আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ঢাবি রণক্ষেত্র : ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদল সভাপতি টুকু আহত : হামলাকারীদের গ্রেফতার ও ভিসির পদত্যাগ দাবিতে দু’দিনের ধর্মঘট



ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ঢাবি রণক্ষেত্র : ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদল সভাপতি টুকু আহত : হামলাকারীদের গ্রেফতার ও ভিসির পদত্যাগ দাবিতে দু’দিনের ধর্মঘট বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছাত্রদলের দু’পক্ষের মধ্যে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের পক্ষ নিয়ে হামলা চালালে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান ও শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে বিবদমান গ্রুপগুলো বোমা, ককটেল, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে।

ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রকাশ্যে পিস্তল, কিরিচ, রামদা, হকিস্টিক নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। সংঘর্ষে বিভিন্ন পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও পুলিশ আহত হন। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সশস্ত্র হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আজ ও ২১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে ছাত্রদল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে প্রথমে ছাত্রদলের সংঘর্ষ হয় এবং পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নতুন কমিটির নেতাদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আটকেপড়া ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম খান উদ্যোগ নেন। পুলিশি পাহারায় কলা ভবনের পেছনের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায় টুকুর ওপর। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই ক্রিকেট স্ট্যাম্পের মতো বিশেষ ধরনের লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে সবার সামনে দিয়ে দৌড়ে এসে লাল জ্যাকেট পরা মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মী বাপ্পী প্রথমেই টুকুর মাথায় আঘাত করে। টুকু মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইট দিয়ে তার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করা হয়।

একজনকে রেঞ্জ দিয়ে খুব কাছ থেকে টুকুর মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী মোবারক, জসীমউদ্দীন হলের বাশার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সুমন, মুহসীন হলের দীপুসহ ১৫/২০ জন এ হামলায় অংশ নেয়। এ সময় টুকুকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন প্রক্টর প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, রমনা জোনের এডিসি আতিকুল ইসলাম ও শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল ইসলাম। এ সময় তাদের ওপর হকিস্টিক ও চাপাতি দিয়ে আঘাত করে ছাত্রলীগ সূর্যসেন, জসীমউদ্দীন ও মুহসীন হলের কর্মীরা। তবে মুহসীন হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সূর্যসেন হল সভাপতি সাঈদ মজুমদার, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবীর রাহাত ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলা ফেরানোর চেষ্টা করেন।

হামলাকারীরা টুকুকে জঙ্গির মদতদাতা উল্লে¬খ করে ‘জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেয়। সংঘর্ষের শুরু যেভাবে : সকাল পৌনে ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ, গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় কমপক্ষে ৩০ রাউন্ড গুলি ও ২০/২৫টি ককটেল এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা গতকাল ভিসির সঙ্গে দেখা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে গেলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

গত ১ জানুয়ারি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরদিনই সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবদুল হালিম খোকন ও সমাজসেবা সম্পাদক আহসান উদ্দিন খান শিপনের নেতৃত্বে পদবঞ্চিতরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তারা অবাঞ্ছিত করে মিছিল ও সমাবেশ করতে থাকে। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া কিছু নেতাও এতে অংশ নেন। কমিটি ঘোষণার ১৭ দিনেও নতুন নেতৃত্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।

বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গতকাল ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বকে ক্যাম্পাসে পাঠান। এর আগে গত রোববার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে কথা বলে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বের জন্য সাক্ষাতের সময় নেন। সকাল ১১টায় ভিসির সঙ্গে ছাত্রদলের নতুন নেতাদের সাক্ষাতের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। ক্যাম্পাসে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ও ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী গতকাল সকাল পৌনে ৭টার দিকে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল মতিনের নেতৃত্বে শাহবাগ দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ সময় খোকন ও শিপনের নেতৃত্বে হাকিম চত্বরে পাহারারত ছাত্রদলের পদবঞ্চিত পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দিয়ে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।

খোকন-শিপনরা কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করলেও তা বিস্ফোরিত হয়নি। ছাত্রদল নেতারা মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয়ার ঘণ্টাখানেক পর ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম আরও দেড় শতাধিক নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। ওদিকে পদবঞ্চিতরা ধাওয়া খেয়ে মুহসীন হলের মাঠে অবস্থান নিয়ে জনবল বাড়াতে থাকে। পৌনে ১০টার দিকে শিপন-খোকনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক পদবঞ্চিত ছাত্রদল কর্মী সূর্যসেন হলের গেস্টরুমে গিয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে টুকু-আলিমের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সাড়ে ১০টার দিকে ভিসি অফিসের দিকে যেতে চাইলে মলচত্বরে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দু’পক্ষের মাঝে অবস্থান নেয়। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভিসি অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নিলেও ভিসি অফিসে না থাকায় মূল গেট তালা দিয়ে আটকে রাখে কর্মচারীরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে মলচত্বর দিয়ে কলা ভবনের দিকে যেতে চাইলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর আবারও সশস্ত্র হামলা চালায় পদবঞ্চিতরা। এ সময় ছাত্রলীগের সূর্যসেন ও কবি জসীমউদ্দীন হলের জুনিয়র কর্মীরা অত্যাধুনিক নাইন এমএম পিস্তল, লাঠি, রড, চাপাতি, রামদা, হকিস্টিক, কিরিচ নিয়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেয়। পদবঞ্চিতদের মিছিল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ও বোমা ছুড়লে পুলিশও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

ধাওয়ার মুখে তখন ছাত্রদলের মূল অংশ ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। মসজিদ ও লাইব্রেরি গেট এবং টিএসসি দিয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কিছু নেতাকর্মী কলা ভবনে অবস্থান নেন। টুকু সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ইশরাত শামীমের ১০৫৯ নম্বর রুমে আশ্রয় নেন। ছাত্রদলের মূল গ্রুপ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নিতে থাকে।

আর ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা আইবিএ’তে সংবাদ সম্মেলন করতে যায়। এ সময় আটকেপড়া ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম খান উদ্যোগ নেন। পুলিশি পাহারায় কলা ভবনের পেছনের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায় টুকুর ওপর। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুল ইসলাম খান, রমনা জোনের এডিসি আতিকুল ইসলাম, শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম, পেট্রোল ইন্সপেক্টর সানোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হাসান স্বাধীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিদুল ইসলাম হিরু আহত হন। আক্রমণ তীব্রতর হলে টুকুসহ ছাত্রদল নেতাদের বাঁচাতে লাঠিচার্জ ও কমপক্ষে ২০টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

এ সময় কমপক্ষে আরও ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। মারাত্মক আহত ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মাথা থেকে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতারা আহত ছাত্রদল সভাপতিকে দেখতে রাতে হাসপাতালে যান ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হাসান স্বাধীন ও ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মহিদুল ইসলাম হিরু অন্য একটি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন।

পদবঞ্চিতদের সঙ্গে বিদ্রোহে অংশ নেয়া ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ খান পারভেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এছাড়া মুহসীন হল শাখা ছাত্রদল নেতা শোভন, এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদল সহ-সভাপতি মুকুল, ছাত্রদল কর্মী শিপন, সূর্যসেন হলের ছাত্রদল কর্মী ইমুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম ও কনস্টেবল ফিরোজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম খান প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে পিজি হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। ছাত্রদলের কর্মসূচি : হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পর বিকালে ছাত্রদল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

ঘটনার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও একাডেমিকভাবে বহিষ্কার এবং আহতদের চিকিত্সার ব্যবস্থার দাবিতে ছাত্রদল আজ ও ২১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রধর্মঘট পালন করবে। ২১ জানুয়ারির মধ্যে দাবির বাস্তবায়ন না হলে ঢাবিতে লাগাতার ছাত্রধর্মঘট পালন করা হবে। সাক্ষাতের সময় দিয়েও ভিসি অফিসে না এসে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সুনাম নষ্ট করেছেন অভিযোগ করে ছাত্রদল ভিসির পদত্যাগ দাবি করে। এছাড়া হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। আজ সংগঠনটি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংগঠনিক ইউনিটে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, হায়দার আলী লেলিন, ওমর ফারুক সাফিন, আবু বকর সিদ্দিক, দুলাল হোসেন, বজলুল করিম আবেদ, রফিকুল ইসলাম রাসেল, আনোয়ারুল হক রয়েল, আমিরুজ্জামান শিমুল, শহীদুল্লাহ ইমরান, আবু সাইদ, এসএম জাহাঙ্গীর, আবদুল মতিন, হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ছাত্রলীগ জসীমউদ্দীন হল, সূর্যসেন হল, মুহসীন হল শাখার নেতাকর্মীরা ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলা করে। পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলন : ছাত্রদল সভাপতি টুকুসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে পদবঞ্চিতরা টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে।

তাদের দাবি, হামলা-সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে যারা টাকার লেনদেন করেছে, তাদের কমিটি বাতিলের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি পদবঞ্চিতরা অনুরোধ জানায়। টুকু-আলিম ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত থাকবে উল্লেখ করে পদবঞ্চিতদের শীর্ষ নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আহসান উদ্দিন খান শিপন বলে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (আজ) ক্যাম্পাসে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রলীগের বক্তব্য : ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। টিপু বলেন, ছাত্রদলের দু’গ্রুপে সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মধুর কেন্টিনে এসে অবস্থান নেন। সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত মূল দলের এক নেতাকে সাধারণ ছাত্ররা পিটিয়েছে বলে শুনেছি। এতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়। মুহসীন হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ছাত্রদল সভাপতি পরিচয়ধারী একজনকে কিছু ছাত্র পেটাচ্ছিল দেখে আমরা তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক তুহিনের সমর্থকরা ছাত্রদলের বিদ্রোহীদের সমর্থন ও সাহায্য করে।

সাইদ মজুমদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়াইনি। কিন্তু পুলিশ কোন্দলের সময় হলের দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করায় আমরা ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছি। খালেদা জিয়া একজন জঙ্গিকে ছাত্রদলের সভাপতি বানিয়ে ক্যাম্পাসে জঙ্গিবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্রলীগ তা কখনোই মেনে নেবে না এবং প্রতিহত করবে। ভিসির বক্তব্য : ছাত্রদলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পদত্যাগের দাবি সম্পর্কে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রভোস্ট কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।

আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিএনপির প্রতিক্রিয়া : ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। গত রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশ যখন চরম সঙ্কটে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী যখন দেশ বিক্রির পাঁয়তারা করছে এবং মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠছে, সে মুহূর্তে সরকার তাদের পোষ্য সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলা চালিয়েছে, যাতে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়। সারাদেশে ছাত্রদলের প্রতিবাদ : ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, গাজীপুর জেলা, বরগুনা জেলা, পটুয়াখালী জেলা, নেত্রকোনা জেলা, পটুয়াখালী সদর থানা, টাঙ্গাইল জেলা, ফেনী জেলা, কমিল্লার মুরাদনগর, কালিয়াকৈর উপজেলা এবং পৌরসভাসহ বিভিন্ন জেলা ও ইউনিট শাখা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মিছিল-সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।

ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ : ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। গতকাল ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে বলেন, দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে তারা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.