আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানব সম্পর্কে ইসলামের ধারণা



এ ব্যাপারে ইসলামের আদর্শ দুনিয়ার অন্যান্য সমগ্র ধর্মীয় ও দার্শনিক নীতি হতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। ইসলাম বলে যে, আল্লাহ তায়ালা মানবাত্মাকে এ পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। কিছু ইখতিয়ার ও স্বাধীনতা, কিছু কর্তব্য, কিছু দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করেছেন এবং এসব পালন করার জন্য সর্বোত্তম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দেহও তাকে দান করেছেন। এ দেহ তাকে দেয়া হয়েছে এ উদ্দেশ্যে যে, তার স্বাধীনতার প্রয়োগ এবং তার সমস্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য তার দেহকে ব্যবহার করবে। অতএব এ দেহ তার আত্মার কারবার নয়, এটা তার কারখানা।

এ আত্মার কোন উন্নতি যদি সম্ভব হয়, যোগ্যতার বাস্তব পরিচয় দেয়ার ভিতর দিয়েই সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়া এ দুনিয়া কোন শক্তির ক্ষেত্রও নয় -- মানবাত্মা এখানে কোনরকমে বন্দী হয়ে পড়েছে এরূপ মনে করা যেতে পারে না। বরং এটি একটি কর্মক্ষেত্র, কাজ করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। এখানকার অসংখ্য জিনিস তার অধীন করে দেয়া হয়েছে। এখানে আরো অনেক মানুষকে এ খিলাফতের বিরাট দায়িত্ব পালন করার জন্য তার সঙ্গে সৃষ্টি করা হয়েছে।

এখানে প্রকৃতির সাধারণ দাবি অনুযায়ী তামাদ্দুন, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং জীবনের অন্যান্য শাখা-প্রশাখাকে তারই জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটা তার জন্য একটা পরীক্ষাগার। জীবনের প্রত্যেকটা দিক ও প্রত্যেকটা বিভাগ সেই পরীক্ষার একেকটা ‘প্রশ্নপত্র’ বিশেষ। ঘর, মহল্লা, হাট-বাজার, অফিস, কারখানা, শিক্ষাগার, থানা, আদালত, সৈন্য শিবির, পার্লামেন্ট, সন্ধি সম্মেলন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র -- সবকিছুই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্র। এটা পূর্ণরূপে লিখে দেবার জন্যই তাকে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু মানুষ যদি এদের মধ্যে কোন বিষয়ে পূর্ণ সময় তার এবং তার উত্তর না দেয় কিংবা অধিকাংশ প্রশ্নপত্রের কোন উত্তরই যদি সে না লেখে তবে তার ফলে শূন্য ছাড়া সে আর কী-ই বা পেতে পারে ? সে যদি তার সমস্ত লক্ষ্যকেই এ পরীক্ষা দেয়ার কাজে নিযুক্ত করে আর যত প্রশ্নপত্রই তাকে দেয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটার সে কিছু না কিছু উত্তর লিখে দেয়, তবেই সে সফলতা এবং উন্নতি লাভ করতে পারে, অন্যথায় তা কিছুতেই সম্ভব নয়। বৈরাগ্যবাদের প্রতিবাদ ইসলাম এভাবে জীবনের বৈরাগ্যবাদী ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছে এবং মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দুনিয়ার বাহির হতে নয়, এর মধ্য হতেই বের করেছে। আত্মার ক্রমবিকাশ ও উৎকর্ষ এবং সাফল্য-সার্থকতা লাভ করার আসল উপায় ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনসমুদ্রের মাঝখানেই অবস্থিত -- তার কিনারে নয়। ইসলাম আমাদের আত্মার উন্নতি ও অবনতির কী মাপকাঠি উপস্থিত করে তাই বিচার্য। বস্তুত এ প্রশ্নের জবাব খিলাফতের পূর্ব বর্ণিত ধারণার মধ্যেই বর্তমান রয়েছে।

‘খলিফা’ হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালার সামনে মানুষ তার পরিপূর্ণ জীবনের কার্যাবলির জবাবদিহি করতে বাধ্য। পৃথিবীতে যে স্বাধীনতা ও বিবিধ উপায়-উপাদান তাকে দান করা হয়েছে, সে সবগুলোকে আল্লাহর মর্জি অনুসারে ব্যবহার করাই তার কর্তব্য। যে শক্তি ও যোগ্যতা তাকে দেয়া হয়েছে, তা সে আল্লাহ তায়ালার অধিক হতে অধিকতর সন্তোষ লাভের জন্য ব্যয় করবে। অন্য মানুষের সঙ্গে তাকে যেসব সম্পর্ক সম্বন্ধ দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে, তাতে সে আল্লাহর মনোনীত নীতি অবলম্বন করবে। মোটকথা নিজে সমগ্র চেষ্টা-সাধনা ও শ্রম-মেহনত ব্যয় করে পৃথিবী এবং তার মধ্যস্থিত মানুষের জীবনকে এত সুন্দর ও সুশৃংখল করবে, যত সুন্দর ও শৃংখলাপূর্ণ অবস্থায় তাকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান।

মানুষ যত বেশি দায়িত্বজ্ঞানের অনুভূতি, কর্তব্যপরায়ণতা, আনুগত্য এবং মালিকের সন্তুষ্টি লাভের আগ্রহ সহকারে এ কর্তব্য পালন করবে, আল্লাহ তায়ালার ততখানি নৈকট্য সে লাভ করতে পারবে। বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভই হচ্ছে আধ্যাত্মিক উন্নতি। ঠিক এর বিপরীত সে যতখানি অলস, কর্মবিমুখ কর্তব্যজ্ঞানহীন হবে, অথবা দুর্বিনীত, বিদ্রোহী এবং অবাধ্য হবে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ হতে সে ততখানি বঞ্চিত হবে। আর আল্লাহর নিকট হতে দূরে পড়ে থাকলেই ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় আধ্যাত্মিক অধপতন। পার্থিব জীবনেই আত্মার উন্নতি উপরের ব্যাখ্যায় একথা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী ধার্মিক ও দুনিয়াদার -- উভয় ব্যক্তিরই কর্মক্ষেত্র এক, এরা উভয়ে একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে।

এবং সত্য বলতে গেলে দ্বীনদার ব্যক্তি দুনিয়াদার অপেক্ষাও অনেক বেশি কর্মব্যস্ত থাকবে। ঘরের চার প্রাচীর হতে শুরু করে আন্তর্জাতিক কন্ফারেন্স পর্যন্ত জীবনের যত ক্ষেত্র এবং ব্যাপারই হোক না কেন, এর যাবতীয় দায়িত্ব দ্বীনদার ব্যক্তি দুনিয়াদার ব্যক্তির শুধু সমান নয় বরং বেশি পরিমাণে নিজের উপর চাপিয়ে নেবে। তবে যে জিনিস এ উভয় ব্যক্তির পথকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্কের স্বরূপ। দ্বীনদার ব্যক্তি যা-ই করবে তা ঠিক এ অনুভূতি নিয়েই করবে যে, আল্লাহর নিকট হতেই তার উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যই সে কাজ করবে এবং আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত আইন অনুসারেই তা করবে।

পক্ষান্তরে দুনিয়াদার ব্যক্তি সমস্ত কাজই করবে দায়িত্বহীনভাবে এবং নিজের ইচ্ছামত। এ পার্থ্যকই দ্বীনদার ব্যক্তির সমগ্র পার্থিব জীবনকে সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক জীবনে পরিণত করে এবং দুনিয়াদার ব্যক্তির সমগ্র জীবনকে আধ্যাত্মিকতার আলো হতে বঞ্চিত করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।