আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া সাওয়াব না গুনাহ?



‎ অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া সাওয়াব না গুনাহ? -প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস) ভূমিকা অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি-কথাটা প্রায় ‎সকল মুসলমান জানে এবং মানে। যারা অর্থসহ বা বুঝে কুরআন পড়ে তাদেরও ‎প্রায় সবাই এটা বিশ্বাস করে যে, কুরআন না বুঝে পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি ‎হয়। ‎ না বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি-কথাটা কুরআনকে শুধুমাত্র ‎অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়ার অনুমতিই দেয় না বরং তা, না বুঝে কুরআন পড়াকে ‎উৎসাহিত করে। আর এই কথাটার প্রভাবে বর্তমানে সারা বিশ্বে কোটি কোটি ‎মুসলমান অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়ছে। আর তারা তা করছে এটা ভেবে ‎‎যে-‎ ‎১.‎ অর্থ ছাড়া পড়লেই যখন প্রতি অরে দশ নেকি পাওয়া যায়, তখন আর ‎কষ্ট করে অর্থ বুঝতে যাওয়ার দরকার কি ? ‎ ‎২.‎ অর্থ পড়তে বা বুঝে পড়তে গেলে, না বুঝে পড়ার তুলনায় একই সময়ে ‎কম অর পড়া হবে।

ফলে সওয়াবও কম পাওয়া যাবে। ‎ আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সকল মুমিন বা মুসলমানের ১ নং আমল বা ‎কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং শয়তানের ১ নং কাজ হচ্ছে কুরআনের ‎জ্ঞান থেকে মুমিন বা মুসলমানকে দূরে রাখা। অর্থাৎ ইসলামী জীবন বিধানে সকল ‎মুমিন বা মুসলমানের জন্যে সব চেয়ে বড় সওয়াবের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জন করা এবং সব চেয়ে বড় গুনাহের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করা ‎বা কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‎’পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মুমিনের ১ নং কাজ কোনটি এবং ‎শয়তানের ১ নং কাজ কোনটি’ নামক বইটিতে। ‎ না বুঝে কুরআন পড়ার অর্থ হচ্ছে, কুরআন পড়া কিন্তু তার জ্ঞান থেকে দূরে ‎‎থাকা।

তাই এ কথা বুঝা মোটেই কঠিন নয় যে, অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি কথাটা ইবলিস শয়তানের ১ নং কাজকে ‎‎দারুণভাবে সাহায্য করছে। সুতরাং কথাটি সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রতিটি ‎মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করি। ‎ বিষয়টি নিয়ে কুরআন ও হাদীস অনুসন্ধান করে যে তথ্য পেয়েছি, সেগুলো ‎মুসলমান জাতির নিকট উপস্থাপন করাই এ পুস্তিকা লেখার উদ্দেশ্য। আশা করি ‎তথ্যগুলো জানার পর সকল পাঠক জানতে পারবেন, অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়ার বিপে বা পে কী কী তথ্য কুরআন ও হাদীসে আছে। ফলে তারা অতি ‎সহজে বুঝতে পারবেন, অর্থ তথা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া কুরআন পড়লে গুনাহ ‎হবে, না সওয়াব হবে।

আর এর ফলে একজন পাঠকও যদি অর্থ ছাড়া কুরআন ‎পড়া ছেড়ে দিয়ে অর্থসহ বা বুঝে কুরআন পড়া আরম্ভ করে তবে আমার এ চেষ্টা ‎সার্থক হয়েছে বলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করব। ‎ ইসলামী জীবন বিধানে করণীয় কোন কাজের ব্যাপারে গুনাহ ‎হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ ও শর্ত ‎ ইসলামী জীবন বিধানে করণীয় কোন কাজের ব্যাপারে গুনাহ হওয়ার কয়েকটি ‎প্রধান কারণ ও শর্ত হচ্ছে-‎ কারণ -‎ ‎১.‎ কাজটি না করা। ‎ ‎২.‎ কাজটির বিপরীত কাজ করা। ‎ ‎৩.‎ আল্লাহ এবং রাসূল (স.) যে পদ্ধতিতে করতে বলেছেন, তাতে ‎‎গুরুত্বপূর্ণ ক্রটি রেখে কাজটি করা। কারণ, পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ বা ‎‎মৌলিক ত্র“টি থাকলে যে কোন কাজ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

‎ শর্ত ‎ ‎১.‎ ইচ্ছাকৃতভাবে উপরের তিনটি কারণ সংঘটিত হতে হবে। ‎ ‎২.‎ ওজরের জন্যে তথা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন আমল ছেড়ে দিলে বা তার ‎বিপরীত কাজ করলে গুনাহ হয় না যদি নিম্নের শর্তগুলো পূরণ হয়- ‎ ক. ওজরের গুরুত্ব ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হলে। ‎অর্থাৎ মৌলিক আমল ছাড়তে হলে অত্যন্ত বড় বা মারাত্মক ‎ওজর থাকতে হবে। আর অমৌলিক আমল ছাড়ার ব্যাপারে ‎‎ছোট-খাট ওজরও গ্রহণযোগ্য হবে। ‎ খ. মনে অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি থাকতে হবে এবং ‎তার পরিমাণ ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হতে ‎হবে।

এই অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখই প্রমাণ করে যে ব্যক্তি ‎ইচ্ছাকৃতভাবে বা খুশি মনে আমলটি ছাড়ছে না। ‎ গ. যে অবস্থার জন্যে আমলটি ছাড়তে হচ্ছে বা পালন করতে ‎পারা যাচ্ছে না তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টার পরিমাণ ‎‎ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হতে হবে। আর ‎‎চেষ্টাই প্রমাণ দিবে যে ব্যক্তি খুশী মনে বা ইচ্ছাকৃভাবে ‎আমলটি ছাড়ছে না, ওজরের কারণে অনিচ্ছকৃতভাবে ‎ছাড়ছে। কারণ, কোন বিষয়ের জন্যে ব্যক্তির মনে ‎অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি থাকলে তা থেকে উদ্ধার ‎পাওয়ার চেষ্টা সে অবশ্যই করবে। ‎ এই তিনটি শর্ত যথাযথভাবে পূরণ না করে এক বা একাধিক আমল যে ‎ব্যক্তি ছেড়ে দিবে ইসলামী জীবন বিধানে তাকে গুনাহ্গার বলা হয়।

আর যে ‎ব্যক্তি জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে, খুশি মনে ইসলামের কোন একটি আমলে ‎সালেহ ছেড়ে দিবে, সে কাফির বা মুনাফিক হিসেবে গণ্য হবে। বিষয়টি নিয়ে ‎বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ’পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি ‎অনুযায়ী মু’মিন ও কাফিরের সংজ্ঞা ও শ্রেণী বিভাগ’ নামক বইটিতে। ‎ না জানতে পারার কারণে কোন আমল না করলে গুনাহ্ হবে কিনা‎ ইসলামের করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোনগুলো, তা যেন কারো অজানা না থাকতে ‎পারে সে জন্যে-‎ ‎১.‎ কুরআন ও সুন্নাহ ঘোষণা করেছে, সকলের জন্যে সব চেয়ে বড় ‎সওয়াবের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং সব চেয়ে বড় ‎‎গুনাহের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকা। ‎ ‎২.‎ যাদের কুরআন ও সুন্নাহের জ্ঞান আছে তাদের জন্যে-‎ ক. সে জ্ঞান অন্যের নিকট পৌঁছানোকে একটা বড় সওয়াবের ‎কাজ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহ বারবার ঘোষণা করেছে। ‎ খ. গুরুতর কোন কারণ ছাড়া সে জ্ঞান অন্যকে না পৌঁছালে বা ‎‎গোপন করলে কঠিন শাস্তির ঘোষণাও কুরআন ও সুন্নাহ ‎বারবার দিয়েছে।

‎ তাই অজানা অবস্থায় ইসলামের করণীয় কোন কাজ না করলে বা নিষিদ্ধ ‎‎কোন কাজ করলে প্রত্যভাবে গুনাহ না হলেও পরোভাবে গুনাহ হয়। কারণ ‎ইসলামে কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করাই সব চেয়ে বড় গুনাহের কাজ। এই ‎পরো গুনাহ যাতে না হতে পারে সে জন্যেই- ‎ ‎১.‎ পৃথিবীর প্রথম মানুষটিকে নবী করে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ কোনটা ‎করণীয় এবং কোনটা নিষিদ্ধ, তা তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ‎ ‎২.‎ পৃথিবীর প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিকট আল্লাহ নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন ‎ ‎ (নহল:৩৬)‎ ‎৩.‎ ‎কোনটা করণীয় আর কোনটা নিষিদ্ধ, তা জানিয়ে কিতাব ও সহিফা ‎পাঠানো হয়েছে।

‎ তবে যে ব্যক্তি সুযোগের অভাবে লেখাপড়াই শিখতে পারেননি, তিনি যে ‎এই পরো গুনাহ্ থেকে বেঁচে যেতে পারেন, আর যিনি বড় বড় বই পড়ে নানা ‎বিষয়ে শিতি হয়েছেন কিন্তু কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেননি, তিনি যে ‎‎কোনভাবেই এই পরো (তবে মারাত্মক) গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবেন না। ‎তা সহজেই বুঝা যায়। ‎ ‎ আল-কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা ইসলামের সবচেয়ে বড় আমল বা ‎কাজ। তাই আল-কুরআনের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারেও উপরোক্ত কারণ ও শর্ত ‎অনুযায়ী গুনাহ হবে বা হয়। ‎ ইসলামের বিভিন্ন কাজ থেকে বিপথে নেয়ার শয়তানের ‎কর্মপদ্ধতি উপরের আলোচনার পর এ কথা অতি সহজে বলা ও বুঝা যায় যে, ‎ইসলামের করণীয় কাজ থেকে মুসলমানদের বিপথে নেয়ার জন্যে শয়তানের ‎ষড়যন্ত্রের প্রধান কৌশলগুলো হবে-‎ ‎১.‎ মুসলমানরা কাজটা যাতে না করে বা তার বিপরীত কাজ করে সে ‎জন্যে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা।

‎ এই পদ্ধতিতে মুসলমানদের বিপথে নেয়া একটু কঠিন। কারণ, আল্লাহ ‎ও রাসূল (স.) যে কাজটি করতে বলেছেন, সেটা সরাসরি না করতে ‎বললে বা তার বিপরীত কাজ করতে বললে, তা গ্রহণ করতে ‎মুসলমানরা সাধারণত দ্বিধায় পড়ে যায়। তবুও শয়তান খুব সূক্ষ্মভাবে ‎পদ্ধতিটা প্রয়োগ করেছে এবং অনেকাংশে সফলকামও হয়েছে। তাই ‎‎তো দেখা যায়, আজ অনেক মুসলমান ইসলামের অনেক মৌলিক ‎কাজও করা থেকে বিরত আছে বা অনেক মৌলিক কাজের বিপরীত ‎কাজ করছে। ‎ ‎২.‎ কাজটা আল্লাহ্ যে নিয়মে বা পদ্ধতিতে করতে বলেছেন এবং রাসূল ‎সা. যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন, তা থেকে ভিন্নভাবে করানোর জন্যে ‎সব ধরনের ষড়যন্ত্র করা।

‎ শয়তানের প্রথম ষড়যন্ত্রের কৌশল উপো করে যে সকল মুসলমান ‎ইসলামের কোনো কাজ করতে এগিয়ে যায়, এই দ্বিতীয় কৌশল খাটিয়ে সে ‎তাদের বিপথে নেয়ার চেষ্টা করে। এ পদ্ধতিটা খুব কার্যকর হয়। কারণ, ‎মুসলমানরা কাজটা করছে বলে খুশি থাকে। আর পদ্ধতিটা এমন সূক্ষ্মভাবে ‎ঘুরিয়ে দেয়া হয় যে, ভালো জ্ঞান না থাকলে তা ধরাও যায় না। যে কোনো ‎কাজের ফল (জবংঁষঃ) নির্ভর করে কাজটি করার পদ্ধতির উপর।

কাজটি ‎‎যেহেতু আল্লাহর পদ্ধতি অনুযায়ী হয় না, তাই ঐ কাজের দ্বারা আল্লাহ যে ফল ‎দিতে চেয়েছিলেন তাও ফলে না বরং শয়তান যে ফল চেয়েছিল, তাই ফলে। ‎ শয়তানের এই সূক্ষ্ম পদ্ধতির শিকার হয়ে বিশ্ব মুসলমানদের অধিকাংশই ‎বর্তমানে ইসলামের অনেক মৌলিক কাজও এমনভাবে করছে যেটা আল্লাহর বলা ‎ও রাসূল সা. প্রদর্শিত পদ্ধতি নয়। তাই, তারা ঐ কাজগুলোর ইহকালীন অপূর্ব ‎কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এর ফলে মানব সভ্যতাও ধীরে ধীরে ধ্বংসের ‎দিকে এগুচ্ছে। ঐ কাজগুলোর পরকালীন কল্যাণ থেকেও যে তারা বঞ্চিত ‎হবে,তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

‎ কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে নেয়া হচ্ছে শয়তানের এক নম্বর ‎কাজ। তাই এ কাজে সফল হওয়ার জন্যে সে তার ধোঁকাবাজির সকল পদ্ধতি ‎খাটাবে, সেটাইতো স্বাভাবিক। আর এখানেও সে অবিশ্বাস্যভাবে সফলকাম ‎হয়েছে, সেটাও তো অতি সহজে বুঝা যায়। ‎ বিপথে নেয়ার পদ্ধতিগুলো সহজে গ্রহণ করানোর জন্যে ‎শয়তানের সাধারণ কর্মকৌশল মুসলমানরা যাতে বিভিন্ন ধোঁকাবাজি সহজে গ্রহণ করে তার জন্যে শয়তান এক ‎অপূর্ব সাধারণ কৌশল প্রয়োগ করেছে। কৌশলটা কী তা সহজে বুঝতে হলে ‎কুরআন থেকে সৃষ্টির গোড়ার কিছু কথা জানতে হবে।

‎ আদম আ.কে সৃষ্টি করে আল্লাহ্ সকল ফেরেশতা ও জিন ইবলিসকে ডেকে ‎আদম আ.কে সিজদা করতে বললেন। সমস্ত ফেরেশতা সিজদা করল কিন্তু ‎ইবলিস নিজে আগুনের তৈরি তাই আদম আ. থেকে শ্রেষ্ঠ ভেবে অহংকার করে, ‎সিজদা করল না। আদেশ অমান্য করার জন্যে ইবলিসের প্রতি আল্লাহ্ রাগান্বিত ‎হলেন এবং তাকে অভিশপ্ত করে শয়তান হিসাবে ঘোষণা দিলেন। ইলিসের ‎সমস্ত রাগ তখন যেয়ে পড়ল আদম আ. এর তথা মানুষের উপর। কারণ ‎মানুষের কারণেই তাকে অভিশপ্ত হতে হল।

তাই মানুষকেও বিপথে নিয়ে ‎অভিশপ্ত করার সব ধরনের চেষ্টা সে করবে বলে ঠিক করল। শয়তানের এই ‎কথাটা কুরআনে এভাবে বলা হয়েছে- ‎ অর্থ: সে (ইবলিস) বলল, হে আমার রব, তুমি (আদমের মাধ্যমে) আমার যে ‎সর্বনাশ করলে, তার শপথ করে বলছি, পৃথিবীতে পাপ কর্মকে আমি মানুষের ‎জন্য আকর্ষণীয় করে তুলব এবং তাদের সকলকে অভিশপ্ত করে ছাড়ব। ‎ ‏ ‏‎(আল হিজর:৩৯)‎ ইবলিসের এ কথার জবাবে আল্লাহ তাকে বলে দিলেন, তুই কেবল ধোঁকা ‎দিয়ে মানুষকে বিপথে নেয়ার চেষ্টা করতে পারবি। শক্তি খাটিয়ে তাদের বিপথে ‎নিতে পারবি না। ইবলিস তখন নিশ্চিত হল যে, ‘ধোঁকাবাজির মাধ্যমে’ তাকে ‎সকল কাজ করতে হবে।

আর এই ‘ধোঁকাবাজি’ মানুষ যাতে সহজে গ্রহণ করে ‎তার জন্যে একটা সাধারণ কর্মপন্থাও তাকে বের করতে হবে। ইবলিসের সেই ‎সাধারণ পন্থা (ঈড়সসড়হ ংঃৎধঃবমু) হচ্ছে, কল্যাণ, লাভ বা সওয়াবের লোভ ‎‎দেখিয়ে ধোঁকা দেয়া। কুরআন পড়ার ব্যাপারেও ইবলিস মুসলমানদের ‎সওয়াবের কথা বলে নানাভাবে ধোঁকা দিয়েছে। ‎ শয়তানের ধোঁকা নামক কৌশলের প্রথম প্রয়োগ ইবলিস তার ধোঁকার কৌশলের অর্থাৎ সওয়াব বা কল্যাণের কথা বলে ‎‎ধোঁকা দেয়া কৌশলের, প্রথম প্রয়োগ করে বেহেশতে, হযরত আদম আ. এর ‎উপর। পবিত্র কুরআনে বর্ণনাকৃত সে ঘটনাটি নিম্নরূপ-‎ আল্লাহ আদম আ. ও বিবি হাওয়াকে বেহেশতে থাকতে দিলেন এবং ‎‎যেখানে ইচ্ছা যেতে ও যা ইচ্ছা খেতে বললেন।

তবে একটা বিশেষ গাছের ফল ‎‎খেতে এমনকি তার ধারে কাছে যেতেও তাঁদের নিষেধ করে দিলেন। শয়তান ‎তখন বুঝতে পারলো, আদম আ. কে যদি তি করতে হয় তবে তাকে যে ‎‎কোনোভাবে ঐ নিষিদ্ধ গাছের কাছে নিতে বা তার ফল খাওয়াতে হবে। সে ‎তখন তার সাধারণ কৌশল অর্থাৎ কল্যাণের কথা বলে ধোঁকা দেয়ার কৌশল ‎প্রয়োগ করল। আদম আ. কে সে বলল, তুমি তো জানো না, আল্লাহ কেন ‎‎তোমাদের ঐ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। ঐ গাছের ফল খেলে তোমরা ‎‎ফেরেশ্তা হয়ে যাবে এবং চিরকাল বেহেশতে থাকতে পারবে।

তাই আল্লাহ্ ‎‎তোমাদের ঐ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। আদম আ. ও বিবি হাওয়া ‎কল্যাণ বা লাভের কথা শুনে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গেলেন। তাঁরা নিষিদ্ধ ‎গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। ধোঁকায় পড়ে হলেও এতে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য ‎করা হয়। তাই আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে বেহেশতের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে ‎বঞ্চিত করে তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন।

এভাবে শয়তান তার কল্যাণের ‎কথা বলে ধোঁকা দেয়ার সাধারণ কৌশলের প্রথমপ্রয়োগ করে এবং তাতে সে ‎কৃতকার্যও হয়। ‎ উপরের তথ্যগুলো জানার পর চলুন এখন কুরআনকে, অর্থসহ বা অর্থ ছাড়া ‎পড়ার ব্যাপারে বা জ্ঞান অর্জনের ল্যসহ বা ছাড়া পড়ার ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধি, ‎কুরআন ও হাদীসের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা যাক। ‎ মূল বিষয় বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎‎গুনাহ্ না সওয়াব তথ্য-১‎ আল-কুরআন, কোনো গল্প, কবিতা বা গজলের কিতাব নয়। আল-‎কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত একখানা ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) কিতাব। আর ‎সওয়াব কথাটার অর্থ হচ্ছে কল্যাণ।

কোনো ব্যবহারিক কিতাব পড়ার স্বতঃসিদ্ধ ‎উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার জ্ঞান অর্জন করা এবং সে জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে নিজে ‎কল্যাণপ্রাপ্ত হওয়া এবং অপরকে কল্যাণপ্রাপ্ত করা। কেউ যদি কোনো ব্যবহারিক ‎কিতাব এমনভাবে পড়ে, যাতে ঐ কিতাবের জ্ঞান অর্জন হয় না (অর্থাৎ অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে পড়ে) এবং তারপর ঐ কিতাবের বক্তব্যকে বাস্তবে প্রয়োগ ‎করতে যায়, তবে অবধারিতভাবে সে মারাত্মক মারাত্মক ভুল করবে। নিজের ‎ওপর ঐ জ্ঞান প্রয়োগ করলে সে নিজে তিগ্রস্ত হবে। আর অন্যদের উপর তা ‎প্রয়োগ করলে অন্যরা তিগ্রস্ত হয়ে তাকে পুরস্কার দেয়াতো দূরের কথা শাস্তি ‎দিবে। তাহলে বিবেক-বুদ্ধির চিরসত্য (টহরাবৎংধষ ঃৎঁঃয) রায় হচ্ছে, জ্ঞান ‎অর্জন হয় না এমনভাবে বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া কোনো ব্যবহারিক কিতাব ‎পড়লে কোনো কল্যাণ বা সওয়াব হয় না।

বরং তি বা গুনাহ হয়। আল-‎কুরআন যেহেতু একখানা ব্যবহারিক কিতাব, তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী এ ‎কিতাবও ইচ্ছাকৃতভাবে, অর্থ বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া পড়লে, সওয়াব না ‎হয়ে গুনাহ হওয়ার কথা। ‎ ‎ তথ্য-২‎ ‎কোন কাজ যদি এমনভাবে করা হয় যে, তাতে তার উদ্দেশ্যটি ‎‎কোনভাবেই সাধিত হবে না, তবে যে সময়টুকু কোন ব্যক্তি ঐ কাজে ব্যয় ‎করবে, সে সময়টা অবশ্যই নষ্ট হবে অর্থাৎ তার অন্তত সময় অপচয়ের তি ‎হবে। ‎ আল-কুরআন পড়ার প্রথম স্তরের উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা এবং ‎দ্বিতীয় স্তরের উদ্দেশ্য হচ্ছে সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা। অর্থ ছাড়া কুরআন ‎পড়লে কুরআন পড়ার প্রথম স্তরের উদ্দেশ্যই সাধিত হয় না।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে ‎অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ব্যক্তির সময় অপচয়ের তি যে হবে, তা দৃঢ়ভাবে বলা ‎যায়। ‎ আল-কুরআন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎‎গুনাহ্ না সওয়াব কুরআন থেকে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‎‎দুটো নিয়ম-‎ ‎১.‎ ঐ বিষয়ে কুরআনে যতোগুলো আয়াত বা বক্তব্য আছে, সে সকল ‎বক্তব্যকে পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। ‎কারণ, একটি আয়াতে বিষয়টির একটি দিক এবং অন্য আয়াতে তার ‎আর একটি দিক বা একটি আয়াতে বিষয়টি সংপ্তিভাবে আর অন্য ‎আয়াতে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ জন্য ইবনে কাছির, ‎ইবনে তাইমিয়াসহ সকল মনীষীই বলেছেন, কুরআনের শ্রেষ্ঠ তাফসীর ‎‎(ব্যাখ্যা) হচ্ছে, কুরআন। ‎ ‎২.‎ একটি বিষয়ে কুরআনের কোনো আয়াতের বক্তব্যের যদি অস্পষ্টতা ‎‎থাকে এবং ঐ বিষয়ে যদি অন্য কোনো স্পষ্ট আয়াত থাকে, তবে ‎অস্পষ্ট আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা স্পষ্ট আয়াতটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‎করতে হবে।

কারণ আল্লাহ বলেছেন, (পরে আসছে) কুরআনে ‎বিপরীতধর্মী কোনো কথা নেই। ‎ চলুন এখন কুরআন অর্থসহ বা ছাড়া অর্থাৎ বুঝে বা না বুঝে পড়ায় ‎সওয়াব বা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে আল-কুরআনের তথ্যসমূহ আলোচনা করা ‎যাক-‎ তথ্য-১‎ কুরআন পড়ার কথাটি বলতে বা বুঝাতে যেয়ে মহান আল্লাহ আল-কুরআনে মাত্র ‎তিনটি শব্দ উল্লেখ করেছেন। শব্দ তিনটি হচ্ছে-‎ এ শব্দ তিনটির প্রত্যেকটির আরবী অভিধান অনুযায়ী একটি মাত্র অর্থ ‎হয়। সে অর্থটি হচ্ছে, অর্থ বুঝে পড়া বা বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করা। আরবী ‎অভিধানে এ শব্দ তিনটির অর্থ, না বুঝে বা অর্থ ছাড়া পড়া অতীতে কখনই ছিল ‎না, বর্তমানে নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না।

‎ কুরআনের আয়াতের তরজমা করার সর্বসম্মত নিয়ম হচ্ছে একটি শব্দের ‎যদি একটি মাত্র অর্থ আরবী ভাষায় হয়, তবে ঐ আয়াতের তরজমা ও ব্যাখ্যা ‎করার সময় সে অর্থটিই গ্রহণ করতে হবে। অন্য কোন রকম অর্থ গ্রহণ করা ‎যাবে না। ‎ এ সর্বসম্মত ও ১০০% বিবেক-সিদ্ধ রায় অনুযায়ী তাহলে কুরআনের যে ‎সকল আয়াতে শব্দ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়া ‎বা অধ্যয়ন করা ধরে তরজমা ও ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্য কথায় সেখানে অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে পড়া ধরে তরজমা বা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগই উসুলে ‎তাফসীরে নেই। ‎ ‎ ‎ তথ্য-২‎ অর্থ: পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।

‎ ব্যাখ্যা: আয়াতে কারীমায় ব্যাখ্যা হিসেবে বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে ‎যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অথবা না বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে যিনি ‎সৃষ্টি করেছেন, এ দুটি কথা উপস্থান করে পৃথিবীর মানুষকে যদি কোনটি সঠিক ‎ও কোনটি ভুল তা জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে পৃথিবীর সকল বিবেকবান মানুষ ‎বলবেন, প্রথমটি সঠিক এবং দ্বিতীয়টি ভুল। শুধুমাত্র ১০০% পাগল ব্যক্তি ‎বলতে পারে দ্বিতীয়টি সঠিক এবং প্রথমটি ভুল। তাই নিশ্চয়তা সহকারেই বলা ‎যায় আল-কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে দেয়া মহান আল্লাহর প্রথম নির্দেশটি ‎হচ্ছে, ‘বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’। ‎ আয়াতে কারীমার বক্তব্যটি আদেশমূলক। তাই যারা ইচ্ছাকৃভাবে অর্থ ছাড়া ‎বা না বুঝে কুরআন পড়ছেন, তারা মহান আল্লাহর নাযিলকৃত প্রথম ও সরাসরি ‎‎(উরৎপবঃ) আদেশটিই অগ্রাহ্য করছেন অর্থাৎ তারা বড় গুনাহের কাজ করছেন ‎এটি নিশ্চয়তা সহকারেই বলা যায়।

‎ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কুরআন নাযিল হওয়ার ১৪০০ বছর পর আজ ‎সহজ একটা বাক্যের অত্যন্ত সহজ একটা ব্যাখ্যা আবার নতুন করে বিশ্ব ‎মুসলমানদের জানাতে ও বুঝাতে হচ্ছে। আরো অবাক ব্যাপার, কুরআন যারা ‎অর্থ ছাড়া পড়েন তারা কিন্তু অন্য কোন বই অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়েন না। ‎শয়তানের ধোঁকার কাছে কী বিস্ময়করভাবে তারা হেরে গেছেন, তাই না?‎ তথ্য-৩‎ الَّذِيْنَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلاَوَتِهِ أُوْلَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِط অর্থ: আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি (তাদের মধ্য থেকে) যারা তা ‘হক’ আদায় ‎করে তেলাওয়াত করে, তারাই ঐ কিতাবকে বিশ্বাস করে। (বাকারা : ১২১)‎ ব্যাখ্যা: এই গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটি থেকে সঠিক শিা নিতে হলে বা এর সঠিক ‎ব্যাখ্যা বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে, ‘তেলাওয়াতের হক’ কী কী? অত্যন্ত ‎সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝা যায়, কোন গ্রন্থ, বিশেষ করে আল্লাহর কিতাবের ন্যায় ‎ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) গ্রন্থ পড়ার প্রধান চারটি হক হচ্ছে-‎ ক. শুদ্ধ করে পড়া,‎ খ. অর্থ বুঝা অর্থাৎ তার জ্ঞান অর্জন করা,‎ গ. সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল বা কাজ করা,‎ ঘ. সে জ্ঞান অন্যকে জানানো তথা দাওয়াত দেয়া। ‎ বাস্তবে দেখা যায়, কিতাবধারীদের অনেকেই ঐ হকসমূহ আদায় করে ‎তাদের উপর নাযিল হওয়া কিতাব তেলাওয়াত করেন না।

অর্থাৎ কেউ ‎‎তেলাওয়াতের হক আদায় করে, আর কেউ কেউ তা না করে তাদের কিতাব ‎‎তেলাওয়াত করেন। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই মহান আল্লাহ্ এ গুরুত্বপূর্ণ ‎আয়াতটিতে বলেছেন, যারা তেলাওয়াতের হক আদায় করে তাদের উপর নাযিল ‎হওয়া কিতাব তেলাওয়াত করে, তারাই ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছে অর্থাৎ ‎তারাই মু’মিন। তাহলে যে সকল শর্ত অনুযায়ী কুরআনের কোন বক্তব্য আমান্য ‎করলে গুনাহ হয় (১৭নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে), সেগুলোকে সামনে রাখলে ‎নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে তেল্ওয়াতের হক আদায় না করে, ‎কিতাব তেলাওয়াত করে, তারা ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান আনে নাই। অর্থাৎ ‎তারা কুফরীর গুনাহে গুনাহগার। সুতরাং আল্লাহ এখানে স্পষ্টভাবে বলে ‎দিয়েছেন, কিতাবধারীদের মধ্যে যারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) উপরে উল্লেখিত চারটি ‎হকের একটিও আদায় না করে, কিতাব তেলাওয়াত করে বা করবে, তারা ‎কুফরীর গুনাহে গুনাহগার হবে।

‎ এবার চলুন উল্লেখিত চারটি হকের পারস্পরিক গুরুত্বটা বিবেচনা করা ‎যাক। সহজেই বুঝা যায় ঐ চারটি হকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণটি হচ্ছে ‎অর্থ বুঝা বা জ্ঞান অর্জন করা। কারণ ভুল করে পড়লে অর্থ পাল্টে যায় বলেই ‎শুদ্ধ করে পড়তে হয়। আর অর্থ না বুঝলে কোন গ্রন্থ তেলাওয়াত করে সে ‎অনুযায়ী আমল করা বা তার দাওয়াত দেয়া কখনই সম্ভব নয়। ‎ এখন চলুন দেখা যাক, আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনধারী মুসলমানরা এই ‎‎গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটির বক্তব্যকে কীভাবে বা কতটুকু মানে বা অনুসরণ করে।

‎আল্লাহ এখানে বলেছেন, যারা উল্লেখিত চারটি হকের একটিও ইচ্ছা করে ‎আদায় না করে কুরআন তেলাওয়াত করে বা করবে, তারা কুরআনের প্রতি ‎ঈমান আনেনি অর্থাৎ কুফরীর গুনাহে গুনাহগার। আর এ ব্যাপারে মুসলমানদের ‎বিশ্বাস হচ্ছে-‎ ক. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন ভুল পড়লে গুনাহ হয়। এ বিষয়ে সবাই ‎একমত। ‎ খ. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন অনুযায়ী আমল না করলে গুনাহ হয়। এ ‎ব্যাপারেও কারো দ্বিমত নেই।

‎ গ. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআনের জ্ঞান অন্যকে না পৌঁছালে গুনাহ হয়। এ ‎ব্যাপারেও সকলে একমত। ‎ ঘ. ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া বা জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন ‎পড়লে গুনাহ নয় বরং সওয়াব হয়। এ বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের ‎অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করেন এবং সে অনুযায়ী আমলও ‎করেন। ‎ সুধী পাঠক, চিন্তা করে দেখুন, কুরআন তেল্ওয়াতের সময় হক ইচ্ছাকৃতভাবে ‎আদায় না করলে, গুনাহ্ হবে না সওয়াব হবে, এ বিষয়ে অপোকৃত কম ‎‎গুরুত্বপূর্ণ হকের ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া রায়কে সকল মুসলমান মেনে নিয়েছেন ‎কিন্তু সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হকটির ব্যাপারে, অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহর ‎রায়ের বিপরীতটা মেনে নিয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমলও করছেন।

কী অবাক ‎কান্ড, তাই না?‎ তথ্য-৪‎ অর্থ: কুরআন ‘রতল’ কর নিয়ম-কানুন মেনে, স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে। ‎ ‎ (মুয্যাম্মিল:৪)‎ ব্যাখ্যা: এ আয়াতটি বহুলপ্রচারিত। যারা কুরআন-হাদীস কিছু জানেন তাদের ‎কুরআন পড়ার পদ্ধতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে প্রায় সবাই এ আয়াতটিই উল্লেখ ‎করবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ আয়াতখানিরও ‎رَتَلَ‎ শব্দের অর্থ না ‎বুঝে পড়া বলে বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং তার উপর ব্যাপকভাবে আমলও ‎হচ্ছে। পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি ‎رَتَلَ‎ শব্দের আরবী আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‎অর্থসহ বুঝে পড়া।

তাই ‎رَتَلَ‎ শব্দের সঠিক অর্থ ধরে এই আয়াতের সঠিক ‎ব্যাখ্যা হচ্ছে- কুরআন পড়তে হবে সঠিক (তাজবীদের নিয়ম অনুযায়ী) উচ্চারণ ‎করে, অর্থ বুঝে যেখানে যে ভাব প্রকাশ করতে চাওয়া হয়েছে সেখানে সে ভাব ‎প্রকাশ করে। কারণ পড়ার নিয়ম-কানুনের মধ্যে এ তিনটি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত। ‎ তাহলে এ আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকেও ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা অর্থাৎ বড় গুনাহের কাজ। ‎ তথ্য-৫‎ সূরা ছোয়াদের ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎ অর্থ: (হে মুহাম্মদ,) এই যে কিতাব (কুরআন) আমি তোমার উপর নাজিল ‎করেছি, তা একটি বরকতময় কিতাব। মানুষেরা যেন এর আয়াতগুলো নিয়ে ‎চিন্তা-গবেষণা করে।

‎ ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এই আয়াতে মানুষকে আল-কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-‎গবেষণা করতে বলেছেন। কোনো বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা আর তা না ‎বুঝে পড়া, সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কাজ। তাই যারা অর্থছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়ছেন তারা এ আয়াতের বক্তব্যেরও বিপরীত কাজ করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ‎আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতধর্মী কাজ করা গুনাহ না সওয়াব এটি বোঝা কি ‎কঠিন?‎ তথ্য-৬‎ সূরা বাকারার ২১৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন-‎‏.‏ অর্থ: তারা তোমাকে মদ ও জুয়ার ব্যাপারে (আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা ‎করে। তাদের বলে দাও, এই দুটো জিনিসে রয়েছে কিছু উপকার ও অনেক ‎‎তি এবং এদের তির দিকটা উপকারের দিক থেকে অনেক অনেক বেশি।

‎‎(নেক কাজে) কী কী খরচ করবে এ ব্যাপারেও তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। ‎বলে দাও, দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর অতিরিক্ত যা থাকবে তাই খরচ ‎করবে। এইভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নির্দেশসমূহ কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে ‎‎স্পষ্টভাবে বলে দেন, যাতে তা নিয়ে তোমরা চিন্তা-গবেষণা কর বা করতে ‎পার। ‎ ব্যাখ্যা: ল্য করুন, আয়াতটির প্রথম দিকে আল্লাহ্ মদ ও জুয়ার অপকারিতা ও ‎উপকারিতা সম্বন্ধে কিছু মূল তথ্য উল্লেখ করার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, ঐ ‎‎দুটোয় সামান্য কিছু উপকার আছে এবং অনেক অনেক তি বা অপকার আছে। ‎এরপর আয়াতটির শেষাংশে তিনি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে কুরআনের আয়াতের ‎মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের নীতি এবং ঐ বিষয়ে মানুষের কী কর্তব্য হবে, ‎তা জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে তিনি ‎পরিষ্কারভাবে কোনো একটি বিষয় সম্বন্ধে চিরসত্য মৌলিক তথ্যগুলো জানিয়ে ‎‎দেন। এরপর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, ঐ তথ্যকে মূল ধরে চিন্তা-গবেষণা করে ঐ ‎বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য বের করে নেয়া। ‎ আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ মদ ও জুয়ার দোষ-গুণ সম্বন্ধে চিরসত্য ‎মূল তথ্যটা (ইধংরপ রহভড়ৎসধঃরড়হ) মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‎মদ ও জুয়ার মধ্যে সামান্য কিছু উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু তার চাইতে অনেক ‎অনেক বেশি রয়েছে অপকারিতা।

এখন মানুষের কর্তব্য হচ্ছে মদ ও জুয়ার ‎‎দোষ-গুণের ব্যাপারে ঐ তথ্যটাকে মূল ধরে আরো চিন্তা-গবেষণা করা অর্থাৎ ঐ ‎‎দুটো জিনিসের দোষ-গুণ সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানা এবং তা মানুষকে ‎জানানো। যাতে মানুষেরা ঐ দুটো জিনিসের মহাতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে ‎‎থাকতে পারে এবং তার গুণটুকু শরীয়ত মত ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারে। ‎মদ ও জুয়ার বেশ কিছু অপকারিতা আমরা এখন জানি। তবে এই আয়াতের ‎তথ্য থেকে আমার মনে হয়, মদ ও জুয়া সম্বন্ধে আরো চিন্তা-গবেষণা হওয়া ‎‎দরকার। আর তা হলে ঐ দুটো জিনিসের আরো অনেক তিকর দিক মানুষ ‎জানতে পারবে এবং তা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম বাঁচতে পারবে।

‎ সুধী পাঠক, চিন্তা করে দেখুন, কতো স্পষ্ট করে আল্লাহ্ এখানে কুরআনের ‎আয়াত নিয়ে কী করতে হবে এবং কেন করতে হবে, তা বলে দিয়েছেন। তিনি ‎বলেছেন, কুরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। কারণ তাতে ‎মানুষের কল্যাণ হবে। ‎ না বুঝে পড়া হচ্ছে চিন্তা-গবেষণার সম্পূর্ণ উল্টো কাজ। এই আয়াতের দৃষ্টিতেও ‎তাই কুরআনকে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়া হল কুরআন পড়ার ব্যাপারে ‎আল্লাহর নির্দেশের ১০০% উল্টো কাজ।

অর্থাৎ তা বড় গুনাহের কাজ। ‎ ‎ ‎ তথ্য-৭‎ অর্থ: তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? (নিসা : ৮২)‎ ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে ‎তিরস্কার করেছেন। কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করা যদি আল্লাহর তিরস্কার ‎পাওয়ার উপযুক্ত কাজ হয় তবে চিন্তা-গবেষণার উল্টো কাজ অর্থাৎ ‎উচ্ছাকৃতভাবে না বুঝে পড়া, অবশ্যই আল্লাহর আরো কঠিন তিরস্কার পাওয়ার ‎উপযুক্ত কাজ হবে। আল্লাহর কঠিন তিরস্কার পাওয়ার যোগ্য কাজ সওয়াবের ‎কাজ, না বড় গুনাহের কাজ? প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন। ‎ তথ্য-৮‎ অর্থ: বল, অন্ধ ও চুষ্মান কি কখনও সমান হতে পারে? তোমরা কি ‎‎(কুরআনের বক্তব্য নিয়ে) চিন্তা-গবেষণা কর না? ‎ ‎ (আন-আম : ৫০)‎ ব্যাখ্যা: এ আয়াতটিতেও মহান আল্লাহ্ কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না ‎করার জন্য তিরস্কার করেছেন।

অর্থাৎ এই আয়াতটির দৃষ্টিকোণ থেকেও অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লে আল্লাহর তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হবে অর্থাৎ ‎বড় গুনাহ্গার হতে হবে। ‎ তথ্য-৯‎ সূরা মুহাম্মদের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন: ‎‏.‏ অর্থ: তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? না তাদের অন্তরে তালা ‎পড়ে গিয়েছে? ‎ ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ্ অন্তরে তালা পড়ে গিয়েছে বলার মাধ্যমে কুরআনের ‎বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে আরো কঠোর ভাষায় তিরস্কার ‎করেছেন। তাহলে এ আয়াতটির দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়া আল্লাহর নিকট আরো কঠোরভাবে তিরস্কৃত হওয়ার যোগ্য একটি কাজ। ‎আল্লাহর নিকট কঠোরভাবে তিরস্কৃত হওয়ার যোগ্য কোন কাজ কখনও ‎সওয়াবের কাজ হতে পারে না। তা অতি বড় গুনাহের কাজ হবে।

‎ তথ্য-১০‎ সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎ অর্থ: তিনিই আল্লাহ্ যিনি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন। এই ‎কিতাবে আছে মুহকামাত আয়াত। ঐগুলোই কুরআনের ‘মা’। বাকিগুলো হচ্ছে ‎‘মুতাশাবিহাত’ আয়াত। যাদের মনে কুটিলতা আছে তারা ফেতনা সৃষ্টির ‎উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং তার প্রকৃত অর্থ ‎‎বের করার চেষ্টা করে।

অথচ তার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না। ‎ ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে রাসূলকে সা. উদ্দেশ্য করে নিম্নোক্ত ‎কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন। ‎ প্রথমে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, এই কিতাব অর্থাৎ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে ‎তাঁর নিকট থেকে। ‎ এরপর তিনি বলেছেন, আল-কুরআনে আছে দু’ধরনের আয়াত- ‎‘মুহকামাত’ ও ‘মুতাশাবিহাত’। এর মধ্যে মুহকামাত আয়াতগুলো হচ্ছে ‎কুরআনের ‘মা’ অর্থাৎ আসল আয়াত।

আল-কুরআনে মূল মুহকামাত আয়াত ‎আছে প্রায় পাঁচ শত। মূল মুহকামাত আয়াতের বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করার ‎জন্যে বা তার বক্তব্য বুঝানোর জন্যে বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা বা উদাহরণ ‎‎দেয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোকে বলা হয়, কেচ্ছা অর্থাৎ কাহিনীর আয়াত ‎এবং আমছাল অর্থাৎ উদাহরণের আয়াত। এ আয়াতগুলো হল মুহাকামাত ‎আয়াতের সাহায্যকারী আয়াত। আল-কুরআনে এ ধরনের আয়াতের সংখ্যা ‎সবচেয়ে বেশী।

মুহকামাত আয়াতগুলোর বক্তব্য অত্যন্ত সহজ ও স্পষ্ট আরবী ‎শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূল মুহকামাত আয়াতে বর্ণনা করা ‎হয়েছে ইসলামের আকিদা (বিশ্বাস), উপাসনা, ফারয়েজ, চরিত্রগত বিষয় এবং ‎আদেশ-নিষেধসমূহ। ‎ ‎শেষে আল্লাহ্ বলেছেন, যাদের মানে কুটিলতা বা শয়তানি আছে তারাই শুধু ‎বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং ‎তার প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করে। কারণ ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াতের প্রকৃত অর্থ তিনি (আল্লাহ্) ছাড়া আর কেউই জানে না। ‎ ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা-‎ ‎১.‎ ঐ সকল আয়াত যার বক্তব্য বিষয়টি মানুষ কখনও দেখেনি, স্পর্শ ‎করেনি বা আস্বাদ করেনি (অর্থাৎ মানুষের ইন্দ্রিয়ের অতীত ‎বিষয়সমূহ)। যেমন আল্লাহর আরশ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোযখ, ‎সিদরাতুল মুনতাহা ইত্যাদি। এগুলোর প্রকৃত অর্থ বা অবস্থা মানুষের ‎পে বুঝা সম্ভব নয়। ‎ ‎২.‎ কিছু কিছু সূরার শুরুতে কয়েকটি অরবিশিষ্ট যে শব্দটি ব্যবহার করা ‎হয়েছে, সে শব্দগুলো। যথা- ‎الم، المص، يس‎ ইত্যাদি।

এগুলোর ‎‎কোন অর্থ হয় না। ‎ উপরের তথ্যগুলো জানার পর এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াত সম্বন্ধে আল-কুরআনের প্রত্য বক্তব্য হচ্ছে-‎ ‎১.‎ এর প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য শুধু আল্লাহই জানেন। মানুষের পে তা ‎বুঝা সম্ভব নয়। ‎ ‎২.‎ ‎যে সকল মুতাশাবিহাত আয়াতের অর্থ হয়, সেগুলোতে আল্লা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।