আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ আরিফুর রহমান : আগে বুঝতে হবে ছবির ভাষা... অশিক্ষিতের এই দেশে!

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র

পৃথিবীতে রসিকতা হয় অনেক কিছু নিয়েই... পতিতাপল্লীতে বিক্রি হয়ে যাওয়া নিষ্পাপ মেয়েদের জীবন তীব্র রসিকতাময়, লাঞ্ছনাময়। সেই অর্থে Sin City আর আমাদের পতিতাপল্লীগুলোর কোনো পার্থক্য নেই! অনিত্য এই জগৎ সংসারে অন্ধকার জায়গাগুলোতে ধর্ম সম্পূর্ণ অনুপস্থিত... কেননা ধর্ম পারেনি অন্ধকারকে স্বীকৃতি দিতে! কিংবা আমরা এই পৃথিবীর মানুষ ব্যর্থ হয়েছি আলোতে ফিরে আসতে, জগৎ আলোকময় করতে... - রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র আরিফুর রহমানকে নিয়ে ব্লগে লেখা-লেখি হচ্ছে, পড়তে ভালো লাগছে যে অন্তত তার কঠিন 'ছেলেমানুষি পাপ' অনুধাবন করতে পারার মতো মানুষ এখনো আছে... ইন্টারনেটে গুগলে সার্চ দিলে কিংবা আনসাইক্লোপিডিয়া নামক এন্টি-উইকিপিডিয়াতে 'ইসলাম' কিংবা 'মুহাম্মদ' সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ, জঘন্য, অবমাননাকর তথ্য উপস্থিত হয়। হুজুরদের উচিত সেইগুলা পাঠ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যে, আরিফ হয়তো-বা তাদের তুলনায় কিছুই করে নাই! পর্নো ভিডিওতে, পর্নো সাইটে যে ধর্মকে নিয়ে কত জঘন্য জঘন্য কথা বলা হয়, এমনকি পবিত্র গ্রন্থ নিয়েও বাজে কথা বলা হয় মুসলমান ট্যাগ লাগানো পর্নো ভিডিওগুলোতে। আমাদের হুজুরেরা, মডারেট মুসলমানরা, ইমাম সাহেবরা কী এসব দেখেন? জানেন? আরিফ আজ একটা অপরাধ (!) করেছে, তার শাস্তি তো সে পেয়েই গেছে এবং ইসলাম ধর্মেই বলা আছে, কেউ যদি ভুল স্বীকার করে, ক্ষমা চায়, তাহলে অবশ্যই সে ক্ষমার যোগ্য। এই দেশে ধর্ষক-খুনিদেরও যোগ্য বিচার হয় না, রাজনীতিক আমলাদের তো নয়ই! সেখানে আরিফ ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পেরে যখন নতুন জীবন শুরু করতে চায় তখন উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর এত 'নারায়ে তাকবির' কেন? এই পোস্টকে বলা যেতে পারে রি-পোস্ট কেননা, পূর্বের একটা পোস্ট এখানে অ্যটাচড্ করা হয়েছে।

অত্যন্ত সহজ ভাষায় আরিফের কেইসটা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছি আমি। জানিনা, কতটুকু পেরেছি... তবে আর্ট ল্যাংগুয়েজ বুঝা দরকার আগে। একটা ছবির ক্যাপশন দেখে নয়, ফিগার দেখে বুঝতে হবে, ছবিতে কী বলতে চাওয়া হয়েছে। যদি ক্যাপশনই সব হতো, তাহলে ন্যুড শিল্প টিকতে পারতো না... অ্যাবস্ট্রাক্ট কোনো প্রদর্শনীতে একজন দর্শকও পাওয়া যেতো না। তাই ছবির ভাষা বুঝতে হবে আগে।

বুঝতে হবে কার্টুনের ভাষা। আরিফ সরাসরি ইসলাম ধর্মসংশ্লিষ্ট কোনো নবী কিংবা কোনো কিছুর কার্টুন আঁকে যেমনটা ডেনমার্কের একটি পত্রিকা করেছিলো। সেখানে সরাসরি উল্লেখ ছিলো। কিন্তু আরিফের ব্যাপারটা নিয়ে অতিরিক্ত কচলা-কচলি করলে সেটা 'তিতা লেবু' হয়ে যাবে এবং ফালতু কিছু প্রসঙ্গের উদ্রেক করবে যেটা আমাদের সাথে যায় না। অশিক্ষিতের এই দেশে যেখানে মানুষ অক্ষরই বুঝতে পারে না, শিল্পকর্মের ভাষা সেখানে বুঝবে কীভাবে? কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান-এর মুক্তি প্রার্থনা করে একটা চিঠি লিখেছিলাম 'প্রথম আলো'র ঠিকানায়।

জানিনা, সেই সময়ে কতটুকু ভালো লিখতে পেরেছি। হয়তো সেই চিঠি পৌঁছাতে পারেনি গন্তব্যে কিংবা পৌঁছালেও ছাপা হয়নি। যাই হোক, চিঠিটা হুবহু তুলে দিলাম : আলপিনে ছাপানো কার্টুন এবং আমাদের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি দেশের অন্যতম স্বনামধন্য পত্রিকা ‌‌'প্রথম আলো'। প্রতি সোমবার 'প্রথম আলো'র সাথে প্রকাশিত হয় জনপ্রিয় ফান ম্যাগাজিন 'আলপিন' - যা ছেলে-বুড়ো সকলের কাছেই সমান প্রিয়। আলপিনে দেশ ও সমাজের নানা অসংগতি, দুর্নীতিবাজদের ব্যঙ্গচিত্র, এমনকি 'অফ দ্য রেকর্ড ' বিভাগে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারও তুলে ধরা হয়।

সুমন্ত আসলাম-এর 'বাউন্ডুলে' বিভাগের লেখাগুলো মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু গত ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭, সোমবার আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যায় কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান-এর একটি কার্টুন ( নাম ) ছাপা হয় ৬ নং পৃষ্ঠায়। এ কার্টুনটি দেশের মুসল্লীদের ভেতরে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে এবং ধর্মপ্রাণ (! ) মানুষেরা দেশবরেণ্য 'প্রথম আলো' বাতিল করতে বলেছেন !‍ এত ধর্মভীরু, শিক্ষিত মানুষ হয়েও তারা একবারও চিন্তা করছেন না কার্টুনটির মূল প্লট নিয়ে। কার্টুনিস্ট নিজেই একজন মুসলমান। মহানবী (স ) কে 'বিড়াল' হিসেবে অভিহিত করার মতো দুঃসাহস তার অবশ্যই নেই।

কার্টুনটির দিকে ভাল করে তাকালেই দেখা যায় - বয়স্ক একজন গ্রাম্য মুসল্লী দরিদ্র এবং টোকাই শ্রেণীর এক বালককে তার নাম, পিতার নাম এবং বিড়ালের নাম জিজ্ঞাসা করছেন। বালকটি তার নাম 'বাবু' বলায় তিনি নামের আগে 'মোহাম্মদ' বলতে বলেছেন। টোকাই শ্রেণীর দরিদ্র বালকটির বয়স যথেষ্ট কম - তা আঁকা দেখেই বুঝা যায়। কাজেই তার ভুল করা স্বাভাবিক। কার্টুন এর অর্থ হলো 'ব্যঙ্গচিত্র'।

এর কাজ - নিছক আনন্দ দান। মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের দেশের মানুষ ধর্ম নিয়ে রসিকতা করে না বা করবে না - এটা স্বাভাবিক। এখন রমজান মাস। এই মাসের মতো পবিত্র সময়ে কার্টুনিস্ট ইচ্ছে করে কিংবা সম্পাদক সাহেব-ও ইচ্ছে করে কার্টুনটি দিয়ে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করতে চান নি বলেই আমার ধারণা। হয় এটা ভুলবশত হয়েছে অথবা কার্টুনিস্ট শিশুদের স্বভাব চরিত্র-এর চিত্র অঙ্কন করেছেন।

শিশুরা এক বয়সে দুষ্টামি করতে শিখে, বড়দের কথা নিয়ে ঠাট্টা করে। তার চেয়ে বড় কথা, কার্টুনের আঁকা শিশুটি একজন গ্রাম্য, অশিক্ষিত, ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞ সর্বোপরি দরিদ্র শিশুর প্রতিবিম্ব। কাজেই দেশের সকল মুসলমান ভাইদের বিষয়টি নিয়ে অমূলক ধারণা করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। ধর্মকে নিয়ে কিংবা রাসূল (স) কে অবজ্ঞা করা নয় বরং 'সচেতনতা' সৃষ্টিই কার্টুনটির উদ্দেশ্য। আমি মনে করি, কার্টুনিস্ট এবং 'প্রথম আলো' উভয় পক্ষই নির্দোষ।

যারা 'প্রথম আলো'র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, সেই সব মুসল্লীদের এটাই বলতে চাই - দয়া করে এই নির্দোষ কার্টুনটিকে অযথা দোষারোপ না করে বিভিন্ন পর্ণো ওয়েবসাইটগুলো থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করুন। তথ্য উপদেষ্টার প্রতিও আমার একই অনুরোধ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।