আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুস্থ মুজাহিদ চিৎকার করে বলবে, ‘আমি খুনি, গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী। আমার সবকিছু মনে পড়েছে, আমি আমার বিচার চাই’।

একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনাল গঠিত হওয়ার পর জামায়াত নেতারা মুখ খুলছেন। গত ৩১ মার্চ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘একাত্তরে কী করেছি, এতকিছু মনে নেই’। তিনি আরো বলেছেন, ‘দেখেন, পাস্ট ইজ পাস্ট। অতীতের বিষয় নিয়ে পৃথিবীতে এমন ঘাঁটাঘাঁটি আর কেউ করে না’।

মুজাহিদের এই তথ্য এবং উদ্ধৃতি চমকপ্রদ এবং নিশ্চয়ই গবেষণার দাবি রাখে। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতই একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কথা বলে না। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির অনেক নেতাই মাঠ গরম করতে নানা লাগামহীন কথা বলেন, কিন্তু জামায়াত লাগামহীন, দায়িত্বহীন কথা বললেও এর পেছনে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। (যেমন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, জামায়াত হুইস্কি দিয়ে ইফতার করে। এমন হালকা কথা বলে গোটা বিষয়টাকে হালকা করা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পক্ষেই সম্ভব)।

মুজাহিদ তার বক্তব্যের প্রথম অংশে সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘৭১-এ তিনি কী করেছেন তা তার মনে নেই। ’ অত্যন্ত সত্য কথা। ’৭১-এ তিনি কী করেছেন, এটা যদি তার মনে থাকত, তাহলে তিনি এরকম মাথা উঁচু করে দাপিয়ে বেড়াতেন না, গুহায় গিয়ে থাকতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান সেনাকর্মকর্তা কর্নেল বেনফিট তার অপকর্মের জন্য আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কয়েকদফা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করতে পারেননি। পরিবার তাকে বাধা দিয়েছে। যুদ্ধের ১২ বছর পর যখন আত্মগোপন অবস্থা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়, তখন বেনফিট ছিলেন উš§াদ। ডাক্তারি চিকিৎসায় ধরা পড়ল আত্মগ্লানিতে বিবেকের পীড়ায় তার এই অবস্থা হয়েছে। আদালতে যখন বেনফিটকে নেয়া হলো, তখন আদালত নির্দেশ দিল সুস্থ করে তাকে নিয়ে আসতে হবে।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল তখন আবার তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠাল, তখন চিকিৎসকরা জানালেন, একমাত্র তার অতীত মুছে ফেলতে পারলেই তিনি সুস্থ হবেন। চিকিৎসকরা মন্তব্য করেন, যে হত্যাযজ্ঞ এবং বিভীষিকা বেনফিটের নেতৃত্বে হয়েছে, তাতে কোনো মানুষ সুস্থ থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, কারাগারেই বেনফিটের মৃত্যু ঘটে। বেনফিট তার অপকর্মের স্মৃতি ভোলার জন্য উš§াদ হয়েছিল। উš§াদ অবস্থায় তিনি মারা যান।

আমাদের মুজাহিদ ভাগ্যবান। কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তিনি তার ’৭১-এর স্মৃতি ভুলে গেছেন। স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্যই মুজাহিদ বীরদর্পে রাজনীতি করছেন। দেশের মানুষকে নানা ছবক দিচ্ছেন। অতীত ভুলে যাওয়ার জন্যই তার গাড়িতে ত্রিশ লাখ শহীদের পতাকা উড়িয়ে বিবেকহীন পশুর মতো ঘুরে বেড়াতেন।

মানুষের কাছে ভোট চাইবার মতো সাহস দেখাতেন। ‘স্মৃতি শক্তি হারানো’, একটি মারাত্মক অসুখ। এধরনের অসুখের চিকিৎসা নিয়ে সারা পৃথিবীতে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে, এই রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো শক-থেরাপি। একটি মানুষ যে পরিমাণ আঘাত পেয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হয় ঠিক সমপরিমাণ অন্য একটি আঘাত তার স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

‘মুজাহিদ’ ’৭১-এর অপকর্মের ক্ষতচিহ্নের দায়ে, বিবেকের আঘাতে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন। তার সঙ্গে এখন ঠিক ঐ আচরণ করলে, তিনি তার স্মৃতি ফিরে পেতে পারেন। তাই মুজাহিদের প্রেজেন্ট (বর্তমান) হলো তার স্মৃতিভ্রষ্ট রোগের চিকিৎসা। এ জন্য তাকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে আনতে হবে। ’৭১-এ মুজাহিদ মানুষের সঙ্গে যা যা করেছে, তা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক তথ্যানুসন্ধান এবং গবেষণা। মুজাহিদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দালিলিক প্রমাণ সামনে নিয়ে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই চিকিৎসা তাকে সুস্থ করে তুলবে। এতে মুজাহিদ হারানো স্মৃতি ফিরে পেয়ে আর্তনাদ করে উঠবেন। মুজাহিদের ফিউচার অত্যন্ত চমকপ্রদ।

তার স্মৃতিভ্রষ্ট রোগের চিকিৎসার পর ভবিষ্যতের মুজাহিদ তার আরো সহযোগীদের নাম বলবেন। বলবেন, কীভাবে তার গণহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কেন তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলেন। কীভাবে তারা মা-বোনদের তুলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে। তখন মুজাহিদ বুঝবেন, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটিই হলো আসল।

তার তখন বার্ট্রান্ড রাসেলের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়বে ‘অতীত হারালে আমার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না’। মুজাহিদ তখন দেখবেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৫০ বছর পরও কীভাবে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কীভাবে এখনো খুঁজে বেড়ানো হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের। তখন মুজাহিদ নিজেই নিজের বিচার দাবি করবে। মুজাহিদ তখন লজ্জায় মুখ ঢাকবে, নয়তো বেনফিটের মতো আত্মহত্যার চেষ্টা করবে।

সুস্থ মুজাহিদ চিৎকার করে বলবে ‘আমি খুনি, গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী। আমার সবকিছু মনে পড়েছে, আমি আমার বিচার চাই’। মূললিখাঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।