আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসময়ের ছায়া

স্বপ্ন ছুঁয়ে

ঝুম বৃষ্টির মাঝে বাস থেকে নামতে নামতে ফরহাদ মনে মনে বলল , শালা। তবে কাকে উদ্দেশ্য করে তা বুঝা গেল না। তার টিউশনি নাকি বৃষ্টির উদ্দেশ্য কে জানে। ফরহাদ নিজেও মনে হয় জানে না। ক্লাশ শেষ করে এই টিউশনি করাতে আসা খুব ক্লান্তিকর।

কিন্তু কিছু কারার নেই। এই ছুটে চলা শহরে বেঁচে থাকতে হলে তার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রের এছাড়া কোন উপায় নেই। বৃষ্টি একটু কমে আসতেই রাস্তার পাশের দোকানটা থেকে বের হয়ে আসে ফরহাদ। মোড়ে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ায় সামাদ। এলাকার উঠতি মাস্তান।

কিন্তু ফরহাদ কে খুব সম্মান করে। এর পেছনে কাহিনী আছে। সামাদের ছোট ভাই ফরহাদের হলে ক্যান্টিন বয়। ছেলেটা মাঝে মাঝে ফরহাদের রুমে বসে পড়ে। একদিন হলে এসে উপস্থিত সামাদ।

"স্যার, আমার ভাইটারে আফনে মাঝেমইধ্যে আফনের রুমে পড়তে দ্যান, আফনে অনেক ভালো মানুষ", আরো অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে গিয়েছিল সামাদ সেদিন। এরপর এখানে টিউশনি করতে এসে আবার সামাদের সাথে দেখা। "স্যার ভালো আছেন?"। হাসে ফরহাদ। দ্রুত ছাত্রের বাসার দিকে পা বাড়ায়।

ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা আর বাসি চানাচুর সামনে রেখে চলে যায় কাজের মেয়েটা। এরা ভাবে কি? প্রাইভেট টিচাররা নাস্তা খাওয়ার জন্য হা করে বসে থাকে? তাই এই নাস্তা দিতে হবে? চিন্তা বাদ দিয়ে ছাত্রের খাতার দিকে তাকায় ও। টিউশনি করতে গেলে এসব অপমান গায়ে মাখলে চলে না। পুরো এক ঘণ্টা জ্যামে আটকে থেকে যখন হলে আসল তখন পুরো বিধ্বস্ত ফরহাদ। রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়তেই ফোন।

মা ফোন করেছে। "কি বললা?, রুমকিরে ডিস্টার্ব করতিছে স্কুলে যাওয়ার পথে?"। ফোনটা রেখে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে ও। রুমকিকে বিরক্ত করতিছে? ক্লাশ নাইনে পড়া বাচ্চা মেয়েটা , এখনো কোন কথা শুনলে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে যে মেয়েটা, তাকে? কেমন যেন হতাশ আর ক্লান্ত বোধ করে ফরহাদ। পরদিন সকাল আটটায় রিপার হলের সামনে দাঁড়িয়ে ফরহাদ।

ভার্সিটি বন্ধ থাকলে সকাল বেলাতেই ঘুরতে বের হতে হবে, রিপার কঠিন দাবি! সকালবেলায় নাকি রাস্তায় হাঁটতে অনেক মজা। "তোমার মন খারাপ কেন", বৃটিশ কাউন্সিলের সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে রিপা। "না", আস্তে বলে ও। "মনে তো হচ্ছে খুব ঝামেলায় আছো", ফরহাদের হাতটা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বলে রিপা। বিকেলে রিপা কে হলের সামনে নামিয়ে দিয়ে টিউশনি তে চলে যায় ফরহাদ।

"ওই ছেমড়ি তোর.....................", কথাটা কানে আসতেই ঘুরে দাঁড়ায় ফরহাদ। মোড়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা ছেলেগূলোর ভেতর একজন নোংরা কথাটা বলে সামনে হাঁটতে থাকা মেয়েটার উদ্দেশ্যে। কি যেন হয় ফরহাদের। ছুটে গিয়ে কলার চেপে ধরে ছেলেটার। অন্ধ রাগে ঘুষি বসায় ছেলেটার নাকে।

ততক্ষনে ফরহাদ কে জাপটে ধরে ফেলেছে অন্য ছেলেগুলো। হঠাৎ কোথা থেকে যেন ছুটে আসে সামাদ। এক রকম যুদ্ধ করে ফরহাদ কে সরিয়ে নিয়ে যায় ওদের কাছ থেকে। পেছনে তখন অশ্রাব্য গালাগালির বন্যা। পরদিন টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যার অনেকটা পরে বের হয় সে।

গলি দিয়ে হাঁটার সময় সামনে এসে দাঁড়ায় একটা অল্প বয়স্ক ছেলে। "স্যার, আপনেরে ডাকে"। অবাক হয় ফরহাদ। কে তাকে ডাকবে? তবুও ছেলেটার পিছন পিছন যায় ওই পাশের গলিটায়। গতকালের ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

এবার আর অবাক হয় না ও। কাল যা করেছে, তাতে ছেলেগুলো যে ঝামেলা করবেই এটা জানা কথা। কিন্তু কিছু বলার আগেই তিনজন ধরে ফেলে ফরহাদ কে। "আমাগো এলাকার হিরু আইছে! ভার্সিটির শিক্ষিত পোলা। মাইয়াগো ইজ্জত দেয়।

আইজকা আমরা হেরে ইজ্জত দিমু", বলতে বলতে পকেট থেকে চকচকে ক্ষুরটা বের করে কালকের ঘুষি খাওয়া ছেলেটা। "কিছু মনে নিয়েন না স্যার, নতুন কিনছি মালটা, বিদেশি। ধারটা একটু টেস কইরা লই", বলতে বলতে হো হো করে হাসে ছেলেটা। অবাক হয়ে দেখে ফরহাদ, আতংক লাগার বদলে তার কেমন যেন অবসন্ন লাগছে। শুকনো কালো একটা হাত এগিয়ে আসে তার দিকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।