আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলাম আযম ভাষাসৈনিক ছিলেন না

'কত রঙ্গ জান'রে যাদু, কত রঙ্গ জান। ' সেই কোনকালে কবি লিখেছিলেন এমনি ব্যঙ্গাত্দক কবিতাখানি। আজও তার উদ্ধৃতি প্রয়োজন হয় এ দেশেই। কিছু নির্লজ্জ তথাকথিত রাজনৈতিক ক্ষেত্রের ধর্মব্যবসায়ী কিংবা তাদের দোসরদল মাঝে মধ্যেই মানুষকে বিভ্রান্ত এবং জল ঘোলা করার জন্য বর্ণচোরাদের মতো নিজেদের নামের আগে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কতিপয় কল্পিত 'বিশেষণ' ব্যবহার করে। তবে আমাদের এই দেশে এমন বেহায়া যে কেউ কেউ আছেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

কারণ সেই ব্যক্তিরা যখনই ধর্মব্যবসায়ের লভ্যাংশ ঘাটতি দেখেন তখনই নামের সঙ্গে কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের দাম বাড়াতে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল গ্রহণ করে। আরও কেউ কেউ বিপদে পড়লে অথবা তেমন কোনো আশঙ্কা দেখলে যুৎসই শব্দ বের করে নিজের পক্ষের সামনে বসিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমও নানা শব্দ ব্যবহার করে নিজেকে 'মহান' বানানোর প্রক্রিয়ায় লিপ্ত। কিন্তু কোনো শব্দই মানুষ গ্রহণ করেননি। এর মধ্যে দুটি শব্দ আমি জানি অনেকেরই মতো, শব্দ দুটি হলো_ ভাষাসৈনিক এবং মজলুম জননেতা।

কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, কেউ ওই শব্দ দুটির যোগ্য মনে করেননি তাকে। বরঞ্চ গোলাম আযমকে মিথ্যাচারী, ইতিহাস বিকৃতকারী, আত্দপ্রচারে সিদ্ধ এবং পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর খাদেম হিসেবেই জানেন। জনগণের স্মৃতি অত্যন্ত প্রখর, তাই তাদের কাছে গালগল্প করে পার পাওয়া যাবে না। এই গোলাম আযম গংয়ের দল হলো জামায়াতে ইসলামী, যার নেতা ছিলেন আবুল আলা মওদুদী। যাকে কোরআনের ভুল ব্যাখ্যাকারী হিসেবে জানে এই উপমহাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ।

নিজের অপব্যাখ্যাকে জনগণের সামনে উপস্থিত করে নিজেকে আর নিজের ধর্মীয় দলকে মহিমান্বিত করতেই তিনি সবসময় চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু ধর্মপ্রাণ সরল মানুষের সাময়িক বিভ্রান্ত করার সুযোগ পেলেও তা স্থায়ী হয়নি। আমাদের মাতৃভূমি এই বাংলাকে দখল করে ঔপনিবেশিক সামন্তবাদী শাসকগোষ্ঠী বাংলার আপামর মানুষের প্রাণের দাবি এবং এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে এই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সবসময় অভিন্ন ভূমিকা পালন করে এসেছে। অথচ মওদুদী অনুসারী গোলাম আযমরা জামায়াতের পতাকাতলে এক সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছিল কিন্তু পরে সেই পাকিস্তানেরই পাবন্দ হয়ে গিয়েছিল।

পাবন্দইবা বলি কেন, একেবারে বুদ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের জজবায়। সামরিক শাসনকর্তা জেনারেল আইয়ুব খানের বিরোধিতা করায় মওদুদীর ফাঁসির নির্দেশ হয়েছিল। জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সামরিক জান্তা। কিন্তু এই জামায়াত এবং তার পূর্ববঙ্গীয় বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠী সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে শুধু আত্দসমর্পণই করল না, একেবারে তাদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাকে বিরান ভূমিতে পরিণত করার মহাপরিকল্পনার সহযোগী পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। গণহত্যার জল্লাদ ও কসাই হিসেবে ভ্রাতৃহত্যায় আত্দনিয়োগ করেছিল জামায়াতীরা আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে।

এই তো সেই গোলাম আযম যিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নূরুল আমীনসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নেতাদের নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের পাকিস্তানি জল্লাদ প্রধান ও হত্যার পরিকল্পনাকারীর সঙ্গে সলাপরামর্শ করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামকে ধ্বংস করার মতলব এঁটেছিল। এই সেই গোলাম আযম যিনি তার তাবৎ সহযোগী ফেলে রেখে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান পাড়ি দিয়ে নিজের জান বাঁচিয়েছিলেন। এই সেই গোলাম আযম যিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে জেনারেল জিয়া যখন প্রধান সামরিক শাসক সেই সময়ে এই মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশে লাখো শহীদের রক্তের উপর দিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি পেয়েছিলেন। জিয়ার স্ত্রী খালেদা সেই গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বই দিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেই সুযোগে জামায়াত পুনর্গঠিত হওয়ার মওকা পেয়ে যায় এবং গোলাম আযমই জামায়াতের আমির পদে পুনর্বহাল হন।

কিন্তু এই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী বা হানাদার বাহিনীর গেহ্রা দোস্ত্ খুব বেশিদিন ওই পদে টিকতে পারেননি নিজামী-মুজাহিদ নেতৃত্বের কাছে। নতুন প্রজন্ম, যারা একাত্তরে ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন, আলবদর বাহিনীর অধিকর্তা হয়ে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ, নিপীড়ন ও হত্যার অপকর্মটি করেছিলেন, তারা দলীয় নেতৃত্ব দাবি করলে গোলাম আযমকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। এর পর থেকে গোলাম আযম প্রায় লোক চোখের অগোচরেই ছিলেন, তাকে আর কোথাও তেমন আবিভর্ূত হতে দেখা যেত না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নিমর্ূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা বিস্তৃত হয়ে গণআন্দোলনে রূপ নিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশনের সামনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশাল জনসমুদ্রে সেদিন বসেছিল গণআদালত গোলাম আযমের বিচারের জন্য।

সেই প্রতীকী বিচারালয়ে গোলাম আযমের ফাঁসি হয়েছিল। গণআদালত যেহেতু প্রতীকী, সে কারণে আইনগতভাবে গণআদালতের রায় কার্যকর করার দায় এই কমিটির ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সেনা শাসনে জিয়া-এরশাদের ক্ষমতালিপ্সার শিকারে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। পরে যখন 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে এসেছে বলে দাবি করলেও কোনো দল বা জোট এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের 'সাহস' দেখাতে পারেনি। ফলে গোলাম আযম ও তার পাকিস্তানি দলের বাংলাদেশ শাখাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করার মওকা পেয়ে যায়।

এই নতুন 'রাজনৈতিক যাত্রা' পথে তারা যে সহিংসতার নির্মম কর্মকাণ্ড শুরু করে হত্যা, অপহরণ, গুম, রগকাটা থেকে শিক্ষায়তনে তাদের বিরোধীদের নানাভাবে নির্যাতন করা নিয়মিত বিষয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ইসলামী ছাত্র সংঘ ইসলামী ছাত্রশিবির নাম নিয়ে অপকর্মের মূল দোসর হিসেবে কাজ করতে থাকে। সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে দলীয় প্রধান গোলাম আযমকে প্রথমে 'ভাষাসৈনিক' এবং পরে 'মজলুম জননেতা' হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াসে উন্মাদ হয়ে প্রচার চালাতে থাকে। অথচ দুটি বিষয়ে গোলাম আযমের সম্পৃক্ততা একেবারেই ছিল না। বহু মিথ্যাচারের মাধ্যমে গোলাম আযমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং তার কৃতিত্ব জাহির করার নানা কৌশল নিয়েছিল জামায়াত।

গোলাম আযমকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান আর তার বেগম সাহেবা '৯২ সালে তাকে এ দেশের নাগরিকত্বই দিয়ে বসলেন। তখন তার কৃতিত্বে 'ভাষাসৈনিক'_ গৌরবোজ্জ্বল অভিধা ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালায় বটে কিন্তু জনগণ গ্রহণ করেননি। কারণ জীবনভর কৃতকর্ম তা সাক্ষ্য দেয় না।

১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকা সফরে এলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রামী ছাত্রসমাজ একটি দাবিনামা বা স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই স্মারকলিপিতে 'বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা' করার দাবি উত্থাপন করেছিল এবং সেই স্মারকলিপি পাঠ করানো হয়েছিল গোলাম আযমকে দিয়ে।

ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ_ ডাকসুর ভিপি ছিলেন শ্রী অরবিন্দ বসু আর গোলাম আযম ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তাই ছাত্রদের মধ্য থেকে কয়েকজন ধুয়া তুললেন, লিয়াকত আলী খানের সামনে অরবিন্দু বসুকে দিয়ে স্মারকলিপি পড়ানো ঠিক হবে না। কারণ তিনি হিন্দু। একজন মুসলমানকে দিয়ে পড়াতে পারলে ভালো। না হলে লিয়াকত আলী মনে মনে ক্ষেপে যেতে পারেন।

তাই সিদ্ধান্ত হলো, গোলাম আযমকে দিয়েই পড়ানো হবে। এই তার 'ভাষাসৈনিক' হিসেবে অবদান। এরচেয়ে বেশি আর কিছু তার অবদান ছিল না। কোনোভাবে জড়িতও ছিল না। তাকে ভাষাসৈনিক বলে প্রচার করেছিল গ্রহণযোগ্য করার জন্য, কারণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলন এবং সে সংগ্রামের সংগঠক-কর্মীরাই প্রধানত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করেছিলেন।

জামায়াত বা গোলাম আযমরা তো পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করেনি, বরঞ্চ বিরোধিতা করেছেন।

নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্রাইটেরিয়া হিসেবে গোলাম আযমকে ভাষাসৈনিক বানানোর মতলব হাসিল করতে পারেনি। কারণ গোলাম আযম নিজেই ভাষা আন্দোলন ভুল ছিল বলে দাবি করেছিলেন। ১৯৭০ সালের জুন মাসে দেওয়া বক্তব্যে গোলাম আযম 'ভাষা সংগ্রাম করাটাই ভুল হয়েছিল' বলে মন্তব্য করেন। দৈনিক আজাদ পত্রিকায় এ বক্তব্য প্রকাশিতও হয়েছিল।

তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও থাকেন, তবে এই বক্তব্যে কি তিনি তার অতীত কাজ বা অংশগ্রহণকে 'ভুল' বলে জনসম্মুখে জানালেন না? যদি তাই হয়, তবে আবার তাকে নতুন করে 'ভাষাসৈনিক' সাজানোর এ অপকৌশল কেন? আজ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে হত্যাকারী হার্মাদ-হায়ানাদের দোসর-দালাল এবং কসাই-জল্লাদদের সর্দার হিসেবে কাঠগড়ায় যখন দাঁড় করানো হয়েছে, সবকটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে ৯০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে তখন আবার ভাষাসৈনিকের সেই পুরনো ধুয়া নতুন করে তোলা হচ্ছে রায় বাস্তবায়ন রোধ করার মতলবে। গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধ মামলায় দেওয়া রায় জনগণ গ্রহণ করেননি, তাদের দাবি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি_ ফাঁসির। কিন্তু বিচারকমণ্ডলী গোলাম আযমের বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে ফাঁসির হুকুম দেননি। স্বীকার করেছেন, ফাঁসির হুকুম দেওয়ার মতোই অপরাধ তার।

গোলাম আযমকে 'দেবতা' সাজানোর রূপকল্পে একবার 'মজলুম জননেতা' বলেও জাহির করার কৌশল করেছিল চেলাচামুণ্ডারা।

কিন্তু জনসাধারণ তা গ্রহণ করেনি। মজলুম জননেতা বলতে এ দেশে এখনো একজনকেই বোঝায়, তিনি হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। যিনি ছিলেন জনগণের লড়াই-সংগ্রামের সাথী ও নেতা। তাই জনগণ তাকে 'মজলুম জননেতা' অভিধায় আখ্যায়িত করেছিল। সেই বিবেচনায় গোলাম আযম কি করে কোন তথ্যের ভিত্তিতে 'মজলুম জননেতা' হতে পারেন? তিনি তো তার দল জামায়াতকে নিয়ে এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন এবং অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনারই বিবোধিতা করে এসেছেন।

শুধু কি তাই? একাত্তরের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দালালি করে জল্লাদের ভূমিকায় নেমে কসাইয়ের মতো নৃশংস হিংস্রতায় বর্বর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন। গণহত্যার সঙ্গে সঙ্গে অগি্নসংযোগ লুটতরাজ, সর্বোপরি মা-বোনদের সম্ভ্রম ইজ্জত তুলে দিয়েছিল ওই হানাদার বাহিনীর হাতে। বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারীদের একজন হয়ে ভাষাসৈনিক অথবা মজলুম জননেতা সাজার সাধ কোনো দিনও পূরণ হবে না। এ দেশের সাধারণ মানুষ কোনো দিন তাদের গ্রহণ করেনি। সেই প্রমাণ কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন।

যে নির্বাচনে আপামর জনসাধারণ এবং নতুন ভোটার (প্রায় পৌনে দুই কোটি) ক্ষোভ-বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত শিবিরের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছিল। চলতি মহাজোট সরকার তারই উত্তরাধিকার।

সুপ্রিয় পাঠক, এমন ইতিহাস তৈরি করে যারা নিজেদের জনগণের অংশ মনে করে, ওরা জানোয়ারেরও অধম এমন দৃষ্টান্ত তো পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে। ওদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক কুচক্র।

ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কুৎসিত, গর্হিত, মানবতাবিরোধী কুকর্ম-অপকর্ম এবং মানুষ হত্যা করার সময় কি ওরা_ শিশু কি বৃদ্ধ, নারী কি পুরুষ, সুস্থ কি অসুস্থ বিচার করে পাকিস্তানিদের স্বার্থ উদ্ধারে নৃশংস-নির্মম কসাই-জল্লাদের ভূমিকা নিয়েছিল? এসব হিংস্র পাশবিকতার দৃষ্টান্ত যারা স্থাপন করেছে, সেই বিশ্বাসঘাতক কুলাঙ্গারদের অধিনায়ক ছিল গোলাম আযম এবং তারই সাগরেদ ও চেলা-চামুণ্ডা ছিল নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, আলীম, চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশারাফুজ্জামান, পরে সাঈদী।

এই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক চক্র সুপরিকল্পিত উপায়ে এই চক্রান্তের জাল বিছিয়ে ধর্মকে হাতিয়ার করে নিজেদের মুরোদ দেখানোর চেষ্টা করছে। এদের তো রক্তে অর্জিত বাংলাদেশে থাকারই কথা ছিল না। তাহলে কেন তারা থেকে গিয়েছিল? ওদের পেছনে এক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনিদের মদদ ছিল না? এত তাগত জামায়াত-চক্রের আসে কোত্থেকে? আজও সেই পরাশক্তির প্রচ্ছন্ন মদদে এবং দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে অথবা জ্ঞানপাপী হিসেবে জেনেও না জানার ভান করে ওই হিংস্র মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, সামনে নির্বাচনকে লক্ষ্য করে? হায়রে দুর্ভাগা দেশ।

এত রক্তের বিনিময়ে মুক্তি অর্জন করেও বুঝতে চায়ছে না গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির কি করণীয়। মহামান্য সুউচ্চ আদালত কোনো কোনো বিষয়ে রায় দিচ্ছেন এবং তাতে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখছেন বিচারকরা। তাকেও গ্রাহ্য করছেন না তারা, এমন তো দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক নানা কেলেঙ্কারি, ঘুষ-দুর্নীতির অবাধ বাণিজ্য মিলে কষ্টার্জিত মুক্ত বাংলাদেশ ও দেশের মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে নৈরাজ্যের দিকে। মানুষের মনে হতাশা বাড়ছে একথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য, 'তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে। ' অর্থাৎ জনগণের অর্জিত শক্তিকে মানুষ আজ খুঁজছে।

স্পষ্ট করে জানাতে চাই, গোলাম আযম ভাষাসৈনিক নয়। ১৯৪৮ সালে ডাকসুর জিএস হিসেবে লিয়াকত আলী খানের সামনে স্মারকলিপি পড়েছিল মাত্র। যাতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ছিল। কিন্তু এই পড়ার পর গোলাম আযম কি করেছিল, ইতিহাস ঘাঁটলেই তার প্রমাণ মিলবে। সত্যিকার ভাষাসংগ্রামী নেতৃত্ব প্রদানকারী ভাষা-মতিন এখনো জীবিত।

অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ইতিহাস রচনাকারী যোদ্ধা ডা. সাঈদ হায়দার, ডা. আহমদ রফিক আরও অনেকেই বেঁচে আছেন। আমরা আছি। মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি করলে পালে হাওয়া লাগবে না। সাবধান।

লেখক : ভাষাসৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.