আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রেন...,,,....,,,,....,,,,,!

কেউ ডাকে নি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালবাসি

শুয়ে শুয়ে ট্রেনে চট্রগ্রামে যাবার সময়ের কথা ভাবছিলাম কেন জানি। আমি যেতাম রাতের ট্রেনে। সবসময় টিকেট কাটতাম জানালার পাশে এবং সবসময়ই বেরসিক সহযাত্রী আমাকে জানালা খুলতে দিত না! দুইবার গিয়েছি দুইবারই একই ঘটনা! একদম খুব সকালে সূর্য ওঠার অনেক আগে ট্রেন চট্রগ্রামের সীমান্তে ঢুকে যেত। শীতের সকালে সব কুয়াশায় ঢাকা থাকত। হঠাৎ করে পাহাড় আসা শুরু করত।

সবুজ সাদা পাহাড় গুলো দূরে দূরে দেখা যেত...আর কুমারী সূর্য(বেশি কাব্যিক হয়ে গেলেও কিছু করার নাই...এরকমই)। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকতাম। কিছুখন পর পর কুয়াশায় কাঁচ ঘোলা হয়ে গেলে হাত দিয়ে মুছে নিতাম। তারপর এসে নামতাম চট্রগ্রাম স্টেশনে। নেমে কিছুখন হাটতে পারতাম না আর এত শীত লাগত!! চট্রগ্রামে আমার একেবারেই কেউ নেই।

কোন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু যার বাড়িতে ওঠা যায়। কোন পথ-ঘাট কিচ্ছু চিনি না। আমি উঠতাম চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইয়ের কাছে যাকে কি না আমি কখনোই চিনতাম না! সে আমার ভাইয়ের বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু !!! সেই ভাইয়ের মাধ্যমেই আমি তার কাছে থাকতাম। চমৎকার একটা ছেলে। চট্রগ্রাম স্টেশন থেকেই আরেকটা ট্রেনে উঠতে হয়।

শাটল ট্রেন। যেটা শুধু চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় আসে। সেখানে পৌছে সুমন ভাইকে ফোন দিতাম। সে তার কটেজে আমাকে থাকতে দিত। কটেজ শব্দটা একটা বড় ধরণের রসিকতা।

সে যাক। না দেখালে বুঝবি না। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়টা আর যার জন্যই হোক দেখার জন্য একটা দারুন ভার্সিটি। আর যদি খুব কাছের বন্ধূদের নিয়ে একসাথে ভর্তি হওয়া যায় আমার মনেহয় স্বর্গ টর্গে ঢুকে যাবি। একেবারে শহরের বাইরে।

বাইরের কোন কিছু নাই শুধু ভার্সিটি। মনেহয় একটা দ্বীপদেশ!! গভীর রাতে একা একা ঘুরতাম। আসলে আমি যে দুবার গেছি একা একাই যেতে হয়েছে। ট্রেনে গেলে সবসময়ই মনে হয়েছে সাথে কেউ থাকলে খুব ভাল হত। আমি ঘরের হইনি বাহির আমায় টানে আমি তোমার হইনি শুধূ আকাশটা জানে আমি পথ থেকে পথে যাই দূর থেকে দূরে আমি তোমায় ভুলে বল যাব কোনখানে? তাই তোমার হই নি আকাশটা জানে....... আসার সময় মনে হল লোকাল ট্রেনে আসি।

টাকাও কম লাগবে একটা অভিজ্ঞতায় হবে। হ্যা, অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যা আসলেই বলে বোঝানো যাবে না। আমি খুব সহজে যে কোন পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারি অন্তত চেষ্টা করি। সে আমাকে আমি দেখছিলাম করুনার দৃষ্টিতে! একটা বগি..যার কোন বাতি নাই(আসলে আছে তবে তা শুধু ট্রেন চললেই জ্বলে আর তার পাওয়ার ষাট পাওয়ারের একটা বাতির সমানও না।

) আমি বসে(?) ছিলাম ট্রেনের মেঝের এক কোণায়। তবু ভাগ্য ভাল বলতে হবে অতটুকু জায়গা পেয়েছিলাম। পা মেলার এতটুকু জায়গা নেই। একটু নড়লেই চারপাশের অভ্যস্ত কিছু দরিদ্র হতভাগ্য মানুষ চরম বিরক্তি নিয়ে তাকায়। একজন গায়ে জুতা লাগিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে লাগল! যা হোক, স্রষ্টা আরো দেখানো বাকি ছিল।

যে আমি বিলাসিতা করে জানালার পাশের টিকেট কেটে সুখ বাতাস লাগাতে লাগাতে যেতে চাইতাম সে আমি যেখানে বসেছিলাম সেখানে ছিল কপাটবিহীন একটা জানালা....হু হু করে শীতের রাতের বাতাস আসছিল। তার মধ্যে দিয়েই শরীরে কোন রকমে একটা চাদর পেচিয়ে আর সবার সাথে সিগেরট ফুকতে ফুকতে প্রচন্ড শব্দের মধ্যে দিয়ে(মেঝেতে বসেছিলাম বলে এত শব্দ ছিল) আসছিলাম। একসময় আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। তার অনেক পর যখন এভাবেই যেতে হবে বলে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম তখন দেখলাম দু একটা সিট খালি হচ্ছে..এবং তাড়াতাড়ি ভরেও যাচ্ছে। একটা সিটে দু'জন বসা(তিনজন খুব কষ্টে সে সিট এ বসা যায়...এবং সব সিটেই তিনজন) দেখে জিজ্ঞেস করলাম বসা যাবে কিনা।

তারা খুব সানন্দে বলল বসেন! বসতে গেলেই বিপরীত দিকের সিটে বসে থাকা পুলিশ বলল বসা যাবে না...এরা আসামী!! বেচারা আসামীও খুব দুঃখ পেল!! এই হচ্ছে অবস্থা! তারপর শেষমেশ একটা সিট পেয়েছিলাম। এবং বাকি পথ ওটার উপর বসে দুঃস্বপ্নের মতো চলে আসলাম!! একেবারে শেষে যখন ঢাকা পৌছলাম দেখি একটা লোককে কোন একসময় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে তার সব নিয়ে গেছে। (আহা হতভাগা..এতবার বলা হয় বাইরের মানুষের খাবার না খেতে!!) আমার কাছে দামি ক্যামেরা, জিনিসপত্র ছিল! দারিদ্রতা কি তার কিছূটা বুঝেছিলাম সে দিন। নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম আমি অন্তত এ দলের মানুষ নই, আমি পাশেই থেমে থাকা টিকেট কাটা সুন্দর ট্রেনের মানুষ!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.