আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছুটির ঘণ্টা বাজে ঢংঢং/ মেঘেরা হারায় বৃষ্টির রঙ!!

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

সমগ্র বছরের মধ্যে আমার বাসায় যাওয়া পড়ে সর্বোচ্চ ৪-৫বার; এর মধ্যে ২ঈদ কমন, আর বাকি ৩বার রিজার্ভ রাখা, এবং এমনও দেখা গেছে এই রিজার্ভেশনগুলো অনেকবছর অব্যবহৃতও থেকে যায়। তাই ছুটিতে আমার বাসায় যাওয়াটা বেশ একটা উপলক্ষ্যই বটে। ২০০৩ সালে এসএসসি পাশের পর সেই যে বাসা ছাড়লাম, এরপর টানা একমাস কখনোই আর বাসায় থাকা হয়নি। কলেজ জীবনে তবু ২-১ মাস পরপর যাওয়া হত, কিন্তু ভার্সিটিতে ঢুকে বাসাকে নিত্যবৃত্ত অতীত করে ফেলেছি বোধহয়। ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা ছেড়েছিলাম ১৭ই সেপ্টেম্বর, আর ফিরলাম ২রা অক্টোবর; সবমিলিয়ে ২ সপ্তাহের মত একটা প্যাকেজ।

৩০শে আগস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই আম্মু ক্রমাগত তাগাদা দিচ্ছিল 'বাসায় আসো, বাসায় আসো', আর আমি বারবারই বিভিন্ন কাজের বাহানায় দিন বাড়াচ্ছিলাম। তাই নিশ্চিত ছিলাম এবার বাসায় গিয়ে কঠিন জেরার সম্মুখীন হতে হবে, এবং প্রতিটি কাজের পইপই হিসাব দিতে হবে। মূলত কাজ বলতে ছিল শুধু নাটকের কাজটাই। কিন্তু এই ব্যাপারে বাসার কাউকেই কিছু জানাইনি, কারণ আমি লেখালিখি করি এ ব্যাপারটিই বাসায় কেউ জানেনা (আমার ছোটভাই বাদে), তাই আমার কোন লেখাই আমার পরিবারের কেউ পড়েনি। সেদিক থেকে, নাটক করার কারণে বাসায় আসছিনা এই কথা বললে আরও অনেক কথা বলতে হত সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে।

তারচেয়ে না বলাই শ্রেয়। সঙ্গত কারণেই ১৭ তারিখ বাসায় ফিরে পুরো ব্যাপারটি বলার পর আম্মুর কাছে যথেষ্টই নাজেহাল হতে হয়েছে; প্রথমত, আমি সংখ্যাতত্ত্বের কাজ ফেলে নাটক করতে পারি, এটা তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করেননি, এবং ২য় কারণ হচ্ছে, নাটক তেমন কোন প্রোডাক্টিভ কাজ নয় (পরিবারের ভাষ্যমতে)। সুতরাং বাসায় ফিরেই অভ্যর্থনাটা বেশ জমজামাট হয়েছিল আর কি! বাসায় কম যাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল, বাসায় গিয়ে করার মত তেমন কোন কাজ পাইনা; রিমোটে টিভির চ্যানেল বদলানোটাই বলতে গেলে একমাত্র কাজ, এবারও তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা হল। তবে বিকালটা পুরোপুরি অন্যরকম কাটে; ছুটিতে আসা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়, প্রায় 'কিশোর রাত' পর্যন্ত গল্পগুজব- রসিকতা চলে। সন্ধ্যার দিকে একটা চায়ের আসর বসে।

চায়ের আসরে আমি নিয়মিতই অপদস্থ হই- সবার থাকে সিঙ্গল কাপ, আর আমার কাপটা ডাবল; এখান থেকেই নিত্যদিনকার বিপত্তির উৎপত্তি। বন্ধুরা একত্রিত হলেই বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ রাখা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক; একসময় আমাদের টিমটা খুবই শক্তিশালী ছিল, কিন্তু অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাসের মত এখন আমরা খেলতেই নামি হারের ধরনটা সম্মানজনক করার টার্গেটে। এবারও বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেললাম এবং প্রতিটিতেই হার , কোনটায সম্মানজনক, কোনটাই শোচনীয়। বরাত গুণে একটা ম্যাচে টাই। দীর্ঘদিন না খেলার কারণে আমার ফিটনেসের অবস্থাও যাচ্ছেতাই- একটা দৌড় দিলেই স্ট্যামিনা শেষ, কয়েকটা ম্যাচে তো রীতিমত রানার নিয়ে ব্যাটিং করতে হয়েছে আর ফিল্ডিংয়ের প্রসঙ্গ নাহয় অনুল্লিখিতই থাকুক- সে এক মহা বিনোদনের দৃশ্য! ঈদ আর পূজা কাছাকাছি সমযে হওয়ায় আখেরে লাভই হয়েছে।

আমাদের সার্কেলটা হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ। তাই বিভিন্ন মন্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখার পাশাপাশি টুকটাক নিমন্ত্রণও রক্ষা করা হযেছে। স্কুলে পড়ার সময়ে এইসব মন্ডপে যেতে বিরক্ত লাগত, এখনও খুব ভাল লাগেনা, তবে আগের সেই বিরক্তিটা একেবারেই নেই। বিশেষ করে, মন্ডপে গেলে মুসলমান বন্ধুরাও যেভাবে দলবেধে নাচে, দৃশ্যটা অপলক চেয়ে থাকবার মত। এখানেও আমি বিব্রত হই নিয়মিত, কারণ হালকা-পাতলা কাজ চালানোর মত গান-অভিনয় পারলেও নাচানাচির ব্যাপারটা আমার হয়ইনা, তাই বিভিন্ন কনসার্টে নিয়মিত ধাক্কা খাওয়া-পায়ে পাড়া খেতে খেতে মোটামুটি গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু নিজের এলাকাতেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে ততটা ভাল লাগার কথা নয়। বন্ধুদের তরফ থেকে আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল, যার সন্ধান পাই ঢাকা আসার আগের দিন। এর আগে নাটকের পোস্টটাতে লিখেছিলাম বাজেট ঘাটতির কারণে নাটকের এডিটিং ঈদের আগে সম্ভব হচ্ছেনা। সেই লেখাটি জাহাঙ্গিরনগরে পড়ুয়া আমার এক বন্ধু পড়ে ফেলে, এরপর আমার অজ্ঞাতেই নিজেরা চাদা তুলে টাকাটা যোগাড় করে। আমি ভাবতাম আমার মত গম্ভীর-নিরস মানুষের জন্য বন্ধুত্বের বন্ধনটা সমযোজী, এখন বুঝলাম আয়নিক।

ওদেরকে সেদিন ধন্যবাদ বলতে পারিনি, আজ এই লেখার মাধ্যমে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা দুই-ই পৌছে দিলাম। এবার ছুটির মূলপ্রাপ্তি বলি। আমরা ৪ভাই-বোন সর্বশেষ একত্রিত হয়েছিলাম ২০০৫ সালে; বোনদের বিয়ের পরেও একত্রিত হযেছি, তবে সেখানে হয় আমি নয়তো আমার ইমিডিয়েট বড়বোনটা অনুপস্থিত থাকতই। তাই সম্মিলনটা হত ৩জনের। দীর্ঘ ৪ বছর পর ২দিনের জন্য আবারো সেইসব হারানো দিন ফিরে এসেছিল আমাদের বোলতা কুটিরে।

ওহ, বলা হয়নি আমাদের বাসার নাম 'বোলতা কুটির'। আমার আম্মুর ধারণা, আমরা ৪ ভাইবোন একেকটা বোলতা, তাই বাসার নাম বোলতা কুটির রেখে আম্মুর ধারণাটাই পোক্ত করা হয়েছে। আমাদের ভাইবোনদের ছবি সব দুষ্টুমিতে ভরপুর, মোটামুটি একটা ইনোসেন্ট ধরনের ছবি পেলাম। ছবিটা ২০০০ সালে তোলা একঘেয়ে কিংবা আনন্দদায়ক যেমনই কাটুক, ছুটি শেষে বাসা ছেড়ে আবারো সেই নাগরিক জীবনে ফিরে আসলাম। বুয়েটে ছুটি পাই অনেক, কিন্তু ছুটিগুলোকে কখনই বাসায় যাওয়ার উপলক্ষ্য করা হয়ে উঠেনা।

। হযত আবার কোন ঈদে, আবারো ছুটির ঘণ্টা বাজবে...আর, আমি মেঘ আর বৃষ্টি মাপতে মাপতে কয়েকদিনের জন্য বিশ্রাম খুঁজব বোলতা কুটিরের নিবিড় ছায়ার আড়ালে.......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।