আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিক্রিয়াশীল এলিটদের দুর্গে ফরহাদ মজহারের লুঙ্গি হামলা এবং তার ফল

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

ভাবছিলাম ঢাকা ক্লাবে ফরহাদ মজহারের লুঙ্গি নিয়া যে বিবাদ হইছে সেইটা নিয়া লিখবো না। এমনিতে ফরহাদ মজহারের লুঙ্গি নিয়া আমার অবস্থান ক্রিটিকাল। ফরহাদ মজহারের কিছু মতের মতো লুঙ্গিকেও একটা মতবাদ হিসাবে আমি গ্রহণ বা বর্জন কিছু করি নাই। লুঙ্গি বিষয়ে আমার মত কী এইটা দীর্ঘদিন আগে একটা তর্কে উল্লেখ করছিলাম।

সেইখান থেকে উদ্ধৃতি দেই : ‌‌"প্রশ্ন উঠে, এক সামর্থহীন ট্রাউজার পরুয়া হকার আর সামর্থ্যবান গাউন পরুয়া ধনী বাদে কোন বাঙালি মুসলমানের ঘরে লুঙ্গি নাই? আর কেহ স্বেচ্ছায় ট্রাউজারের অভ্যাস করিতে পারেন। ঘরে ঘরে এত লুঙ্গি, দিনের বেশির ভাগ সময় এই পরিয়াই কাটাইতে হয়। অবস্থা এমন যে, একজনের লুঙ্গির সঙ্গে অন্যজনের লুঙ্গির ভেদ করাই যেখানে মুশকিল সেখানে এই বিদ্যানদের লুঙ্গিকে চিনিবো কেমনে? বিদ্যানেরা বোঝেন, পোশাক মূল্য উৎপাদন করে। পলিটিকাল, সোশাল বা অর্থনৈতিক কারণের উদ্রেক ঘটায়। ড. ইউনুসের গ্রামীণ চেকের আলাদা মূল্য আছে।

বিবি রাসেলের গামছারও আলাদা মূল্য। কাদের সিদ্দিকীর গামছারও আলাদা মূল্য। এইগুলার সঙ্গে ব্যবসা, পসার এমন কি ভোটেরও সম্পর্ক। এখন বিদ্যানের লক্ষ্য বোঝা কষ্ট। কোন ভেক ধরে তিনি কী মূল্য তৈয়ার করতে চান আর তাতে কী ফায়দা হয় তা ‘তিনি’ ছাড়া অন্য কেউ জানেন বলে মনে হয় না।

কেহ উন্নয়নের জন্য গামছা পরে, আর কেউ ভোটের জন্য গামছা পরে। কেউ কৃষকদের সঙ্গে কারবারের জন্য লুঙ্গি পরে আবার কেউ কৃষকের ভাব সৃষ্টি করার জন্য লুঙ্গি পরে। কেউ কৃষক নেতা বলেই লুঙ্গি পরে। কেউ আবার বলে ইহাই আমাদের জাতীয় পোশাক। এ বলে আমাকে দেখ, ও বলে আমাকে দেখ।

ব্যাখ্যাটাও তিনিই দেন। আর ব্যাখ্যাকে সন্দেহ নিয়া পর্যবেক্ষণ করা ভাল। কারণ, ব্যাখ্যা প্রচুর। উদ্দেশ্য অনুসারে ব্যাখ্যা নির্বাচনও সহজ। ফলে, রাহীর (মজহারেরও) লুঙ্গি পরার কারণকে আমি সন্দেহ করি।

লুঙ্গি ও জাতীয়তাবাদ একদিন সহসা মনে হইলো, বাংলাদেশে যদি জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের প্রসার ভারতের মতো হইতো তবে নিশ্চয় লুঙ্গি বিতর্কের অবসান ঘটিতো। একজন ভারতীয় যত সহজে ধুতি পরিয়া ভদ্র সমাজে গতায়াত করিতে পারেন তাহার কিছুই এখানে সম্ভব নহে। কারণ, ভারতে পোশাকের জাতীয়তাবাদী প্রকল্প এমনভাবে চর্চা হইয়াছে যে, গুরুতর কারণ না থাকিলে যে কেহ যে কোথাও ধুতি ব্যবহার করতে পারেন, আর ইহার পেছনের কারণ যাহাই হোক জাতীয়তাবাদের শক্তিশালী যুক্তি সর্বদা বজায় থাকিবে। লুঙ্গি জাতীয় পোশাক হইতে পারে কি না এই তর্ক এখন অবান্তর। ...... নিজেকে জাহির করিবার নিয়ম চারদিকেই আছে।

জাতীয়তাবাদের আছে, পতাকায়। কবিদের কেহ চুল দিয়া, কেহ পোশাক দিয়া নিজেকে শনাক্ত করাইতে চান। এই বাহ্যিক পরিচয়ে লোকে আমারে দেখুক, বা না দেখুক। এই এক্তিয়ার ব্যক্তির। ফলে, আমি যে অর্থনৈতিক কাঠামোর অংশ তার রীতি অনুসারে নিজেকে জাহির করিতে পারি।

অথবা তার উল্টো করে। তাতে কাঠামোর কিছু হয় না। দলে দলে লোকে পোশাকী বিপ্লবে লেগেও পড়ে না। কিন্তু লাভের লাভ হলো, লোকে আমাকে আলাদা করিয়া চিনতে পারে। আমার ব্র্যান্ডিং হয়।

ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ে। " ঢাকা ক্লাবের ঘটনা : ঢাকা ক্লাবের ঘটনার খবর ঘটনার রাতে জানতে পারি এক বন্ধুর কাছ থেকে। পরদিন আমার দেশ পত্রিকায় ফুল কভারেজ পড়ি। ফরহাদ মজহার ঢাকা ক্লাবে গিয়েছিলেন পারিবারিক একটা অনুষ্ঠানের দাওয়াত কবুল করতে। আমার প্রথম প্রশ্ন যারা ফরহাদ মজহারকে দাওয়াত দিছিলেন তাদের কাছেই।

উনার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এবং ওনার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হইলে মেজবানদের উচিত ছিল ভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করা অথবা ফরহাদ মজহারের সঙ্গে ঢাকা ক্লাবের বিষয় নিয়া খোলাখুলি আলোচনা করা। বোঝা যাইতেছে সেইটা হয় নাই। ক্লাবের লোকজন ফরহাদ মজহারের সঙ্গে বেয়াদবী করতেছিল যখন তখন তাদের ভূমিকা কী ছিল মিডিয়া বলে নাই। ফলে, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আঘাত না কইরা অনুষ্ঠান নিষ্পন্ন করা যায় নাই। পারিবারিক দাওয়াত খাইতে গিয়া ফরহাদ মজহার একটি বিপ্লবী ঘটনার জন্ম দিছেন।

যথোচিত কাজ করছেন। প্রথম কথা হইলো : ফরহাদ মজহারকে দরজায় আটকাইছে ক্লাবের দারোয়ান। সংঘর্ষ অনিবার্য। দারোয়ানের দোহাই ড্রেস কোড। বহুযুগ থিকা ওনারা ড্রেস কোড মেনে চলতেছে।

ফরহাদ মজহারকেও মানতে হবে। ড্রেস কোডের পক্ষে যুক্তি আছে। লুঙ্গি পরার পক্ষেও যুক্তি আছে। আজকের আমাদের সময়ে দেখলাম নইম নিজাম নামে এক ব্যক্তি লিখছেন হুমায়ূন আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার অভিজ্ঞতার কথা। লেখাটা পইড়া মনে হইলো, ঢাকা ক্লাব খুব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।

তাদের দারোয়ান শুধু তাদের গেটেই কাজ করে না। পত্রিকায় কলামও লেখে। এই দারোয়ানটি লিখেছেন, ঢাকা ক্লাবে ঢোকার বিপত্তি নিয়া হুমায়ূন আহমেদের মধুর স্মৃতির কথা। চলতি কথায় বলে, রাজায় কইছে চুদির ভাই আনন্দের আর সীমা নাই। এখন দেখতেছি রাজার দারোয়ান চুদির ভাই কইলেও আনন্দের সীমা থাকে না।

ইনি যদি সত্যি কথা লেখেন তবে সেটা লজ্জাজনক। ফরহাদ মজহার দারোয়ানের ধমক শুনে আনন্দে নাচার লোক নন। ফলে আমাদের যথেষ্ট আশা জাগতেছে। ফরহাদ মজহারের লুঙ্গি নিয়া আমার ক্রিটিকাল অবস্থান ছিল। এখন লুঙ্গি ঘটনার ফলে আমার মত ধীরে ধীরে তার পক্ষে চইলা আসতেছে।

ঢাকা ক্লাব কী : ঢাকা ক্লাব হইলো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শাসকশ্রেণীর মৌচাক। যে দল সরকারে থাকুক এদের মধুর কমতি পড়ে না। এরা চাক বাইন্ধা ভন ভন করতে থাকে। এরশাদ সরকারের সময় এরা রমনা পার্কের জমি দখল কইরা টেনিস লন বানাইছে। এক সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থিকা ঢাকা ক্লাবের নামে বরাদ্দ দেওয়া হইছে।

এই ক্লাবের লোকজনের ক্লাবে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য শিশুপার্কের সামনের রাস্তা দিনে কয়বার আটকানো হয় সেইটা গুনে শেষ করা যাবে না। আর এই ক্লাবের সুবিধাবাদিতার তালিকা কত বড় তা লিখার জন্য মহাকাব্য লেখার দরকার পড়বে। সমাজের মধুলোভী, সুবিদাভোগীদের এই আখড়াটির সভাপতি আজকের আমাদের সময়ে যে বিবৃতি দিছে তাতে ওইখানে যাওয়া-আসা করা বুদ্ধিমান লোকগুলোর উচিত লজ্জা পাওয়া। ক্লাবের সভাপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দ্রুত নতুন সভাপতি নিয়োগ দেওয়া। খবরটি নিচে দিলাম : সমাজের উঁচু স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী প্রগতিশীল মুক্তমনা সফল মানুষের মিলনকেন্দ্র ঢাকা ক্লাব .......................... প্রেসিডেন্ট বললেন .............................. সাইফুল ইসলাম তালুকদার: ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, সমাজের উঁচু স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী প্রগতিশীল ও মুক্তমনা মানুষের মিলনকেন্দ্র ঢাকা ক্লাব।

এখানে ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং গোড়া ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীদের কোনো স্থান নেই। এটিই ঢাকা ক্লাবের লালিত শতবর্ষের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। পূর্বসুরিদের সূচিত এই ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে গর্বিত ঢাকা ক্লাবের প্রতিটি সদস্য। ঢাকা ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে বিরাজমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সাদাত হোসেন সেলিম। তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতিমান অনেক কৃতি সন্তান ঢাকা ক্লাবের সদস্য।

এর মধ্যে আছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী মোহম্মদ কিবরিয়া, কাইয়ুম চৌধুরী, মাহমুদুল হক, রফিকুন্নবী, বরেণ্য সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক, হাসনাত আবদুল হাই ও হুমায়ূন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আলী যাকের ও আতাউর রহমান, প্রথিতযশা সাংবাদিক তোয়াব খান, মাহবুবুল আলম, রাহাত খান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, গোলাম সারওয়ার, আবেদ খান, মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম, হাসান শাহরিয়ার, মতিউর রহমান চৌধুরী, জগলুল আহমেদ চৌধুরী, নূরুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, বর্তমান ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদসহ দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তি ঢাকা ক্লাবের সদস্য। এর বাইরেও দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য। এরপরও কেউ যদি ঢাকা ক্লাবের ব্যাপারে মনগড়া নেতিবাচক অভিযোগ তোলেন তাহলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার বলার কিছুই নেই। ................................................. এই লোক বলতে চাইতেছে এই ক্লাব সমাজের উচ্চস্তরের, প্রগতিশীল, মুক্তমনা, সফল মানুষের মিলনকেন্দ্র। সফল কথাটা খেয়াল করেন।

এই লোক যে শ্রেণীর মানুষের কথা বলতেছে, এরা যেদিকে বৃষ্টি হয় সেইদিকে ছাতা ধরে। বিত্তে এরা উচ্চস্তরের বটে। সফলও বলা যায়। কিন্তু উপনিবেশ আমলের আইন-কানুন মাথার মুকট কইরা রাখা এই লোকগুলা মুক্তমনা কি না ভেবে দেখার দরকার আছে। আর অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে তারা প্রগতিশীল থাকতে পারেন কি না সেইটা নিয়াও ভাবতে হবে।

আমার বিচারে, ঢাকা ক্লাব হইলো প্রতিক্রিয়াশীলদের দুর্গ। পুরাতনপন্থী সুবিধাভোগীদের ক্লাব। সঠিক কোনো দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান চালাইলে এই ক্লাবের বহু সদস্য গ্রেফতার হয়ে যাবেন। ফরহাদ মজহারের আক্রমণের ফল : ফল খুব ভাল হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল দুর্গটিতে সামান্য লুঙ্গির আক্রমণেই মৌমাছিদের উড়াউড়ি শুরু হইছে।

দিকে দিকে দারোয়ানগুলো কথা বলতে শুরু করছে। আমি মনে করি, ফরহাদ মজহার মূর্তিমান আপদের মতো ডালপালার আড়ালে থাকা এই ক্লাবটির দিকে সবার দৃষ্টি ফিরাইছেন। প্রগতিশীল মানুষের উচিত এই ক্লাবটিকে চিনে রাখা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.