আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামরিক শাসনের দোসর বি,এন,পি না আ'লীগ

হট নিউজ

বাংলাদেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন মরহুম খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। তিনি কিন্তু সারাজীবন আওয়ামী লীগই করেছেন। খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যারা মন্ত্রী ছিলেন তারা প্রত্যেকে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এবং জাতীয় সংসদ সদস্য। খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতীয় সংসদকে ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। দেশের সংবিধানও বহাল ছিল।

খন্দকার মোস্তাককে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফায়াত জামিল। তারা দুজনই ছিলেন আওয়ামী লীগের কঠিন সমর্থক। মোস্তাকের বিরুদ্ধে তারা পাল্টা অভ্যুত্থান করেন। অভ্যুত্থানের পর তারা নিজেরাই নিজেদের প্রমোশন দেন। ব্রিগেডিয়ার থেকে খালেদ মোশাররফ হন মেজর জেনারেল এবং কর্নেল থেকে শাফায়াত জামিল হন ব্রিগেডিয়ার।

খালেদ মোশাররফ যখন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান তখন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন বন্দি। ৭ নবেম্বর ক্যান্টনমেন্টে সৈন্যরা মধ্যম সারির অফিসারদের নেতৃত্বে বিপ্লব করেন। এই বিপ্লবে যোগদান করেন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। এই বিপ্লবীরা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে ছিনিয়ে আনেন, নিজেদের নেতা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে বসান। এর ৩ দিন আগে ৩ নবেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটান এবং প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) পদে বসান।

জেনারেল জিয়াকে সিএমএলএ পদে বসালে জেনারেল জিয়া সেচ্ছায় ঐ পদ ত্যাগ করেন। তখন জাস্টিস সায়েম জনাব জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (ডিসিএমএলএ) পদে নিয়োগ দেন। এভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছায় সিএমএলএর পদ ছেড়ে দিয়ে নিজের পদাবনতি ঘটান! সুতরাং যখন বলা হয় যে, জিয়া ছিলেন একজন ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল তখন ইতিহাসের মারাত্মক বিকৃতি ঘটানো হয়। উপরের ঘটনাবলী বিধৃত হল সেখান থেকে দেখা যায় যে, জিয়াউর রহমান সামরিক আইনের ধারের পাশেও ছিলেন না। শুধুমাত্র নির্বাচন অনুষ্ঠানকে যদি গণতন্ত্রের মাপকাঠি ধরা হয় তাহলে ভিন্ন কথা।

কিন্তু সিপাহী এবং লাখ লাখ জনতা সম্মিলিতভাবে যদি কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসায় তাহলে সেই পথ গণতান্ত্রিক পথ হবে না কেন? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেননি বরং জনগণ এবং সিপাহীরা তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছিল। এরপর যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয় তখন দায়িত্ব গ্রহণের কিছু দিন পর তিনি জনগণের দুয়ারে হাজির হন। জনগণ তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চায় কিনা সেই মতামত যাচাইয়ের জন্য তিনি গণভোট অনুষ্ঠান করেন। গণভোটে বিপুল সংখ্যক মানুষ তার প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠান সমর্থন করে ভোট দেন। এরপর ১৯৭৯ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।

সেই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বনিদ্বতা করে। ঐ সংসদে সংবিধান মোতাবেক দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পঞ্চম সংশোধনী বিলটি পাস হয় এবং সেটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ৩ নবেম্বর খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তিনি কতগুলো কাজ করেন। খালেদ মোশাররফের সরকার টিকেছিল মাত্র ৩ দিন। মাত্র ৩ দিনের মধ্যে তিনি জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন এবং সংবিধান বাতিল করেন।

খালেদ মোশাররফের আপন ভাই রাশেদ মোশাররফ এবং তার মাতার নেতৃত্বে ধানমন্ডি এলাকায় মিছিল হয় এবং আওয়ামী লীগের সমর্থনে শ্লোগান দেয়া হয়। মাত্র ৩ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সারাদেশে এমন সব কাজ করে যার ফলে জনগণের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে খালেদ মোশাররফের সরকার হল আওয়ামী লীগ ও ভারতপন্থী সরকার। ফলে সাথে সাথে সিপাহী ও জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই প্রতিক্রিয়ার বিস্ফোরণ ঘটে ৭ নবেম্বর। একটি রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া মুক্ত হন এবং খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল হুদাসহ কয়েকজন সেনা অফিসার নিহত হন।

১৫ আগস্ট ক্ষমতা ও রাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তনের ফলে দেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় একটি নতুন ধারার সৃষ্টি হয়। ইতোপূর্বে রাষ্ট্রীয় শ্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা'। ছিলো ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ', ‘সমাজতন্ত্র', ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা' এবং ভারত ও সোভিয়েত ব্লকের সাথে গাঁটছড়া। ৭ নবেম্বরের পর শোনা গেল নতুন শ্লোগান, ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার', ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'। রাষ্ট্রের মূলনীতি হল আল্লাহর প্রতি ঈমান, ইনসাফ ভিত্তিক সামাজিক বিচার এবং মুসলিম উম্মার সাথে সংহতি জোরদার করা।

পঞ্চম সংশোধনীতে এই সব রাজনৈতিক আদর্শই বিধৃত আছে। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে বিএনপি'র টিকেটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আবদুস ছাত্তারকে উৎখাত করে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। প্রেসিডেন্ট আব্দুস ছাত্তারকে হটিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ সিএমএলএ এবং প্রেসিডেন্ট হন। জেনারেল এরশাদের এই সামরিক অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েকমাস আগে সারাদেশ ব্যাপী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি আব্দুস ছাত্তার বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেন।

অথচ এই সামরিক আইন জারি সম্পর্কে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন যে এরশাদ কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়াতে ‘আমি অখুশী নই'। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মালিকানাধীন দৈনিক বাংলার বানীতে এরশাদের ক্ষমতা দখলে উল্লাস প্রকাশ করা হয়। কারণ, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হল বিএনপি। সেই বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সামরিক বাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে। সেই পদক্ষেপেও উল্লাস প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ।

কে না জানে এক এগারোর জরুরি শাসনের সাইনবোর্ড লাগিয়ে যে শাসন দেশে চলছিল সেটি ছিল আসলে একটি মুখোশ। সেই মুখোশের আড়ালে চলছিল সামরিক শাসন। সেই সামরিক শাসনের খলনায়ক ছিলেন জেনারেল মইন। জেনারেল মইনের সেই ছদ্মবেশী সামরিক শাসন যে এসেছিল বিএনপি ও জামায়াতকে ধ্বংস করতে এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সেটি এখন দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.