আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিকার...

কথা প্যাঁচাই না। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় জনসন। আলস্য ভেঙ্গে উঠার সময় হয়েছে। । হ্যাঁ সুন্দরী মেয়েটা বারের দিকেই হেঁটে যাচ্ছে।

জনসনের বেকার বসে থাকার সময় শেষ। শিকারী পুরুষ সে। মেয়েটিকে একবার দেখেই চিনে নিয়েছে। জনসনের হাতে খুব সহজেই ধরা দেবে। ক্যালিফোর্নিয়ার এই শহরটা বেশ নিরিবিলি।

শহরে মানুষজন অনেক কম। মাত্র দুদিন হলো এখানে এসেছে জনসন। মনের মত শিকার পায়নি এখনো। অনেকগুলোই দেখেছে সে কিন্তু বেশিরভাগই বেশী বয়সী ডিভোর্সী নয়তো দু একটা সন্তানের জননী। যুবক বয়সে এদের প্রতি জনের বেশ দুর্বলতা ছিলো।

১৭/১৮ বয়সে সবাইকে ভালো লাগে। কিন্তু এখন শুধু সিঙ্গেল খোঁজে জন। ৩৭ এ এসে কেমন যেন রুচি পাল্টে গেছে জনের। অন্যান্য পুরুষের মত নয় সে। সৃষ্টিকর্তা তাকে অন্যদের থেকে বেশি কিছু দিয়ে পাঠিয়েছেন।

মন্দার বাজারে অনেকের মতই বেকার পুরুষ জনসন। চাকরী হারিয়েছে ৩ বছর হলো। এরপর থেকে তার শুধু একটাই কাজ। ধনী সুন্দরী মেয়ে খুঁজে বের করা। এরপর? কয়েকটি মাস নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া।

সাধারণত জনকে কোন মেয়েই ছাড়তে চায় না। কিন্তু জন বোরিং ফিল করে। এরপর ভিন্ন পথে বেরিয়ে আসে সে। অসম্ভব সুন্দর চেহারার ছেলেটাকে কোরি আগেই খেয়াল করেছে। বারে ঢোকার আগেই একবার দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে।

ছেলেটার চোখে একবার চোখ রেখেই হারিয়ে গেছে কোরি। বারে এসে তাই বারবার তাকাচ্ছে দরজার দিকে। আসবে তো একবার? বয়স কত হবে তার?- ভাবছে কোরি। ২৮, উহু বড়জোর ৩০। সুঠাম দেহ।

আর চাহনীটা কেমন অদ্ভুত! কেমন যেন নেশা নেশা ধরিয়ে দেয়। ছেলেটাকে একটা ড্রিংক অফার করলে কেমন হয়? ভাবতে ভাবতে গাল লাল হয়ে যায় কোরির। ধূর... এসব কি ভাবছে সে?! আগামী সপ্তাহে তার প্রজেক্ট জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ওটা নিয়ে ভাবলেই বরং বেশী ভালো হবে- নিজেকে বোঝায় কোরি। ‘ড্রিংক?’-- জনের আকস্মিক প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে কোরি।

নিজের সৌভাগ্যকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না কোরি। সেই ছেলেটা তার সামনে এসে দাড়িয়েছে! অবিশ্বাসী চোখে ড্রিংকটা হাতে নেয় কোরি। ‘জন’- নিজের পরিচয় দেয় জনসন। হাতটা বাড়িয়েই রাখে মেয়েটার দিকে। মেয়েটার অবাক হওয়াটাকে উপভোগ করছে সে।

না চাইতেই ধরা দিয়ে বসে আছে মেয়েটা! ‘কোরি’- হাতটা ধরে মৃদু ঝাকিয়ে দিলো কোরি। বিস্ময় চাপা দিতে পারেনি বলে লজ্জ্বা লাগছে তার। -‘প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত খুব, তাই না?’ - ‘হ্যাঁ! প্রজেক্টের ব্যাপারে আপনি জানলেন কি করে?’-- চমকের পর চমক দিয়েই যাচ্ছে মানুষটা! - ‘নাহ্‌! এ আর এমন কি?’ মৃদু হাসলো জন। পাশে রাখা ফাইলটার দিকে ইঙ্গিত দিলো। ওতে বড় করে প্রজেক্ট লেখা আছে।

হাসিটা ফিরিয়ে দিলো কোরি। মানুষটার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভালো। এ ধরনের পুরুষ তার বেশ পছন্দ। পছন্দটা মুগ্ধতায় ছড়াতে বেশী সময় লাগলো না। অল্পক্ষণেই জনের বাহুবন্ধনে বাঁধা পড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো কোরি।

মাইল তিনেক দূরে তার ছোট্ট ফ্ল্যাট। আপাতত শহরে নতুন আসা এই সুপুরুষ ইঞ্জিনিয়ারকে তার ফ্ল্যাটেই আশ্রয় দিতে চায় সে। জনও খুব একটা আপত্তি করেনি। এই শহরটায় নতুনদের থাকার জন্য ভালো জায়গা কম। কোরির কথাই বিশ্বাস করেছে জন।

এই ব্যাপারটাও অবাক লেগেছে কোরির। অপরিচিত কেউ কাউকে সাধারণত বিশ্বাস করে না। কিন্তু এই মানুষটা যেন চমকে ভরপুর! চমকে ভরপুর ছিলো পরবর্তী ৬টা মাসও। ড্রাইভিং, ডুব সাঁতার, স্কেটিং, ডান্সিং…কোথায় পারদর্শীতা নেই জনের! কাছের বান্ধবীরা রীতিমত হিংসা করা শুরু করলো কোরিকে। কিন্তু কোরির তাতে কি যায় আসে? সে তার স্বপ্ন পুরুষকে হাতে পেয়েছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজের ফাঁকে জনের চিন্তাতেই কাটে তার। লিভিং টুগেদার নয়… জনকে সে স্বামী হিসেবে পেতে চায়। কোরির সুখচিন্তাটাই জনের বড়সর দুশ্চিন্তা। জনের যাযাবর মন আর থাকতে সায় দিচ্ছে না। ছমাস পেরিয়ে গেছে, আর কত! কিন্তু কিইবা করতে পারে সে? কোরি মেয়েটা অসম্ভব ভালো।

কিন্তু ভালো হওয়াটাই জনের কাছে শেষ কথা নয়। সার্লি কিংবা এলিসা মেয়ে দুটোও ভালো ছিলো। কিন্তু কেউই জনকে বেঁধে রাখতে পারেনি। পারার কথাও না। কারণ, জন কখনো পুরনো স্মৃতি রেখে আসে না।

চিহ্ন মুছে ফেলতে জনের জুড়ি মেলা ভার। ‘কি ভাবছো, ডার্লিং?’- কোরির ডাকে জনের ভাবনায় ছেদ পড়ে। এতক্ষণ জনের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো কোরি। -‘উহু। তেমন কিছু না।

’ ‘তাহলে আমরা বিয়ে করছি কবে?’ - ‘বিয়েতে এত তাড়া কিসের? এইতো খুব ভালো আছি। ’ ‘উহু, ভালো নেই। তুমি এখন আর আগের মত নেই। সবসময় কি একটা চিন্তার মাঝে থাকো। কি ভাবো এত?’ - ‘কই কিছু না তো’- জন সতর্ক হয়।

‘আমি তো এমনি, তাই না?’ ‘না, তুমি এমন না। আগে তো তোমার ভাবনায় সারাক্ষণ আমিই থাকতাম। এখন কি থাকে শুনি?’ মৃদু রাগ দেখায় কোরি। - ‘নাহ, কিছু থাকে না। তুমি বাদে আর কি থাকবে বলো?’ জন তার আকর্ষনীয় মুচকি হাসিটা কোরিকে উপহার দেয়।

‘তাহলে বলো আমাকে নিয়ে কি ভাবছো?’ কোরি আরো কাছিয়ে আসে। - ‘ভাবছি তুমি গত কদিনে আরো বেশী সুন্দর হয়ে গেছো! এত সুন্দর হলে কিভাবে হবে বলো?’ ‘যাও ফাজিল কোথাকার!' লজ্জ্বা পায় কোরি। আবেগে জনের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়। শারীরিক ভালোবাসা জনের সবসময়কার ভালো লাগার বিষয়। কিন্তু আজকে বিষয়টা ভিন্ন।

নিজ অভিজ্ঞতা থেকে জন জানে- যখন মানুষ সবচেয়ে দুর্বল থাকে, আঘাত করার সেটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ। জনের কল্পনায় ভেসে উঠে এলিসার মায়া মুখটা। গলা কেটে দেওয়ার পরেও বিস্ময়কর ভাবে ওর মুখে হাসিটা লেগে ছিলো। প্রচন্ড হাসির একটা জোক্স বলেছিলো জন। এলিসা হাসি থামাতেই পারেনি।

সেই সুযোগটাই নিয়েছিলো জন। ওর প্রিয় বুলগেরিয়ান ছুরিটার একটানে এলিসার মাথা পুরো আলাদাই হয়ে যায়। কিন্তু হাসিটা তখনো মুখ থেকে মুছে যায়নি মেয়েটার। কোরি অবশ্য হাসছে না। কিন্তু জনের বুকে আবেগে ভাসছে।

সুযোগটা কি নেওয়া উচিত? একবার ইতস্তত করলো জন। সুযোগ সন্ধানী পুরুষ সে। কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি জন। আজো করবে না। আস্তে করে টেবিলের ড্রয়ারে রাখা প্রিয় অস্ত্রটায় হাত দিলো সে... উজ্জ্বল রোদে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে জনের।

হাইওয়ে রোডে দাঁড়িয়ে আছে সে। লিফট দরকার তার। আপাতত আরো ছমাসের জন্য একটা লিফট। এক এক করে তেরটা গাড়ি চলে গেলো। কোনোটাই থামায়নি জন।

চৌদ্দ নাম্বার গাড়িটা থামালো জন। দূর থেকেই বুঝেছে একটি মেয়ে গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে আসছে। কাছে এসে দরজা খুলে দিলো মেয়েটা। মৃদু হেসে উঠে পড়লো জন। -‘কোথায় নামবেন?’ মেয়েটির স্বপ্রশ্ন দৃষ্টি।

‘নামার দরকার আছে কি?’- জন হাসলো। মেয়েটিও হাসলো। জনের হাসির প্রভাব উপেক্ষা করার শক্তি সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়ে পাঠায়নি..... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।