আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভৈরব পরিচিতি

১২৩

মেঘনা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম ভৈরব. ভৈরবের কোন প্রাচীন ইতিহাস নেই. তার কোন মধ্যযুগীয় ইতিহাসও নেই. এর প্রায় সবটুকুই আধুনিক. ব্রক্ষ্মপুত্র ও মেঘনার মিলনস্থলটি ছিল নদীর গর্ভে নিমজ্জিত. ১৭৮৭ সাল থেকে ব্রক্ষ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন এবং মরানদী, মনামরা খাল ও কোদালকাটি খাল শুকিয়ে জেগে উঠা চরাঞ্চল ও জলাভুমি উলুখাগড়ার বন ঘেরা এলাকাটির এক সময়ের পরিচিতি উলুকান্দি নামে. এই উলুকান্দি ভাগলপুরের (বাজিতপুর) দেওয়ানদের জমিদারীর অন্তর্ভূক্তহয়. হয়বতনগরের দেওয়ান ছিলেন বিখ্যাত বার ভুঁইয়াদের অন্যতম বীর শ্রেষ্ঠ ঈশা খাঁনের বংশধর. মেঘনার পুর্বপাড়েরনুরনগর পরগনার অন্যতম তালুকদার, নবীনগর উপজেলার বিটঘরের দেওয়ান ভৈরব চন্দ্র রায় উলুকান্দিতে লোক বসতি সহাপনের অনুমতি চান সে সময়কার ভাগলপুরের জমিদার দেওয়ান সৈয়দ আহমদ রেজার নিকট, জমিদার হলেও তিনি ছিলেন সংসার ধর্মে উদাসীন. প্রার্থিব ধন দৌলতের চেয়ে আধ্যাত্বিক চিন্তাচেতনায়তিনি ব্যস্তথাকতেন বেশী. মেঘনাতিনি পরিচিত ছিলেন ’’ পাগলা সাব ’’ নামে। কোন প্রকার দলিল পাট্রা ছাড়াই ( পাগলা সাহেবের) মৌখিক অনুমতি নিয়ে দেওয়ান ভৈরব রায় উলুকান্দি ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চল গুলোতে লোক বসতি শরু করেন। মেঘনার পুর্বপাড় ও ব্রক্ষ্মপুত্রের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় থেকে সংগ্রামী ও সাহসী কৃষকেরা এসে ঘর বাড়ি তৈরী করতে শুরু করে। এর মাঝেই দু’নদীর সংযোগস্থলে ধীরে ধীরে একটা বাজার গড়ে উঠে। দেওয়ান ভৈরব রায় বাজারের নাম দিলেন তার মায়ের নামানুসারে ’’কমলগঞ্জ’’ প্রকাশ্যে ভৈরব বাজার।

আশে পাশের গ্রামের নাম দিলেন তার ভাই ও বোনের নামানুসারে ’’ ভৈরবপুর, কমলপুর, জগন্নাথপুর, শম্ভুপুর, কালীপুর, চন্ডিবের ও লক্ষীপুর। জনশ্রুতি রয়েছে এ সকল নামকরণের পিছনে দেবতাদের নামের প্রভাব রয়েছে। দেখতে দেখতে ভৈরব একটি বর্ধিঞ্চু জনপদে পরিণত হয়। আর ঠিক এই সময়ে ভাগলপুরের জমিদারী সর্যাস আইন নিলামে উঠে। পাগলা সাবের সরলতার সুযোগ নিয়ে তার হিন্দু ম্যানেজার (মুক্তাগাছার ) ভবানী কিশোর আচার্য কৌশলে ষড়যন্ত্র করে জমিদারী তার নিজের নামে কিনে নেন।

ভৈরব বাজার তথা ভৈরব অঞ্চল কাগজপত্রে ভবানী কিশোর আচার্যের হলেও সমগ্র অঞ্চল দখল করে থাকেন বিটগড়ের দেওয়ান ভৈরব রায়। এই দখলী স্বত্ত্ব নিয়ে অচিরেই শুরু হলো দুই জমিদারের মাঝে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা- হাঙ্গামা এবং এতে জীবন দেয় অনেক লোক। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামায় বার বারই পরাজিত হতে থাকেন মুক্তাগাছার নতুন জমিদার ভবানী কিশোর আচার্য চৌধুরী। কিন্তু কুট কৌশলে, মামলা মোকদ্দমা ও আইনী মার প্যাচে এক সময় ভবানী কিশোর আচার্য চৌধুরী শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেন ভৈরব রায়কে এবং ভৈরব বাজারের বুকে পাকা পোক্ত হয়ে বসেন মুক্তাগাছার জমিদার বাবু ভবানী কিশোর আচার্য চৌধুরী। মুক্তাগাছার জমিদারের নিরংকুশ নিয়ন্ত্রণ আসার পর তেজারতি, মনোহারী ও আরতদারী ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

ভৈরব বাজারের শ্রীবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটে বহুগুনে। ন্থানীয় মুসলমান ব্যবসায়ী ছাড়াও দুরাঞ্চলের অনেক হিন্দু পরিবার ভৈরব বাজারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সওদাগর ও ব্যবসায়ী হিসাবে। ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ভৈরব অঞ্চলটি ছিল বাজিতপুর থানার আওতাধীন। ১৮৮৫ সালে মুক্তাগাছার জমিদারের রাজকাচারী কালিকাপ্রসাদ গ্রামের গরীবুল্লা মিয়ার বাড়ী থেকে ভৈরব বাজারে উঠে আসে। ভৈরব বাজার গুরুত্বপুর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলে ১৯০২ সালে আই জি এন কোমপানী ভৈরব বাজারে অফিস এবং ষ্ট্রীমার ঘাট স্থাপন করেন।

এইসত্রে বার্ক মায়ার কোমপানী, ডেবিট কোমপানী , রেলি ব্রাদার্স, আরসীম, লিলি ব্রাদার্স নামক সাহেবী কোমপানী এবং প্রেম শুকদাস, জয়কিশোর, জাসমল, তুলারাম এবং শুকিয়ে নামক মাড়োয়ারী কোমপানী তাদের পাট ক্রয় কেন্দ্র খোলে ভৈরব বাজারকে একটি বিরাট বন্দরে পরিণত করেন। ১৯০৬ সালে ভৈরবে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল থানাটি মান উন্নীত থানায় উন্নীত হয়। উক্ত বন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য স্থানের রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ( ১৯৩৫-১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) মেঘনা নদীর উপর ’’ রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ সেতু’’ (যাহা ভৈরবপুল নামে পরিচিত) স্থাপন হয় এবং এটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৬৪ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রা। আসাম বেংগল রেলওয়ে এই পুলের উপর দিয়ে প্রথম মালগাড়ী চলাচল শুরু করে ১৯৩৭ সালে ১লা সেপ্টেম্বর এবং তা উদ্বোধন করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের -এ- বাংলা এ কে ফজলুল হক। ঐ বৎসরই ৬ ডিসেম্বর থেকে সেতুটির উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

স্থাপন হয় ভৈরব বাজার জংশন। যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীপথ, রেলপথ এবং রেল ষ্টেশন স্থাপিত হওয়ার পর ভৈরবের ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ভৈরব বাজার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকাটি একটি সমৃদ্ধ ব্যবসা স্থান হিসেবে অর্থাৎ বন্দর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। কালের বিবর্তনে আজও ভৈরব বাজারটি টিকে আছে তার অতীত গৌরবকে অবলম্বন করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.