আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকজন শিক্ষক

যেন এ এক পুরান খেলা । ধুলো ওড়ে, মাটির পথে। জেনো তুমি,আমি হাটি এই পথে

আজমত স্যার। প্রাইমারী ইস্কুলের হেডমাস্টার। সাইকেলে চেপে বয়োবৃদ্ধ লোকটি প্রতি সকাল বেলা ইসকুলে চলে আসতেন সবার আগে।

মানুষটাকে দেখে ভয় জাগত না মনে,শ্রদ্ধা জেগে উঠত আপনাআপনি। পান চিবিয়ে চিবিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরা এই লোকটা যখন ক্লাসে ঢুকতেন,বেতের ভয় ছিল না বলে হয়তো দুস্টমির মাত্রাটাও আমাদের ছিল বেশি। কেন ভালো লাগতো ?অমায়িক দরাজ হাসি আর পরম স্নেহ। শেষবার তাঁর স্নেহ পেয়েছি তাও ১৮ কি ১৯ বছর আগে। আজ আর তাও পাওয়া সম্ভব নয়,চলে গেছেন একদম নীরবে,অনেক দূরে।

নূর মোহাম্মদ স্যার। ছয় ফুট লম্বা লিকলিকে শরীরের ইনি পরিচিত ছিলেন অঙ্কের বি.এস.সি স্যার নামেই। আমার হাই ইস্কুল জীবনের একজন খুব প্রিয় আর পরম শ্রদ্ধেয় স্যার। যাদুই ছিল তাঁর পড়ানোতে। জটিল সব পাটীগণিত কত সহজে সমাধান করা যায়,মুখস্থ না করেও যে পরীক্ষার খাতায় অঙ্কের সমাধান করা যায়,তাঁর কাছ থেকেই শিখেছিলাম।

কি কারণে যে আমাকে একটু বেশি স্নেহ করতেন,বেঁচে থাকলে আজ জিজ্ঞেস করতাম। দুরারোগ্য ক্যান্সারে হঠাৎই হারিয়ে গেলেন আরো কিছু অঙ্কের যাদু না শিখিয়ে। মান্নান স্যার। মফস্বলের একজন মানুষ এতটা আধুনিক আমার কাছে ছিল,মনে হয় পিতৃস্নেহের একটা অন্য টান ছিল। নিখুত ইংরেজি বলার ভঙ্গি মুগ্ধ করতো আমায় আবার আল্লাহ আল্লাহ করতাম গ্রামারের মারপ্যাঁচ গুলো না শিখে আসলে পিঠে পরবে জোড়া বেতের ঘা,এই ভয়ে।

তারপরও ভালো লাগত তাঁর আন্তরিকতা আর সহাস্যে পরম স্নেহ। এখন হয়তো অবসরে সেই দিন গুলোর কথাই ভাবেন। “know thyself”র ঢাকা কলেজ। ১০ বছর যেরকম শিক্ষকদের স্নেহ আর সান্নিধ্য পেয়ে আসছিলাম,বুঝতে পারলাম,সেইটা আর সম্ভব নয়। তারপরও কিছ ব্যক্তিত্ব,কিছু মহান মানুষের কথা,হয়তো খুবই অলপ সময়ের কিন্তু থেকে যায় আজীবন।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্যার। স্যারের একটা লেকচার শুনার জন্যে গ্যালারী ভর্তি আমরা সবাই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো ভীড় । যেখানে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাস খেলা কিংবা ক্যানটিনে বসে চা-সিগারেট খাওয়া আমাদের রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল,সেই আমরা কিনা খুব মনোযোগী হয়ে গেলাম,তাও আবার বাংলা ক্লাসে। যখন আসলেন ক্লাসে,এক পায়ে ভর করে,পিনপতন নীরবতা গ্যালারী জুড়ে।

নিজের চোখে একজন কালজয়ী মানুষ দেখার সৌভাগ্য সেইদিনই হয়েছিল। শেষ কথাটা ভুলিনি স্যারের। বললেন,“আজ আমার পা পর্যন্ত ক্ষত,হয়তো কয়দিন পরে দেখবে তা বুকে গিয়ে ঠেকেছে। ” আমরা ভাগ্যবান তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম,আমরা দুর্ভাগা,সেইটাই ছিল স্যারের প্রথম এবং শেষ ক্লাস। ক্ষত স্যারের বুকে ঠেকে ছিল কিনা জানা যায়নি,কিন্তু সেই ক্লাস নেয়ার তিন মাস পর চলে গেলেন দূরে,অনেক দূরে।

কয়েকজন শিক্ষক,কয়েকজন অন্তঃপ্রাণ মানুষ,নির্লোভ মানুষ। আমাদের পথ তাঁদেরই সৃষ্টি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.