আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়াবী মলাট

This is my duty to expose the truth to all.

বর্তমানে আমাদের দেশে সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে। মূলত কিশোর,তরুন ও যুবকদের চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করা ও নগ্নভাবে শত্তির অপব্যবহার এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছুদিন ধরেই কিশোরী ও তরুনীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আত্মহত্যা তো কোন সমস্যার সমাধান নয়। তাহলে এই প্রবনতার পিছনে দায়ী কে বা কারা? আর কেনইবা তা ঘটছে? একটি শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে, তখন পারিবারিকভাবে তাকে ধর্মীয় ও নীতিশিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও একটি বিরাট দায়িত্ম থাকে।

আর তাই শিক্ষকদের বলা হয়, “মানুষ গড়ার কারিগর”। একজন ছাত্র/ছাত্রী যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হত তাহলে কি এই ধরনের আত্মহত্যার প্রবনতা দেখা দিত? যেখান প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থেই এ সকল কর্মকান্ডকে সম্পূর্ন নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ এ বলা হয়েছে- “..And do not kill yourselves, God is merciful with you. And whosoever does that (kills self) with aggression and inequity, we will make them suffer in Hell fire, and this is easy for God to do” (29-30, 4). পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে- “[19]Do you not know that your body is a temple of the Holy Spirit, who is in you, whom you have received from God? You are not your own; [20]you were bought at a price. Therefore honor God with your body.” Corinthians 6:19-20 (New International Version) হিন্দুধর্মের পবিত্র পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ এ কলিযুগ সম্পর্কে বলা হয়েছে- “People are without joy and pleasure. Many commit suicide. Men of small intelligence are influenced by atheistic doctrines. Family, clan and caste are all meaningless. Men are without virtues, purity or decency.” (Visnu Purana 6.1). একজন কিশোরী বা তরুনী যদি এই সত্য কথাগুলো জানতে পারে, তাহলে তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে কতটুকু আগ্রহী হবে? এ কথা এখন সবাই বুঝেছে, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। তবে অবশ্যই তা হতে হবে ইতিবাচক। বলা হচ্ছে, পারিবারিকভাবে ছাত্র/ছাত্রীরা ধর্মীয় নীতি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে।

তাহলে যারা পথশিশু ও এতিম(অর্থাৎ যাদের পরিবার নেই) তাদের কি হবে? নাকি তারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোন অংশ নয়? তাহলে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কি সমগ্র জনসাধারনের কথা না ভেবে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট মহলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করছেন? প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। । যুক্তি দেখানো হচ্ছে,”ধর্মশিক্ষা বিভেদ সৃষ্টি করে...”। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের ৮০% এর বেশী মুসলমান, তারপর হিন্দু, খৃষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মশিক্ষা তুলে দেয়া কিংবা সংকুচিত করার মাধ্যমে এদের ধর্মীয় পরিচয় কখনই তুলে দেয়া সম্ভব নয়।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেন- “Beware, whoever is cruel and a hard to a non Muslims minority , or curtails their rights, or burdens them more what they can bear, or takes anything from them against their free will, I (Prophet Muhammad(pbuh)) will complain against the person on the Day of Judgment.” (Abu Dawud) আর এই ধর্মীয় জ্ঞানহীন ধর্মীয় পরিচয়, মানুষের বিভেদ সৃষ্টির মূল কারন। ধর্মশিক্ষা তুলে দেয়ার মাধ্যমে এই বিভেদ আরো প্রকট হবে এবং তা জাতির জন্য কোন সুখবর নয়। এখন কিছু যুবক ভরা মজলিসে মেয়েদের ওড়না,শাড়ি,জামা-কাপড় ধরে টানাটানি করে অপার আনন্দ উপভোগ করছে। এটা মূলত বিভিন্ন মিডিয়া ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যপক প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে তরুন ও যুবসমাজকে মস্তিষ্কহীন মানুষে(ডিজুস জেনারেশন) রূপান্তরিত করার অপচেষ্টার ফলাফল। আর এই ফলাফলকে আরো নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যারা নারীদের শরীরকে সুশোভিত সজ্জায় সজ্জিত করে সকলের সামনে উপস্থাপন করাটাকে “নারী স্বাধীনতা!” বলে আখ্যা দেন।

১৪ই মে,২০১০. দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত কলামে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন- “এই দেশের অসম্ভব বড় সৌভাগ্য যে তারা একজন সত্যিকারের শিক্ষামন্ত্রী পেয়েছে, যিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কথা জানেন। সেটাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছেন। তাকে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তাঁর ভয় পাওয়ার কিছু নেই, দেশের মানুষ তাঁর সঙ্গে আছে। ” দেশের মানুষকে সঙ্গে রাখবার আগে হয়তো একবার জিজ্ঞেস করে নেবার প্রয়োজন ছিল যে- তারা কি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চায়, যেখানে ধর্মীয় নীতিশিক্ষা থাকবে না, যেখানে নারীদের সম্মানের কথা থাকবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা থাকবে না, পৃথীবির প্রকৃত সত্যের কথা থাকবে না?!! আমাদের ভবিষ্যত কি তাহলে অন্ধকারের অতলে নিমজ্জিত হবে? আশার কথা হচ্ছে, তরুন ও যুবসমাজের মোহভঙ্গ ঘটছে।

তারা বুঝতে পারছে, বাস্তব জীবন কোন কিশোর উপন্যাসের মায়াবী মলাট নয়। তারা এও বুঝতে পারছে - “Truth is Stranger than Fiction”. তবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে হলে, এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তবে এই পথ কুসুমাস্তীর্ন নয়। এজন্য ব্যক্তিসার্থের উর্ধ্বে উঠে আমাদের নির্ভীক হতে হবে। তা না হলে আমাদেরও হয়ত নায়মোলারের মত অনুশোচনায় জর্জরিত হতে হবে।

নায়মোলারের অনুশোচনাটি জনাব সিরাজুর রহমানের একটি লেখা থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করার মাধ্যমে আজ শেষ করছি- " নায়মোলার প্রথম মহাযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ইউ বোট (সাবমেরিন) ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নাৎসি ডিক্টেটরশিপের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। সে জন্য ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু আদালত তাকে হাল্কা সাজা দিয়ে ছেড়ে দিলে ক্রুদ্ধ হিটলার ব্যক্তিগতভাবে তাকে বন্দিশিবিরে আটক রাখার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তিনি সে শিবিরে আটক ছিলেন­ প্রায় নি:সঙ্গভাবে। জার্মানির বুদ্ধিজীবীরা নিûিক্রয়তা ও সাহসের অভাবে কিভাবে নিজেদের ও বিশ্বের সর্বনাশ করেছেন, সেটা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছেন মার্টিন নায়মোলার : ‘ প্রথমে ওরা এসেছিল কমিউনিস্টদের ধরতে, আর আমি প্রতিবাদ করিনি­ কারণ আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না; ‘ তারপর তারা সোশ্যালিস্টদের ধরতে এসেছিল, আমি প্রতিবাদ করিনি কারণ আমি সোশ্যালিস্ট ছিলাম না; তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়নপন্থীদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি­ কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না; তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে, তখনো আমি প্রতিবাদ করিনি­ কেননা আমি ইহুদি ছিলাম না; তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো­ তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করতে কেউ অবশিষ্ট ছিল না।

’ জার্মানির বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেননি, তারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তার পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গেছে, এমনকি মানব সভ্যতাও বিপন্ন হয়েছিল। মার্টিন নায়মোলারের অনুশোচনার কথাগুলো সে জন্যই গভীর অর্থবহ। অনুশোচনা গণচীনের জনক মাও জে দংকেও করতে হয়েছিল। মাত্র জীবনের সর্বশেষ প্রান্তে এসেই মাও উপলব্ধি করেছিলেন, চিন্তার একদলীয়করণ ও রেজিমেন্টেশন তার বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রতিবìধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তখনই শুধু তিনি ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ (বহুমুখী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটতে দাও) নির্দেশ উচ্চারণ করেছিলেন। চীন যে এখন সব দিক থেকে একটা পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে তারও সূচনা হয়েছিল তখন থেকে। বাংলাদেশের মানুষকে খুব বিলম্ব হয়ে যাওয়ার আগেই স্খির করতে হবে তারা কোন পথে যেতে চায়। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।