আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন বিজয় দেখছি আমি?

সৃষ্টির রহস্য খুজছি

ছোটবেলা যখন বাজারে কিংবা স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাতাম তখন অন্য ধরনের একটা অনুভুতি ভিতরে কাজ করত। ভাষা আন্দোলন কি তা জানলেও, তখন বুঝতাম না। সাররাত ভরে শহীদ মিনার তৈরি করা, আবার সকালবেলা ফুল শহীদ বেদিতে দেয়া; সে অন্য এক অনুভূতি। শহীদ মিনারের বেদি তৈরি হত ইট কিংবা বাঁশের চেরা দিয়ে। কলাগাছ মাথায় একটু কেটে মাথা নত করে দেয় হত।

শহীদ বেদিতে ফুল দিতে হবে, তাই তিন চারদিন ‍আগ থেকে প্রস্তুতি নিতাম ফূল যোগার করতে। দুই চার এলাকায় ঘুরে দেখতাম কার বাড়িতে ভাল গাদা ফূল হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারীর দু এক দিন আগে গভীর রাতে সেগুলো চুরি করতাম। চুরি করে রাতে সেই ফুল টিনের চালায় রেখে দিতাম, যাতে ফুল নষ্ট না হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে কিংবা বাজারে চলে যেতাম শহীদ বেদিতে ফুল দেবার জন্য।

আগের দিন রাত থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ফেব্রুয়ারীর গান ভেসে আসত। কি ভাল লাগত তা এখন অনুভব করলে সত্যিই ভাল লাগে। সকাল বেলা বাবা কিংবা শিক্ষকের সাথে শহীদ বেদিতে ফুল দিতাম। তখন মনে হত শহীদের ওই বেদিতে কিছু পবিত্র মানুষের আত্মা আছে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিচ্ছি। যখন শহীদ বেদির খুব কাছে যেতাম, ফূল দিতাম তখন, মনে হত আরেকটু সময় থকতে পারলে বোধয় আরো ভাল লাগত।

পিছনে দীর্ঘ লাইন। তাই বেশিক্ষণ থাকতে পারতাম না। সেই যে ভাল লাগা, এখনও মাঝে মাঝে টের পাই। কিন্তু এখনকার ভাললাগাটাকে কেন জানি উপভোগ করতে পারি না। একুশের রাতে যখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই তখন সেইরকম অনুভুতি আর মনে আসে না।

মনে ভেসে আসে কেবল; আমরা যেন শহীদের অসম্মান করছি। আমার ভায়েরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সেই বাসনা আজ পদদলিত। যখন ফুল দিতে যাই তখন চোখের সামনে যখন দেখি দেশকে যারা সবচাইতে বেশি অসম্মান করছে তারাই সামনের সারিতে দাড়িয়ে ফুল দিচ্ছে। যখন দেখি জুতা পায়ে কিংবা ক্ষমাতার চক্রা হাতে পেয়ে শহীদদের স্বপ্নের দেশটাকে বেচেঁ খাচ্ছে, তারা শহীদ বেদিতে ফুল দিচ্ছে তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। ধীক্কার দেই মানে মনে নিজে নিজে।

শহীদের প্রতি সম্মান জানাতে লাখো জনাতরা ঢল নামে শহীদ মিনারে। এই লাখো মানুষ দেখে আমি খুশি হতে পারি না। হয়ত অনেকেই অবাক হবেন। এত মানুষ শহীদদের সম্মান জানাচ্ছে সবার খুশিই তো হবার কথা। আমি তা পারি না, কারণ যারা শহীদ বেদিতে ফুল দিতে আসে তাদের অধিকাংশই কোন না কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আনেন।

রাজনৈতিক ব্যানারে হাজারো মানুষ আসে, উদ্দেশ্য থাকে কে কার থেকে বেশি মানুষ দেখাতে পারে। আবার কার আগে কে যাবে তা নিয়ে মারামারি হয়। কারও প্রটোকল না মানা হলে দেশজুরে ঝড় ওঠে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে ঠিক রাত ১২ টা ০১ মিনিটেই বেদিতে ফুল দিতে হবে। তা না হলে তাদের শহীদের ভাল সম্মান দেখানো হবে না।

আবার তার পর বিরোধী দলকে সমান সুযোগ না দিলে পার্লামেন্টে, রাজপথে মিছিল মিটিং শুরু হয়। ভাবতে অবাক লাগে এইসব মানুষরাই দেশ পরিচালনা করেন! তারা একবারও কিভাবেন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা আন্দোলনে রাজপত রঞ্জিত হয়েছিল? মাঝে মাঝে ভাবি, যত কম জানা যায় ততই ভাল। যত জানছি ততই নিজের মধ্যে দন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। জানিছি এক, বাস্তবে দেখছি এক। সংবিধানে লেখা দিখি এক আর বাস্তবে তার প্রয়োগ দিখি আরেক।

যখন দেখি শহীদের নিয়ে অনুষ্ঠান বানিয়ে ব্যবসার পসরা সাজানো হয় তখন সত্যিই খারপ লাগে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.