আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা মায়ের ভৎর্সনা

http://aloukikhasan.blogspot.com

ছোটবেলায় পড়াশোনা না করার জন্য বাবার চেয়ে মা-র হাতে বেশি মার খেয়েছি। ছোটখাট চড়থাপ্পড়, কানমলা, চুলটানা এগুলো অতি সাধারণ মারপিট ছিল। একটু বড় গোছের মার দিতে ব্যবহার করা হতো বিছানার ঝাড়ু, ডাল ঘুটনি, স্কেল, র‌্যাকট, হ্যাঙ্গার, নিজের হাতে মেলা থেকে কেনা কাঠের তলোয়ার। সন্ধ্যার পরে দেরি করে বাসায় ফেরা, পড়ার টেবিলে গল্পের বই পড়া, নোট লেখার ভাব নিয়ে গল্প, কবিতা লেখা, বই খোলা রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে থাকা এসব বিষয়ে ধরা খেলেই ওইসব কারুকার্যপূর্ণ মারধোর কপালে জুটত। বকাবকি বিষয়টা সবক্ষেত্রেই কমন ছিল।

নিরবে সব সহ্য করতাম শুধু একটা বিষয় ছাড়া - তুলনামুলক বিশ্লেষণ। এই বিশ্লেষণগুলোর প্রতিক্ষেত্রেই আমার অনেক কিছু বলার থাকলেও মুখে না বলে মনে মনে আওড়াতাম। যেমন, * পাপ্পুরে কোনোদিন দেখছস সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরতে? - (হ, দিনের বেলায় কই কই যে যায় সেইটা কি তুমি জানো?) * সুমন যখন ইঞ্জিনিয়ার হইব তখন তুই ওর কামলা হবি। - (এ্যাহ। গতকালই তো আমারটা দেইখা অংক মিলাইল) * কায়সারের বই এখনো নতুন।

দুইমাস গেল না, তোরটা ছিড়া যায় ক্যামনে? - (ওর মতো কিপ্টা আর আছে নাকি) * মিজানরে ওর মা কোনো টাকা দ্যায় না। তরে তো প্রতিদিন দুই টাকা দিই। পড়স না ক্যান? - (মিজান ওর বাপের পকেট থেকে টাকা চুরি করে) * মেহেদীরও এতো গল্পের বই নাই। তুই এতো বই কই পাস? - (এগুলা মেহেদীরই বই। আমি পড়তে আনছি) * শাকিলের মতো কালকে থেকে দুপুরবেলায় ঘুমাবি।

- (আর স্কুলে সবাই আমারে ভোন্দা বলুক, কাভি নেহি) * মারুফের হাতের লেখা এতো সুন্দর। তোরটা কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং ক্যান? (দেয়ালপত্রিকায় আমার গল্প ছাপা হয়, মারুফের না) আরো কষ্টের ব্যাপর ছিল তিলতিল করে জমা করা নিজস্ব সম্পদের প্রতি তাদের অবর্ণনীয় ধ্বংসযজ্ঞ। বুক ভেঙ্গে যেত তাদের নিষ্ঠুরতায়। যেমন, * সমস্ত গল্পের বই ছিঁড়ে ফেলা * স্ট্যাম্পের খাতা লুকিয়ে ফেলা * র‌্যাকেট ভেঙ্গে ফেলা (নিরূপায় হয়ে কটকটিওয়ালার কাছে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম) * ম্যাচবাক্স/ সিগারেটের কভারগুলো পুড়িয়ে ফেলা * ফুটবল কেটে ফেলা * ফুটবল বুটজুতা হাড়িপাতিলওয়ালার কাছে বিনিময় * চুইয়া/ঢাইসহ সমস্ত মার্বেল ঝিলে ফেলে দেয়া। আরেকটা বিষয় ছিল।

আমার কর্মজীবন নিয়ে তাদের শঙ্কাপ্রকাশ। বিভিন্ন সেক্টরে তারা আমাকে কল্পনা করতেন। তাদের আশা ছিল ছেলে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবেন (দুর্ভাগ্য তাদের, এমন একটা পেশায় আছি যেটা তাদের সৃষ্টিশীল কল্পনাতে কোনোদিন আসেনি)। ওই দুটো ছাড়াও আরো যেসব পেশায় তারা আমাকে ভেবেছনে সেগুলো হলো, * কালকে থেকে রাস্তায় ঠেলাগাড়ি চালাবি। * এরচেয়ে ভালো রিক্সা চালায়া টাকা ইনকাম কর।

* কালকেই তোরে গ্রামে পাঠাইয়া দিমু। হালচাষ কইরা খাবি। * রংবাজ হইছস? খেলতে গিয়া মারামারি করলি ক্যান? * পড়াশোনা যখন ভালো লাগে না বাজারে মিন্তিগিরি করতে পারস না? * ঠিক মতো না পড়লে হাতপা ভাইঙ্গা দিমু। ভিক্ষা কইরা খাইবি। এরকম ভয়াবহ কথাবার্তা এই কান দিয়ে ঢুকিয়ে ওই কান দিয়ে বের করে দিতাম।

যদিও জানতাম এগুলো শুধুই কথার কথা। স্নেহশীল বাবা-মা এসব কোনোদিনই করতে পারবেন না। তখন বুঝতাম না কিন্তু এখন মনে হয়, এসব বলার পর হয়তো পাশের রুমে গিয়ে মা ফুঁপিয়ে উঠতেন। কারণ মার খেয়ে টেবিলে আমি তখন অশ্রুসজল হয়ে গুনগুন করে পড়ছি। বাবা-মা তোমাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।

** ব্লগার বন্ধুরা আপনাদের কথাগুলোও বলুন **

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.