আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহ্য হারাচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেন

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই
যতদূর চোখ যায় এলোমেলো গাছগাছালির গহীন অরণ্য। ইটের সুরকি ধরে আরো গহীনে হারিয়ে যাবার পথ। সেপথ যেথায় গিয়ে ঠেকেছে সেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছেনা সহসা। আলো আধারীর এ খেলায় মত্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন দিনদিন পরিণত হচ্ছে যেন এক অন্ধপুরিতে। অথচ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার জন্য একদিন এ উদ্যানটি গড়ে উঠেছিল।

আর আজ এখানে যা হচ্ছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। চুরি, ছিনতাই এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রকৃতিপ্রেমীদের বদলে এ উদ্যান এখন পরিণত হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডেটিং স্পটে। একটু ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে তারা বেছে নিচ্ছেন উদ্যানের গহীন জঙ্গল। আর এ সুযোগে এক শ্রেণীর খাবার বিক্রেতারা ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ টাকার খাবার ৫০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

কেউ খাবার কিরতে না চাইলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে। অব্যবস্থাপনা গোটা এলাকা জুড়ে ১৯৬১ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ বোটানি বিভাগের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ১০ একর জমি নিয়ে সর্বপ্রথম এ গার্ডেনটির যাত্রা শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন গার্ডেনটির বর্তমান আয়তন ২৫ একর। বিশাল এ এলাকাজুড়ে গাছগাছালির কোন অভার নেই। কিন্তু অভাব রয়ে গেছে ব্যবস্থাপনার।

গোটা উদ্যানজুড়েই অব্যস্থাপনার ছাপ। হাঁটার জন্য এখানে যেসব সরু রাস্তা রয়েছে তার সবই এবড়োথেবরো। বসার জন্য নেই কোন বেঞ্চ বা উঁচু ঢিবি। উদ্যানে কাউকে বসতে হলে তাকে বসতে হবে স্যাঁতসেতে মাটিতে। বসার জন্য আবার পুরনো পেপার কিনতে হয় চড়া দাম দিয়ে।

শুধু তাই নয়, প্রতিদিন এখানে দর্শনার্থীদের সমাগম ভালো থাকলেও মহিলাদের জন্য নেই কোন টয়লেট ব্যবস্থা। ছেলেদের জন্য যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ব্যবহার অযোগ্য। তার উপরে গহীন জঙ্গল থেকে প্রায়শই বিশালাকার সব গুইসাপ চলে আসছে পথে। এছাড়া নানান ধরনের বিষাক্ত সব পোকামাকড়ের অভাব নেই। বান্ধবীকে নিয়ে গার্ডেনে আসা কলেজ ছাত্র আলমগীর হোসেন জানান, জায়গাটা অনেক বড়।

তাছাড়া যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। তাই একটু সময় কাটাতে মাঝে মাঝে এখানে আসি। কিন্তু দিনদিন এখানকার পরিবেশ খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে এখানে মেয়েদের জন্য আলাদা কোন টয়লেট নেই। পুরুষদের জন্য যা আছে তাতেও যাওয়া যায়না।

গার্ডেনে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তারও কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায়শই দর্শনার্থীদের লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে স্থানীয় বখাটেদের হাতে। এছাড়া উদ্যানে প্রায় সবসময়ই ঘুরে বেড়ায় হরেক রকমের প্রতারক। অথচ এসব দেখার জন্য নেই কোন নিরাপত্তাকর্মী। বেপরোয়া খাবার বিক্রেতারা গার্ডেনের মুল গেট থেকে কিছুটা সামনেই পথের মোড়ে মোড়ে বসানো রয়েছে ভ্রাম্যমান দোকান।

নানান ধরনের ফাস্টফুড ও ঠান্ডা পানীয় পাওয়া যাচ্ছে এখানে। তবে বেশ কিছু যুবক ঘুরে ঘুরে ঠান্ডা পানীয়র ক্যান বিক্রি করে। আর এখানে আসা দর্শনার্থীদের প্রধান অস্বস্তি এ ক্যান বিক্রেতারা। রয়েছে পুরনো পেপার বিক্রেতাও। গার্ডেনে কোন প্রেমিকজুটি ঢুকলেই ক্যান বিক্রেতারা প্রথমে তাদের টার্গেট করে।

তারপর প্রেমিক জুটি ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে একটু আড়ালে বসতেই ক্যান বিক্রেতারা কোমল পানীয়র ক্যান নিয়ে ওই যুগলের কাছে গিয়ে হাজির হয়। ক্যান কেনার জন্য তাদের চাপ দিতে শুরু করে। কেউ নিতে না চাইলে আরো বিক্রেতাদের ডেকে প্রেমিক প্রেমিকাদের হেনস্তা করা হয়। হেনস্তার ভয়ে তখন তারা কথা না বাড়িয়ে ১৫ টাকার ক্যান কেনেন ৬০ টাকায়। সে জানায়, এরা খুবই খারাপ।

তাদের উৎপাত বন্ধ না হলে উদ্যানে দর্শনার্থী আসা কমে যাবে। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে ক্যান বিক্রেতা শুপন জানান, আমরা সবার কাছে ক্যান নিয়ে যাই। কিন্তু কেউ কিনতে না চাইলে আর বেশি জোড়াজোড়ি করি না। তবে সবাই ক্যান কিনলে আমাদের একটু আয় রোজগার বেশি হয়। এই ক্যান বিক্রির উপরই আমাদের সংসার চলে।

ক্যান বিক্রেতাদের বাইরেও গার্ডেনে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকান। দোকারগুলোতে রয়েছে পর্দা দিয়ে ঘেরা বেশ কিছু ছোট ছোট ঘর। কয়েক দর্শনার্থীর অভিযোগ, ঘরগুলো প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়। পর্দার আড়ালে দিনভর চলে নানা অপকর্ম। তাছাড়া এসব দোকানে সব খাবারেই নেয়া হয় গলাকাটা দাম।

গার্ডেনের বাইরে যে চটপটি বা ফুসকা পাওয়া যায় ২০-২৫ টাকায় এখানে তা বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকায়। এ বিষয়ে ফাস্টফুড বিক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, প্রেমিক প্রেমিকারা দূর দূরান্ত থেকে এখানে একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে আসে। তাই তাদের সুবিধার্থে এ পর্দার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে সবাই একটু আরাম করতে পারেন। যারা ওই ঘরে বসেন, তারা যাওয়ার সময় যার যা খুশি মত দিয়ে যান।

হতে পারতো উদ্ভিদ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু উদ্ভিদের জীবন্ত সংগ্রহশালা হিসেবে ১৯৬৩ সালে থেকে এটি নাগরিক জীবনে যোগ করে আসছিল বিনোদনের ভিন্ন মাত্রা। অরণ্য বিনোদনের সবই ছিল এখানে। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, অর্কিড ও ক্যাকটাসের ছাউনি, বেত ও দেবদারু বাগান, বাঁশঝাড় এবং আরো আকর্ষণীয় গাছপালা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল গার্ডেনের চারদিকে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ নার্সারি। গোলাপ বাগানে সংরক্ষণ করা আছে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড টি গ্রুপ, ফ্লোরিকান্ডা গ্রুপ এবং মিনিয়েচার প্রভৃতি গ্রুপের ৩শ’ প্রজাতির গোলাপ।

এখানে রয়েছে উদ্ভিদ জগতের অভিজাত শ্রেণীভুক্ত অর্কিডের বিশাল সংগ্রহ। আছে গ্রিনহাউসে সুদৃশ্য নাবিল, ক্যাটালিয়া, ভ্যান্ডা রক্সবার্জি প্রভৃতি ৮০ প্রজাতির অর্কিড। প্রায় ৪৯ প্রজাতির ক্যাকটাস, বেতবাগান এবং বাঁশবাগানগুলোও দেখার মত। শুধু তাই নয়, ভেষজ, জলজ সব রকম উদ্ভিদের উপস্থিতি রয়েছে এখানে। কিন্তু এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেই তেমন কোন উদ্যোগ।

অযত্ন আর অবহেলায় মরতে বসেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কিন্তু এদিকে সরকারি একটু নজর থাকলেই এ উদ্যানটি হতে পারতো উদ্ভিদ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র আল-আমীন জানান, উদ্যানে দেখার মত বা উপভোগ করার মত অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গোটা উদ্যানটি জুড়েই এখন চলছে অসামাজিক কার্যক্রম। যে কারণে সেখানে আর যাবার পরিবেশ নেই।

তাছাড়া অবস্থা এখন এমন হয়েছে, কোন কাজে ওখানে গিয়েছি শুনলেও বন্ধুরা খারাপ মনে করে। সুত্র: ইত্তেফাক।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।