আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মান্ধ রাজনীতি ও দিন বদলের শপথ

Hope is immortal

ধর্ম ব্যবসায়ীরা যুগে যুগে শোষণ করেছে এদেশের সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষদের। ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদের অপকর্মগুলো জায়েজ বানিয়েছে। যার সবচে' নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আমাদের গৌরবময়, একইসঙ্গে, অবর্ণনীয় কষ্টের ১৯৭১ সালে। কীভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে এদেশের মানুষদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে, তা বোধ করি কারো অজানা নয়। বিশেষ করে, সেইসব পাশবিকভাবে নির্যাতনের শিকার অসংখ্য মা-বোন আর তাদের পরিবার তা কখনোই ভুলতে পারবে না এবং একই সাথে সেই সব পশু ধর্ম ব্যবসায়ীদের ক্ষমা করবে না।

যাই হোক, আমরা এমন এক জাতি যারা আবার সেইসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের, দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাজনীতির ময়দানে বসাতে দ্বিধা করি না। শোকাবহ '৭৫ এ ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সাথে সাথে সেইসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের আমাদের পবিত্র মাতৃভূমিতে আবির্ভাব ঘটে। সেই থেকে তাদের অশুভ যাত্রা এই বাংলার মাটিতে শুরু। এইসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা ঠিক ভালো করেই জানে, এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু। তাই এদেশে শিকড় গড়তে হলে ধর্মের লেবাসেই রাজনীতি করতে হবে।

তাইতো বেছে নেয় কোমলমতি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের। শুরু করে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। এভাবে বাংলার মাটিতে তাদের শিকড় গেঁড়ে বসা। আবার এইসব শিবিরের কর্মীদের দিয়ে চালায় তাদের ভাবাদর্শে প্রকাশিত শিশু-কিশোরদের পত্রিকা কিশোর কণ্ঠ । এভাবে একটা শিশুকে তাদের আদর্শের পথে চালিত করছে।

কালক্রমে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জামায়াতে ইসলামী তাদের অপকর্মের শিকড় বাড়িয়ে চলছেই। অথচ, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের বর্তমান সরকারের এ ব্যাপারে যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এখনো সেই ধর্মের লেবাসে ঢেকে থাকা দেশদ্রোহী, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয় নি। ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে। তাদের আস্ফালন দেখে মনে হয়, তারা এখনো দেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্নে বিভোর যা তারা ১৯৭১ সালে ব্যর্থ হয়েছিল।

এমনকি, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের প্রথম শ্রেণীর জনপ্রিয় সংবাদপত্র প্রথম আলো এর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আলপিনে প্রকাশিত একটি কার্টুনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে তোলপাড় শুরু করে দেয়। এমনকি, প্রথম আলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সরকারের উপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু আগেই বলেছি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু তবে ধর্মান্ধ নয়। তাইতো সেইসব ধর্মের নামধারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয় নি। অথচ, পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আলপিনই প্রথম নয়।

জামায়াত ইসলামী'র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক কিশোরকণ্ঠ, নভেম্বর, ১৯৯৮ সংখ্যায় ৮৭ পৃষ্ঠায় একই বিষয়বস্তু নিয়ে একটি কৌতুক ছাপা হয়েছিলো হাসির বাকসো বিভাগে। কৌতুকটি পাঠিয়েছিলেন ফেনীর আমিরাবাদ এমএসইসসি মাদ্রাসার ছাত্র মুহাম্মদ মাসুদ। ওই সময় কিশোর কণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন শিবির নেতা মতিউর রহমান আকন্দ, সম্পাদক ছিলেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম শাহীন। অথচ, সেই সময় তৎকালীন সরকার কিংবা ধর্মের লেবাস পরে থাকা জামায়াতে ইসলামী টুঁ শব্দটিও করে নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে ব্লগার মেহেরুল হাসান সুজনের ব্লগে সম্প্রতি, তৎকালীন আলপিনে প্রকাশিত কার্টুনের কার্টুনিস্ট আরিফের ২ মাসের জেল আর ৭ শ টাকা জরিমানা হয়েছে।

অপরাধ ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত। খবরটা পড়ে জানলাম, আরিফ নাকি জানেনই না ওই মামলাটির কথা। যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছেন। ২০০৭ এর ২৩ অক্টোবর যশোরের কালেক্টরেট মসজিদের ইমাম এটিএম শোয়েইব প্রথম আলোর আলপিন-এ আরিফের একটি কার্টুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে অভিযোগ করে মামলাটি দায়ের করেন। অথচ, কিশোরকণ্ঠে প্রকাশিত সেই কৌতুকটির জন্য শিবিরের বিরুদ্ধে কেন সরকার নীরব? গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এদেশের জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে দিনবদলের শপথ নিয়ে।

এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ আছে নতুন প্রজন্ম যারা সকল রকম ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্ত, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ। যারা এ সরকারকে ভোট দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য, ভোট দিয়েছে সেইসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যারা ধর্মের নামে আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়। অথচ, তাদের চলমান আস্ফালন ও সরকারের নীরব ভূমিকা দেখে আমরা নবীন প্রজন্ম মর্মাহত। তবে কি আমাদের স্বপ্ন বৃথা হতে চলছে? তবে আমি একেবারেই হতাশাবাদীদের দলে না। এতকিছুর মধ্যেও আশার আলো দেখার দুঃসাহস পাই।

আশার কথা, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে বাজেট ঘোষণা করেছে। দেশের জনগণও আজ ঐক্যবদ্ধ বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রম আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশ কোন শকুনের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। আজ সেই সময় এসেছে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে আমাদের মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসাম্প্রদায়িকতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার। জেগে ওঠো বাংলাদেশ!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.