আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একখন্ড মেঘের আত্মকথা....................................

প্রতিবন্ধীদের ভালোবাসুন। তারাও এ সমাজের নাগরিক। আমার জন্মটা মেরু অঞ্চলের বরফ রাজ্যে। সেখানে আমার একটা নিজস্ব জগৎ ছিল। বায়ুমন্ডলের শীতল পরশ আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখত।

তোমরা আমাকে চিনতে বরফ নামেই। কিন্তু হঠাৎ তোমাদের গড়ে তোলা কৃত্রিম মানব সভ্যতার আঁড়ালে আমার অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে। গ্রীনহাউজের বিষাক্ত তাপমাত্রায় আমি গলে রূপান্তরিত হই তরলে। আমার গলন দেখে আমারই প্রিয়জনেরা আমাকে উপহাস করতে থাকে। উপহাসের বোঝা মাথায় নিয়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর মেরু অঞ্চলে থাকবো না।

সে মতেই উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিয়ে উচ্ছিষ্ট দ্রব্যের মত গড়িয়ে গড়িয়ে চলে আসি সাগরে। এরপর আমার বুকে চলতে থাকে জোয়ার-ভাটার খেলা। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে আমাকে অসহায়ের মত লোনাজলের সাথে বন্ধুত্ব করতে হয়। আমার কষ্টের চিৎকার তোমরা হয়তো অনেকবার শুনেছো। বিশাল গর্জনে সুনামির ঢেউ হয়ে আঁছড়ে পড়েছি বহুবার।

মাঝে মাঝে আনন্দ লাগত এই ভেবে যে, আমার মাঝে অনেক জলজ সন্তান বসবাস করছে। নিজের জন্য না হোক তাদের জন্য অন্তত কিছু একটা করতে পারছিতো! অতীতের স্মৃতিগুলো যখন ভুলে যেতে লাগলাম ঠিক তখন সূর্য এসে আমাকে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখায়। কোন খেয়ালে যেন আমিও তার ডাকে সাড়া দেই। অতঃপর তারই উষ্ণতায় আমি ধীরে ধীরে তরল থেকে বাষ্পে রূপান্তরিত হতে থাকি। আমার জলীয় দেহটা সম্পূর্নরূপে বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার পর আমি মেঘদূত হয়ে উড়ে বেড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে।

আর দু’নয়ন ভরে দেখতে থাকি নিচের পুরো পৃথিবীটাকে। কোথাও সবুজ আবীর কিংবা কোথাও পাহাড়-পর্বত, কোথাও মরুভূমি আবার কোথাও সুবিশাল অট্টালিকা। পৃথিবী যেন একেক জায়গায় একেক রূপে সেজে আছে। এসব দেখতে দেখতে এক সময় আমার নিজের পূর্ব পুরুষদের সাথে দেখা হয়ে যায়। অনেক দিন পর নিজের চেনা পরিবেশে ফিরে এসে আনন্দে মনটা ভরে ওঠে।

খুব ইচ্ছে জাগে নিজের পূর্ব অস্তিত্বে ফিরে যেতে। চেষ্টাও করি। কিন্তু পরি না। কেউ আমাকে গ্রহণও করে না। নিজের হারানো অস্তিত্ব ফিরে না পাওয়ার বেদনায় অবশেষে আমার সমস্ত শরীর ভারী হয়ে যায়।

আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমার সমস্ত বায়বীয় শরীরটা ভীষণ কষ্টকে ধারণ করে রূপান্তরিত হয়ে যায় এক খন্ড কালো মেঘে। আমার শরীরটা এখন ঘন বর্ষার মেঘ। একটু পরেই হয়তো পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়বো অঝর ধারার বাদল হয়ে। কেঁদে কেঁদে ঝরে গিয়ে মিটিয়ে দেব পিপাসিত জমির তৃষ্ণা।

গজিয়ে দেব নতুন সোনালি ফসলের বীজ। কিন্তু আমার বুকের ভেতর পুঞ্জিভূত কষ্টের তৃষ্ণা আমি কেমন করে মেটাবো, তা কি কেউ বলে দিতে পারো?? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.