আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানালার ওপাশে জোছনা............................... ১৪

পরাঞ্জয়ী...

আসিফ আসবেনা! লীনা জানে, কিন্তু বিশ্বাস হতে চায় না যেন কিছুতেই! কলিং বেল টা বাজলেই চমকে ওঠে লীনা। আসিফ না তো! দরজা খুলতে যায় দৌড়ে। এই সামান্য সময়ের মাঝেও ভেবে নেয় কি করবে সে। "দরজা খুলেই দেখবে আসিফ দাঁড়িয়ে আছে, মুখে একটা বিব্রত হাসি। মুহুর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়বে আসিফের বুকে।

" এমনি করেই ভাবে লীনা। দরজা খুলে হতাশ হতে হয় প্রতিবারই! কখনও দুধওয়ালা, কখনও বুয়া, কখনও বা পাশের বাসার পিচ্চিটা!সময় কেটে যায়। নৈরাশ্যের অন্ধকারে তবুও লীনা আশাহত হতে ভয় পায়। সারাটা সময় বুকের মধ্যে একটাই অনুভূতির পুনরাবৃত্তি। এক জীবনে এত নিমগ্ন হয়ে আর কিছুই কি চাইতে পারবে লীনা?!! সৃষ্টিকর্তা বোধ করি তাঁরই প্রতিবিম্ব কে "ভালবাসা'র " রূপ দিয়ে জগতে পাঠিয়েছিলেন! নয়ত এত শক্তি এই একটি মাত্র বস্তুতে কি ভাবে আসল?! "ভালবাসা"ই পারে গড়তে, ভাঙ্গতে, ক্ষমা করতে, ঘৃনা করতে এমনকি ধ্বংস করতেও! লীনার বুকের মধ্যে কান্নার ঢেউ ওঠে।

আছড়ে পড়তে দেয়না। ঠিক দেয়না তা না, দিতে পারেনা। পাছে বাবার চোখে পড়ে! একমাত্র মেয়েটি যে কিনা আহসান সাহেবের নয়ন-মনি, তার চোখের জল তিনি কি করে সইবেন! এক এক সময় লীনার চোখ দুটো বিদ্রোহ করে ওঠে। লীনা দৌঁড়ে ছাদে চলে যায়। কাঁদতে থাকে সন্তর্পণে।

ওড়না দিয়ে যতদূর সম্ভব মুখটা ঢেকে ফেলে, যাতে ওর চোখ দুটো কারও চোখে না পড়ে! প্রতিটি রক্তকণা স্লোগান তোলে "ফিরিয়ে দাও বিধি, আমার আসিফকে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে!" বিধাতার কাছে পৌঁছায় কিনা সে অসহ্য আকুতি, তা জানবার কোন উপায় নেই! হয়ত পৌছায়। হয়ত তিনিও নিরুপায় হয়ে যান, নির্লিপ্ত হয়ে যান তাঁরই অসীম প্রেমে সৃষ্ট সৃষ্টির নিষ্ঠুরতা দেখে! কত কথা মনে পড়ে যে তার হিসেব নেই। সেই যে বিয়ের আগের দিন। লীনার নাক ফোঁটানো ছিলনা। দাদী বললো, নাকফুল ছাড়া বিয়ে হয় না কি!! কি করা ঐ সন্ধ্যায় শুরু হল জলজ্যান্ত নাকটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করবার পাঁয়তারা! লীনা ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো।

তারপর ব্যাথায় চিৎকার। কোনমতে নাক ফোঁটানো যদিওবা হল, তাতে সোনার মাকড়ি পরানো আর কিছুতেই হয়না,। ওদিকে কেঁদে কেঁদে লীনাও একসা। ফোন করলো আসিফকে। কাঁদতে কাঁদতেই বললো "আমি নাক ফোঁটাব না, ভীষন ব্যাথা!!" বলেই আবার কান্না শুরু করলো।

আসিফ তো হেসেই লুটোপুটি। তারপর হাসতে হাসতেই বলে " আচ্ছা থাক ফোঁটানো লাগবেনা নাক, পাগলী!" উহ! কি করে ভুলবে সেসব লীনা? এই ছোট্ট জীবনটাতে এত এত স্মৃতি! ভাবতে ভাবতে লীনা নিজেকে হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ নীচের দিকে তাকিয়ে দেখে পাশের পুকুরে একটা সাপ। যেই না সে সাঁতরে ঘাটে উঠতে চায় অমনি একটা মোরগ তাকে ঠোকর দেয়, আবার পড়ে যায় পানিতে। চলতেই থাকে এভাবে।

সাপটার ডাঙ্গায় ওঠা হয়না কিছুতেই। সাপের কি ঠান্ডা লাগে? ইস! কতইনা নিরুপায় সে। ডাঙায়ও উঠতে পারেনা আবার পানিতে থাকাও কষ্টকর!! আবার লীনা হারিয়ে যায় ভাবনায়! গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে লীনা পাশ ঘুরে জড়িয়ে ধরতে যায় আসিফকে, চমকে গিয়ে টের পায় আসিফ নেই, হয়ত আর কখনও থাকবেনা! রাতের নিস্তব্ধতায়ও লীনার দীর্ঘশ্বাসটা বেহালার সবচেয়ে করূন সুরটির মত করে বেজে ওঠে! প্রতিটাদিন আসিফের ডান হাতটায় মাথা রেখে ঘুমাতো লীনা। ঘুমন্ত আসিফের নিঃশ্বাসগুলো আছড়ে পড়তো লীনার মাথায়। একসময় অভ্যাসটাই এমন হল যে নিঃশ্বাসের ভারী আওয়াজটা ছাড়া ঘুমই হয়না ওর! "বুকের সেই ডান পাশটা কি খালি খালি লাগেনা ওর?" ভাবে লীনা।

সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠবার সময় লীনা বারবার আটকে রাখতো "আর ৫ মিনিট, আর ৫ মিনিট" বলে বলে। আসিফ জোর করে ধরে রাখা সেই ৫ মিনিটকে ৫ মিনিটেই ভুলে গেছে। শুধু লীনা ৫টি মিনিটের জন্যও ভুলতে পারেনা!! লতার মত জড়িয়ে থাকত লীনা। অফিস থেকে ফিরে আসিফ সেই মুহূর্ত গুলোকে মনে করেনা কোনভাবেই। ৬:৩০ টা বাজলেই লীনার মনটা অস্থির হয়ে ওঠে! ছাদে উঠে ঘুরে ঘুরে বারবার রাস্তায় তাকায় লীনা।

হয়ত আসিফ আসবে। ওকে নিয়ে যাবে। মা কে বলে "মা, সবাই ছাদে আমরা। বাসায় যদি কেউ আসে, বেল বাজিয়ে বাজিয়ে চলে যাবে যে!" এত আস্থা, এত বিশ্বাস, এতই ভরসা কিভাবে যে টিকে আছে ওর মনে কে জানে! বাধ্য হয়েই কাঁদে মাঝে মাঝে। নয়ত কোনভাবেই কান্নাকে কাছে পিঠে ভিড়তে দেয়না সে! মানুষের এই আত্মবিশ্বাস টুকুই বোধ হয় তার বাঁচার সম্বল! লীনাও তাই আত্মবিশ্বাসের সেই পূঁজি নিয়ে বেঁচে থাকে।

চেয়ে থাকে পথের সীমানায় " আসিফ আসবে, আসবেই আসবে"!! প্রকৃতির ক্রুর হাসিটা দেখতে পায়না লীনা। তারা যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে "আসবেনা, আসবেনা, কোনদিনও আসবেনা"!! লীনা শুনতে পায়না, শুনতে চায়ওনা। ভালবাসার সুর বেজে যায় মনের কোন এক গহীন মন্দীরে। লীনা কান পেতে শোনে সেই সুর! তার সমস্ত অন্তরাত্মা সুর মিলিয়ে বলে যায় "ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি"! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।