আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুকিটাকি রবীন্দ্রনাথ



বেশ কিছুদিন আগে চলে গেলো রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকি । তারই স্নরনে এই লেখা : পরিশ্রমিক রবীন্দ্রনাথ: রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব পরিশ্রম করতে পারতেন । শোনা যায় শেষের ৬৭ বছর দুপুরে কোনো সময়ই তিনি ঘুমাননি এবং সুর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে যেতেন । রবীন্দ্রনাথ ও ছোটগল্প: অসাধারন ছোটগল্প-এর রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ । ১১৪ টি ছোটগল্পের মধ্যে বৈচিত্র থেকে শুরু করে সাহিত্যিক মান, বাস্তবতা সবকিছুই উপস্হিত।

যদিও "মপাসা" কে ছোটগল্পের জনক বলা হয় তারপরেও তাকে ছাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছিলেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না । রবীন্দ্রনাথ ও রসবোধা : এক লোক রবীন্দ্রনাথ এর কাছ থেকে ১০ টাকা ধার নেবার সময় বলেন "আপনি যে উপকার করলেন তাতে আমি চিরকাল আপনার কাছে ঋনি হয়ে থাকব" । সেই লোক আর টাকা শোধ না করায় রবীন্দ্রনাথ বলতেন "হ্যা সে চিরকালই আমার কাছে ঋনি হয়ে থাকল" রবীন্দ্রনাথ ও নোবেল প্রাইজ: তখন বিশ্বভারতির সংস্কার কাজ চলছিল । আর্থিক অনটনের মধ্যে ছিলে রবীন্দ্রনাথ । ১৯১৩ সালের ঘটনা ।

নোবেল প্রাইজের প্রথমে খবর যখন রবীন্দ্রনাথ এর কাছে এসেছিল তিনি কিছুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে ( এই ক্ষেত্রে পাঠক ড: ইউনুসের আকর্নবিলম্বিত হাসিকে স্নরন করতে পারেন ) বলেছিলেন "বুঝলে এইবার বোধহয়ে বিশ্বভারতির খরচ কিছুটা উঠবে" । আর একটা কথা ..... আমরা নোবেল প্রাইজ দিয়ে অনেকের সাহিত্য বিচার করি । এটাতে রবীন্দ্রনাথ-ও ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং এক ভাষনে উল্লেখ করেছিলেন । আমাদের বুঝতে হবে উনি নোবেল প্রাইজ না পেলেও আমরা তাকে অবিস্নরনিয় প্রতিভা হিসেবে স্নীকার করতে কোনোসময়েই কুন্ঠিত হতাম না । আরো একটা পয়েন্ট : রবিন্দ্রনাথকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছিল তার সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য নয় ।

গীতান্জলীর জন্য এবং সেটা ইংলিশ ট্রান্সলেশন । রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল : পারস্পরিক বই উতসর্গ রবিন্দ্রনাথ তার "বসন্ত" নাটক উতসর্গ করেছিলেন নজরুলকে আর নজরুল তার "সন্চিতা" কাব্যগ্রন্হ উতসর্গ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে । এবং দুজনেরই উতসর্গ করা নিয়ে চমতকার ঘটনা ঘটেছিল যেটা সময়ের অভাবে এখানে উল্লেখ করা হল না । আর একটা কথা না বললেই নয় । বর্তমানের আধুনিক কবিতার ধারা রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করতেন না ।

তাই "সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং নজরুল" ছাড়া আর কাউকেও রবীন্দ্রনাথ কবি বলে সম্বোধন করতেন না । রবীন্দ্রনাথ ও চিতল মাছ রবীন্দ্রনাথ এর জমীদারি ছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে । এক প্রজা ৮ বছর খাজনা দিতে না পারায় খুবই চিন্তিত ছিল । অবশেষে সে একটি "চিতল মাছ" রবীন্দ্রনাথ কে উপহার দেয় এবং এই চিতল মাছে পেয়ে রবীন্দ্রনাথ এত খুশী হন যে তার ৮ বছরের খাজনা মাপ করে দেন । তাহলে বুঝুন লোকাল চিতল মাছের মাহাত্ন ।

রবীন্দ্রনাথ ও লালন অনেকেই রেফারেন্স দেন রবীন্দ্রনাথ এর সাথে লালন এর দেখা হয়েছিল এবং তিনি লালন এর বাউল সংগীত এর খুবই ভক্ত ছিলেন । তার গানেও এর প্রভাব পাওয়া যায় । রবীন্দ্রনাথ ও প্রেম রবীন্দ্রনাথ এর জীবনে দুটো প্রেমের খবর পাওয়া যায় । তিনি আমার আপনার মতো ওত বেরসিক ছিলেন না। একটি ছোট বয়সে সে যখন ইংল্যান্ডে ছিলেন সেই সময়ে এক বৃটিশ তরুনীর সাথে ।

আরো একটি তার ভাবী "কাদম্বিনী দেবী" র সাথে । তবে দু:খজনক হলো রবীন্দ্রনাথ এর বিয়ের পরপরই এই ভাবী আত্নহত্যা করেন । এতে কবি এবং আর সকলে খুবই কষ্ট পান । কবিদের জীবনে এই বৈচিত্র এবং দু:খ সহজাত । রবীন্দ্রনাথ ও ইরানের কবি হাফিজ: রবীন্দ্রনাথ পারসিক সাহিত্যের খুবই ভক্ত ছিলেন ।

শোনা যায় তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ফারসী ভাষা জানতেন এবং হাফিজের দেওয়ান পড়ে ধেই ধেই করে নাচতেন । রবীন্দ্রনাথ কবি হাফিজের মাজার জিয়ারত করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ "মা" বিষয়ক একটি কবিতা রবীন্দ্রনাথ এর মা বিষয়ক যে কবিতাটা আছে সেটা সত্যি হ্রদয় ছুয়ে যায় । অসাধারন একটি কবিতা। আর বাচ্চাদের জন্য " আমাদের ছোট নদী" এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না ।

রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যু এবং নজরুল এর লেখা রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নজরুল একটা কবিতা লিখে ফেলেন এবং আকাশবানী কলকাতা থেকে পাঠ করেন । কবিতার কিছু স্নরনীয় লাইন "দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপথের কোলে শ্রাবনের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে উদাস গগন তলে বিশ্বের রবি ভারতের কবি , শ্যাম বাংলার হ্রদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে । " রবীন্দ্রনাথ -এর মৃত্য এবং দু:খজনক লাশ বিকৃতি : অনেকেই হয়ত আমরা জানি না রবীন্দ্রনাথ -এর মৃত্যুর ছবি পাওয়া যায় না । কেননা তার মৃত্যুর পরপরই খবর ছড়িয়ে পড়লে ভক্তরা দলে দলে আসতে থাকে এবং সৃতি এবং ভক্তির আতিশায্যে তার দাড়ি এবং চুলগুলোকে হুমড়ি খেয়ে টেনে টেনে তুলে ফেলে সেটা সংরক্ষন করার অভিপ্রায়ে । প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন সে সময় তার মুখমন্ডল রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল ।

পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের আবহ এবং নিরাপত্তি কর্মিরাও এই সব উগ্র ভক্তদের থেকে বিশ্বকবিকে রক্ষা করতে পারেন নাই । উপসংহার: রবীন্দ্রনাথ এর সমস্ত ছোটগল্পের মধ্যে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হয় "ক্ষুধিত পাষান" । নাটকের মধ্যে "ডাকঘড়" আর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস "শেষের কবিতা" ... সম্পুর্ন আমার পছন্দ এর সাথে অন্য কারো নাও মিলতে পারে তবে পড়ে দেখবেন । আবার বলছি এক কথায় অসাধারন । সুত্র: ১) সম্পাদকের ডায়েরী : সাগরময় ঘোষ ২) চেপে রাখা ইতিহাস: গোলাম আহমেদ মর্তুজা ৩) আরো অন্যান্য


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।