আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দূরের দ্বীপে



উত্তাল সাগরে হঠাত্ এক ঝড়। ভেঙে চুরমার অ্যান্ড্রু ব্যারির ছোট্ট জলযান। সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও দুই কন্যা। ঝড় তাঁদের এনে ফেলল প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি অজানা দ্বীপে। তারপর? দ্বীপের নাম মগমগ ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ।

ক্লান্ত শরীরে চোখ মেলতেও বেগ পেতে হয় অ্যান্ড্রু ব্যারির। কিন্তু একবার হুট করে চোখ খুলেই অবাক হন ব্যারি। নিজেকে প্রশান্ত মহাসাগরের বদলে ডাঙায়, ছোট্ট একটা দ্বীপে খুঁজে পান। একটু আগেই তো প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নৌকায় ছিলেন তিনি! সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জেনি ও আদরের ছোট্ট দুই মেয়ে ডায়না ও শ্যানন। এবার বুকটা ধক করে ওঠে অ্যান্ড্রু ব্যারির।

বুঝতে পারেন, প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ঘণ্টায় ১১০ মাইল বেগে ধেয়ে আসা ঝড়ই তাঁকে এখানে এনে ফেলেছে। স্ত্রী-কন্যাদের কেউ পাশে নেই। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ইতিউতি খুঁজতে থাকেন স্ত্রী-কন্যাদের। একটু পরই খোঁজ মিলল বাকিদের। খানিক দূরে তাঁরাও খোলা আকাশের নিচে পাথরের ওপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

হাঁফ ছাড়েন ব্যারি। মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি এসে ভর করে তাঁর। তবে একটু পরেই চমকে ওঠেন তিনি। কারণ, খানিক দূরেই বেশ কয়েকজন আদিবাসী মানুষ তাঁদের ঘিরে ফেলেছেন ততক্ষণে। সেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, ঝড়ে ভেঙে যাওয়া নৌকাসহ তাঁদের উদ্ধার করে এখানে নিয়ে এসেছেন তাঁরাই।

এই মানুষগুলো সেবা-শুশ্রূষাও করেছেন ব্যারি ও তাঁর স্ত্রী-কন্যাদের। মানুষগুলোর এ ধরনের আচরণে ভরসা খুঁজে পান ব্যারি। এবার ফিরে যাওয়ার পালা। কিন্তু কীভাবে? ঝড়ে তো পুরো নৌকা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাঁদের এই অবস্থা দেখে অচেনা মানুষগুলো ভরসা দেন, তাঁরা নিজেরাই নৌকাটি ঠিকঠাক করে দেবেন।

কিন্তু এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আধুনিক জীবনে বেড়ে ওঠা ব্যারি ও তাঁর পরিবার এ রকম খোলা আকাশের নিচে পাথরের ওপর থাকবেন কী করে? মহা চিন্তায় পড়ে যান ব্যারি। একটু পরই সে চিন্তা জলের মতো ভেসে যায় তাঁর আদরের মেয়েদের মুখে হাসি দেখে। এবার নগরজীবনের মায়া ভুলে শুরু হয় অচেনা এক ছোট্ট দ্বীপে ব্যারি পরিবারের বসবাস। দ্বীপটির নাম মগমগ।

সাগর পাড়ির নেশা অস্ট্রেলিয়ার একসময়ের বিমানচালক অ্যান্ড্রু ব্যারি সময় পেলেই সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তেন নতুন অভিজ্ঞতা আর রোমাঞ্চের খোঁজে। ছয় মাস আগের কথা। ঠিক একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে স্ত্রী জেনি, দুই কন্যা ডায়না ও শ্যাননকে সঙ্গে নিয়ে তিনি অভিযানে নামেন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে ছোট্ট একটা জলযান ও প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নাও ভাসিয়ে চলতে থাকেন অজানার উদ্দেশ্যে। দ্বীপের বুকে অন্য জীবন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছুটে চলছে তাঁদের নৌকা।

চারদিকে অথৈ পানি। নৌকায় মেয়েদের সঙ্গে খুনসুটি করেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাত্ কোত্থেকে এক ঝড় এসে এলোমেলো করে দিল সবকিছু। ঘণ্টায় ১১০ মাইল বেগে ধেয়ে আসা এক ঝড়ের কবলে পড়ে পুরো নৌকাই ভেঙেচুরে একাকার। তারপর আর কিছুই মনে নেই তাঁদের।

অবশেষে তাঁরা নিজেদের খুঁজে পান প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট মগমগ দ্বীপে। চারদিকে নীল জল। মাঝে ছোট্ট মগমগ দ্বীপ। এই দ্বীপে বাসিন্দা বলতে মাত্র ২০০ আদিবাসী। বাইরের সঙ্গে এই দ্বীপের মানুষের যোগাযোগ একদম নেই বললেই চলে।

বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগের উপায় পাশের দ্বীপ ফালালাপ। একটা বিমানবন্দর আছে সেখানে। মাঝেমধ্যে পাশের দ্বীপ ফালালাপ থেকে দু-একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসে। এই দ্বীপে খাওয়ার পানির অভাব, বিদ্যুত্ নেই। খাদ্য বলতে কচ্ছপের মাংস, সামুদ্রিক মাছ, নারকেলের শাঁস আর বনমোরগ।

রান্নাবান্না একদম হয় না বললেই চলে। আগুনে শুধু একটু ঝলসে নিয়েই খাবার খায় তারা। বাড়িঘরও নেই। রাত হলেই খোলা আকাশের নিচে পাথরের ওপর মাথা দিয়েই ঘুমের জগতে চলে যায় এই দ্বীপের বাসিন্দারা। অচেনা এই দ্বীপে প্রথমে বেশ অস্বস্তি বোধ করেছিলেন ব্যারি।

তাঁর সবচেয়ে বেশি চিন্তা হতো আদরের মেয়ে দুটিকে নিয়ে। কিন্তু একদিন পরই তিনি দেখলেন, তাঁর মেয়েরা গিটার বাজিয়ে দিনমান ঘুরে বেড়ায় দ্বীপের এখানে ওখানে। এই জংলি পরিবেশে মেয়েদের উচ্ছলতা দেখে স্বস্তি ফিরে পান ব্যারি ও তাঁর স্ত্রী। মগমগ দ্বীপের মানুষগুলোও বেশ অতিথিপরায়ণ। দ্বীপের আগুনে ঝলসানো খাবার আর খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোও বেশ উপভোগ করতে লাগল ডায়না আর শ্যানন।

যতই দিন গড়াতে থাকে, পরিবেশটা ততই ব্যারিসহ পুরো পরিবারের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে থাকে। ছয় মাস ধরে মেয়েরা এই দ্বীপেই পড়াশোনা করছে। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা মা জেনি নিজেই তাঁদের পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করছেন। অ্যান্ড্রু ব্যারি জানিয়েছেন, মগমগ দ্বীপের মানুষ ভালো একটি জায়গায় থাকতে দিয়েছে তাঁদের। কিন্তু এখানেও মশা আর ধেড়ে ইঁদুরের প্রচণ্ড উত্পাত।

তার পরও ভালো আছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যা হলো ডায়না আর শ্যাননকে নিয়ে। তারা দুজনই যদি এই পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই তাঁরা নৌকাটি মেরামত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। জলযান মেরামত হলেই তাঁরা রওনা হবেন অস্ট্রেলিয়ায় নিজের বাড়ির পথে।

সূত্র: ওয়েবসাইট উল্লেখ্য: লেখাটি প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটিরদিনে ভিন্ন নামে প্রকাশিত

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।