আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাতাল

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

মাতাল পেঁচার চোখ বেয়ে নেমে আসে মায়াবী সন্ধ্যা। সোডিয়ামের আলোয় সাজে রূপসী নগরী। রাজপথে দ্রুত গতিতে ছুটে চলে কিছু যান্ত্রিক সরীসৃপ, চোখে তাদের ক্রুদ্ধ ফণা। ফুটপাত ঘেঁষে টলমল পায়ে হেঁটে চলছে এক উদভ্রান্ত যুবক। নেশায় বুঁদ হয়ে আছে, পুরো মাতাল।

হেডলাইটের তীব্র আলোয় ভীষণ বিরক্ত সে। মুখে নিয়মিত বিরতিতে অশ্লীল বাক্য বর্ষণ করে চলেছে। তার পরণে জিনস্। গায়ে ফতুয়া। ঘাড়ে ঝোলানো চটের ব্যাগ, মুখভর্তি অগোছালো দাঁড়ি।

কোনরকম টলতে টলতে ফুটপাত ছেড়ে গলির মুখে এসে দাঁড়ালো। মুখে তখনো গালির ফোয়ারা ছুটছে। একটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করছে। মাঝে মাঝে মেয়েটার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতায় গালিগুলো চীৎকারের মতো শোনাচ্ছে।

হঠাৎ পুলিশের তীব্র হুইসেলের শব্দ। এক টহল পুলিশ সামনে এসে তাকালো যুবকের মুখের দিকে। চিনতে পারলো। গলির শেষ মাথায় পুরোনো মেসের বাসিন্দা এই যুবক। অনেকদিন ধরেই সেখানে থাকে।

পুলিশটা যুবকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, “আজ কী মাল একটু বেশী পড়েছে? বোতল যে পুরোটাই খালি দেখছি। এতো রাতে রাস্তায় খিস্তিখেউর না করে মেসে যেয়ে ঘুমান। অন্য কেউ হলে চালান করে দিত রাস্তায় মাতলামি করার জন্য”। এই কথাগুলো বলে পুলিশটা পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাতাল যুবকটা পুলিশের কথা কানেই তুললোনা।

আবারো বকতে লাগলো, “নিকুচি করি তোর ভালবাসা- শালী, সতী-সাবিত্রী সেজে ঢঙ দেখাস! ভাল মানুষের মুখোশ পড়ে থাকিস! আমি তোর সব রঙ-ঢঙ ছুটিয়ে দেবো। তোর মুখোশটা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো, দেখে নিস্ হারামজাদী! আমায় ছেড়ে তুই কোথায় পালাবি? তোকে আমি খুঁজে বের করবোই। এতোদিন শুধু শুধু ন্যাকামি করেছিস, বলেছিস- 'ভালবাসি', 'ভালবাসি"। মিথ্যুক কোথাকার! নিকুচি করি তোর ভালবাসা”। আস্তে আস্তে গলার স্বর নেমে আসে মাতালটার।

বিড়্ বিড়্ করতে করতে ঢুকে যায় গলির ভেতর। ঠিক মেসের দরজার সামনে এসে সজোড়ে কড়া নাড়তে থাকে। ভেতর থেকে তেমন কোন সাড়া-শব্দ নেই। সবাই ঘুমিয়ে। কেউ দরজা খোলেনা।

অথচ একদিন সবাই তার জন্য অপেক্ষা করতো। আগ্রহ নিয়ে নতুন নতুন প্রেমের কবিতা শুনতো। সবাই বলতো “কবি”। সেই কবি দেখতে দেখতে একদিন “প্রেমিক” হয়ে গেল। এক মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেল।

তার কাছে সেই মেয়ে ছাড়া আর সবকিছুই তুচ্ছ। প্রেমই তার জীবনের সবকিছু। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ কবিতা লেখে, আর সে প্রেমে পড়ে কবিতা লেখাই ছেড়ে দিল। প্রেমের কারণে সেই যুবক এখন আর কবিতা লিখতে পারেনা। তার মুখে এখন আর কেউ কবিতা আবৃত্তি শোনেনা।

এখন কথায় কথায় শুধু সেই মেয়েটার গল্প। কবিতা লেখার সময় নেই তার। এভাবেই চলছিল। একদিন তার প্রেমময় জীবনে অকস্মাৎ কঠিন বজ্রপাত! যে মেয়ের জন্য সে পাগল সেই মেয়েটা হঠাৎ করেই তার জীবন থেকে সরে গেল। এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়ে গেল মেয়েটার।

যুবকের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। জীবন চলার পথ হঠাৎ করেই বাঁক নিল। সে আর কবিতা লেখেনা। কেউ আর তাকে কবি বলে ডাকেনা। সবাই এখন তাকে মাতাল-নেশাখোর বলেই ডাকে।

প্রতি রাতে সে মাতলামি করে। মাতাল হয়ে সেই মেয়েটাকে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করে। তার ভেতরের কবিতা লেখার চমৎকার শব্দগুলো হঠাৎ করেই যেন অশ্লীল সব বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কবির ভেতর এক ঘৃণ্য মাতাল বসবাস করতে থাকে। একটা সুন্দর জীবন হঠাৎ করেই যেন বদলে যায়।

মানুষ এভাবেই হয়তো কোন না কোন কারণে বদলে যায়। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন আর বার্ধক্যের গন্ডি পার হতে হতে এক একসময় এক এক রূপ ধারণ করে, খোলস পাল্টায়। কখনো সে কবি, কখনো সে প্রেমিক, কখনোবা মাতাল। অবশিষ্ট কিছু মানুষ চিরকাল শুধু মানুষ হয়েই থেকে যায়-বিভিন্ন পেশার মানুষ, বিভিন্ন জাতের মানুষ, বিভিন্ন চরিত্রের মানুষ। জগৎ সংসারের আনাচে কানাচে একক ও অনন্য সত্ত্বার সব মানুষ।

মানুষের ভীড়ে বিচিত্র সব মানুষ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।