তীরের বালিতে লেখা
...........................
নদীটার কথা বলি না কাউকে
নদীটার নাম আকাশগঙ্গা
তীরে তীরে তার ছড়িয়েছিলাম
অপেক্ষমাণ মনের সংজ্ঞা
চাইনি কিংবা চেয়েছি বলেই
মন নিয়ে যায় মৎস্যগন্ধা
কেউ ছিল না, ঢেউ ছিল খুব
নদীতীরে যেই নামল সন্ধ্যা-
তারপর থেকে সন্ধি পাঠাই
মৎস্যগন্ধা করে না সন্ধি
তীরের বালিতে শুধু লেখা আছে
কে যেন কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বি
.....................................................
....................................................
একটি ব্যক্তিগত কবিতা
............................................
আসো মুগ্ধপ্রবণ পাখি
আসো আনন্দগান, ঘরে
যাও নিজেকে দিয়ে ফাঁকি
যাও বীভৎস ঝাঁজ, ওড়ে
আসো আসা-মুহূর্তেই ঘোর
এসে দ্বিধার করাতে কাটো
আমার পথ্য আজও আদর
তুমি রুগীকে ফেলে হাঁটো
তুমি হাঁটতে হাঁটতে যাও
তুমি রিকশায় উঠে পড়ো
তুমি মন থেকে উধাও
তুমি ভুলেছ আমার ঘরও
ঘর বাইরে যেতে চায়
মাঠ বাইরে আনতে গিয়ে-
ভরা ভাদর, ভালোবাসায়
ভাবি মনে মনে মন-বিয়ে
মন শরীর সেঁচার সাধে
মন শরীর বলতে কানা
শরীর দোষী (!) অপরাধে
কেন মোম লাগানো ডানায়
আমি উড়তে চাওয়া খোকা?
দেখি তোমার ওড়াউড়ি?
মন কিশোর, চির বোকা
আমি বোকা মনে ঘুরি...
......................................................
ঘরে-বাইরে কুয়াশা
......................................................
আজকাল আর সাধুদের ভাত নেই!
সাধুরা খাচ্ছে ভাব, ভাবনার খেই।
কবে চলে গেছে সাধুভাষায় লিখিত কবিতার দিন!
এখন, অসাধু ভাষার রাতে, উপুড়ে হয়ে বিছানায় শুয়ে লিখি;
তার মানে আমি গৃহবন্দি, আমার লেখারা অন্তরীণ...
কিন্তু যদি কোনো কুয়াশা-স্টেশনে বসে, এত রাতে
বহুদূর থেকে ছুটে আসা অনাগত এক ট্রেনকে মাথায় রেখে
অপেক্ষায় সংজ্ঘা লিখতাম-
তখন কি রেললাইন সেই সংজ্ঞা মুখস্থ করত না?
যদি দিনাজপুর-বড়মাঠ পেরিয়ে মিশনারি পল্লির পাশ ঘেঁষে
চলে যাওয়া কাঁচাপাকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি লিখতাম
একদিন ফেলে আসা মফস্বল বৃত্তান্ত:
-এ জীবন বড়ই নচ্ছার... চাঁদ তোমাকে সাক্ষি পুরস্কার...
তবে কি সে- বৃত্তান্তের কয়েকপৃষ্ঠা পড়তে পারত
অবকাশে চৌধুরী বংশের মেয়ে, তাজমহল রোডের?
প্রতিদিন বাইরে যাই নাকি বাইরে থেকে ফিরি ঘরে?
এই প্রশ্ন মাথা কুটে মরে-
যেহেতু ঘরের মধ্যে লিখি রুম, বাথরুম, বই, বুকশেলফ
জানলার পর্দা, টিভি, টেলিফোন;
বাইরে বাগদত্তা সম্ভাবনা, বাইরে অঘ্রাণ, হরিণের ডাক
বাইরে হেমন্ত, থৈ থৈ কুয়াশা
কুরঙ্গগঞ্জন...
...............................................................
শাদা কবিতা
..................................................................
এবার, লিখে রাখছি বনভূমি, অথচ লোকালয়ে
আমার কোনো শেকড়ও নেই, ডানাও নেই- পাখি
লিখে রাখছি দু-একটা দিন রৌদ্রবিহীন... দূরে
আমি যে এই বাড়িতে থাকি- বাড়িটা ভবঘুরে...
এবার, এঁকে রাখছি উলুখড় ও চৈত্রপাড়ের হাওয়া
রইল আরো হাড়ের মজুদ ঠা ঠা কাঠের প্রতিভা
এঁকে রাখছি আসন্ন রাত বা উন্মাদ গলি
গলির শেষে গল্প একা, সে যায় শহরতলি...
এবার, লিখে রাখছি ভ্রমাত্মকের দগ্ধ ইতিহাস
স্থানীয় আকাশ অমর দিনাজপুরের মাঠে-
মৃতজোছনা পড়ে আছে ছিয়ানব্বই সালে
তাই লিখি এই টেবিলে মানে বৃক্ষের কঙ্কালে...
আর লেখা সেই শাদা কাগজ হাওয়াতে যায় উড়ে
আমি যে এই বাড়িতে থাকি- বাড়িটা ভবঘুরে...
......................................................
বর্ষায় পুলিশশ্রেণী
......................................................
বৃষ্টিতে ভেজার আগেই, পুলিশ ধরেছে, এই বর্ষায়
‘নীলক্ষেত’ এই সংকেতময়-বিভোরতা থেকে এদিকে ফিরছিলাম।
‘কাঁটাবন’ বেশ কথাবন হয়ে ওঠে- ভাবছিলাম
মাছবন্দি অ্যাকুরিয়াম, পাখিবন্দি খাঁচা, বিদেশি কুকুরের বাচ্চা, ফুলগুচ্ছ
আর ‘বৃষ্টি হবে হবে’ ভাবে আমি তোমাকেও ভাবছিলাম, তখনই
পুলিশ! পুলিশ আমাকে চেক করে, সন্ধান করে দ্যাখে-
আমার মধ্যে আমি অবৈধ কি কি পকেটে নিয়েছি?
সুযোগে পুলিশ আমার পাছায় ও শিশ্নে হাত দেয়, একসময়
বৃষ্টি নামার আগেই, বেশকিছু বাক্য খরচপূর্বক, পুলিশ হইতে পরিত্রাণ পাই
আমি দ্রুত উৎকণ্ঠিত, নিকটের সেলুনঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি,
আমার আর বৃষ্টিতে ভেজা হয় না...
যদিও বরষা যায়, ঝরো ঝরো হায়
শুকনো পাঠক কভু ভেজে না কবিতায়
আয়নায় আমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চেপে যাই
পুলিশ আমার চোখ দেখে তো কাঁচকলাও টের পায়নি;
আইনসম্মত নয় এমন কত কী আমি পথে পথে, জানালায়
দেখে এলাম।
আমার চোখের মধ্যে যে অসীম... বাস করছে সে তো
এই রাস্ট্র-ধারণার উপরে হাগে প্রতিদিন।
সে তো আজও তোমাকে চায়, অথচ তুমি
তোমাদের ভাষায় কখনও বৈধ কি?
অবশ্য আমার সামনে দাঁড়ালে, তুমি দেখতে পেতে সেই ডানা, সেই পাখি
কিন্তু পুলিশ দ্যাখেনি, পুলিশ তো কোনওদিন পাখি ওড়াও দ্যাখেনি
আহারে, এবার বৃষ্টিতে ভিজব, ইচ্ছা ছিল।
আমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনি, নির্বিঘ্নে আমি তোমাকে ভাবতে পারিনি
পুলিশ ধরেছে বলে
যদিও বরষা যায়, হায় কলা-কৌশলে
আমাকে বৃষ্টিবঞ্চিত, খা খা রাখা হল, পুলিশ-অ্যাক্ট সিস্টেমে
আমাদের পুলিশ পাখি দ্যাখে না, বৃষ্টি বোঝে না, পড়ে না কখনও প্রেমে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।