে টয়লেটে যাওয়ার নাম করে আমি (ফারিয়া) ওই রুম থেকে বের হয়ে কোন রকম মান-সন্মান নিয়ে পালিয়ে আসি’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডা· সাইফুল ইতোপূর্বে হাসপাতালের মধ্যে নারীঘটিত কেলেংকারীর অভিযোগে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে দু’বার মুচলেকা দিয়েছেন। এই চিকিৎসক সরকারি আইন অমান্য করে ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘ ১৩ বছর সোহরাওয়াওয়ার্দী হাসপাতালেই চাকুরী করে যাচ্ছেন। নানান অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী উঠলেও রহস্যজনক কারণে তা হচ্ছে না। এরফলে তার নানা অপকর্মের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না সহকর্মীরা।
পঞ্চাষোর্ধ এই চিকিৎসক বিয়ে না করেও হাসপাতালের বিবাহিত চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারে বাস করছেন। এই কোয়াটারে বসবাসকারি একাধিক পরিবারের সদস্যদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে নারীলোলুপ ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়তই তার কারণে অনেকে পড়ছেন বিব্রতকর অবস্থায়ও।
৩০ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর থেকে আয়নাল ও ছালমা বেওয়া নামে দু’জন রোগী চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা· সাইফুল করিম তার বিশেষ (!) মেহমানদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত আছেন।
তবে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, সুদর্শন মহিলা ও তার অপকর্মের সহযোগীরা কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়াই সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা· সাইফুল করিম বলেন, অর্থ আয়ের চেষ্ঠা কে না করে। আমরা সবাই নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তবে, যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে থাকলে এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর মজিবুর রহমান বলেন, দালালদের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন।
দালাল রুখতে প্রায়ই কার্যকরী পদক্ষেপ নেই আমরা। এমনকি নিরাপত্তা কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে ১০ মিনিট পর পর অব্যাহত ঘোষণা করে ‘চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বাইরে যাবেন না-দালালদের খপ্পরে পড়বেন না’। ডা· সাইফুলের বিরুদ্ধে পরিচালক বরাবরে দেয়া যৌন হয়রানির অভিযোগের অনুলিপি এ প্রতিবেদকের কাছে থাকলেও কোনো অভিযোগ পরিচালক পাননি বলে দাবি করেন। তবে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডা· সাইফুল করিম অত্যন্ত ধুরন্ধর স্বভাবের।
তাঁর অব্যাহত অপকর্মে ডাক্তাররা বিব্রত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন দু’জন কর্মকর্তার খুটির জোরে তিনি একের পর এক অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এমনকি সাইফুলের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত, বদলি কিংবা কোনরূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পর্যন্ত গ্রহন করছে না।
একুশে টেলিভিশন এবং অন্তত: ৮টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সমূহের লিংক:
একুশে টেলিভিশন:
http://www.youtube.com/watch?v=CQWQviQs_EQ
কালের কন্ঠ:
Click This Link
উইকলি ব্লিটজ:
Click This Link
নিউ নেশন:
Click This Link
ভোরের কাগজ:
Click This Link
এছাড়াও লম্পট ওই চিকিৎসকের নানা অনিয়মের উপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে - দৈনিক যায় যায় দিন, ভোরের ডাক, বাংলাবাজার এবং নিউজ টুডে পত্রিকায়। এসব সংবাদপত্রের যথাযথ আরকাইভ না থাকায় লিংকগুলো দেয়া গেল না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।