এক সময় বই ছিল আমার নিত্য সঙ্গী , অনেক রাত জেগে বালিশ নিয়ে উপুর হয়ে বই পড়তে পড়তে বুক ব্যাথা হয়ে যেত । পড়া শেষ হতো না । আজো বইয়ের কথা মনে হলে আমার বুকে ব্যাথা হয়, তাদের মলাটে ধুলোর আস্তর জমেছে বলে । বইয়ের পোকা থেকে এখন আমি ইন্টারনেটের পোকা ।
গ্রীস্মকালীন ছুটি ।
কক্সবাজার যাব । কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয় বিধায় আমার কিশোর
বয়সী কোন বন্ধুর পক্ষেই যাওয়া সম্ভব হলনা । অগত্যা একাই যাওয়া।
খুব সকালে রওয়ানা দেওয়ার পরও কক্সবাজার পৌছতে বেজে গেল রাত ১০ টা ।
যদিও গ্রীস্মকালীন রাত ১০ টা খুব একটা রাত নয়, তথাপি আমার মত সতের বছরের
একটা কিশোরের জন্য এটা নিশি রাতের শামিল ।
সুতরাং একটাই পরিকল্পনা ,হোটেল খুঁজে বের করা । আসলে কক্সবাজার হোটেল
খুঁজতে হয় না হোটেলই পর্যটক খুঁজে নেয় । খুব কাছেই একটা থাকার ঠিকানা খুঁজে
পেলাম । আমার জীবনের প্রথম বাহিরে রাত কাটানোর সেই নীড়ের নাম আরমান বোর্ডিং । ঢুকে গেলাম ভিতরে ।
রুম ভাড়া ৫০ টাকা । যদিও পেটে ক্ষুধা ছিল, দূরে
কোথাও গিয়ে খাবার সাহস না পেয়ে বোর্ডিং সংলগ্ন চা স্টলের হালকা খাবারেই
ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টা ।
অতপর ; ঘুমানোর পালা । শোবার আয়োজনে মশারী দেখে ভাবলাম, মশারী টানালে বাতাশ লাগবে না, তাই মশারী না টানিয়ে ফ্যান ছেড়ে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু
একি ! ফ্যানতো নয় যেন রুমের ভিতর ট্রেন চলছে গর-র গর-র শব্দে, তাও যদি বাতাশ লাগত ।
ওদিকে আবার মশক বাহিনী কিভাবে যেন আমার আগমন বার্তা
টের পেয়ে গেছে । সুতরাং আর দেরী না করে আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে দল-বল
নিয়া হাজির ।
নিরুপায় আমি মশারী টানাতে বাধ্য হলাম । তাপর মশারীতে যেই না ঢুকা অমনি
সে কি দুর্গন্দ ! মনে হয় সেই ১৯৫৩ সালের পর এটাতে পানি আর সাবানের স্পর্শ
লাগেনি । কি আর করা, সাথে নেওয়া গামছা দিয়ে নাক-মুখ বেধে এই গরমে ঘুমানোর অপচেষ্ঠা ।
কিন্তু আমার জন্য যে আরো চমক অপেক্ষা করছিল, কিছুক্ষন পরই সেটা টের পেলাম ।
বিছানার নিচ থেকে দলে দলে বের হয়ে আসতে লাগল ছাড় পোকারা । তারা ও
মশাদের থেকে কম অতিথি পরায়ন না, এটা বুঝতে আমার খুব একটা সময় লাগল না ।
তাই আবারো উঠতে হল । বিছানা ঝেড়ে আবার শয়ন করলাম , কিন্তু না আধা ঘন্টার বেশী তাদের ঠেকিয়ে রাখা গেল না ।
সুতরাং আধাঘন্টা পর পর বিছানা ঝাড়া, কখনো বা মশারী খুলে ফ্যান নামক রেল গাড়ীর শব্দ শুনে গরম তাড়ানোর চেষ্ঠা ( আসলে অপচেষ্ঠা ), আর মশারী ও বিছানার
দূর্গন্ধ থেকে বাচাঁর জন্য নাক মুখ বাধা । এভাবেই ভোর হওয়ার প্রহর গুনছিলাম । অতপর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযানের মাধ্যমে ।
আমি বেড়িয়ে পড়লাম বোর্ডিং নামক নরক থেকে । বের হওয়ার মুহুর্তে ম্যানেজারের
" রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো ?" এর জবাবে ইচ্ছে হচ্ছিল বলে দেই এই কৌতুক টি ।
আপনাদের বোর্ডিং এর ব্যবস্থা খুব চমৎকার ! মশারা যখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে
যাচ্ছিল, তখন যদি ছাড় পোকারা নিচ থেকে টেনে ধরে না রাখত সকালে উঠে আমাকে অন্য কোথাও পেতেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।