আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বরদাশত করব না

যশোরের অভয়নগরে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসঙ্গে মিলে-মিশে বসবাস করবে। কেউ কারও ধর্মের প্রতি যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারে। একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নয়নের দেশ গড়ে তোলা হবে। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা, সন্ত্রাস, হত্যা, জঙ্গিবাদ, লুটপাট আমরা বরদাশত করব না। এর জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার তত কঠোর হব।

গতকাল বিকালে উপজেলার নওয়াপাড়া শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মালোপাড়াসহ দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সহিংস তাণ্ডবের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের অত্যাচার, নির্যাতন ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অভয়নগরের মানুষের অপরাধ কী? কিছুই না। তারা ভোট দিতে গেছে। সেটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।

সমাবেশে খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছেন। সেই ভুল এখন তিনি বুঝতে পারছেন। তিনি নির্বাচন ঠেকাতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ঠেকাতে পারেননি। এখন আমি যদি বলি 'গোলাপিরে গোলাপি, ট্রেন তো মিস করলি'_ তাহলে তিনি কি বলবেন? তিনি নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছেন।

গোলাপি এখন আর ট্রেনে নেই। গোলাপির ট্রেন মিস হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয়নি। উনার আন্দোলনে কেউ আসে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেন না।

তিনি নির্বাচনে না আসার ভুল এখন বুঝতে পারছেন। বিএনপি নেত্রী একটি কাজই করতে পারেন। তাহলো_ গাড়িতে আগুন দেওয়া। গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে উনি আন্দোলন করেন। উনি ঢাকাবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন, কেউ আসেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, গোপালগঞ্জের ওপর তার (খালেদা জিয়ার) এত রাগ কেন জানি না! তিনি গোপালগঞ্জবাসীকে 'গোপালী' বলে গালি দিয়েছেন। ওই মাটিতে জাতির জনকের জন্ম। তিনি দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। সেই কারণেই তার এত রাগ? তিনি কি এখনো পেয়ারের পাকিস্তানকে ভুলতে পারেননি? ওনার হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান এখনো আছে। তিনি সহিংসতা করে নির্বাচনে জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেননি।

বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি চায় না। সংঘাত চায় না। আন্দোলনের নামে শান্তি কেড়ে নেবেন না। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, রায় কার্যকর অব্যাহত থাকবে। আর যারা সন্ত্রাস করছে, হানাহানি করছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে তাদেরও বিচার বাংলার মাটিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভয়নগরে শেখ হাসিনার এটিই প্রথম জনসভা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি, রনজিত রায় এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি প্রমুখ। বিএনপি চেয়ারপারসনকে 'জামায়াতের আমির' আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত এর আগে পাকিস্তানেও একবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। এদের প্রভু যে কোথায় সেটাই এখন প্রশ্ন! বিএনপির কাজ যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন জামায়াতের আমির হয়ে গেছেন। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া পাঁচবার জন্মদিন বদল করেছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি বার বার জন্মদিন বদল করেন। উনার জন্ম পাঁচবার হয়েছে। উনি তার স্বামী জিয়ার জন্মদিনও বদলে ফেলেছেন।

নিজের জন্মদিন ও স্বামীর জন্মদিন বদল করতে করতে এমন হয়েছে, উনি এখন নির্বাচনের তারিখও বদলাতে চান। দশম সংসদ নির্বাচন হয়েছে ৫ জানুয়ারি আর উনি বলছেন ৫ মে হয়েছে।

অনুদান প্রদান : জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অভয়নগর উপজেলার প্রেমনগর ইউনিয়নের চাপাতলার মালোপাড়া পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ৬১টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন। প্রতিটি পরিবারকে সর্বোচ্চ এক লাখ ও সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা অনুদানের চেক বিতরণ করেন। এ ছাড়া নয়াপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা আলমগীর হোসেন শিমুলের পরিবারকে নগদ ১০ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন।

অপকর্মকারীরা শাস্তি পাবেই : মালোপাড়ায় সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এদেশের মানুষ। এ মাটিতে আপনাদের জন্ম। আপনাদের নিজেদের অধিকার নিজেদের রক্ষা করতে হবে। সবাই আপনাদের পাশে আছে। সরকার আপনাদের পাশে আছে।

নাশকতাকারী, সহিংসতাকারী, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটি কথা বলতে আপনাদের কাছে এসেছি যে, অপকর্মকারীরা শাস্তি পাবেই। এটা নিশ্চিত। শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয় নেওয়া হবে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.