আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসময়ের গল্প



অসময়ের গল্প প্রিয় গোয়েবলস, তোমার পোস্টটা পরলাম। লিখেছ, মন হচ্ছে তোমার দেখা পৃথিবীর সব থেকে আশ্চর্য জিনিস। বাব্বাহ্! তুমি মনকে দেখতে পাও?! হুম! মনে হচ্ছে তোমার মনটা খুব বিক্ষিপ্ত। লক্ষনীয়, পোস্টের শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর গাঁটছড়া বাঁধতেও বাঁধতেও যেন হঠাৎ কোথায় একটা বিষন্নতা, একটা ছন্দপতন লেখাটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কাঠগড়ায়; যেখানে বিবেক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার। তথাকথিত সিস্টেমের মানদন্ডে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এইরকম আরো কিছু আপেক্ষিক বিষয়ের সাম্যাবস্থা রক্ষার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।

এক্ষেত্রে স্পষ্টতই কিছু বিষয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি যেন ঠিক পরিষ্কার হতে পারছে না। ব্যক্তিত্বের সাথে সিস্টেমের সংঘাতে তোমার ভিতরে নিজস্ব মূল্যবোধের মধ্যে একটা সূক্ষ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। জানি না হয়তো তুমি মনের বৈচিত্র্যকেই আসামী করে বসে আছ। কিন্তু মাস' ল-এর হায়ারার্কি অফ নীড যদি তোমার পড়া না থাকে তবে বলি তোমার মনের এই চাওয়াকে অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং মৌলিক বলেই জেনো। দৃষ্টি আকর্ষণ করছি মনোবিজ্ঞানী সিগমান্ড ফ্রয়েডের ডিফেন্স মেকানিজমের প্রতি।

সে ভদ্রলোকের তত্ত্ব অনুযায়ী তোমার আপেক্ষিকতার যুক্তিগুলোকে অধিকতর জটিলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে মনের বিচিত্রতা খোঁজার একটি প্রয়াস বলা যেতে পারে। তবে সত্যি কথা বলতে কি, এক্ষেত্রে সনাতন তত্ত্বকথার ফুলঝুরি কতটুকু অর্থবহ বা যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ওদের জ্ঞানের রসদ যুগিয়েছিল তৎকালীন পাশ্চাত্যের পরিমন্ডল। তবে কম সে কম সেখান থেকে কিছুটা ধারনা তো নেয়া যেতে পারে। দুঃখিত।

জ্ঞান দান করে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মন জিনিসটা আসলেই বিচিত্র্য। তাও আবার চঞ্চলা নারীর মন! সুফী দরবেশের ধ্যান ভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। যুগ যুগ ধরে পৃথিবী জুড়ে কবি সাহিত্যিকগণ এই মনকে বোঝার জন্য সাধনা করে গেছেন। তাদের মন চঞ্চল হয়েছিল জন্যেই পথিবী পেয়েছে সময়ের সন্তান; বিদ্রোহী কবি, দেশবরেণ্য সংগ্রামী নেতা, খ্যাতিমান সাহিত্যিক, কালজয়ী শিল্পী এবং অরো কত কি?! লালন শাহের একটা গান মনে আছে তো? ওই যে- খাঁচার ভিতর অচীন পাখি কেমনে আসে যায়? তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়।

... মন তুই রইলি খাঁচার আশে, খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে ইত্যাদি... লালন মনকে বলেছিলেন খাঁচার ভিতরের অচেনা এক পাখি। জীবন সাধনায় তিনি খুঁজে বেরিয়েছিলেন এই অচেনা পাখীর পরিচয়। নিজের ভিতরে তিনি খুঁজে গেছেন স্রষ্টার সৃষ্টির পারলৌকিক মাহাত্ম্য, আধ্যাত্মিকতা। তিনি দেখিয়েছেন মনকে বোঝা বড় সহজ কথা নয়। ধ্যাৎ, কি হবে আর ছাই তত্ত্বকথা নিয়ে এত ঘাঁটাঘাটি করে? তারচেয়ে বরং এই সময়ের কিছু টুকরো টাকরা খবরকে জোড়া লাগানো যাক।

এই যেমন ধরা যাক, সুবর্ণা মোস্তফা (ঢা.বি তে আমার ইয়ারমেটের মা)-র কথা। এইরে, অনেকেই হয়তো আমার উপরে ক্ষেপে উঠবেন। গলার রগ ফুলিয়ে বলবেন, "না, না ওনার ব্যাপার আলাদা"। আমি বলব, "কেন?-আলাদা হবে কেন? উনি কি এই সমাজের অংশ নন? রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ-র প্রাক্তন প্রিয়তমা এবং সহধর্মিনী তসলিমা নাসরিন তবে কোন অপরাধে এই বাক প্রকাশে স্বাধীনতার দেশ, গণতান্ত্রিকতার দেশ থেকে নির্বাসিত হলেন?" চারিদিকে জোরালো গলায় প্রতিবাদ, "ধর্ম ..., সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য" ইত্যাদি। "গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়?"- লালন শাহ এই তর্কের কোন শেষ নেই।

কিন্তু এই সময়ের প্রেক্ষাপটে সুবর্ণা মোস্তফা যে কাজটি করেছেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের সময়ে এই রকম একটি কাজ যে একেবারেই অসম্ভব ও অকল্পনীয় ছিল এ কথায় নিশ্চয়ই কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না। আরেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলা লিংকের একটা বিজ্ঞাপনে একবার এক মেয়েকে বলতে শুনেছিলাম, "একটু নতুন করে দেখলেই হয়"। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে ওই মেয়েটিরই আপত্তিকর অশ্লীল ছবি আপলোড করা হয়েছিল। এটা কি তবে শুধুই সময়ের দাবী? এই প্রশ্নের শেকড় আরো গভীরে গ্রথিত।

আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক কাঠপুতুলের সমাজে নারী অধিকার, নারীবাদী চেতনা ইত্যাদি শব্দগুলো বিভিন্ন এন,জি,ও সংস্থার রসদ বেশ ভালই যোগায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে বেগম রোকেয়া, তাসলিমা নাসরিন, বা মাদার তেরেসাদের মত সাহসী এবং সংগ্রামী সার্বজনীন চেতনার তেমন সংকট নেই। তবে যেহেতু এই সমস্ত দৃঢ় সংগ্রামী, কঠোর আত্মত্যাগী সংগ্রামী নারী চরিত্রের প্রাণপণে রচিত বীরত্বগাথা সমাজ-প্রকোষ্ঠের কোন এক নিভৃত অলিন্দ দিয়ে প্রবেশ করে অত্যন্ত সন্তর্পনে গৃহস্বামীর অকাল নিদ্রাপ্রয়াণে বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটিয়ে অন্দরমহলে প্রাণের পরশ বুলিয়ে কোন এক গোপন পথে নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসের মত বাতাসে মিলিয়ে যায়, সেহেতু আন্দোলনের আবেদনও ততটা জোরালো হয় না। আসলে সমাজ মানুষের গড়া কাঠামো বৈ তো কিছু নয়। অবস্থাভেদে-কালভেদে-পরিস্থিতিভেদে এর পরিবর্তন লক্ষণীয়।

কাঠামোটাকে ভাঙার চেয়ে আরো সুন্দর করে, বাসযোগ্য করে গড়ে নিলেই হয়। তবে তার জন্য যে দৃঢ়তা সেটুকু অর্জন করতে হবে বৈকি। মোদ্দা কথা হলো, তোমার বিবেকই হচ্ছে ন্যায় অন্যায়ের সবচেয়ে বড় মানদন্ড। একমাত্র এখানেই পাপপুণ্যের চুলচেরা বিচার সম্ভব। সমাজের গ্রহণযোগ্যতার বিচার আসবে পরিবারেরও অনেক পরে।

তাই সমাজের দিকে না তাকিয়ে আগে নিজের যাচাই কর না কেন? বিচিত্র মনকে বল না তার রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচিত করতে। নিজেকে আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখ না। হয়তো শান্তি এবং স্বান্ত্বনা দুটোই পাবে। 'সব্যে স্বত্বা সুখীতা ভবন্তু'। ভালো থেকো।

। পরসমাচার এই যে, ঈদ কেমন কাটালে? বাবুসোনাটার ছবি কিন্তু এখনো পাই নি। শারদীয় দূর্গাপুজার শুভেচ্ছা নিও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।