আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গঃ টিপাইমুখি বাঁধ ও আমাদের লাভক্ষতি



বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগই পানি। কিন্তু পানযোগ্য পানির পরিমান মোটেই অফুরন্ত নয়। বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেরই প্রধান সমস্যাগুলোর একটি পানি। সম্প্রতি ভারত কর্তৃক নির্মিতব্য টিপাইমুখি বাঁধ নিয়ে দেখা দিয়েছে দিপাক্ষিক সংকট। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু রাজ্যের মানুষের জন্যে মরণফাঁদ হিসেবে দেখা দিয়েছে এ বাঁধ।

মজার ব্যাপার হলো এ বাঁধ বাংলাদেশের জন্যে মরণফাঁদ হলেও এখন পর্যন্ত এ দেশের সরকার পর্যায়ে কোন জোরালো আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি। নেয়া হয়নি ভারতকে বিরত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক সমঝোতা। অথচ এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলে বাংলাদেশে পক্ষে বাধা দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। অন্যভাবে বলা যায় বাংলাদেশের সে শক্তিও নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপারটির প্রতিবাদ করা যেত।

প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ ও সদিচ্ছা। বাঁধের অবস্থান - বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বে বরাক নদীর সঙ্গমস্থল থেকে মণিপুর রাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিমে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সংকীর্ণ গিরিখাতে টিপাইমুখি বাঁধের নির্মাণস্থানের অবস্থান। উল্লেখ্য, বরাক নদী মূলতঃ তুইভাই ও তুইরয়ং নদীর মিলিত স্রোতধারা থেকে সৃষ্ট। মৃত্তিকা ও পাথুরে কাঠামোতে এ বাঁধ উচ্চতায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০ মিটার ও ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যে নির্মিত হবে। ভারতের লাভ =[/sb] টিপাইমুখি বাঁধ ভারতের বহুমুখী পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত বিপুল পরিমাণ পানিবিদু্ত উৎপাদন করে আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর ও মিজোরামে সরবরাহ করবে। এর ফলে যে কৃত্রিম লেক তৈরি হবে তাতে হাজার হাজার টন মৎস উৎপাদিত হবে। শুষ্ক মৌসুমে ভারত দক্ষিণ আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের বহু অঞ্চলে সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত করতে পারবে। তাছাড়াও এ বাঁধের মাধ্যমে বর্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ তাদের জন্য সুবিধে হবে। আমাদের ক্ষতি - বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পুরো বৃহত্তর সিলেট জেলাকে সিক্তিত করেছে।

এর উত্তরের ধারা কুশিয়ারা নদীর নাম নিয়ে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মোলভীবাজারকে করেছে পানি, পলি ও প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর। আবার এ ধারাটিই হবিগঞ্জের দক্ষিণে মুল ধারার সাথে একত্রিত হয়ে ভৈরবের কাছে মেঘনা নদীর জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা নদী ব্যবস্থার দুই তৃতীয়াংশের শরীক বাংলাদেশ। ফলে বরাকে যদি বাঁধ পড়ে প্রকৃতপক্ষে সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা বিধৌত অঞ্চলগুলো ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে- এ বাঁধ ফারাক্কা বাঁধের চেয়েও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এ বাঁধ নির্মাণ হলে ১০ বছরের মধ্যে বাঙলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হবে মরুভুমির সমতুল্য। ফলে সিলেটের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ, মেঘনা অববাহিকার ঢাকা অঞ্চলের ৬০ লাখ, কুমিল্লা অঞ্চলের ৬০ লাখ এবং বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ মানুষসহ প্রায় ৩ কোটি মানুষ সরাসরি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশ বিপর্যয়ের আগ্রাসনে পর্যবসিত হবে। এছাড়া এ বাঁধ নির্মাণের ফলে ভারতের আসামের কাছাড়-করিমগঞ্জের ২০ লাখ মানুষও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখিত এলাকাগুলোর নাব্যতাপূর্ণ এলাকা, হাওর-বাওর, বিল-ঝিল হয়ে পড়বে সম্পুর্ণ পানিশূণ্য।

আরেকটি ক্ষতির কথা বিষেজ্ঞরা বলছেন। তা হলো বড় মাত্রার ভুমিকম্প। বিষয়টি সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। পরে এ নিয়ে পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে। টিপাইমুখি বাধ বিষয়ে ভারতের যুক্তি খুব হাস্যকর।

তারা বলছেন- বাঙলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করবেন না। কিন্তু ইতিপূর্বে দেখা গেছে পানিবণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাঙলাদেশের সাথে বরাবরই প্রবঞ্চনা করেছে। তাদের কাছে চেয়ে-চিন্তে বাঙলাদেশকে পানি পেতে হয়েছে। তাও যে সময় দরকার সে সময় নয়। শুষ্ক মওসুমে ভারত কখনোই বাঙলাদেশকে ছাড় দেয়নি।

টিপাইমুখি বাধ নির্মিত হলে ভারত মূলত বাঙলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলবে। আমাদের বর্তমান সরকার অবশ্য ওই বাধ কর্তৃক উতপাদিতব্য বিদুত আমদানির চিন্তা করছে। অথচ দেশের স্বার্থবিরোধী এ প্রকল্পে লাভ খোজার চেয়ে ক্ষতির রাস্তা বন্ধ করাটাই যেখানে তাঁদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিলো। আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘে ব্যাপারটি নিয়ে জোর লবিং করা। সরকারের বিদেশ ঘোরা মন্ত্রীদের উচিত আন্তর্জাতিক লবিং জোরদারের মাধ্যমে ভারতকে বাধ্য করা।

কারণ এ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করা বা ভারতকে চাপ প্রয়োগ বাংলাদেশের সাধ্যে কুলোবেনা। আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করাটাই এখন সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।