আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপালী আঁচল



রূপালী আঁচল - মোঃ মোজাফ্‌ফর হোসেন - ইংরেজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাজু জানো অর্পা আজ না প্রচন্ড বৃষ্টি হবে। অর্পা তুমি আবার Meteorologist হলে কবে থেকে? সাজু দেখো আমি গায়ে পড়ে খবরটা দিচ্ছি বলে তুমি এভাবে বলতে পারো না। বিশ্বাস না হয় খবর শুনে দেখতে পারো। অর্পা তার আর প্রয়োজন হবে না। তুমি যখন বলছো তখন সে না হলেও হবে, আমার মনের আকাশে ঝুম-ঝুম বৃষ্টি।

সাজু আর আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজব, কেউ থাকবে না কোথাও, পুরো ন্যাংটো হয়ে ভিজব আমি। অর্পা যাহ্‌! অসভ্য কোথাকার। সাজু বৃষ্টিতে ভিজব আমি। তুমি থাকবে ছাতার তলে, আমার ঠান্ডা লাগবে ভেবে তুমি ছাতা ফেলে জড়িয়ে ধরবে আমাকে। অর্পা হু, ভারি বয়েই গেছে।

সাজু শিশুর মত আমি তোমার বুকের সাথে লেপ্টে থাকব। অর্পা ইস্‌; সখ কত! সাজু তারপর দুজনেই ভিজব, তুমি বৃষ্টিতে আমি সুখের স্রোতে। অর্পা আহ; এসব হচ্ছেটা কী? সাজু তোমার আকাশের বৃষ্টি তবে থাক। এসো আমরা আমাদের কথা বলি। ধরো হঠাতই বাতাস গেল থেমে; তখন তুমি কী করবে? অর্পা ফ্যানের লাগাম দেব ছেড়ে।

সাজু ধরো ঝড়ের আশঙ্কায় বিদ্যুৎ লুকালো কুঠির কোনে, তখন? অর্পা তাহলে হাত পাখার কাছে ভিক্ষা চাইব। সাজু বাতাসের কথা তবে থাক, মনে করো তোমার কাজলের কালি পুরো আকাশটা নিলো কেড়ে। তখন তুমি কি করবে? অর্পা ছাদে উঠে দেখব আকাশের সাজ। সাজু ধরো তখনই শুরু হল বৃষ্টি হঠাৎ; প্রথমে ফোঁটায় ফোঁটায় তারপর বলাই বাহুল্য। অর্পা শাড়ীর আঁচল দেবো বিছিয়ে যেনো বৃষ্টির ফোঁটা আঘাত না পায়।

সাজু তাহলে আমিই হব সেই বৃষ্টি, প্রথমে আকাশ থেকে পড়ব তোমার আঁচলে তারপর ফুটবলের মত লাফিয়ে উঠবো আনন্দে। লাফাতে লাফাতে তোমার রেশমি চুলে বসবো চেপে, তারপর তোমার নাকের ডগা বেয়ে ঠোঁটের স্পর্শ নিয়ে চিবুকের নিচ দিয়ে নেমে পড়ব চুপিসারে। তখন তুমি কী করবে? অর্পা বৃষ্টির সবগুলো ফোঁটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করবো তৎক্ষণাৎ। সাজু যদি আমি আমার গন-ব্যে পৌঁছে যাই ততক্ষণে? অর্পা যাহ্‌! এসব হচ্ছেটা কী? সাজু বৃষ্টির কথা তবে থাক। এসো আমরা জীবনের কথা বলি।

*** সাজু আজ ঠিক করেছি সারারাত বাংলা গান শুনবো, ইদানিং ইংলিশ আর হিন্দি এতটাই বেশি জ্বালা ধরাচ্ছে যে নিজের কথা তো প্রায় ভুলেই গেছি। ভাবছি এখন কিছুদিন বাংলা নিয়েই থাকব। এমনকি হাতে ডিকশনারিটাও হবেBengali to Bengali অর্পা তুমি পারো বেশ, ইচ্ছে করলেই কত সুন্দর পাল্টে ফেলো নিজের ভালোলাগা, কি আমি চাইলেও পারছি কই! এই দেখোনা কবে কিনেছি রবীন্দ্র সংগীতের ক্যাসেটটা। ভালোলাগা যেনো ফুরাতেই চায় না। সাজু ভালো লাগা কোনদিন ফুরাইনা, এই যে আমার দিকে তাকাও ইবহংড়হ সিগারেটটা সেই ৭ম শ্রেণীতে ধরেছি; অদ্যাবধি চলছে।

বন্ধুদের সাথে কত কিছুই তো খেলাম কিন' কথায় বলে না, ঐ যে প্রথম ভালোলাগা...। তবে বদলায়, এক সময় আমি লাল শার্ট পছন্দ করতাম এখন করি কালো ফতুয়া। অর্পা কিন' আমার ক্ষেত্রে বদলানোটাও যে যন্ত্রনা। সাজু, তুমি জানোনা ভালোলাগা আটকে থাকা কত কষ্টের। ছোট কালে মাকে হারায় ফলস্বরূপ পাই একঝাঁক দুঃখ, আশির্বাদ ভেবে আপন করে নিই তৎক্ষণাৎ।

আগে কি জানতাম আমার সব ভালোলাগা আমাকে এতো বেশি ভালোবাসবে! জোর করে যে কি করে হঠাতে হয় তাও জানিনা। শিখিয়ে দেবে চষবধংব! সাজু তাহলে যে ক্ষতিটা আমারই বেশি হবে। তুমি চেয়ে বসবে আমার মুক্ত আকাশের কিছুটা; আমি হারাব আমার অধিকারের খানিকটা ; আবার না দিলেও বাড়বে জ্বালা। ভয় হয় তোমার কোনো চাওয়া যদি সইতে না পারি। অর্পা ভয় নেই, তেমন চাওয়া আমি কোন দিনই চাইব না; হয়ত প্রয়োজন হবে না।

তুমি বরং পারলে তোমার মুক্ত আকাশের কিছু মেঘ দিয়েই ঋণী করো আমাকে। *** অর্পা গতরাতে রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ আবারও পড়লাম। এবার দিয়ে ৫ বার হল বোধ হয়। তারপরও মনে হল সম্পূর্ণ নতুন একটি বই পড়লাম যার লেখক আমি ছাড়া অন্য কেউ নয়। সাজু হাসছ যে? বিশ্বাস করো আমার তাই মনে হয়েছে; যতবার পড়েছি ততবারই।

সাজু বিশ্বাস করছি বলেই তো হাসছি। অমন একটি মরা উপন্যাস তুমি না লিখলেও পারতে। অমিত লোকটা আস- একটা গাধা, ঢোল পিটিয়েছে সারাটাক্ষণ। অর্পা ভালো হবে না বলছি; সুযোগ পেলে তুমিও তো নিজের ঢোল পেটাতে ছাড়ো না। সাজু কি করব বল? প্রচন্ড ভয় হয় অন্যকে দিলে যদি ফেটে যায়।

অর্পা বিশ্বস- কাউকে দিলেই পারো। সাজু তাহলে তো সে দায়িত্বটা তোমাকেই নিতে হয়। অর্পা আমি? তোমার ঐ কর্কশ ঢোল? ঝড়ৎৎু বাবা মাফ চাই। সাজু মনে করো মাফ করেই দিলাম। তোমার মত নিষ্ঠুর হাতকে দেবো আমার ঢোল! তার আগে বলো, তোমার এই উপন্যাস পড়ার বদ অভ্যাসটা হল কবে থেকে? এই অসময়ে তোমার মসি-কের বিকৃতি ঘটবে জানলে আমিই ডজন খানিক লিখে ফেলতাম এত দিনে।

অর্পা তুমি লিখবে উপন্যাস!? সাজু কি করব বলো? তুমি কারও বই-টই পড় এটা আমার একদম সহ্য হয় না, যদি প্রেমে পড়ে যাও কারো। অর্পা ভয় নেই আমি যাদের ভালোবাসি ওরা সব ওপারের বাসিন্দা, ভালোবাসার প্রতিদান দেবার ক্ষমতা ওদের নেই। সাজু ভয় তো ওখানেই; তোমার সাথে বিয়ে হতেই হবে আমার এমন তো কোন কথা নেই, তাই বলে যে তুমি তার আগেই বিধবা হয়ে পড়বে, সে আমি সইতে পারবো না, হু...। অর্পা ভয় কিসের? বিধবা বিবাহ তো চালু আছে। সাজু সেই আশায় তো এখনো বুক বেধে আছি।

এমন যদি হয় বিয়ের পর পরই যেনো মারা যায় তোমার হতভাগা স্বামী। অর্পা যাহ্‌ ! কি সব অলক্ষুনে! সাজু তাই যেনো হয়। তারপর আমি বর সেজে হাজির হবো তৎক্ষণাৎ। অর্পা যাকে বলে সদ্য বিধবা বিবাহ? সাজু ঠিক তাই! *** সাজু এখন অফুরন- সময়, হাতে অখন্ড অবসর ; মাথায় গিজগিজ করছে গল্পের পোকা, ডায়রীর পেজগুলো অসহায় ভাবে পড়ে আছে বহুদিন থেকে, তবুও লিখতে পারছিনা। অর্পা কেন? হাতে চোট লেগেছে বুঝি? নাকি দুষ্টু বিড়ালটা খুব জ্বালাচ্ছে? তাও না? তাহলে কলমটা চিলে নিয়ে গেছে নিশ্চয়? সাজু অত বড় দুঃসাহস চিলের এখনো হয়নি, আমার অবহেলা সহ্য না করতে পেরে সে নিজেই নিজেকে আত্মহুতি দিয়েছে।

সামান্য একটা জিনিসের জন্য যে জীবন এতটা থমকে যেতে পারে জানা ছিল না আমার। *** অর্পা তোমার মাথায় কোন চিন-া এলেই আমাকে জানিয়ে দাও তৎক্ষণাৎ কিন' এবার এতবড় একটা সিদ্ধান- তুমি একাই নিতে চলেছ? আমাকে একবার জানাতে পারতে অন-ত? আমি কি তোমাকে বাধা দিতাম? খামচে দিতাম তোমার হাত? এলোমেলো করে দিতাম তোমার চুল? সাজু আমারো তো এই একই অভিযোগ। তুমি দুরে চলে যাচ্ছ ভেবে আমাকে এই সিদ্ধান- নিতে হয়েছে। বিশ্বাস করো অর্পা, আমি কখনো ভাবিনি আমার এই প্রিয় জন্মভূমিকে ছেড়ে থাকতে হবে কোনদিন। যেখানে আমার প্রতিটা স্বপ্ন, আমার নিঃশ্বাসের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে; যেখানে আমার কষ্ট গুলো রঙধনুর মত সাজানো, তাকালেই ভুলে যাই সব, মনে হয় এ সবই আমার আনন্দ, এ সবই আমার সুখ।

কোনদিন যে প্রিয়োজনদের ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবিনি আমি। অর্পা কেন এমন হয়? আমরা কেন এমন হতে দিই? অর্পা সময়ের নিষ্ঠুর থাবা থেকে কেউ রেহায় পায়না সাজু, আমরাও পাচ্ছি না, তাই বলে তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না। আমার প্রিয় বন্ধু, আমার অসময়ের গান, অবসরের ভালোলাগা, তুমি আমার ছায়াকে এভাবে একা করে যেতে পারো না। সাজু For God’s Sake, Hold your tongue. যেখানে তোমার নিঃশ্বাস বইবে না, যেখানে তোমার নুপুরের রিম-ঝিম শব্দ থাকবে না, যেখানে তোমার হাসিতে ফেটে পড়বে না ঐ বৃক্ষশাখা, যেখানকার ফুল তোমার স্পর্শ পাবে না, যেখানকার পাখি তোমাকে দেখে আর গাইবে না, সেখানে আমি থাকতে পারবো না? থাকতে পারিনা। আচ্ছা অর্পা, আমরা কি আর তেমন করে থাকতে পারি না যেমন করে জন্ম-জন্মান-র থেকে আসছি? জীবনের শেষটা কি এতটাই নিষ্ঠুর হবে? অর্পা থাকতে পারলে সব চেয়ে খুশিই হতাম বোধ হয় আমি।

এ সমাজে ধর্ম মানেই লোভ আর ভয় দেখিয়ে বশে আনা। ভালবাসার মূল্য এখানে খুব কম। এ সমাজ, এ ধর্ম কোন দিনই হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক মেনে নেবেনা। আমরাও এ সমাজ, এ ধর্ম বহির্ভূত নই সাজু। তুমি ভাবছো এ বিয়েতে আমি সহজেই রাজি হয়েছি, না সাজু আমি অনেক ভেবেছি।

সাজু এটাই কি তবে শেষ পথ? অর্পা এছাড়া যে কোন উপায় নেই। সাজু তাহলে বিদায়! অর্পা আমাদের কি আর দেখা হবে না কখনো? সাজু ভালো থেকো। *** ২০ বছর পর দেশে ফিরে আসে সাজু। এখনো বিয়ে করেনি সে, বার্ধক্যের ছাপ তার চোখে মুখে। কিছু দিন যেতে না যেতেই দৈবাৎ দেখা হয়ে যায় অর্পার সাথে।

স্বামী মারা গেছে ৫ বছর আগে। বয়স আর সংসারের চাপে অর্পাও কিছুটা ক্লান-। প্রথম দেখাতেই বেশ কিছুক্ষণ বাক্‌শুন্য থাকে ওরা, তারপর অর্পাই বলে প্রথম কথা, ‘শুনেছো, আজ নাকি প্রচন্ড বৃষ্টি হবে ! সেই পুরানো কথা, আবার সেই ভাবেই চলতে থাকে ওদের জীবন। সাজু জানো অর্পা ? চারপাশে তাকালে মনে হচ্ছে অসহ্য একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মানুষ জন প্রতিটা ক্ষেত্রে এখন পেশাদার, এমনকি ভালোবাসাটাও তাদের কাছে ঝামেলা স্বরূপ।

আমরা নিজেদেরকে যতই আধুনিক ও যুগোপযোগী বলিনা কেন আমাদের সন-ানেরা অভিযোগ করে বলবে আমরা বড্ড বেশি পুরানো। জানিনা তখন সূর্য উঠবে কিনা, পাখিরা সুর পাল্টাবে কিনা, জ্যোৎস্নার আলো জ্বলবে কিনা। অর্পা তুমি বেশ বদলে গেছো। সাজু সবই সময়ের দান। জানো অর্পা সেদিনের সেই চলে যাওয়া আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

আমি এখন দিতে শিখেছি। তুমি চেয়ে দেখো। অর্পা সুখের স্রোতে ভাসতে ভাসতে মন বিবাগী হয়ে ওঠে এমন খাপছাড়া যে আমি নই। আমার দেহমূর্তি একেবারে পুরানো ধাঁচের, বেশি নতুনত্ব তার সইবে কেন। সাজু তবুও।

অর্পা আশপাশের পরিচিতরা যখন পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন করে চলেছে তাদের অসম্ভব সত্য তখন আমি আমার এই ক্ষুদ্র সুখের দোহাই দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছি। মাঝে মধ্যে পর্দার আড়াল থেকে দেখছি ওদের; তাতেই যে পরিবর্তনের সুখ পাচ্ছি তাই আমার জন্য উপচে পড়া। এর বেশি চাওয়া কি ঠিক হবে? সাজু তুমিও বেশ বদলে গেছো। অর্পা হেরে যাওয়াতেই যে আমার সুখ! *** সাজু লেখালেখিটা আজ বেশ কয় দিন থেকে বন্ধ আছে। অর্পা সময় পাচ্ছো না বুঝি? সাজু এখন আমার শিকড় গজিয়েছে চতুর্দিকে।

অর্পা তাহলে গল্পের অভাব? সাজু শুনবে নাকি? অর্পা তাহলে নিশ্চয় কলমের কালি শেষ? সাজু তোমাকে আমি কালো পেত্নী বানিয়ে দিতে পারি। অর্পা উহ্‌, অসহ্য! সাজু ঠিক তাই। *** সাজু কাল আসছো তো? অর্পা কোথায়? সাজু সেই সান বাঁধানো গাছ তলায়। অর্পা বৃষ্টি যদি হয়? সাজু ভিজতে ভিজতে আসবে। অর্পা যদি শাড়ী ছিনিয়ে নেয় বাতাসে।

সাজু তবুও। অর্পা তুমি ন্যাংটো (!) হবে না। সাজু বলায় বাহুল্য!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।