আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানালার ওপাশে জোছনা..................১৩

পরাঞ্জয়ী...

লীনা আজ ভেঙ্গে গেছে, একেবারে!!! আজ আসিফের বাবার কুলখানি ছিল। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যাচ্ছিল একে একে। হঠাৎ কোন কারন ছাড়াই আসিফ খুব খারাপ ব্যবহার করলো লীনার সাথে। অবাক হয়ে লীনা আসিফকে কারন জিজ্ঞেস করলো। আসিফ আরও খারাপ ব্যবহার করলো।

লীনা উঠে গিয়ে মেঝ ননদকে বললো সব। হঠাৎ মাগরীবের নামায পড়ে মাথায় টুপি দেয়া অবস্থায় আসিফ লীনাকে গালি দিতে শুরু করলো চিৎকার করে। জলজ্যান্ত দুই পায়ের একজন মানুষ কে সে চারপেয়ে জন্তূর সাথে বারবার গুলিয়ে ফেলল, এমনকি লীনাকে আদৌ কোন মনুষ্য প্রজাতির প্রানী জগৎ সংসারের আলো দেখিয়েছিল কিনা তা নিয়ে শত শত মানুষের মধ্যে আসিফের সন্দেহের সীমা রইল না!! এমনকি তার জন্মের স্থান, কাল, এবং প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ করা হল!! লীনা কতজন ছেলের সাথে অতিবৈবাহিক সম্পর্কে লিপ্ত, প্রাক্তন প্রেমিকের কতটি ছবি বুকে নিয়ে সে রোজ রাতে ঘুমাতে যায়, এবং এ যাবৎ তাকে ভেবে কতটি ডায়রীর পৃষ্ঠা সে শেষ করেছে তাই নিয়েই জল্পনা কল্পনার শেষ রইল না! উপস্থিত প্রতিবেশীদের অনেকেই মৃদুস্বরে প্রশ্ন না করে পারল না "তুমি তাহলে করটা কি? তোমার বউ অন্যের ছবি বুকে নিয়ে ঘুমায় কেন?!!!"" আসিফ যখন রাজনৈতিক বক্তাদের মত চিৎকার করে লীনার সুকির্তীর বর্ণনা দিচ্ছিল লীনা তখন নিশ্চল চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল "এই কি সেই আসিফ যাকে কাল রাতেও আমি আমার সমস্ত অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করছিলাম, যার কথা ভাবলে আমার ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকেনা, যাকে আমি নিত্য দিনের সেই পুরানো স্বামী নয়, নিত্য নতুন প্রেমিকের মত দেখি?!!"""" হায় ঈশ্বর!!" লীনা অপলক তাকিয়ে ছিল আসিফের মুখের দিকে। সে সময় ও বিধাতার নাম জপেনি, কাউকে মনে মনে অভিশাপও দেয় নি। শুধু একাধারে বিড়বিড় করে জপ করেছে " ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি" লীনার একটাই ভয় পাছে ভুল করেও ঘৃনা করে ফেলে আসিফকে!!! তবু আসিফ থামেনা, আজ লীনার মুখোশ খুলেই তার অন্য কাজ!!!!!!! অবশেষে লীনা বুঝল ভীষণ অসুস্থ লীনা পাশের মামাবাড়িতে গিয়ে রাতে ছিল এবং ম্যাগাজীনে একটা পারিবারিক নির্যাতনের আর্টিকেল লিখেছিল এই তার অপরাধ।

ছদ্ম নামে লেখা ছদ্ম নাম দিয়ে লেখা সেই ঘটনাকে আসিফ নিজের পরিবারের বলে চালিয়ে দেয়। একেই বুঝি বলে " চোরের মন পুলিশ পুলিশ"!!! কিন্তু এই অপরাধে কারও জন্মের ইতিহাস বা চারিত্রিক স্খলনের বানোয়াট খবর ঢাক পিটিয়ে বলা যায় কি না, সে উপস্থিত অনেকেরই বুদ্ধিতে কুলায় না। এসব কথার মাঝে লীনার মামা আর মা আসে। লীনার শাশুড়ি লীনাকে চড় থাপ্পড় আর লাথি মারে। হতভম্ব লীনার মা আর মামা লীনাকে সাথে নিয়ে চলে আসে তাদের বাসায়।

লীনাও চুপ করেই চলে আসে। আর কার ভরসায় সেখানে থাকা চলে তা লীনা মেলাতে পারেনা। তবুও একটি বারের জন্যও আসিফকে ঘৃনা করতে পারেনা লীনা!! হৃদয়ের গভীরতা মাপা যায়না! নয়ত গজ ফিতা দিয়ে মেপে বলা যেত ঠিক ঠিক কোথা থেকে দোয়া করেছিল লীনা " তুমি ভাল থেক, খুব ভাল থেক"। লীনা অন্ধকার হয়ে আসা জগৎ টায় একটা ভরসার ভেলা খুজতে থাকে সে। ক্ষমা করবার অসম্ভব এক শক্তি বিধাতা নারীকে দিয়েছেন বলেই পুরুষ বোধ হয় এতটা উদ্ধত!!! কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে।

কাঁদতে পারেনা। ভয় হয় যদিবা চোখের জল অভিশাপ হয়ে পিছু নেয় আসিফের!! নিথর লীনাকে কেউই শান্তনা দেয়না। জানে সে দিলেও কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই! বাবার কথাও ভাবতে হয় তাকে। বাবা যাতে ভেঙ্গে না পড়েন সেই চেষ্টায় লীনা খায়-দায়, ঘুমায়, সিনেমা দেখে। ভেতরের ঝড় তাতে আরও দ্বিগুন হয়! হৃদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দন এই আশায় ফিরে আসে যে আসিফ ওর ভুল বুঝবে, ফিরে আসবে! আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই ওদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী! একসাথে পালন করবে দুজন!! হায় রে জীবন! নিশ্চিত মৃত্যু সন্নিকটে জেনেও পরের জন্মদিনের পরিকল্পনা করে!! লীনা অবাক হয়ে ভাবে "আসলেই কি মানুষের গর্ভে জন্ম আমার, আমি নিজেও কি মানুষ কোন? নয়ত এত অপমান এত তিরস্কারের পরেও তাকেই ভালবেসে যাচ্ছি ক্লান্তিহীন? এ কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব?" এর উত্তর বোধ করি সৃষ্টিকর্তারও জানা নেই।

লীনাও জানতে পারবেনা কোনদিন। তবুও সর্বান্তকরনে প্রার্থনা করে লীনা " প্রভু, আর কখনও কোন কারনে, কোন অতি লোভনীয় কোন বস্তুর জন্যেও হাত পাতব না তোমার কাছে। আমার আসিফকে ফিরিয়ে দাও! জগৎ-সংসারে এই একটি বস্তুতেই আমি মগ্ন থেকেছি, আশে পাশে তাকানোর অবসর মেলেনি আমার, তাকে তুমি কেড়ে নিওনা। কত যে ভালবেসেছি তা তো শুধু তুমিই জানো অনর্যামী!! এত ভাল তোমাকে বাসলে তুমিও ধরা দিতে। তোমাকে বঞ্চিত করেছি এই ঈর্ষায় তুমি যেন শোধ নিও প্রভু!!! আমার সমস্ত জীবনের বরাদ্দ সকল সময় তুমি ছিনিয়ে নাও, বিনিময়ে এক দিনের জীবন দাও, কিন্তু সে জীবনে যেন আসিফ আমার পাশে থাকে" জানিনা এই প্রার্থনায় ঈশ্বরের সিংহাসন কেঁপেছিল কিনা, তবে আসিফের পাথর হৃদয় সে আকুতির কনা টুকুও বোধ য় টের পায়নি!!!! (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।