আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোস্তফা জব্বার, যদি মনে করেন 'অভ্র' বিজয়ের পাইরেটেড, মেহদী বিজয় হ্যাক করে অভ্র বানিয়েছে, তাহলে তা প্রমাণ করুন



কম্পিউটারে বাংলা লেখায় বিজয় মাইল ফলক হয়ে এসেছিলো। বিজয়ের অবদানকে অস্বীকার করার কিছু নেই। এখনো প্রফেশনাল প্রিন্টিংয়ের কাজে বিজয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু ইন্টারনেটের এই প্রসারের যুগে বিজয় ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ইউনিকোডের যুগে বিজয় চলে না।

তাই নতুন সময়ের দাবীতেই এলো অভ্র। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র নামক একটি সফটওয়্যার। এবং যা তিনি বিনামূল্যে ছড়িয়ে দিলেন সমস্ত বিশ্বে। যে কেউ চাইলেই এই সফটওয়্যার ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী।

ধীরে ধীরে শুরু হয়ে গেছে বিজয় বর্জন। এখন অনেক কম্পিউটারেই বিজয়ের লেশ মাত্র নেই। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে লেখার সুযোগ, এই দুটো কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্র খুব সহজেই জনপ্রিয় হয়ে গেলো। আর তার চেয়ে বড় কথা, যারা টাইপিং অসুবিধার জন্য বাংলায় লিখতে পারত না, রোমান হরফে বাংলা লেখার মত একটা জঘন্য স্টাইল চালু হয়েছিল, অভ্র তাদের জন্য এলো আশীর্বাদ হয়ে। অভ্র না থাকলে বাংলা ভাষায় রোমান হরফ চর্চা আজকে কোথায় চলে যেত, সেটা ভাবনার বিষয়।

কিন্তু এখন ব্লগ, ফেসবুক, চ্যাটরুম সবখানে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে। ধীরে ধীরে রোমান হরফে বাংলা লেখার চর্চা বাদ দিয়ে তরুণ প্রজন্ম প্রাণের ভাষা বাংলাতেই ইন্টারনেট চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য অবশ্যই কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ অভ্রর প্রতি, অমিক্রনল্যাব-এর প্রতি। এবং অবশ্যই মেহদী হাসান খান-এর প্রতি। এক বিজয় কাঁধে নিয়ে মোস্তফা জব্বার বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের প্রধান বিশেষজ্ঞের গদিনশীন হয়েছেন।

পত্রিকাগুলোতে উপসম্পাদকীয় লিখে চলেছেন। সরকারকে আইটি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের সরকার আইটি বান্ধব না। জানার পরিধি কম, তাই মোস্তফা জব্বার যা বলেন তাই বিশেষজ্ঞীয় বলে মেনে নেন। আমাদের দেশের আপামর জনতা আরো বেশি আইটি অবান্ধব।

মোস্তফা জব্বারের লেখাকেই তারা সত্য ভেবে বসে থাকেন। কিন্তু আমরা জানি, জব্বার সাহেব সর্বদা সত্য কথা বলেন না, ভুল বা মিথ্যে বলেন অনেক ক্ষেত্রেই। সম্প্রতি যেমন বলেছেন এই লেখাটিতে। এখানে তিনি অভ্রকে পাইরেটেড সফটওয়্যার বলেছেন। এটা ভুল না, মিথ্যে কথা।

একজন আইটি বিশেষজ্ঞ [!] জানেন না মুক্ত সফটওয়্যার হলেই সেটা পাইরেটেড হয়ে যায় না। এই লেখাটি নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগ সাইটে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই উপহাসমূলক। কিন্তু মোস্তফা জব্বার শুধু মিথ্যে বলেননি, এটা একটা কূটকৌশল। অভ্রকে বলেছেন পাইরেটেড সফটওয়্যার, যা বিজয় হ্যাক করে করা হয়েছে এবং এর নির্মাতা অর্থাৎ মেহদীকে বলেছেন হ্যাকার।

অভিযোগ কিন্তু মোটেও ফেলনা নয়। গুরুতর। একই সঙ্গে তিনি হ্যাকারদের কারণে যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এসব বলছেন। সরকারী অনেকগুলো সাইট হ্যাক হয়ে যাচ্ছে, র‌্যাবের সাইট হ্যাক হয়েছে, এসব তথ্য দিয়ে তিনি প্রকারান্তরে হ্যাকার নির্মূল অভিযানের জন্য সরকারকে প্ররোচিতই করলেন। এখন সরকার যদি দেশের প্রধান আইটি বিশেষজ্ঞ [!] মোস্তফা জব্বারের কলাম পড়ে হ্যাকার ধরতে নামে তখন মেহদীর কী হবে? এখন প্রশ্ন হলো তিনি কি সত্যি জানেন না নাকি ইচ্ছে করে এই মিথ্যাচার? জানা কথা অভ্রর এই বিপুল জনপ্রিয়তায় বিজয় তলানীতে আশ্রয় নিচ্ছে।

এতবছরের জীবনে বিজয় আর বড় বড় কথা ছাড়া মোস্তফা জব্বারের আর কোনো কীর্তি নেই। এই জাতিকে যে তিনি নতুন আর কিছুই দিতে পারবেন না, সেটা নিশ্চিত। বিজয়ের জায়গা অভ্র নিয়ে নিলে সেটা মোস্তফা জব্বারের অস্তিত্ব নিয়েই টান দেবে। ব্যবসায়িক ক্ষতি তো আছেই। মোস্তফা জব্বার শঙ্কিত।

তাই এই মিথ্যাচার। নির্বাচন কমিশন যখন ভোটার আইডির কাজে বিজয় না ব্যবহার করে অভ্র ব্যবহার করলো, তখনই তার গাত্রদাহ প্রবল হয়েছিলো। এমনকী সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কিবোর্ড লেআউটের কপিরাইটও তিনি নিজের নামে করিয়ে নেন। যা অবৈধ। আর পাশাপাশি নিজের খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন অভ্রর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার।

আর এই করে করে তিনি নিজেই নিজেকে হাস্যকর প্রমাণ করছেন, আমাদের যেখানে উনাকে শ্রদ্ধা করার কথা ছিলো, সেখানে এখন তার প্রতি ঘৃণা তৈরি হচ্ছে। নতুন মেধাকে উদারতার সঙ্গেই গ্রহণ করা উচিত ছিলো তার। না করে বেছে নিলেন নোঙড়া পথ। মেহদীর উদারতা দেখেও লোকটা কিছুই শিখলো না। অভ্রকে পাইরেটেড সফটওয়্যার বলায় অভ্রর হয়তো কিছুই যাবে আসবে না, কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা অভ্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না, তারা একে পাইরেটেডই জানবেন! সরকারও মেনে নেবেন অভ্রকে পাইরেটেড সফটওয়্যার হিসেবে।

আর সব মিলিয়ে মেধাবী, নির্লোভ মেহদী হাসান খান চোর হিসেবে চিহ্নিত হবেন! শুধু বিজয় নিয়ে মোস্তফা জব্বার একাধারে ব্যবসা আর খ্যাতি দুই-ই কামিয়েছেন। আর তরুণ মেধাবী মেহদী হাসান খান ব্যবসা তো করতেই চাননি, খ্যাতিকেও উল্টো সরিয়ে রাখেন। প্রচারবিমুখ এই মানুষটা নিজে কখনোই কিছু করবেন না বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য অভ্র, মেহদীর কীর্তির কথা প্রচার করা। মোস্তফা জব্বারের এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ আমরা দায়িত্বের সঙ্গেই করবো।

পাশাপাশি প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানাবো। মোস্তফা জব্বার, হয় আপনি আপনার কথা প্রমাণ করুন। প্রমাণ করুন যে অভ্র একটি পাইরেটেড সফটওয়্যার, মেহদী হাসান খান একজন হ্যাকার। নতুবা ক্ষমা প্রার্থণা করুন প্রকাশ্যে। শ্রদ্ধা জানাই মেহদী হাসান খান এবং অভ্র টিমের প্রতিটি কর্মীকে।

যারা একেবারেই কোনো লাভের আশা ছাড়া শুধু আমাদের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। স্যালুট জানাই মেহদী হাসান খান আপনাকে জানবেন, আমরা আপনার পাশে আছি, থাকবো ----------------------------------------------- এই লিখা কপি পেস্ট করা হইলো এইখান থেকেঃ http://www.amrabondhu.com/lokenbosh/993

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।