আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসময়ের প্রেম।

ভাবনার জগত পৃথিবীর তুলনায় এক অপরিসীম মহাসাগর। পৃথিবীকে বলি, আমাকে ভাবতে দাও। আমাকে ভাবতে দাও। আমাকে ভাবতে দাও। অতীত , বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কে নিয়ে আমি ভাবতে চাই। তবে নিজের ভাবধারায়। আমি আমার পথের সূচনা করবো ভাবনার জগত এর মধ্য দিয়ে। www.facebook.com/sifat.i

একটা ছেলে হেটে আসছে ক্লাসের দিকে.... নারকেল তেল দিয়ে সুন্দর করে সিথি করে আচড়ানো তার চুলগুলো.... রোদের আলোয় চিকচিক করছে..... ছেলেটা বয়সের তুলনায় একটু বেশি ই মোটা.... বেশি নাহ ঠিক.... অত্যধিক মোটা বলা যায়..... গায়ের রং কুচকুচে কালো.... ক্লাসে এসেই ফাস্ট বেঞ্চে বসল.... নতুন ক্লাসে প্রথম দিন.... ক্লাসে ফাস্ট বয় ছেলেটা.... ক্লাস শুরু হয়ে গেল.... ছেলেটির ডান পাশে একটু ফাঁকা জায়গা তারপর ই মেয়েদের সাড়ি.... ঠিক এই ছেলেটার মত ই মেয়েটি.... কিন্তু গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা..... ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল.... ছেলেটির জন্য ফাস্ট হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি মেয়েটার...... মেয়েটার দেহ থেকে এক ধরনের বিমোহিত করা সুঘ্রান আসছে.... ছেলেটা সেই ঘ্রানে একটু একটু বিব্রত বোধ করছে.... ছেলেবেলা থেকেই মেয়েদের ভয় পায় ছেলেটা..... এমন করে দিন চলতে থাকে.... একদিন তাদের মাঝে একটু কথা হয়... পরের দিন আরেকটু হয়...এভাবে বাড়তে থাকে তাদের কথা.... একদিন ছেলেটা না বুঝে মেয়েটার একটা নোট খাতা ছিড়ে ফেলে.... মেয়েটা তৎক্ষনাৎ কেঁদে দেয় সবার সামনে.... এরপর থেকে তাদের আর কথা হয় নাহ...... একমাস যায়, দুই মাস যায়.... ছেলেটি এখন আর মেয়েটির পাশের সিটে বসে নাহ..... তিন মাস গেল.... রোজার ছুটি হল.... চার মাস পর ছেলেটি এসে ঠিক সেই প্রথম দিনের বেঞ্চে বসল.... মেয়েটিয়ো ছেলেটার পাশে ঠিক আগের যায়গায়.... মেয়েটি ছেলেটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার বান্ধবীকে সরি বলার কথা বলল.... কিন্তু পাষাণ ছেলে, সরি বলে নাহ..... না পেরে সেই সিক্সে পড়ুয়া বাচ্চা মেয়েটি আগ বাড়িয়ে এল সরি বলতে.... তাদের মধ্যে আবার কথা শুরু হল.... মেয়েরা ছেলেটাকে ডাকত কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বলে.... তার হাতে থাকত একটা সোনালী রং এর ঘড়ি... ফাস্ট হয়েছে বলে মামা পাঠিয়েছে সৌদি আরব থেকে.... বিষয়টা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাগুলোর কাছে একটা হাসির বিষয়.... কিন্তু ছেলেটা পাত্তা দেয় নাহ....... আচ্ছা, ক্লাস সিক্সে পড়া একটা ছেলে কিংবা একটা মেয়ের কাছে প্রেম কি?? ভালবাসাই বা কি?? তাদের বন্ধুত্ব থেকে তাদের মধ্যে জন্ম হচ্ছিল দূর্বলতার.... কিছু পারিবারিক সমস্যা এবং কিছু খারাপ ছেলের সাথে মেশার ফলে ছেলেটার রেজাল্ট দিন খারাপ হচ্ছিল.... ছেলেটা ছিল সবচেয়ে কুৎসিত আর মেয়েটা ছিল সবচেয়ে সুন্দরী.... যে বয়সে তারা ভালবাসা কিংবা প্রেম বুঝে উঠল না সেই বয়সেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে গেল..... ছেলেটার ফলাফল বেশ খারাপ.... ফাস্ট বয় থেকে এক ধাক্কায় লাস্ট বয়.... সেকালে মোবাইল ছিল নাহ... মাঝে মাঝে চিরকুট দেয়া নেয়া হত.... বয়সটাই এমন ছিল যে তারা একে অপরকে ভালবাসি কথাটা বলতেও লজ্জা পেত..... ক্লাস সেভেনের মাঝামাঝি.... ছেলেটার কাছে অন্য একটা মেয়ে এসে অন্য ছেলের ব্যাপারে খবর নিল.... ছেলেটার সাথে মেয়েটাকে দেখে প্রেমিকা মেয়েটা রেগে গেল.... এবং সম্পর্কের ইতি টানল.... ছেলেটাকে যাচ্ছে তাই ভাষায় অপমান করল..... ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেটার হাতে সিগারেট.... যে বয়সে সে শিখছে সিগারেট একটি বিষের নাম.... সেই বয়সেই সে সিগারেট ধরানোর জন্য আনাড়ির মত যুদ্ধ করছে..... প্রথম টান তারপর একটু......একটু..... শেষমেশ বুক ভরে অনেক..... এক বছর গেল.... কেউ কারো সাথে কথা বলে নাহ.... একদিন মেয়েটা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এল.... ছেলেটা শুনল.... কিন্তু জবাব দিল নাহ কোনো..... একসময় মেয়েটা চলেও গেল.... ছেল্বটা ঠায় দাড়িয়ে র ইল.... আরও ছয় মাস গেল.... তারা এক সাথে ক্লাস করে.... দেড় বছর ধরে বুকে পাথর চাপা দিয়ে আছে ছেলেটা.... দেখতে চায় তার ভালবাসা কতটুকু পবিত্র.... নিজের জেদের কাছে পরাজিত হয়ে মেয়েটির কাছে যেতে চায়.... মেয়েটি ফিরিয়ে দেয়.... আবার অপমান করে.... তবু ও ছেলেটি ফিরে যায়..... একবার নয় বারবার.... শুধু একটু ভালবাসা চায়.... একটু ক্ষমা চায়..... তারা এখন নবম শ্রেণীতে... এক সেকশনে বসে ক্লাস করছে..... ছয় মাসের অনবরত চেষ্টায় মেয়েটার সাথে আবার সব ঠিক হয়ে গিয়েছে..... আজ থেকে সে আর সিগারেট খাবে নাহ..... শুধু মেয়েটাকে নিয়ে বাচবে..... কিন্তু সৃষ্টিকর্তারও বুঝি সুখ সহ্য হয় না..... মেয়েটি বান্ধবীদের স্মার্ট বয়ফ্রেন্ডদের দেখে ছেলেটিকেও স্মার্ট হতে বলে..... একদিন ক্রিম লাগিয়ে ফর্সা হতে বলে...... ছেলেটি দুঃখ পায়.... ছেলেটিকে তো সৃষ্টিকর্তাই কালো বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে..... ছেলেটির কি দোষ?? সে কি চাইলে পারবে কালো থেকে ফর্সা হয়ে আসতে?? স্বর্নের ভীড়ে কয়লা হয়ে র ইল ছেলেটি.... সেই থেকে শুরু হয়ে গেল আবার মানসিক অত্যাচার.... ভাল ছাত্র বলতে ছেলেটির আর কিছুই নেই.... বাবা মায়ের ভালো ফলাফলের আশা মাটি চাপা পড়ে গিয়েছে... ছেলেটি এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতের দিকে.... মেয়েটির একটা ছোটো বোন ছিল.... কালো ছেলেটাকে সে কখন ই দেখতে পারত নাহ.... আর এমন একটা ছেলের সাথে প্রেম করার জন্য আপুকে ধিক্কার দিত.... সব ই জানত ছেলেটি.... টু শব্দ পরযন্ত করে নি.... শুধু সহ্য করে নিয়েছে সৃষ্টিকর্তার দেয়া উপহার....... ছেলেটি মেয়েটার মন রক্ষা করে আর চলতে পারছে না.... হাজার রাত কেঁদে খুড়িয়ে খুড়িয়ে একটা বছর পার করেছে একসাথে.... কিন্তু আর হচ্ছে নাহ..... বিষয়গুলো নিয়ে মেয়েটা খুব কথা শুনাচ্ছে...... ছেলেটা জানে, মেয়েটা তাকে অন্বক ভালবাসে কিন্তু বোঝেনা মেয়েটিকে.... মেয়েটির এই অসম্ভব চাওয়ার কারনকে..... তাদের মধ্যে ভালবাসা ছিল অনেক... ছেলেটি ও জানত যে মেয়েটা তাকে অনেক ভালবাসত.... একটা সময় ছিল যখন এসব তুচ্ছ ব্যাপার গুলো সব অতিক্রম করে গেল.... নাহ পারছে নাহ ছেলেটি..... কিন্তু তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতেও পারছে নাহ.... কালো হয়ে জন্মানোর কারনে রাতে আধারে ছেলেটা কাদত.... রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ নিগ্রো বললেও ছেলেটার এত কষ্ট লাগত না যতটা কষ্ট লাগত তার ভালবাসার মানুষটির মুখে কটুক্তি শুনলে...... ইতি টেনে দিল তাদের সম্পর্কের..... কিন্তু কেউ ই পাড়ছে নাহ কাউকে ছাড়া থাকতে..... নিজের উপর শারীরিক অত্যাচার শুরু করল সে.....কিংবা মাঝে মাঝে একটু নেশা.... সব থেকে আলাদা হয়ে যেত সে..... সব বন্ধন ছিন্ন করে চলে যেতে চাইল..... কিন্তু ভিতুর আবার কিসের চলে যাওয়া?? আবার ফিরে গেল মেয়েটির কাছে.... কিছুদিন গেল.... কিন্তু আবার সেই আগের ঝামেলা..... ছেলেটি আর পারছে না..... খুব একা হয়ে গিয়েছে.... পাশে দাড়ানোর আজ তার কেউ নেই..... সে চায় না মেয়েটি তাকে নিয়ে সারাজীবন দুঃখ করুক... তাই চাইলো মেয়েটি তাকে ভুলে যাক..... ভুলানোর জন্য অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করার ছেষ্টা করল.... একটা সম্পর্ক হয়েও গেল.... মিথ্যা বলে সেই মেয়েটিকে কষ্ট দিয়ে জীবন দিয়ে সরিয়ে দিল........ সমাপ্তি ঘটল একটা নিষ্পাপ ভালবাসার......ভালবাসা কি তা বুঝে ওঠার আগেই...........

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।