আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের অনুকরণ প্রিয়তা ও লাল সার্ট সবুজ সার্ট



অনুকরণ প্রিয়তা শব্দটি ভুল না ঠিক জানি না। লিখতে ইচ্ছে হলো । চারিদিকে এত নকলের ছড়াছড়ি যে ক্লাশ ওয়ান টুর ইঁচড়ে পাঁকা বাচ্চারাও অনেক বড় বড় মানুষের কীর্তি দেখে বলে ওঠে কপিক্যাট। স্কুলে পড়ার সময় বাঙালিদের চিন্তা চেতনার অগ্রগামিতা নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। অনেক গাল ভরা বাক্য ( যেমনঃ হোয়াট বেঙ্গল থিংকস টু ডে ইন্ডিয়া থিংকস টুমরো) মুখস্ত করেছি।

পরাধীন ভারত বর্ষে বেঙ্গলের দূরদর্শিতা আর উদ্ভাবনি শক্তির যে সুনাম ছিল সত্যিকার স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর তার কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয়না । বরং নকল ও অনুকরণে আমরা এখন ছাড়িয়ে গিয়েছি অন্য সবাই কে। নকলের প্রতি জিনজিরার অনুরক্তি দেখে অনেকেই শিল্পখাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা ভেবেছিলেন। এই যেমন গাইতে গাইতে গায়েন। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক যে সব অনুকরন হচ্ছে তাতে সম্ভাবনার কিছু দেখা যাচ্ছে না।

এ দেশে দিন তারিখ বলার আলাদা একটা রীতি আছে অমরা বলি ২৬শে মার্চ, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২৫ শে বৈশাখ, কশ্মিন কালও কাউকে বলতে শুনিনি ফেব্রুয়ারি ২১ অথবা ডিসেম্বর ১৬ ইত্যাদি। এগারোই জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর মার্কিনিদের অনুকরণে অমরা বলা শুরু করলাম ওয়ান ইলেভেন। আমরা অতটুকু অনুকরনেই সন্তুষ্ট, ভেবে দেখলাম না ওরা ওয়ান ইলেভেন কে দেখে একটা কালো দিবস হিসাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কুশীলবরা দিনটিকে দেখেন জাতীয় মুক্তির দিন হিসাবে।

একটি রাজনৈতিক দল দিনটিকে দেখে জাতীয় দুর্যোগের সূচনা হিসাবে। অপরদলটি দলীয় ভাবে যাই মনে করুক এ দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এগারোই জানুয়ারির সাখে জড়িতদের সাথে হাত মেলাতে পর্যন্ত অস্বীকার করেন। তাই জরুরি অবস্থা যে অনিবার্য কারণেই ঘোষিত হয়ে থাকুক এতদিন পর তার মূল্যায়ন করা হচ্ছে ব্যর্থতা হিসাবেই। জরুরি অবস্থায় চালু হয় অপারেশন আলোর সন্ধানে। পাঠক মিলিয়ে দেখেন অপরেশন সার্চ লাইটের বঙ্গানুবাদের সাথে এর কত মিল।

এই অনুকরণের ধারা বাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন জয়নাল আবদীন ফারুকের লাল সার্ট তত্ব। ফারাক্কা লং মার্চের স্মরণ সভায় গত কাল তিনি থাইল্যান্ডের অনুকরণে লাল সবুজ সার্ট পরে আন্দোলনের হমকি দিয়েছেন । এই অধ্যাপক সাহেব নিঃসন্দেহে একজন পন্ডিত মানুষ। তিনি হঠাৎ করে থাইল্যান্ডের একজন পতিত স্বৈরাচারির অনুসারিদের অনুকরণ করতে চাইলেন কেন কে জানে। লাল সার্টদের প্রতি (মিডিয়ার খবর ) ক্ষমতাসীন থাই সরকারের অমানবিক আচরন আমি কোন ভাবেই সমর্থন করি না।

তবে লাল সার্টরা য লোকটির পেছনে সারিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি থাইল্যান্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন ক্ষমতার অপব্যবহার আর দূর্নীতির কারনে। আমাদের দেশের লাল সার্ট প্রত্যাসীরা সেখানেও সম্ভবত নিজেদের সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। যে সময়ে জয়নাল আবদীন ফারুক তার এই অভিলাষের কথা জানালেন তার একদিন পর ঢাকায় বি এন পির মহাসমাবেশ। বি এন পির নিত্যদিনের প্রেসব্রিফিং থেকে জানা যাচ্ছে তাদের প্রস্তুতি ভালোই। সরকারের অসহযোগিতার যে সব কথা তারা প্রথম থেকে বলে আসছিলেন ক্রমেই তা কমে আসছে।

ইতমধ্যে পল্টন ময়দানে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় মাইকিং ও হয়েছে। অর্থাৎ প্রচারণায় বাঁধা দেওয়া এবং বিদ্যুৎ সংযোগের গুরুতর দুটি অভিযোগ ভু ল প্রমানিত হয়েছে। সেই সাথে । টেলিভিসনে গত দু'দিন আরও যে জিনিষটি জনতার নজর কেড়েছে তা হলো পল্টনের প্রবেশ পখে নির্মানাধীন্একটি স্থাপনা এবং সেই স্থাপনা সংলগ্ন গর্ত।

বি এন পির অভিযোগ সরকার ইচ্ছা করে প্রবেশ পথে এই গর্ত করেছে জনসভায় অসুবিধা র্সষ্টির জন্যে। এই অভিযোগটিও সছিক নয় কারন গর্তটি হঠাৎ করে আজ অথবা কাল করা হয়নি। নির্মান কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কাউন্সিল অধিবেশন সহ এটি এবছর বি এনপির ৬ষ্ঠ মহা সমাবেশে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি সমাবেশই সফল হয়েছে বরা যায়।

একারনে বি এনপির সরকারের কাছে কৃতগ্ঞ থাকা উচিৎ। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোন বিরোধী দলের পক্ষে এত বড় সমাবেশ করা সম্ভব নয়। এবারের আওয়ামীলীগ সরকার অনেক ম্যাচিউরড। নীতিনির্ধারকরা ভাল করেই জানেন বিরোধী দলের সন্মেলনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভারও সরকারের উপরেই বর্তায়। গনত্ন্ত্রের রীতিই তাই।

সরকার সেই দায়িত্বটিই সততার সাথে পালন করছে। তবে যে যাই বলুক এগারোই জানুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে একটি ছাপ ফেলেছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর হয়ে গেল রাজপথে কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঢাকা শহরে হাতিগোনা যে কয়েকটি সমষ্টিগত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটিই অর্থনৈতিক যেমন গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি, নৌ ম্যমিকদের বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি। অর্থাৎ মানুষের মনোজগতে একটি পরিবর্তন ঘটেছে।

দা হলো ইচ্ছা করলেই এখন জনগনের উপর একটা রাজিতিক কর্মসূচী চাপিয়ে দেওয়া যায়না। এগারোই জানুয়ারির আগে যে কোন ছোট্টদলের হুংকারেও হরতাল জমে যেতএখন যায়না। বি এনপি'র রাজনীতির ইতিবাচক দিক হচ্ছে তারা জনতার এই পরিবর্তনের দিকটি ধরতে পেরেছে। শুধু যে সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যেই বি এন পি কোন জঙ্গী কর্মসুচী দিচ্ছে না তা কিন্তু নয়। জনগনকে পাশে পাবার জন্যেই তারা কঠোর কর্মসুচী থেকে দূরে থাকছে।

সাংগঠনিক দুর্বলতা তারা ঢাকার চেষ্টা করছে মিডিয়া ক্যাম্পেইন আর বক্তিতাবিবৃতির মাধ্যমে। মিডিয়াতে আজকাল বিরোধী দল যত সময় থাকছে অনেক সময় ক্ষমতাসীন দলও এতক্ষণ থাকতে পারছে না। যে সমস্ত কর্মসুচীতে ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকছে সে সব কর্মসূচীর আগেই বিভিন্ন সভা সমিতির মাধ্যমে সরকারের বা সরকারি দলের অহেতুক সমালোচনা করছে। ঢাকায় বি এন পির টার্গেট ৫ লক্ষ লোক সমাগম করা। দলের অভ্যান্তরিন কোন্দল, ত্যাগি নেতাদের অবমূল্যায়ন , চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই এবং কিছু নেতার নিষ্ক্রয়তায় সম্মেলনে আশানরুপ সাফল্য না ও আসতে পারে।

এ কারনেই ঢাকার সম্মেলনের আগেই সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে বি এন পি। কিনতু জনতা এখন আর অগের মত নেই। আজকাল তারা গুজবের সাথে ঘটনার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। তাই আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সরকার ও বিরোধী দলকে রানৈতিক কর্মসুচী দিতে হবে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.