আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরঙ্গ মথুরা : শিল্পমন্দিরে প্রথম কড়া নাড়া

আত্মমাঝে বিশ্বকায়া, জাগাও তাকে ভালোবেসে

তোমাকে দেখার দারুণ ইচ্ছে দয়াল। তোমাকে কি দেখা যায়! তোমাকে কি দেখা যায় যমুনার জলে- কোনও তীরের বিস্তৃত ললাট জুড়ে স্ফীতমান, তোমাকে দেখেছিলাম- পাকা ধানক্ষেতে কাকতাড়ুয়ার সাথে কথা কইবার বেলা; .....................................................প্রিয় মক্ষিকা মরুপথ কবি রাজীব আর্জুনির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তরঙ্গ মথুরা’র প্রথম কবিতা প্রিয় মক্ষিকা মরুপথ। মূলত প্রারম্ভের এই কবিতা দিয়েই তরুণ এই কবির কাব্যচিন্তা এবং গন্তব্যের একটি আভাস পাওয়া যায়। সৌন্দর্যের জন্ম মানুষের মনোভূমে, চেতনায়। দেখা যায়, ছোঁয়া যায় কিন্তু উপলব্ধির জলে ভিজেই বস্তু কিংবা বায়বীয়র সুন্দর হয়ে ওঠা।

কবিতা সেতো সৌন্দর্যকুসুম, কে তা স্বীকার করবে না। বর্ণের বিন্যাসে সাজানো শব্দ দিয়ে নির্মাণ হয় কবিতার ভৌত অবকাঠামো, কিন্তু কবিতার মৌলিক প্রণোদনা অথবা নির্যাস থাকে পাঠকের মনের তন্ত্রীতে, কবি যার স্রষ্টা। কবিতার কোথাও সৌন্দর্য চাপিয়ে দিয়ে মূর্তমান করেন না কোনো কবি, তিনি সূত্র ধরিয়ে দেন মাত্র। অক্ষরচিত্রের হাত ধরে পাঠক হাঁটে গন্তব্যের নির্দিষ্ট পথে। তবে সেই পথটুকু যথাযথভাবে দেখিয়ে দেয়াই প্রকৃত কবির কাজ বলে বিবেচনা করি।

আর এই অর্থে রাজীব আর্জুনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থেই সক্ষমতার ছাপ রেখেছেন। গাছ বড় স্বার্থপর- নক্ষত্র রচনা করে বাল্মীকির মতো! লতা যে জড়িয়ে থাকে গাছ- তার নাম কি পাতাবাহার সমর সেন অথবা জীবনান্দ দাশ? .............................তরঙ্গ মথুরা রাজীব আর্জুনি তার কবিতায় সরাসরি পাঠকের কাছে ধরা দেন না দিতে চান না। আর তাই পুরাণ, চিত্রকল্প, প্রতীক আর অপ্রচল শব্দের ব্যবহার তার কাব্যের অস্ত্র। তবে তা আরোপিত মনে হয় না কখনো। ভীষণ স্বচ্ছন্দ কিংবা অনায়াসে বিষয়গুলো তার কাব্যে স্থান করে নেয়, যাকে অনিবার্য বলে মেনে নিতে হয়।

রাজীবের কবিতায় জীবনান্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, উৎপল কুমার বসুর প্রভাব অনেকাংশেই বর্তমান। অবশ্য জয় গোস্বামী এবং রণজিৎ দাশের দূরায়ত চিত্রও দুর্লক্ষ নয়। অনুজের ওপর অগ্রজের এই ছাপ আমাদের বংশগতি কিংবা পরম্পরাকেই মনে করিয়ে দেয়। এ অলংঘণীয়। শিল্পের জন্মলগ্ন থেকেই এর ধারাবাহিকতা।

ব্যক্তিগত বিবেচনায় আমি একে ইতিবাচক বলেই মনে করি। তবে রাজীব আর্জুনি তার কবিতায় অগ্রজের প্রভাবে পুরোপুরি নিমজ্জিত নন। নিজস্ব একটা স্টাইল নির্মাণের প্রয়াস তাঁর ‘তরঙ্গ মথুরা’য় স্পষ্ট। তার কয়েকটি কবিতার কিছু পংক্তি পাঠে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। ঘরের কোনো সমুদ্র থাকে না পাখি কেনার বিশ্বাস থাকে না ঘরের।

...........................পায়রা কিংবা মাংস ছাড়াও তুমি অনেক সুস্বাদু তবু মাংস মাংস বলে নীল হবার আগেই বলছো যে সাদা হলো প্রিয় হবার প্রতীক উপমা। .............................মাংস অথবা মহাকাশে তারাগুলো এমন সহজ! চরাচরে এমন সহজ থাকে না তারারা, ...................মহাকাশে তারাগুলো এমন সহজ ওপরের কাব্যাংশ পাঠে কবি রাজীব আর্জুনির স্বাতন্ত্র্য এবং বিষয় বৈচিত্র্যও আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সমসাময়িক তরুণ অধিকাংশ কবির কবিতায় এই নিজস্ব ঢং তৈরির চেষ্টা শুধুমাত্র শব্দের ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ লক্ষ্য করি। অথচ রাজীব তার কবিতায় শব্দের পাশাপাশি বিষয়ের বিচিত্রতায় নিজেকে আলাদা করে চেনাতে চাইছেন। এখানেই তার প্রকৃত স্বার্থক প্রচেষ্টা।

তবে তাঁর কাব্যে দুর্বোধ্যতার একটা আবরণ লক্ষ করা যায়। পাঠকের সঙ্গে তার যোগাযোগ সরাসরি নয়। অথচ শিল্পের বারান্দা পেরিয়ে শিল্পের ঘরে আশ্রয় নেয়া সব কিছুতে পাঠক কিংবা ভোক্তার একচ্ছত্র অধিকার অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এই জায়গায় তাকে একগুঁয়ে এবং কঠোর বলেই মনে হয়। তিনি চান তার কবিতার উপযুক্ত পাঠক।

পাঠকের উপযুক্ত কবিতা তার গন্তব্য নয়। যার ফলে তার কবিতা হয়তো অসংখ্য পাঠকের কবিতা হয়ে উঠবে না, শুধু শিল্পের দায় মিটিয়েই যাবে। তবে কবি রাজীব আর্জুনির গন্তব্য বহুদূর, তাঁর কাব্য পাঠে এমন বিশ্বাসই পাঠকের মনে স্থান করে নেবে। সমসাময়িক কালে স্বতন্ত্র অবস্থানের দাবিদার এই কবি তার লক্ষ্যে অটুট থাকলে কাব্যের মন্দিরে একদিন তারও পূজো হবে এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। ‘তরঙ্গ মথুরা’ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

মস্তক প্রকাশনী থেকে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ইমরান আহমেদ । প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৬। মনন মোর্শেদ’র চাররঙা প্রচ্ছদে ৪২টি কবিতায় সাজানো গ্রন্থটির মূল্য-৫০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ বাঁধাই সবকিছুতে যতেœর ছাপ থাকলেও কিছু কবিতায় শব্দ ভেঙে যাওয়ায়, ছাপা না হওয়ায় পাঠে এবং বোঝায় কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কবিতায় একটি শব্দের ওলোট-পালট বিন্যাসে পুরো কবিতার আবেদন নষ্ট হয়ে যায়।

তাই এই স্পর্শকাতর বিষয়ে কবি এবং প্রকাশক উভয়ের আরো সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিল। কবি রাজীব আর্জুনির দীর্ঘ শিল্পজীবন কামনা করি। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কবি রাজীব আর্জুনির নতুন কাব্যগ্রন্থ ‌'জলের মৈনাক প্রকাশিত হয়েছে। শুদ্ধস্বর প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিবু কুমার শীল।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.