আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যুত বিভ্রাট না বিভ্রাটের বিদ্যুত!!!



আমার একজন সহকর্মী গত কয়েকদিন থেকে আমাকে খুব করে বলছেন বিদ্যুতের বিভ্রাট নিয়ে ব্লগে খানিক লেখা লেখি করতে; যেহেতু আমি একটু আকটু লেখা জানি। আমিও ভাবছিলাম লিখব, কিন্তু সময় করে উঠতে পারিনি। আজ বসেই পড়লাম অবশেষে। বিবেকের দায় থেকে লিখছি না, লিখছি শরীরের দায় থেকে। কেন না, গরমে শরীরের সব আরাম বের হয়ে যাচ্ছে যে।

লিখে যদি গায়ের জ্বালা খানিক মেটে! এবার কাজের কথায় আসি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বিদ্যুতের ওঠানামা একটু যেন বেশিই হচ্ছে, যদিও এই দরিদ্র দেশে বিদ্যুতের অবস্থা কোন কালেই খুব যে ভাল ছিল তা বলা যাবে না, তবে এতটা বেহাল কখনোই ছিলো না। যেখানে বিদ্যুতের প্রয়োজন ৫০০০ মেগাওয়াট সেখানে গড়ে উৎপাদনই হচ্ছে ৩০০০ মেগাওয়াট। মাঝের এই বিশাল ঘাটতি মিটবে কি ভাবে তাই এখন বর্তমান সরকারের মাথা ব্যাথা। গরমের মৌসুম শুরুর আগেই সরকার রণে ভঙ্গ দিয়েছে, বলে দিয়েছে এই বিশাল চাপ তারা সামলাতে প্রস্তুত নয়।

তাহলে আমাদের কি হবে? ওনাদের তো কোন সমস্যা হচেছ না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মাথার ওপরে তাদের সদাই পাখা ঘুরছে, কেন না ভি.আই.পি হওয়ার সুবাদে তাদের এলাকায় লোড শডিং করার বুকের পাটা যে কারো থাকার কথা নয়। অথচ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা এমপি-মন্ত্রী হয়ে জনগণের কষ্টই ভুলতে বসেছেন। জনগণ হল গৌরী সেন, টাকা তো দিয়েই যাবে। সত্যিই বড়ই বিচিএ! যা হোক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে এলাকা ভেদে প্রতি আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা অন্তর লোডশেডিং করা হচ্ছে।

কোন কোন এলাকায় আবার টানা দুই-তিন ঘন্টাও বিদ্যুত থাকছে না। আর কোন কোন এলাকায় আবার বিদ্যুতের কোন ঘাটতিই নেই। সেই বিশেষ এলাকা গুলোতে বাস করেন আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ কিংবা সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ যারা সাধারণ জনগণের মাঝে থেকেও অসাধারণ! যাক তাও তো তাঁদের কল্যাণে আমাদের কিছু সাধারণ প্রজাগণ একটু স্বস্তিতে আছে। তবে সেই সব বিশেষ এলাকার কান্ডজ্ঞানহীন ভূমিঅবতারগণ (তথাকথিত বাড়িওয়ালা) কিংবা সুযোগ সন্ধানি বাড়ির মালিকগণ সর্বক্ষণ বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্ধিতহারে বাড়িভাড়া আদায় করতে বিন্দুমাএ কার্পণ্য করছেন না। এতে অবশ্য অবাক হবার তেমন কিছু নেই।

এটা তো আমাদের উন্নত জাতীয় চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ! আমরা বরাবরই পরের ধনে পোদ্দারী করতে সিদ্ধহস্ত। বিশেষ এলাকায় বিদ্যুতের বিভ্রাট নেই অথচ পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা গরমে অমানবিক কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে। দিনের বেলায় না হয় বিদ্যুতের চাহিদার সাথে বিতরণ সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যদিও মাত্র ৫ ভাগ বিদ্যুত ব্যায় হয় গৃহস্থালী কাজে। বেশিরভাগ বিদ্যুত ব্যয় হয় অফিস-আদালত ও কলকারখানার কাজে। তাই দিনের বেলায় বিদ্যুতের তেলেসমাতি মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু গভীর রাতের বিদ্যুতের বিভ্রাটের মাজেজাটা ঠিক মাথায় ধরে না।

যখন কিছুমাত্র অতিব গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টস ছাড়া সমস্ত অফিস, আদালত, কলকারখানা ঘুমিয়ে থাকে তখন অসহ্য গরমে বিদ্যুতহীন আমরা জেগে রই সেই মহামূল্যবান বিদ্যুতের আশায়। ওত রাতে কার এত বিদ্যুতের ক্ষুধা, কার অদৃশ্য হাতের ইশারায় কোথাইবা যায় সেই মহামূল্যবান বিদ্যুত বড় জানতে ইচ্ছে করে। বড় জানতে ইচ্ছে করে স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন আমরা বিদ্যুতের কাছে পরাধীন? কেনই বা অন্য অনেক খাতের মতই এটি অনগ্রসর একটি খাত? এই ব্যর্থতা কার? আমাদের নাকি যাদের আমরা অতি ভরসায় ক্ষমতায় বসিয়েছি তাদের? কবেই বা দূর হবে আমাদের এই দুর্ভোগ? এটা কি বিদ্যুত বিভ্রাট না কি বিভ্রাটের বিদ্যুত? প্রশ্ন রইলো সুধী সমাজের কাছে............... ধন্যবাদান্তে, হতভাগ্য একজন ঢাকাবাসী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.