আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইয়েস ৩য় সংখ্যা প্রকাশিত

দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্রিয় হই-এখনই...

প্রকাশিত হয়েছে ইয়েস-এর ৩য় সংখ্যা আজ এই ব্লগে সকলের জন্য ২য় পর্ব প্রকাশ করা হলো- আকরাম হোসেন একজন ওমিজন `চরের মানুষ বুলি কি হামার কোনো দামে নাই। হামরাগুলা কি মানুষ নোয়াই? তোমরা হামাক গুলাক বাচাঁইবেন, না; না-বাচাইবেন তাহে কন। কয়ায় যাওয়া নাইগবে। ' ওমিজন কথাগুলো বলে আর হাউমাউ করে কাঁদে। আরও বলতে থাকে- জানেন স্যার, মোর বেটাছাওয়াক মুই এমজিও থাকি ইন আনি দিছোং আবাদ কোইরবার।

সেই ইনের টেকার আবাদ আর কয়দিন পর হামরা কামলা নিয়া কাটি আনলোং হয়। কিন্তু ঐ কয়সার মেম্বার উয়ার লোকজন আনি শোউগ ক্ষেত কাটি নিয়া গেইচে । এটা অন্যায় করে নাই? তোমরায় কন? বলতে বলতে ডুকরে ওঠে ওমিজন। : ওমোর আল্লারে, ওরে আল্লা এলা মুই কি করোং কার গোরৎ যাং,ওমা ও মোর আল্লারে, তোমরা ইয়ের বিচার করি দেও বাহে। আল্লা কয় তোমার ভাল হইবে।

খুব আশা করি আছি এবার হামরা ধান কাটি হাটত বেঁচে ছওয়া পোয়ার কাপড় চোপর দিমো, হামার বেটাছওয়ার তবন ছিরি গেইছে,তবন কিনমো, ভাল মন্দ আনি সগাই মিলি একসাথে হাসি-খুশি করি খামো। বাকি যে কয়টা টেকা থাকপে তাক হামরা এমজিওর ইন শোধ করমো। আর মোর মাইঝলা মাইয়োক স্কুলোত ভর্ত্তি করি দিমো। কয়ছার মেম্বারের টেকা তিন-চার বার দিছি বাহে, তারপরও কয় আরও পামো, টেকা নিছি এক হাজার ওমরা কয় পাঁচ হাজার। মাসে মাসে বোলে টেকার সুদ বাড়ে।

মেম্বারের ওখান মুখ না আর কোনো, একখান মুখোত হাজার খান মুখোশ, একখান খোলেতো ৯৯৯ খান থাকে। এটা কেমন মানুষ কনতো বাহে। হামাক মারি ফেলাইবে নাকি? তোমরা মোর বাপ হন স্যার তোমরা মোর ধর্মের বাপ, তোমরা একনা ফয়সালা করি দেও বাপ। : আমি একজন এনজিও কর্মী। একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

: কি ব্যবস্থা করবেন বা এমজিওর ব্যাটা ? : এইখানে আমাদের একটি টিম আছে, টিমের নাম হলো ‘আপনঋণ’ সেখানে আমাদের সদস্য করে নিলাম। আর আপনার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করছি। এই টাকা দিয়ে আপনার স্বামীকে বলবেন ব্যাবসা করে যা আয় হবে তা দিয়ে সংসার চালাবে আর সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তি দিবে । : ও তোমরা তো খুব ভাল মাইষের এমজিওর বেটা, কিস্তি^ বাবা। : আরে কিস্তি বাবা না, কিস্তি নিবো ।

: ও তোমরা হইলেন কিস্তি নেব। আল্লা তোমার হায়াৎ বাড়াউক বাবা কিস্তির বেটা। টাকা নিয়ে বাড়ি যাবার পথে কয়সার মেম্বার ও তার লোকজন তাকে ঘিরে ধরে, টাকা কেড়ে নেয়। ওমিজন হাতে ধরে পায়ে ধরে কান্না কাটি করে, আল্লার দোহাই কোনো কাজ হয়না। মেম্বার টাকা কেড়ে নেয় আর বলে, বাকী টাকা না দিলে তোর ঘরও যাইবে জমিও যাইবে মনে রাখিস।

ওমিজনের কান্না-কাটি, হাউ-মাউ চিৎকার লোকজন তো দুরের কথা আকাশ বাতাসেও শোনে না । ধীরে ধীরে ওমিজন নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পরে জ্ঞান হারায়। সে জ্ঞান আর ফেরেনা। কিস্তিওয়ালা কিস্তির সপ্তাহে এসে শোনে ওমিজন মারা গেছে। আর যেই শোনা অমনি গ্র“প লিডারসহ দলের অন্যদের নিয়ে ওমিজনের বাড়িতে হামলা চালায়।

চালা ঘর আর ছাগল তিনটা নিয়ে যায়। ওমিজনের স্বামী ঋণের ভয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে। ওমিজনের ভিটেমাটিতে মেম্বার মাদ্রাসা দেয় পরকালের সওয়াব হসিলের জন্য । নারীবাদি সংগঠনগুলো ওমিজনের হত্যাকারির ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে, নারী অধিকারের শ্লোগান দেয়। জিন্টু হিমালয় অবশেষ অন্ধ ঘৃণা সন্ধা ৭টা বেজে ২০ মিনিট।

মতি মাছ ধরতে যাবে। স্বভাবে সে ভিতু কিন্তু মাছ মারার নেশায় তার ভয় ডর কিছু থাকেনা। যেমন আজ নদীর ঘাটের ওপারে সনাতন ধর্মের একটি মৃত পোড়া মানুষকে ডুবিয়ে দিয়েছে। মানুষের গায়ের চর্বির গন্ধ বড় বিচিত্র এবং জটিল। আজ বিপুল পরিমাণে মাছ ধরবে।

মতি তার সুন্দরী বউ ফুলজানকে ডেকে বলল,`দেও গো বউ খলাইটা আজ মাছের হাট বসাবো;' আরও বলল, `আইজ আটকাইতে পারবানা দেও দেও দোয়া কইরা মাথায় ফু দিয়া দেও' ফুলজান অহ্লাদ করে এসে স্বামীকে ফু দিলো এবং কানের লতিতে কামর দিলো যাতে তার নেশায় পরে আজ ঘাটে না যায়। কিন্তু কাজ হলোনা স্ত্রী পাগল মতি আজ মাছ ধরবেই। তার ১৩ বছরের ছেলে কালু তার মায়ের মতই তেল কালো হয়েছে বলে তার নাম রেখেছে কালু। কালু বলল,`আব্বা কাইল স্কুলে যামু আমার জামা প্যান নাই প্রত্যেক দিন পরা কইয়াও মাইর খাইতে মোন চায়না। ' : দিমু বাপ কাইল হটে মাছ বেইচা সব কিনা দিমু ।

কালুর মন দমে গেলো কারণ তার বাপ আজ পর্যন্ত যে মাছ ধরেছে তাতে তাদের খাওয়াই চলছেনা। মা মুরগী আর গাই গরু বেঁচে যা পয়সা পায় তা দিয়েই তার পড়ালেখা চলে। আব্বার মাছ মারাও হবেনা আমার জামাও হবেনা। হঠাৎই ঝুপঝুপ বৃষ্টি পরতে লাগল। মতি দ্বিগুন উৎসাহে বউকে আদর করে জরিয়ে ধরে চুলে চুমু দিয়ে বলল, `আইজ মাছ আমি ধরুমই'।

ফুল কিছু বললনা স্বামীর অদরে গলে গিয়ে বসে রইলো। ঘাটের পারে এসে একটু গা ছমছম করল। কেউই নেই। তবে তার ধারণা অনেকেই আসবে তখন গল্প করে সময় কাটানো যাবে। এই সময় নদীর মধ্যখানে ঝপাৎ করে আওয়াজ হলো এমন জোরে যে মতি কেঁপে উঠলো কিন্তু পাত্তাই দিলো না।

সে হুকো সাজাতে ব্যাস্ত হলো। একবার ভাবলো হয়তো মৃত মানুষটাই পানির মধ্যে ঝাপাঝাপি করছে। অথবা বড় কোনো মাছ হবে। শেষ কথাটাই গ্রহণযোগ্য। মরা মানুষ ঝাপাবে কি করে।

মতি তীরের কাছে দিয়ে বোয়াল মাছ মারার বর্শির রগ সুতাটা বাঁশের গোজ গেঁথে বেধে ফেলল। জুতসই যায়গা বেছে নিজের জন্য স্থান ঠিক করেও নেয়। ছোটমাছ ধরার জায়গা ঠিক করে বর্শির মাথায় কেঁচো গেথে বর্শি ফেলায়। আয়েশ করে হুকোতে মুখ বসায়। তার গাঢ় কালো মোচের ফাঁক দিয়ে ধোয়া বের হতে থাকে।

হঠাৎ মতি মনের আনন্দে চিৎকার দেয় কারণ বর্শির সলাকা কেঁপে উঠেছে। সে মন থেকে দোয়া করে। বুড়ো মরে গিয়ে তার ভাগ্যো খুলে দিয়েছে। বুড়ো ওদের স্বর্গে চলে যাক। তবে মাটি হয়নি বলে আফসোস করে সে।

মতি হুকো ছেড়ে বর্শি তেরছা করে খোট্টা দেয়; টেংরা বড় টেংরা। মতির মুখে হাসি ফোটে। ফুলবানু আজ বেজায় খুশি হবে। দেখতে দেখতে মাছের খালইটা মাছে পুর্ণ হয়। এবার আরেকবার মতির কাছাকাছি ঝপাৎ করে বেশ জোরে আওআজের সাথেই বিশাল ঢেউ চলে আসে এলো মতির কাছে।

সাথে বাজে একটা উৎকট গন্ধ। মতি পাত্তা দেয় না। বোয়াল মাছের বর্শিগুলো দেখতে থাকে। দূর থেকে কে যেনো ডাক দেয় হে...হে... ও কেডা... মতি চুপ করে রইলো। কত হারামজাদা আছে রাতে এসে মাছ নিয়ে যাবে।

যা দাম চাইবে তাতেই রাজি। বলবে, সকালে দাম নিস, তাকে চিনিনা বললে বিপদ আরও বেশি। সব মাছই নিয়ে যাবে। রাতে যেই আসুক দাম দিয়ে মাছনেওয়ার জন্য আসেনা ফাও কামাইয়ের জন্যই আসে। নদীর ধারেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল বসবাস সেখানে বসবাস করে এক বৃদ্ধ নাম ছেকাতুল্লা সে ছিলো একমাত্র মুসলমান।

একজন মানুষ একটা ঘর, বৌ বাচ্চা এমনকি আত্বীয় স্বজন কেউই তার নেই। কয়েকদিন তার চুলোয় হাড়ি চরেনি। সেই ছেকাতুল্লা আসে মতির কাছে। : মাঝি মোক একটা মাছ দিবু বাহে, তিন দিন কিছু খাং নাই, মাছ জ্বাল দিয়া খাইম। তোর মেলা ভাল হইবে।

মতি সঙ্গি পেলো এবং বোয়াল মাছের বর্শি তুলতে গেলো আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো মাছ এখনো তাজা আছে কিন্তু মাছের শরীরে মাছ নেই। সে ভাবলো, মাইছা ভূত যারা মাছ খায় সেই হয়ত খেয়ে গেছে। সে ছেকাতুল্লাকে অর্ধেক মাছটা দিয়ে দিলো। সে পেটের ক্ষুধায় মাছখাওয়ার আনন্দে বাড়ি রওনা হলো। রাস্তায় দেখে কাচাধানের একটি আটি পরে আছে।

সে আরও খুশি হয়। চারিদিকে নিরব শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক অল্প বাতাস বইছে। ছেকাতুল্লা একহাতে মাছ অন্য হাতে ধানের আটি ধরে রওনা দিলো। সে জানলোনা এই ধান পাকেনি ধানের মধ্যে শুধু দুধের মত সাদা সাদা তরল হয়েছে। উরুনে ধানভানতে গিয়ে দেখল সাদা দুধ ছাড়া কিছুই নাই।

সে ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে মাছ জ্বাল দিতে গেলো রান্না শেষ হবার আগে চকিদার এসে পর্যবেক্ষণ করে ছেকাতুল্লাকে গ্রেফতার করল। ছেকাতুল্লা চিৎকার দিলো, `মুই চুরি করং নাই, মুই চোর নোয়াং, মোক ধরেন ক্যা। ' চকিদার তার চাকরি হারাতে পারবেনা সাফসাফ জানিয়ে দিলো। মতি চপচপ আওয়াজ শুনল। হুকোতে দম দিচ্ছে সে।

সে থামলো আওয়াজও থামলো। আবার হুকোতে দম দিবে তার ঠিক পেছনেই চপচপ আওয়াজ হলো। কে যেনো চিবিয়ে কিছু খাচ্ছে। আজ আর কেউ মাছ মারতে এলোনা। মতি একাই ঘাটের সমস্ত মাছ মারার পরিকল্পনায় মেতে উঠলো।

মাছ মারছে ঠিকই কিন্তু মাছ থাকছে না কে যেনো খেয়ে যাচ্ছে। সেকি মাইছা ভূত, নাকি মাটি না হওয়া সেই মৃত বুড়ো। মতি সকালে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরলো। ফুলজান আদর করে মতিকে বলল, `ক্যা গো মাছতো নাই খালি মাথা, মাছের শরীলতো নাই ঘটনা কি, তুমি কি বইসা বইসা কাঁচা মাছই খাইছ, নাকি গো; মরণ'। : নারে কালুর মা শালা মাইছা ভূত খাইছে।

: জানো, আইজ নাকি ছেকাতুল্লার বিচার হইবো। মানুষটাতো বালা তাইনে নাকি খেতের ধান চুরি কইরা রাইন্ধা খাইছে। : চুপকর হারামজাদি ধান জমির মইধ্যে হইচে নাকি যে চুরি কইরা খাওন যাইব। ধানের মইধ্যেতো খালি সাদা দুধ। থাকিস বিচার করাইতাছি।

কাইল রাইতে ছেকাতুল্লা আমার কাছথন মাছ নিচে। : কও কি? যাও মানুষটা বালা তারে বাঁচাও। কয়দিন আর বাচপো? মিচা কথা নিয়া শেষ বয়সে মোরব বুড়াটা; যাও দেরি করবানা যাও । মতির যাবার আগেই গ্রামের দশজন বিচার শেষ করেছে। ছেকাতুল্লাকে গাছের সাথে বেধে ফ্যালা হয়েছে।

১০০ দোররা মারা হবে। ছেকাতুল্লা বলেই যাচ্ছে, `মুই চুরি করং নাই মুই চোর নোয়াং মোক মারেন ক্যা'। মতি থ মেরে দাড়িয়ে আছে। যখন ছেকাতুলাকে মারতে যাবে সে চিৎকার দিলো `থামেন মারেন ক্যান?' দুজন জনপ্রতিনিধি এগিয়ে এলো `ছেকাতুল্লা ধান চুরি কইরচে'। : ধান ক্যমনে চুরি করে? ধান তো হয়ই নাই, এহনো থোর।

আর আমি সারারাইত মাছ মারছি ছেকাতুল্লারে মাছও দিছি আমি। তার সাথেতো ধান দেহি নাই। হে ধান পাইলো কই, আর ধান চুরি গেলেতো বেবাক ধান তার বাড়িত থাকার কথা এত ধান হে রাখব কই ? কিন্তু কে শোনে তার কথা গ্রামের মোড়ল শালিসে বিচার শুনিয়েছে অতএব বিচার কার্যকর হোক। আর মতিকে বলা হলো `তুই বিচারের কি বোঝস? বিচার যারা করে তারাই ভালো বোঝে। বেশি বুঝিসনা কপালে খারাপি আচে’।

ছেকাতুল্লাকে দোররা মারা হচ্ছে মতি ফুসছে দূরে দাঁড়িয়ে সে বিড়িতে টান দিতে ভুলে গেছে। মতি শব্দ করে একদলা থুথু ফেলে। সমস্ত ঘৃণা উগ্রে দেয় সমাজের প্রতি। অন্ধ রাজত্বের প্রতি। আর কিবা সে পারে।

অপেক্ষা করুন আরও কিছু পড়ার জন্য প্রথম পর্ব পড়ুতে ক্লিক করুন- Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.