আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসপাতালের ৪২ দিন

কিছু হাসি মানুষকে কাঁদায়, কিছু হাসি মানুষকে আনন্দিত করে।

আমি ভালোই ছিলাম। ঢাকা এসে কাজের পাশাপাশি ডিপ্লোমা করছিলাম। ডিপ্লোমা শেষে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য আমার যাবতীয় কাগজপত্র আনতে আমার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে গিয়েছিলাম। শরীরটা সামান্য অসুস্থ ছিল।

এরকম অসুস্থতা মাঝে মাঝেই হয়। স্বাভাবিক ভাবেই তা আবার সেরে যায়। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম। ঢাকা আসার পর জ্বর একটু বেশি রকমই বেড়ে গেল। আমার ঢাকার এক কাজিনের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চেক-আপ করালাম।

কিন্তু কোন রোগ ধরা পড়ল না। ডাক্তার প্যারাসিটামল খেতে বলেই বিদায় করে দিলেন। দু'দিন খেলাম। কিন্তু কোন কাজ হলো না। দিনের বেলা আমি একটু ভালোই থাকতাম আর রাত হলেই জ্বর একশো তিন পর্যন্ত উঠে যেতো।

এমন অবস্থা হলো যে নড়াচড়া করতেই পারতাম না। শেষে আম্মুর কাছে ফোন করলাম আমি অসুস্থ, আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও। সেদিনই আম্মু এসে আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। মানিকগঞ্জে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলাম। অবস্থা যখন খুবই খারাপ তখন সদর হাসপাতালের এক ডাক্তার আমাকে দেখেই বললেন যে আমার পারফোরেশন হয়েছে।

যত শীঘ্র সম্ভব আমাকে ঢাকা নিয়ে অপারেশন করতে হবে। নতুবা দেরী হলে বাচানো অসম্ভব হয়ে যাবে। সেদিনই আমাকে হাসপাতালে এনে ইমার্জেন্সী অপারেশন করা হলো। আমি কিছুই বলতে পারবো না। কারণ আমার পেটে এতো ব্যথা হচ্ছিল যে অন্য দিকে খেয়াল করার সুযোগই ছিল না।

ক'দিন জ্ঞান ছিল না আমি বলতে পারবো না। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। পেটের মাঝে এবং ডানপাশে ব্যান্ডেজ। বামপাশে পাইপ লাগানো। কথা বলার কোন শক্তি ছিল না।

আমার সাথে একই রোগের জন্য আরো চারজনের অপারেশন হয়েছিল। আমি হাসপাতালে থাকতেই দু'জনের মৃত্যু হয়। একজনের পরে। আমি পরে জেনেছিলাম টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল আমার। সেখান থেকেই আমার এ অসুখের উৎপত্তি।

জ্বর এবং ঔষধ দুটো মিলে আমার খাদ্যনালী ছিদ্র করে ফেলে। জীবনে এই প্রথম হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতালের ৪২টি দিন উপভোগ করেছি অনাগত মৃত্যুকে। মৃত্যু আমার কাছে আসতে পারেনি আমার মা-বাবা আর ঢাকাতে আমার পরিচিত কিছু লোকের সেবা আর পরিশ্রমে। আমাদের সামহ্যোয়ারের বালি ভাইও আছেন এর মধ্যে। বালি ভাই, আমার কাছের দুই বন্ধু মিজান ও অপ্সরা এবং আমার কলিগ সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

আমার সামান্য ভুল আর সরকারী ডাক্তারের কিছু অবহেলা আমাকে পৌছে দিয়েছিল মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। আজ আমি সুস্থ। বাচ্চাদের মতো আম্মুর কাছ থেকে বহু উপদেশ নিয়ে তবেই ঢাকা আসতে পেরেছি। তাই আজ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন তার নতুন জন্ম পাওয়া তেইশ বছরের খোকা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.