আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্ধের হাতি দর্শন, অতঃপর..

কেউ কেউ একা

একটা গল্প বলবো। ছোট করে। অন্ধদের গল্পতো আপনারা জানেন। তারা হাতি দেখতে গিয়েছিল। কেউ বলেছি- হাতি কুলার মতো।

কেউ বলেছিল- হাতি দেয়ালের মতো। আবার কেউ বলেছিল- হাতি গাছের মতো। আসলে হাতি ছিল হাতির মতোই। ২০০৭ সাল। ধানের কোল্ডইনজুরিতে ক্ষতির সন্মুখীন হাওর এলাকার কৃষকরা।

অন্যান্য এলাকার কৃষকদের আগাম সতর্ক এবং কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কৃষকের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে উঠে আসে বিষয়টি। 'আতঙ্ক' শব্দটা ব্যবহার এখানে কতুটুকু যুক্তিসঙ্গত তা শুধু লেখকই জানেন। তখন যে চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল এটা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত ছাড়া আর কিছুই না। ২০০৭ সালের কথা আজ উঠছে ২০০৯ সালের মার্চে এসে। যেখানে সেকেন্ডকে ভাগ করে মানুষ কাজ করছে।

আসলে খোঁড়া খুঁড়িয়ে চলে, দৌড়াতে পারে না। এখন দৌড়ানোর যুগ। প্রতিযোগিতার যুগ। সময়ের সাথে তাল না মেলাতে পারলে রাস্তার আস্তাকুঁড়েই পড়ে থাকতে হবে অবর্জনার মত। ২০০৮ সাল।

শিলাবৃষ্টিতে মুন্সিগঞ্জেরে অনেক আলুক্ষেতের আলু নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনাটি মিথ্যে নয়। দিনের আলোর মতো সত্য। কৃষকের মাঠের ফসল নষ্ট হবে আর গণমাধ্যম চুপ করে বসে থাকবে এটা কারো কাম্য নয়। তাই ক্ষতির সন্মুখীন হওয়া কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিল ওই অনুষ্ঠানটি।

ওখানে আলুর ফলন নেমে আসবে বা ফলন শূন্যের কোঠায় আসবে এমন কোন কথা প্রতিবেদনে বলা হয়নি। 'সবাই মনে করেন এবার আলু উৎপাদনে ধস নামবে' -এই সবাই বলতে লেখক কাদের কথা বুঝাতে চেয়েছেন ২০০৯ সালের ১০ মার্চ তারিখে এসে তা বোধগম্য নয়? গোবিন্দগঞ্জ থেকে আলু এনে কোল্ডস্টোরেজে ভরার কথা লেখক বলেছেন। এটা প্রতিবেদন প্রচারের আগেই শুরু হয়েছিল। দেশের দুঃসময় হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ গ্রহণ করে এটা মনে হয় বিজ্ঞ লেখক জানেন না। কোল্ডস্টোরেজের অভাবে আলু নষ্ট হয়েছিল সে চিত্রও ধারণ করে প্রচার করেছিল অনুষ্ঠানটি।

হাস্যকর তথ্য পরিবেশন করে কখনও পাঠককে বিভ্রান্ত করা যায় না। বুঝতে হবে আমরা এখন বাস করছি ইন্টারনেটের যুগে। চোখের পলকে যেখানে প্রচার হয়ে যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশের খবরা-খবর। ২০০৯ সালে এসে আজিজ ফর্মূলার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন লেখক। প্রতিবেদনটির কোথাও কিন্তু কৃষককে বলা হয়নি এই ফর্মূলা ব্যবহারের কথা।

বার বার বলা হয়েছে বিষয়টি গবেষণার দাবি রাখে। ভালো কাজের ফল দেয়া হয় কীভাবে? স্বীকৃতি দিয়ে। অনুষ্ঠানটি শুধু তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে আজিজসহ সে গ্রামের অনেকেই যখন এই ফর্মূলাতে ভাল ফল পাচ্ছে তখন কর্তৃপক্ষ বিষয়টা নিয়ে ভাবুক। যদি আজিজ ফর্মূলা সঠিক হয় তাহলে আমাদের বেঁচে যাবে অনেক টাকা। এই চাওয়াটা কি উদ্ভট কিছু? গবেষণা ছাড়া লেখক কি করে আজিজ ফর্মূলাকে বাস্তববিবর্জিত ও অবৈজ্ঞানিক বললেন তা বোধগম্য নয়।

লেখকের পরের অংশের সাথে আমি একমত পোষণ করছি। 'মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন নানা রকম বিকল্প খোঁজে'। বাংলাদেশের এমন কোন কৃষক নেই যিনি ওই মাটির কারিগরকে চেনেন না। কি কাজের জন্য তাঁকে চেনেন তাও এক বাক্যে বলে দিতে পারবেন। পক্ষান্তরে, লেখককে বাংলাদেশের কজন চেনেন তার কাজের জন্য একবার ভাববেন কি? কথায় আছে- বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়।

লেখক পরের অংশের চিন্তা-ভাবনা দেশের কল্যাণের জন্য হলেও প্রথমাংশের খোঁড়া যুক্তিগুলো এবং আক্রমণাত্মক একটা ভঙ্গি সে চিন্তা-ভাবনাকে ম্লান করে দেয়। ১৯৮২ সাল। অনুষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। যখন এমন একটা অনুষ্ঠানের কথা কেউ ভাবতেও পারতো না। একটানা ১৪ বছর প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি।

এ সময়ের মধ্যে দেশের কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লবের জন্ম দেয়। গতানুগতিক ধারার বাইরে মাটি ও মানুষ উপস্থাপনা সাংবাদিকতায় অনুসরণীয় এক মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। দুরদর্শীতাসম্পন্ন ও শক্তিশালী উপস্থাপনায় এক এক করে প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটির -এর ৫৮৮টি পর্ব। মাটির কারিগরই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কৃষি ও কৃষকের অনুষ্ঠানকে ভদ্র সমাজের ড্রইং রুমে নিয়ে যান। কৃষকের নানা সমস্যা সমাধানকল্পে পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা।

কৃষি ও কৃষকের জন্য তিনি ছুটে গেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কৃষকের সুখ-দুঃখ ধারণ করেছেন ক্যামেরাতে। তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থেকেছেন সব সময়। কী করলে দেশের উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকের উন্নতি হবে তার জন্য বারবার ছুটে গেছেন বিদেশের মাটিতে। মাটির কারিগরই দেশের সবগুলো গণমাধ্যমে কৃষি সংবাদ প্রচারে নিয়েছেন অগ্রণী ভূমিকা।

কালার চার্ট, ড্রাম সিডারের কথা যখন তিনি ভেবেছেন তখন আমাদের দেশের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা কল্পনা করতেও পারিনি বিষয়টি। কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের জন্ম যাঁর হাত ধরে তাঁকে নিয়ে এ ধরনের সংবাদ প্রচার জাতি আশা করে না। যে মানুষটি জীবন উৎসর্গ করেছেন কৃষি ও কৃষকের জন্য তাঁকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূন সংবাদ প্রচার আজ নানা কৃষকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে তাঁর কাছে দায়বদ্ধ অনেকখানি। ঋণ শোধের স্পর্ধা আমার নেই।

শুধু একটি প্রশ্ন- এ ধরনের সংবাদ প্রচারে যে গণমাধ্যম অনুপ্রাণিত করে তার বস্তুনিষ্ঠ কতটুকু, গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা নিয়ে!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।